চৈতালী সন্যাল ও গোবিন্দ ধর :কিছু আড্ডা কিছু কথা
চৈতালী সন্যাল ও গোবিন্দ ধর :কিছু আড্ডা কিছু কথা
সম্প্রতি দু,দিন ব্যাপী লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আগরতলা, ত্রিপুরায়।গত ২৬-২৭ মে ২০২৩ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিহার বাঙালি সমিতির পূর্ণিয়া শাখার সহকারী পদাধিকারী চৈতালী সান্যাল।তাঁর সাথে পুনরায় দেখা হয় ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামাঙ্কিত লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা:২০২৩ উপলক্ষে। জুলাই ২৮-২৯-৩০ তিনদিন ব্যাপী লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলায় বারদুয়েক কথা বিনিময় হলেও হইহট্টগোলে কথায় তেমন সুর লাগেনি।পাশাপাশি আমাকে অস্থিরতায় কাটাতে হয় সময়।এই দেওঘর তো এই জামতাড়া বিয়েবাড়িতে রেখে আসা বউছেলের দেখবাল করতে করতেই।তিরিশে জুলাই আবার জামতাড়া স্টেশন থেকে আমরা সুমিতা পাল ধর গৌরব ধর ও আমি ব্যাঙ্গালুর নিমহান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হলো।সুতরাং নানা পরিকল্পনা মনে মনেই রইলো।নিমহান্স এসে এডমিট হতে হয়।গত ২রা আগষ্ট থেকে আমরা গৌরবকে নিয়ে ভর্তি আছি।অস্থিরতায় মন ভরে আছে।তবুও পরিকল্পনাগুলো আলোচনা শুরু করি নানাজনের সাথে। তখনই চৈতালীদকেও আমার নানা পরিকল্পনা আলোচনা করার সময় কিছু কথা কিছু আড্ডা হয়।এগুলোই এখানে লিপিবদ্ধ করা হলো।
গোবিন্দ ধর : চৈতালিদি আচ্ছা আপনি বিহারের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয় প্রবন্ধ দিতে পারবেন?
চৈতালী সন্যাল:বিহারের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লিখতে গেলে অনেক সময় চাই , আমি এখনও কোলকাতায় ঘুরছি। আমি চেষ্টা করব কারুর রেফারেন্স পেলে তোমাকে পাঠাব ।
আর না পেলে তোমায় মোটামুটি একটা রূপরেখা পাঠানোর চেষ্টা করব।
আমার চোখে লেসার দিয়ে ছোট একটা অপারেশন হয়েছে , কোলকাতায় চোখ দেখাতে গিয়ে এই ব্যাপার হল । আমি পূর্ণিয়া কাল ফিরেছি আবার ১৯ তারিখ যেতে হবে ২২ এবং ২৯ তারিখ আমার ক্যাটারাক্ট অপারেশন হবে। কাজেই এক দেড় মাস লেখা পড়া বন্ধ। তোমায় আমি পরে বিহারের সাহিত্যের বিষয়ে লেখা পাঠাব। আপাতত নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই বলে জীবন যদি পদ্ম পাতায় জল/ভাবনা তুই করিস কেন বল/ সবার সাথে সবার মাঝে থাকবি মিশে
মনের মধ্যে এটুকু রাখ বল/ ঠকছি না যে জানি আমি/ যতই বল এটাই আমার ছল ।
(বিদ্র:পাঠাব না হয়ে গেছে আর দাড়ি কমা গুলি ঠিক জায়গায় পড়ে নি। কিছু মনে কোর না। আসলে হঠাৎ করে এই চোখের চক্করে পরে গেলাম। তাই থতমত ভাব এসে গেছে। আর আজেবাজে গোল গোল লেখা তোমায় পাঠিয়ে দিলাম ।)
গোবিন্দ ধর :ঠিক আছে। এ আর মনে করার কি।আপনি সুস্থ হোন।
আমিও তো নিমহান্স আছি
ছেলের মনের অসুখ দীর্ঘদিন ধরে।
যখন লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা :২৩
