আত্মক্ষর:পর্ব-১৫গোবিন্দ ধর
আত্মক্ষর:পর্ব-১৫
গোবিন্দ ধর
আজ আবার বাবা দিবস।আমাদের ছোটবেলায়ও এসব বাবা দিবস ছিলো না।মা দিবস ছিলো।বোন দিবস কিংবা বন্ধু দিবস ছিলো না।ছিলো না ভ্যালেন্টাইন দিবস।এইডস দিবস,ক্যান্সার দিবস। দিবসে দিবসে সারা বছর গড়ায় আবার বছর আসে।আবার দিবসগুলো শুরু হয় এক এক করে।কিন্তু আমার সারা বছর বাবা দিবস।সারা বছর মা দিবস।আলাদা ভাবে স্পেসাল দিবস নাই আমার।সব দিনই কোন না কোন দিবস।তাই আমি বাবাকে নিয়ে আলাদা কোন বাবা দিবস চাই না।বাবা আমার সারা জীবন পথ দেখান।বাবার সাথে হাঁটতে বসতে বাজার করতে আমি শিখলাম।অনুপস্থিত বাবা থেকেও আমি শিখি।বাবা আমার জীবনের একজন শুধু অভিভাবক নয় একজন শিক্ষক। আদর্শ মানুষ।বাবার কাছ থেকে শেখা নয় এমন কিছু নেই আমার।বাবা আমার নিশ্বাস। প্রশ্বাস।
পথে হাঁটতে গিয়ে বাবা কাঁটা দেখলেও তা পথ থেকে সরিয়ে হাঁটতেন।আজ যে স্বচ্ছ ভারত।স্বচ্ছ গ্রাম স্লোগান চারিদিকে কে বেশি স্বচ্ছ দেখিয়ে সম্মান বাড়ানোর দৌড় দেখি তখন মনে পড়ে প্রতিদিন বাবা কি নিপুন ভাবে নিজের বাড়ি থেকে পথের নোংরা পরিস্কার করতে ঝাঁটা হাতে ঝাঁট দিতেন চল্লিশ বছর আগে।আজও বাবার কাজের সৌন্দর্য আমাকে টানে।প্রতিটা কাজ এত নিঁখুত ভাবে করতেন বাবা।দেখলে কোন ফাঁকি ধরা পড়েনি।বাবার বই বাঁধাই।খাতা সেলাই।পুরানো বইগুলো এখনো বাঁধাই করা আছে আমাদের ঘরে।বাবার জমানো বইগুলো আমায় সংগ্রাহক করে তুলে।এত যত্ন করে কাজ করেন বাবা।বাবা যখন ধর্মনগর ছিলেন তখন আমার জন্ম হয়।১৯৭১এ।আমি বাবার বাঁধাইঘর দেখিনি।বাঁধাই কাজ দেখেছি।একটি রাভার স্ট্যাম এখনো আছে বাঁধাইঘরের।নাম নিত্যানন্দ বাইন্ডিং হাউস।বাবা বিশুকেতু নাথের বাসায় থাকার সময় পদ্মপুর আমার জন্ম হয়।মা বলছেন আমার নাকি মালিকের ঠাকুরঘর নারায়ণ মন্দিরে জন্ম।বয়স তখন সাড়ে তিন বছর আমি ও ভাইবোন মিলে আমাদেরকে নিয়ে বাবা রাতাছড়ায় আসেন।বাবা তখন কাঞ্চনবাড়ি দ্বাদশশ্রেণি বিদ্যালয়ের কর্মী।বাবার হাতে কাঞ্চনবাড়ি সহ রাতাছড়া,এমড়াপাশা এবং সায়দারপাড় অঞ্চলের প্রায় বাড়ির মনসাপুঁথি,রামায়ণ, মহাভারত এগুলো তিনি বাঁধাই করে দিতেন।কোন পয়সা নিতে দেখিনি।তাঁর যত্নে বাঁধাই করা বই এখনো শ্রাবণ মাসে পাঠ হয়।বাবার স্কুলে গিয়েও দেখেছি বাবার কলিকদের কাছে বাবার প্রতি সম্মান কতটুকু।বাবা কাজে ফাঁকি দেননি।যখন যেখানে কাজ করতেন। কাজ পাগল হিসেবে বাবাকে দেখেছি।বাবা চাষও দিতেন জমিতে।ধান কাটা থেকে চারা রূপন সব করতে পারতেন।সব্জীচাষেও বাবা ছিলেন পারর্দশী।বাবা যতদিন ছিলেন আমরা বাসার অধিকাংশ সব্জী বাবার চাষ করা থেকেই পেতাম।
বাঁশবেতের কাজও বাবা পারতেন।টুকরী,খলই,উড়ি,কোলা,জাকা,ধান পরিমাপের পুরা,শের(হের),পারন,দরি(মাছ ধরার বিশেষ একটি ফাঁদ) কি না বানাতে পারতেন।সব কাজই নিপুন হাতে গড়া।বাঁশ থেকে বেত নেওয়া।তা দিয়ে চাটাই,চাচ সব করতেন বাবা।
কাজে ফাঁকি দিতে দেখিনি বাবাকে।
আমার বাবা তাই আমার জীবনের শিক্ষক। বাবার জন্য আমার আলাদা কোন দিন নয়।সারা বছর প্রতিদিন আমার বাবা দিবস।
১৮:০৬:২০১৭
বিকেল:৪:৩৫মি
কুমারঘাট।
0 Comments