বর্গছকের ববাইরের কবিতা|| গোবিন্দ ধর 


বর্গছকের বাইরের কবিতা :১

আমি কারও জাতি-বর্ণ-ধর্ম ইত্যাদির ধার ধারি না। একটা মানুষের মানুষ পরিচয়টাই আমার জন্য যথেষ্ট। এর চেয়ে খারাপ আর কি হবে?
---মার্ক টোয়েন।(মার্কিন লেখক।)

এসব সকলেই জানে
বের হলে চা আছে 
বের হলেই 
তোমার মতো কতজন আছে 
তবুও তুমি কি
নিয়ে আসবে
নিজহাতে করে
ভোরের বেড টি?

জানি এসব কল্পনা করে করে 
একদিন মরে যাবো।
নিশ্চিত অপূর্ণ একজন মানুষ 
সারাজীবন 
অপূর্ণতা নিয়ে মরে যায়
এই-ই আসলে নিয়তি।

তখন 
আমিও নেই 
তুমিও নেই 
এ কোন ভালোবাসাভাসি সই?
গোপন করিডোরে আটকে থাকে 
দুজনের কলিজা 
যেন জেতা মৎসকৈ।

০৮:০৯:২০২৩
ভোররাত:০৩টা৪৫মি
দমদম, কলকাতা।

বর্গছকের বাইরের কবিতা:২

ধরো আমি তোমাকে ভালোবাসী
তুমি আমাকে ভালোবাসো।
এতে কোনো পাপ নেই। 
এতে কারো মাথার দিব্যি কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। 

মিথ্যে পায়ার উপর দাঁড়িয়ে 
মিথ্যে মায়ার চাদর জড়িয়ে 
এই যে ভালো বাসছো আদর খাচ্ছো
খাবি খাচ্ছো,খাচ্ছিও; এতে নোংরামো নেই।

শহর ঘুমিয়ে গেলে বহুরূপী ওয়াইন 
নিষিদ্ধ পল্লীর নিকট
হারিয়ে গেলেও কারো কিচ্ছু যায় না 
আসেও না।
এতে কোনো ভালোবাসা নেই। 

ভালোবাসা নামের পাখিটি পুচ্ছ দুলিয়ে দুলকি চালে
এদিক ওদিক মগডালে সেকি নাচ নাচছে
খাচ্ছে দিচ্ছে খাবিটাবি 
কেমন একা একা শহর ঘুমায় তুমিও ঘুমাও
ভাতের নেশায় আচ্ছন্ন সুখ জীবন গেছে 
মরণপুকুরে পা ডুবিয়ে মগ্ন বসে সেই। 

০৮:০৯:২০২৩
ভোর:০৩টা১০মি
দমদম:নাগেরবাজার

বর্গছকের বাইরের কবিতা:৩

নাও ছাড়ছি পরস্পর। 
তুমিও অকুলে
আমিও।
নাও ছাড়ছি।
হাওয়া দুলছে।
ডুবে ডুবে মরে বেহুলা বাতাস।

কি নেই 
কি নেই 
সারাক্ষণ এক ঘুণপোকা অনুভব 
ঘুরপাক খেতে খেতে 
মরে যাবে।
সাতজন্মের অপেক্ষায় অপেক্ষায় 
দিন যাবে
বিনিদ্ররাত যাবে
ডুববো 
ভাসবো
হাওয়াগাড়ি পাল তুলে দিকভ্রমে
কোথায় যেতে কোথায় যাবে
কে জানে
তুমিও জানবে না
আমিও জানবো না।
জীবন ভীষণ রকম খামখেয়ালি মেজাজে
একদিন বিরাটিনগরে লখাইয়ের নাও ডুবে যাবে।

চোদ্দডিঙ্গা ডুবে ডুবে মরে যাবে 
সোনকার লখাই।
তুমিও ভাসাবে তরী
গাঙ্গুরের অতলান্ত জলে।

০৮:০৯:২০২৩
ভোর:০৩টা২৫মি
দমদম,কলকাতা।

বর্গছকের বাইরের কবিতা :৪

জীবনের পরতে পরতে জীবনানন্দ না এলে 
একটি জীবন ছন্নছাড়া মাটির মতো যায় গুলে।
এই তো আছি এই তো নেই মহাশূন্য দোতারা। 
তোমার বুকে বেজেই চলে আমার একতারা।

কখন এসে ভর করেছে সনাতক বাউল ফকির
চৈতন্য নেই চৈতন্য নেই আমিই একলা ফকির।
হারিয়ে পাওয়া গ্যালাক্সিতে বাজছে কন্ঠস্বর
পৃথিবীটা নিষ্ঠুরতম  বাসি রুটির অনু:স্বর।

০৮:০৯:২০২৩
সকাল:১০টা
এম বি রামিজ রাজা লঞ্চ,
সুন্দরবন,কলকাতা।

বর্গছকের বাইরের কবিতা :৫

জলে তুমি ভেঙে যাও।ভেঙে ভেঙে যাও।
জলেই গুলে গেলে? 
শরীর জলোচ্ছ্বাস। 
তার সুনামিতে ভেসে যায় সুনামগঞ্জ।
শরীরের সুন্দরবনে হরিণ বাঘ একই বনে 
ঘুরঘুর করে। 
বাঘ হরিণ খায়।হরিণ তৃণ।
এই ইকোসিস্টেমে তুমিও বাঘের আহার
আমিও।
পরস্পর মাংসাশী আমরা।
মাংস রান্নার ঘ্রাণে মাতোয়ারা তুমিও,আমিও।
আমাদের জলের নিকট আমরা সাঁতার কেটে 
হারিয়ে যাচ্ছি ক্রমশঃ জলের নিকট।

তুমি বিদ্যাধরি।আমিও নদী।দুজনের সুন্দরবনে
জেগে ওঠে ইকোসিস্টেম। 
একজনের বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে আরেকজনের মাংসাঞ্চল।

০৮:০৯:২০২৩
দুপুর:০৪টা
এম বি রামিজ রাজ লঞ্চ, সুন্দরবন,কলকাতা।


বর্গছকের বাইরের কবিতা :৬

জলের অতলান্ত গহীনে ডুবে ডুবে মরে যাই চলো।
জলের ও টু এইচ টু ভেঙে ভেঙে যাক।
জলেই গুলে যাক আমাদের অহং ও ওম।
আমিও শূন্য তুমিও শূন্য। শূন্য মহাকাল।
অনন্ত শূন্যতায় জলে ডুবে মরে যাই। 
চারদিকে দিকশূন্য জল।জল তুলছে ঢেউ। 
জল উঠছে।নামছে।জলোচ্ছ্বাস। 
চারদিকে জল।সবুজ।বাঘ।হরিণ। 
তোমার হায়ের ভেতর লুকিয়ে রেখেছো ইলিশ।
জলে জলে মাছ এ-নদী থেকে ও-নদীর বুকের ভেতর 
সাঁতার কেটে জলে জলে জলডুবে অনেক পথ ফাঁড়ি দিলেই 
আমরা গহীন জলে ডুবি। 
জলজ জীবনের গান লিখি। 

এসো ডুবি।ডুবিয়া মরি।তুমি হও গহীন গাঙ
আমি জলের মরা।

জলে জলে গুলে যাক বিজ্ঞাপনের শরীর।

০৯:০৯:২০২৩
বেলা:১১টা৫০মি
দত্ত নদী,সুন্দরবন।

0 Comments