আগরতলা স্টুডেন্ট হেলথ হোমে
আপনি ও সারা বাংলা সাহিত্যের লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকেরা
আমাদের আতিথ্যে
সকল অসুবিধা হলে সহযোগিতা করার কথা ছিলো
আমি তখন তার জন্য হোলটাইম
উদগ্রীব ছিলাম।
পারিনি আপনার ও আপনাদের দেখলাম।
গত ২০১৯ সালে হঠাৎই চারুকলা পাঠরত অবস্থায়
ফিথ সেমিস্টারের ক্লাস চলাকালীন
হঠাৎ একদিন
তার মন খারাপ হয়ে যায়।
তারপর থেকে আমি নানা ঘাতপ্রতিঘাত লড়াই যুদ্ধ করে
তার জন্য লড়ে যাচ্ছি।
কখনো কম
কখনো বেশি।
এই চলছে।
সেজন্য নিজেই লজ্জিত।
মানুষের ভালোবাসা মূহুর্তের আলোর বিস্ফোরণ থেকে
আমি সারা জীবনই শিখি।
আপনার সহযোগিতা আজীবন মনে রাখার মতো।
অথচ আমি সেরকম কিছুই করতে পারিনি।
এই অনুতাপ খুড়িয়ে খুড়িয়ে খায় আমার আমিকে।
আপনি সুস্থ হোন।
আপনি একজন অমায়িক বন্ধুবাৎসল মানুষ।
বিহার বাঙালি সমিতি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আপনার সদা সৎ স্বচ্ছতা নীতিনৈতিকতা
আমাকে মুগ্ধ করে।
আপনি বড় মনের মানুষ।
আপনার জীবন ও সাহিত্য জীবন সুন্দর হয়ে উঠুক।
আপনাদের সহচর্য
আপনাদের সহযোগিতা
পরস্পর পরস্পরের পথে যেতে যেতে আরো নৈকট্য লাভের আগ্রহ আমার রইলো।
প্রতিবছর আমাদের আয়োজন চলবে
ছোট করে হলেও।
আপনাদের যোগদান উদ্বুদ্ধুকারী হবে
এই প্রত্যাশা রইলো।
আপনার আশীর্বাদ চাই -যেন ছেলেটি
অসুখের তীব্রতা থেকে ক্রমশঃ ঝকঝকে
একটি আলোকদীপ্ত জীবন লাভ করে।
আপনার সুস্থ নীরোগ জীবন হোক।
আপনার চোখ জগতের সকল সুন্দর দেখুক
আজীবন প্রর্থনা রইলো।
আমার আজীবন হাত বাড়িয়ে রাখলাম।
চৈতালী সান্যাল:দেখো আজ যা চারিদিকের অবস্থা তাতে কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষের মন বিকল হওয়ার ই কথা । বিশেষ করে তোমার মতন সংবেদনশীল মানুষের সন্তান । ও নিজেও নিশ্চয় খুব সংবেদনশীল মানুষ । চারুকলা যার সাবজেক্ট সে এত বিসংগতি কিকরে সহ্য করবে তাছাড়া আমার মনে হয় অন্যান্য সহপাঠী / পাঠিনী রা ওকে বা শিক্ষকরা ওকে ঠিক বুঝতে পারে নি , হতে পারে দু:খ দিয়েছে যা ওর মনের তন্ত্রিকে আঘাত করেছে নইলে ফিফ্থ সেমিস্টার অব্দি পৌঁছাতে পারত না ।
আমি আমরা দুজন তোমার ছেলের জন্য সর্বদা উদগ্রীব রইলাম আর এই প্রার্থনা করি ওর ভবিষ্যত জীবন উজ্জ্বল হোক ।তুমি প্রশান্ত মনে সাহিত্য সাধনা করে যেতে পার যেন । শুধু একটা কথা বলব শুধু বাড়ির তোমরা কজন তো ওকে ভালবেসে ওকে বুঝে সহচর্য দিচ্ছই কিন্তু তোমার চারপাশের মানুষ জন ও যেন ওকে বুঝে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দ্যায় । অকারণ কৌতুহল কাউকে করতে দেবে না । যে বা যারা মনের খবর রাখে না তারা চিন্তাশীল মানুষ বলে বিবেচনা কোর না । আর সবশেষে এটুকু বলি তোমার এই বিপদের দিনে ও তুমি যে হাসিমুখে থেকেছো এ বিরাট ব্যাপার । আমরাও তোমার কোন সহযোগিতা ই করিনি । তুমি নিজ গুণে আমায় সম্মানিত করেছো । তোমার তোমার পরিবারের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল হোক । ছেলে আবার আলোকদীপ্ত জীবন লাভ করুক।
গোবিন্দ ধর :আশীর্বাদ রাখবেন। ও যেন তার সুস্থ জীবন ফিরে পায়।
হ্যাঁ সত্যি সনয় বড় নির্দয়।চারপাশের মানুষজন এতউ স্বার্থান্বেষী তারা পরনিন্দা পরচর্চা করেই আনন্দ পায়।
কলেজে ও ছিলো তার সেমিস্টারে প্রথমসারির। এতে কয়েকটি মেয়ে ওকে ওর সরলতাকে অশুভ পথে পরিচালিত করতে চেয়েছিলো।কিন্তু ও এই পথ গ্রহণ করেনি।পাশাপাশি ও মানতেও পারেনি।
ও গ্রামীণ সরলতায় বড় হয়েছে। ও কূটচাল বুঝে কম।ওর শিক্ষক মশাইরাও ওকে ওর মতো বুঝেননি।
এতে ও নানা ধরনের অসুবিধার মধ্যে ক্লাস চালিয়ে গেছে। যখন বললো তখন জল অনেকদূর। সুতরাং বিগত ২০১৯ থেকে ও এমন এক ঘুরে আছে।
আমরাও নিমহান্স আগরতলা কুমারঘাট করছি
দৌড়ছি।এতে ও মেডিসিনের খারাপ খপ্পরে পড়ে আছে।
নিমহান্স অনেকটা আয়ত্তে এনেছে।
কিন্তু কতটুকু ওর পূর্ব অবস্থায় আমারা তাকে নিতে পারবো জানি না।
কিন্তু পিতা হিসেবে কাজ করে যাওয়া তো লাগবেই। একজন পিতার বুকের যন্ত্রণা কতটুকু হয় সে পিতারা বুঝেন।মায়েরা বুঝেন।
আপনি একজন সংবেদনশীল সৃজনশীল শিল্পী কবি সাহিত্যিক আপনিও বুঝবেন বলে ঘরের কথা হলেও আপনাকে বলতে লজ্জিত নয়।
কিন্তু চারপাশের আজব মানুষ নামক জীবদের বললে হিতে বিপরীত হবে।হয়।সুতরাং সে কাজ আমি করি না।
কিন্তু উৎসুক প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাস্য আখিঁ ওকে বিব্রত করে।
ওর জীবনে হয়তো ভালোবাসা স্নেহ প্রয়োজন। আমরা সবাই সমবেত সহায়তা করলে নিশ্চয়ই ওর জীবন সুন্দর হতে বাধ্য।
এঝন সময়ই বলবে কতটুকু কি।
আমি আমরা কাজ করে যাওয়াই কাজ।
আর কিই বা করতে পারবো।
চৈতালী সান্যাল:আমি বুঝতে পারছি অবস্থা। এ আমারা কোন সমাজে বাস করি বল ? গতকাল যাদবপুরে ও একটি গ্রামীণ ছেলের সাথে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে যাতে বড় বিচলিত লজ্জিত বোধ করছি ।
তুমি অজ্ঞানী প্রতিবেশী দের আলাদা করে বুঝিয়ে দিতে পারলে ভাল হত যে অযথা জিজ্ঞাসা করে ওকে বিব্রত না করে ওকে ওর মত থাকতে দিক, আসলে ওর কিছু ই হয়নি কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ ওর ক্ষতি করে মনে র ভারসাম্য কে নষ্ট করেছে । নিমহান্সের চিকিৎসা য় ও অচিরেই সুস্থ জীবন ফিরে পাবে শুধু অন্য লোকের অযথা কৌতুহল বা সহানুভুতির দরকার নেই ।
গোবিন্দ ধর :সে অনেকবার বলেছি।তবুও ওরা মনে করে আমাদের খুব উপকার করছেন।
অথচ আমরা তো বুঝতে পারছি এসব জিজ্ঞাসা ওর আরো মানসিক অসুস্থতাকে জিয়িয়ে রাখার মতোই। অথচ কতবার ওদের বলেছি।
জানি না আমার উপর প্রকৃতি কি প্রতিশোধ নিচ্ছেন।
আমি হাল ছাড়ছি না।
শুধু আশীর্বাদ রাখবেন যেন এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারি।
পরবর্তী সময় আরো বহুবার আমাদের সাহিত্য আদান প্রদান হোক। আমাদের নিরাপদ মসৃণ পথ ফাঁড়ি দিতে চাই সুস্থ হয়ে ওঠা গৌরবের।
মানসিক দৃঢ়তা অকুতোভয় দুঃসাহসী হয়ে গেলে আমাদের পিতা হিসেবে কাজ কিছু সম্পূর্ণ হলো।
নয়তো আমারও অনুসূচনাময় সময় অতিক্রম করতে করতে আমি ক্লান্ত অবসন্ন এক গাধা ছাড়া কিচ্ছু নয় এখন।
চৈতালী সান্যাল:তুমি বিপন্ন বোধ করছো, ক্লান্ত যা খুব স্বাভাবিক তবু বলি ধৈর্য রাখ । রথের চাকা ঘুরে যাবে এই দুর্দিনের অবসান হবে। তুমি যেমন লেখা নিয়ে আছো এরমধ্যে ও যতটা পার করতে থাক ছেলের হাতেও তুলি তুলে দাও বা ও যা চায় সৃজনশীল যা কিছু তা যতই কেন না অন্যের চোখে অর্থহীন লাগুক ও যদি করতে চায় করুক । দিন বদলাবেই আর তা হবে বর্ণময় সদর্থক । আমি আর তোমাকে বিরক্ত করছি না । শুভেচ্ছা, ভালবাসা স্নেহাশীষ রইল অফুরান।
গোবিন্দ ধর :আপনি বিরক্ত করেননি তো।একজন অসহায় পিতাকে পজিটিভ এক্টিভিটির জন্য অনুপ্রেরণা যোগিয়েছেন।এ আমার প্রাপ্তি। এই দুঃসময়ে কজন আর পাশে থাকে।পাশাপাশিও থাকে না পাশেরজনেরাও।সুতরাং আপনি বিরক্তবোধ না করলে সারাক্ষণ সারাদিন বিরক্ত করবেন।আপনার কথা বলায় আমি উদ্বুদ্ধ হই।মনে হয় মাতৃসমা কেউ দিশা দিচ্ছেন।
আমাদের আলোচনাগুলো হয়তো আপনার সম্মতি থাকলে চলতে থাকুক।
আর কিছু কিছু করে আমাদের সাহিত্যক্ষেত্র ও জীবনের গান হয়ে পরস্পরকে জানতেও সহযোগী হোক।পরবর্তী কখনো এগুলো আমি সংগ্রহ করে নেবো।হয়তো আপনি সময় করে লিখঋেন।চলতে চলতে কত পথই তো অতিক্রম করে এসছেন।আমিও হাঁটছি অক্লান্ত। তবুও কি মনে হয় না জীবন আসলে এক খোঁয়াড়েই প্রবেশ?
চৈতালী সান্যাল:হ্যাঁ তা তুমি বলতে পার এখন যখন আমরা অসহায় হয়ে পরি পরিস্থিতির চাপে তখন জীবনকে এক খোঁয়াড় লাগাই স্বাভাবিক । কিন্তু দেখো যখন সব ঠিক ঠাক ছিলমানে মসৃন ছিল জীবন তখন আমরা কতই না উৎফুল্ল ছিলাম । এই যে বিষাদ রোগ তা সারা পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে কিন্তু পৃথিবী অসুস্থ নয় মানুষ ই মানুষকে অসুস্থ করে তুলছে । কিন্তু সব দিন এই রকম যাবে না আবার ফুল ফুটবে । পৃথিবীতে যা কিছু অপূর্ব সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু বিষাদ যোগেই । তা তুমি মহাভারতের ক্রৌন্চ বধে উদ্যত বাল্মীকি র " মা নিষাদ ..... বল বা আরও যা কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ।
পরিস্থিতির কাছে আমরা অসহায়। কিন্তু এও এক পরীক্ষা আর জীবনের পরীক্ষা আমাদের চাওয়া পাওয়ার উপর নির্ভর করে না । তবে এই কঠিন পরীক্ষা তোমায় অনেক অভিজ্ঞ করে তুলবে যাএখন সত্যি কষ্টের কিন্তু পরে তোমার সৃষ্টি র ঝুলিতে অন্য রকম রং এনে দেবে । এখন শুধু মনটাকে তাজা রাখতে হবে । তুমি গোবিন্দ ধর , গোবিন্দ তোমায় ধরেই আছেন । এই আপ্ত বাক্য টি বোধহয় জানো তবু আবার মনে করাচ্ছি ।
যে আমার করে আশ
তার করি সর্বনাশ
তবু যে ছাড়েনা আশ/ তার আমি দাসের দাস ।।
গোবিন্দ ধর :জানি না মৃত্যু অনিবার্য। অসুখ অনিবার্য। উত্তরণও হয়তো এক সাপলুডু।
অনিবার্য পতাকা
গোবিন্দ ধর
মৃত্যু অনিবার্য হলেও কারো কারো মৃত্যু
শোকাতুর করে হৃদয়ের দরজা।
কারো কারো মৃত্যু সারাটাদিন মেঘলা রাখে
কিরাতভূমি।
কোন কোন মৃত্যুর পর একটি পতাকা অর্ধ নামানো হয়।
কোন কোন মৃত্যুর পর তার যাপনের রোমন্থন থেকে
সম্ভাব্য মতাদর্শের অনুশীলন পুনঃপাঠ হয়।
পুনঃবার জেগে উঠতে কি কি দরকার
গভীর রকম চর্চা হয়।
একটি মৃত্যু থেকে আমরা আবার জেগে উঠতে চাই
বহন করতে চাই অনিবার্য পতাকা।
তবু জীব মাত্রই হতাশাআগাছার মতো থেকে রাখে ধান।
আমিও কি হেরে যেতে হবে। নিজেকে প্রশ্ন করি।নিজেই উত্তর তৈরী করি।না।আমিই গোবিন্দ। আমাকে এই পিচ্ছিল সরীসৃপ পথ অতিক্রম করতে হবে। সামনে আলো নাকি অন্ধকার। জানি না।অগ্রসর হতে না চাইলেও সামনে যেতেই হবে।এই-ই জীবন।যাপনের অংশীদারত্বের ভিত্তিতে আমিও জীব।জীব না জড় যদিও মাঝে মাঝে ডেকার্টের মতো মাটিতে লাথি মেরে দেখি আমি জীবিত নাকি মৃত।দুঃখ পাই।বুঝি জীবিত।কিন্তু এই অন্ধকার থেকে আলোর পথ কোথায়?পৃথিবীব্যাপী এত অন্ধকার কেন?তাহলে কি এক অন্ধকার থেকে আরো অন্ধকারই জীবন?নাকি জীবনের আরো কোন রঙ অন্য কোথাও? অন্য কোনো বিষাদপর্ব শেষে?
জানি না জানি না সত্যি জানি না।আমি আসলেই কিচ্ছু জানি না।আমিই শূন্য। এই শূন্যতা থেকে উত্তরণের গল্প বলুন।আমি শুনবো।
চৈতালী সান্যাল:আজ শুভ রাত্রি জানাই । বাকি কথা কাল হবে ।
শূন্য র আগে নিজেকে বসাও হে গোবিন্দ দেখো শূন্যের মাণ বাড়ল কি না? তারপর আমাদের মতন অর্বাচীন দের বসাও দেখো শূন্যের মাণ আরও বেড়ে যাচ্ছে তাই না ?
এবারে বলি তুমি যদি শূন্য না হয়ে ভরা ভর্তি হতে তাহলে এই পৃথিবীতে কত অপূর্ব কিছু ঘটছে কত নতুন ধারণা আসছে কত পুরোন চিন্তা আবার নতুন করে উঠে আসছে কিছুই নিতে পারতে না ।
আমরা সব বুঝে গেছি সবজান্তা র ভাব করি বলেই অন্য মত পথকে সহ্য করতে পারিনা যতটুকু ঘটে ভরা আছে তাই সত্যি ভাবি , কি হাস্যকর চিন্তা ভাব আর তাই এত বিদ্বেষ ধর্মের নামে জাতের নামে এত হানাহানি।
কে ভাবছে যে আমিই শূন্য তার মানে একজন কেউ আছে যে চিন্তা করছে এক্ষেত্রে সেই একজন তুমি আর তোমার পরে শূন্য । বুঝলে অলমেতি ।
আহলে লিখতে বসলে আমি লিখি না কলম লিখতে থাকে আর তাকে না থামালে রান্না বান্না সব মাথায় উঠবে ।
গোবিন্দ ধর :ধীরে ধীরে আমরা সময়ের কাছে পরাজিত যদিও।তবুও খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচতে কে না চায়।তথাপিও যদি সময়কে বাগে নেওয়া অসম্ভব হয় তখনই তো শূন্য। শূন্যতা খুবলে খায় আমার মেধা মনন।
মনন কি খাওয়া যায়? মননের কি খাদ্য প্রয়োজন?একজন সৃজনশীল মানুষের কাছে মূহুর্তের আলোর প্রত্যাশা জরুরী নয়?চারদিকে হতাশামেঘ।কখন ঝমঝম বৃষ্টি হবে। এরকমই কি বাঁচা সম্ভব?
সকল কাজ একদিকে আর আপনাকে কলম কাগজ কিংবা নিদেন পক্ষে এই এন্ড্রয়েড মোবাইল থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলো।তখন কি বেঁচে থাকার স্বপ্ন আসবে?নয়তো ধরুন আপনার সকল নিকটজন বন্ধু সকলে একযোগে বন্দুক হয়ে গেলো আপনি সুস্থ থাকবেন? থাকা যায় এরকম?এই জায়গায় কি করণীয় জানা নেই। শূন্যতা হাতড়ে উদ্দীপ্ত থাকার ভান করে কতদিন হাসিমুখ রাখা সম্ভব?
চৈতালী সান্যাল:
আগষ্ট :২০২৩তবে তোমার আগের কথার রেশ ধরে বলা যায় তুমি কি সত্যি বান্ধব বর্জিত ? মোটেই না তাছাড়া তোমার আত্মপ্রত্যয় আছে । যাদের তুমি বন্ধু ভাবছিলে তারা যদি আসলে ছদ্ম বন্ধুত্বের খোলস পরে তোমায় ঠকাচ্ছিল তাহলে সে বন্ধুত্বের খোলস ভেঙ্গে যাওয়াই ভাল ।
আমার মনে হয় তুমি নিজেই নিজেকে প্রতিপক্ষ করে তুলেছো কারণ তোমার লেখার কত চাহিদা কত জন তোমায় ভালবাসে , কত জনের সাথে তোমার পরিচয় । তুমি শূন্যতা হাতড়ে আলোর খোঁজে চলেছো, তুমি আলোর পথযাত্রী ,। এখন তোমার বিরূপ সময় যাচ্ছে কিন্তু এ অবস্থা ক্ষণস্থায়ী। রবি ঠাকুরের কথা ধার করে বলাই যায় " যদি তোর .... । কিন্তু না কথাটার ব্যবহার এত ক্লিশে হয়ে গেছে তাই আর তা বলছি না বন্ধু তোমার আছেই নইলে এই অসম বয়সী আমিই বা অল্প চেনায় তোমার সাথে আলোচনায় জড়ালাম কেন?
গোবিন্দ ধর :এ এক কঠিন বিষয়।বয়স কি?বয়স সত্যি অসমবয়স হয়?হয়তো কেউ আগে এসেছেন পৃথিবীতে
কেউ পরে।কিন্তু সৃজনশীলদের নিকট বয়স আসলে কোনো বিষয়? প্রতিটি মানুষই তো আসলে নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্বে অথবা মুখোমুখি। আপনিও আপনার মুখোমুখি। আমিও।এক অন্ধকার থেকে আরেক অন্ধকারে নয় আলোয় আলোকিত হতে চাওয়াই আলোকদীপ্ত হওয়া।
বয়স নিশ্চয়ই এক সাধারণ গণিত। বয়সের বেড়াজালে বন্ধুত্ব আটকে থাকা নিজের সাথে নিজের প্রতারণা।সৃজনশীলতা বয়সে আটকে থাকে না।বন্ধুত্বও সম বয়সে আটকে থাকে না। শ্রদ্ধাশীল সকল বয়সের মানুষের মাঝে বন্ধুত্ব হতে পারে।
কিন্তু আমি এই বান্ধবহীন মহাসমুদ্রে বোতলের ভেতর আটকে যাইনি তো?আমি আটকে রেখে নয় আটকে রেখেও নয় বন্ধনহীন আত্ম উন্নয়ন হোক পরস্পর পরস্পরের নিকট বন্ধুত্বের অসীম আকাশ চিরকাল এই চেতনাবোধ থেকে মানুষের প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ করিনি আমি।সকল মানুষকে মানুষই ভাবি।বন্ধু ভাবি।বিশ্বাস করি।আর ঠিক এই জায়গায় এসেই আমি খাবি খেতে খেতে মরণাপন্ন হতে হয়।কে যে মানুষ আর কে অমানুষ যতক্ষণ একজন মানবমনবীর নিকট থেকে আমি উপলব্ধি করতে পারি না ততক্ষণ প্রতিটি মানুষই আমার নিকট এক একজন বন্ধু। এক একজন আত্মপ্রত্যয়ই মানুষ। এরকমই আমার মানুষ চেনার পাটিগণিত। সুতরাং ঠগে যাই।বান্ধবহীন হই।শিল্প-সাহিত্যের অসীমান্তিক আকাশো আমার উড়ানো প্রতিটি ঘুড়ি কেউ ভূকাট্টা করে দেয়। আনন্দ পায়।আর আমি মানুষের ভালোবাসা থেকে ঘৃণার মাঠে এক সামান্য ফুটবলের মতো অসংখ্য লাথি খেয়েই যাচ্ছি।
হয়তো আর এমন চাই না।তাই আপনার মতে সম বয়সীদের মধ্যে নিজেকে আর বিজ্ঞাপিত করতে চাই না।আমার কি কেনও বলতে চাই না।কাউ টেনে আলোকিত করলে সে-ই সুযোগ মতো আপনাকে টেনে নামিয়ে দেবে এমন পরিবেশে নিজেকে তুলে দিই না তার হাতে তাহাদের হাতে।
সুতরাং আমার ভাই নাই।বান্ধব নাই...।তথাপি ন্যাড়া বেলতলা বাদ দিতে পারে আদৌ?
চৈতালী সান্যাল:তোমার কাল রাতের কথার সূত্রে বলি তুমি যে এক চেতনা সম্পন্ন মানুষ গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে নিজের জীবন তরী বয়ে নিয়ে চলছো তার সাথে কর্তব্য নির্বাহ করছো অতি যত্নের সাথে , এই জন্যই তোমায় ভাললাগছে । তুমি জনারণ্যে ও একা কারণ তুমি চিন্তাশীল মানুষ ।
পৃথিবীতে যত বিখ্যাত মানুষদের জীবন দেখো , বিদ্যাসাগর কে দেখো । আমি তোমার সাথে ওনার তুলনা করছি না শুধু বলতে চাই যে তুমি আত্ম সন্ধানী সৃষ্টিশীল মানুষ । তুমি যে অন্যরকম সমাজে তোমাকে এর দাম দিতেই হবে , তবে এতে তুমি ডুববে না বরং আরও অভিজ্ঞ হবে ।
ন্যাড়াকে বেলতলা বাদ দিতে হবে না তার মাথায় যে শিরস্ত্রান আছে ভালবাসার সকল জাতকে সকল মতকে মান্যতা দিয়ে নিজের চিন্তাশক্তি কে শান দিয়ে উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে চলেছো । কাজেই মাভৈ ।
গোবিন্দ ধর :তোমার কাল রাতের কথার সূত্রে বলি তুমি যে এক চেতনা সম্পন্ন মানুষ গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে নিজের জীবন তরী বয়ে নিয়ে চলছো তার সাথে কর্তব্য নির্বাহ করছো অতি যত্নের সাথে , এই জন্যই তোমায় ভাললাগছে । তুমি জনারণ্যে ও একা কারণ তুমি চিন্তাশীল মানুষ ।
পৃথিবীতে যত বিখ্যাত মানুষ দের জীবন দেখো , বিদ্যাসাগর কে দেখো । আমি তোমার সাথে ওনার তুলনা করছি না শুধু বলতে চাই যে তুমি আত্ম সন্ধানী সৃষ্টি শীল মানুষ । তুমি যে অন্যরকম সমাজে তোমাকে এর দাম দিতেই হবে , তবে এতে তুমি ডুববে না বরংআরও অভিজ্ঞ হবে ।
ন্যাড়াকে বেলতলা বাদ দিতে হবে না তার মাথায় যে শিরস্ত্রান আছে ভালবাসার সকল জাতকে সকল মতকে মান্যতা দিয়ে নিজের চিন্তা শক্তি কে শান দিয়ে উৎকর্ষের দিকে এগিয়ে চলেছো । কাজেই মাভৈ ।
গোবিন্দ ধর :আপনার আশীর্বাদ আমি মাথায় তুলে রাখলাম। পথ ফাঁড়ি দিতে এগুলো আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
কিন্তু এই দায়িত্ব কর্তব্যের পাশ কেটে নিজেকেও তো সুন্দর ও সৃজনে উদযাপনে এগিয়ে নিতে হয়।সেই জায়গায় এক বিরাট ফাটাল।এই ফাটাল গলে টাইটানিক জাহজে ধীরে জল ঢুকলে পরিবারটিই তো বিপন্ন হবে।এই জায়গায় নিজেদের যাপনক্রিয়ায় কি মেডিপিচ প্রয়োজন যদি আলোচনা করেন।আপনি দীর্ঘ পথ জার্নি করা মা মেয়ে ভালোবাসার একজন সফল জীবনশৈলী শিক্ষক। আপনি কি তার নিদান দিতে ইচ্ছুক?
চৈতালী সান্যাল:এই যে ফাটলের কথা তুমি লিখেছো তা তোমার চিন্তা কে বিঘ্নিত করছে তা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু আমি বলি আমাদের মধ্যে কি অনেক আমি নেই ? এক আমি আমার সন্তানের মা , আবার আমার স্বামীর স্ত্রী , কারুর বৌদি, দিদি , কাকিমা ইত্যাদি সেরকম তুমি নিজেও একাধারে মা বাবার সন্তান, স্বামী, পিতা , শিক্ষক আবার বন্ধু, এই এক তুমি সব কটি চরিত্রে বিরাজ করছো কিন্তু এরও ভিতরের যে আমি সে তো তোমার শিল্পী সত্তা ! আর তাকেও তোমার লালন করতে হয় হয়ত অনেক ঝড় ঝাপটা সামলে কিন্তু তা তো তুমি বাঁচিয়ে রেখেছো ! কাজেই নিজের উপর বিশ্বাস রাখ তুমি শত বাধা বিঘ্ন পার করেতোমার এই আমিকেও যথাযোগ্য সম্মানিত করবে বিদ্যা চর্চার মধ্য দিয়ে, তোমার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। দেখো না রবীন্দ্রনাথের জীবন শৈলবে মাতৃ হারা কৈশরে বৌদি যে তার শিল্পী সত্তাকে জাগিয়ে তুলেছিল তার ওরকম বিভৎস মৃত্যু তারপর স্ত্রী রথীন্দ্রনাথ কে বাদ দিয়ে সব কটি ছেলে মেয়ে যাদের উনি প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন সবাইকে হারিয়ে ও নিজের শিল্পী সত্তাকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন !
তুমি বলবে রবীন্দ্র নাথের সংগে তুলনা কেন তিনি ও তো মানুষ মহা মানব যুগ পুরুষ বলা যায় কিন্তু তাঁর থেকে প্রেরণা তো নেওয়া যায় ।
তোমার জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয় কিন্তু এর মধ্যে ও তোমার জীবন সৃজনশীলতায় ঝলমল করে উঠবে এই প্রার্থনা করি ।
গোবিন্দ ধর :একের মধ্যে অনেক স্বত্বা এ তো সকল প্রাণীর মধ্যেই বিদ্ধমান।একজন মা কারো মেয়ে কারো স্ত্রী কারো প্রিয়জন কারো কাকী কারো বৌদি দিদি নানা অংশে বিভাজিত হয়ে অভিনয় করছি এক এক চরিত্রে। কিন্তু এই বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে আপনি আপনিই তো আমি আমিই তো না সেখানেও আরো আরোপিত অভিনয়শিল্পী? না পূর্ব পরিচিত সেই সকল চরিত্র? আমাদের চারপাশের মুখের গভীরে লুকানো মুখোশ পড়তে হিমসীম খাচ্ছি। সেই নীরিখে আমাদের বহু আমিকে কে কন্ট্রোল করছে?আমার আমি?আমার আমিই কি প্রকৃত আমি?
চৈতালি সন্যাল:তোমার এই আমি যে প্রকৃত আমি তাও যেমন নিশ্চিত করে বলা যায় না আবার এই আমি যে তুমি নও তাও বলা যায় না, কারণ যতদিন যায় মানুষ অভিজ্ঞতায় আরও বেশী পরিপক্ক হয় বিশেষ করে সেই মানুষ যে অন্বেষণ রত যে শুধু আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা , যার মাথার মধ্যে বোধ কাজ করে । বেশ অনেক বছর আগের তুমি নিশ্চয়ই একটু ভিন্ন ছিল এখনকার আমির চেয়ে তাই বলে তা অভিনয় হবে কেন ? যে কোন সম্পর্কের মূলভিত্তি হল বিশ্বাস ত যদি সত্যি না হয় তাহলে তো সম্পর্ক ই টেকে না । আর যে আমার আমিকে একই সিদ্ধান্তে বেঁধে রাখে , যা ছোট থেকে শিখেছে তাকেই ধ্রুব সত্য বলে মেনে নেয় নতুন জ্ঞান আহরণ করে না সে তো সৃষ্টিশীল মানুষ ই নয় । থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড় করতে তো তুমি আসনি । তাই তোমার এই আমি এখনকার জন্য সত্যকার আমি । হতে পারে তোমার এই বিচার পরে বদলে যাবে তবে এখনকার তুমি তো আর মিথ্যে নও । যদি মিথ্যে হও তাহলে হাজার কথার বুদবুদ উড়িয়েই বা কি হবে ?
আমরা নিজের মধ্যে র আমি কে ঠিক ঠিক চিনতে পেরেছি ? সময়ের কষ্টি পাথরে যতক্ষণ ঘষা খাচ্ছি এই আমারমধ্যে অন্য আমি বেড়িয়ে আসছে কখনও অধৈর্য আমি কখনও রাগী আমি কখনও শান্ত আমি। কখনও এক লাইনও লিখতে না পারা হতাশ আমি কখনও আবার নতুন কোন লেখনী মাথার মধ্যে ভিড় করে এবং তা লিখে ফেলতে পেরে আপাত তৃপ্ত আমি ।
গোবিন্দ ধর :আপনার মূল্যায়ণ আলোকপাত আমার মতের বিরুদ্ধে নয়।আবার আমার মতও আপনার বিরুদ্ধে নয়।পরস্পর বহুদূরে বসবাস করলেও মোটামুটি পূর্ব সত্যের একই রকম বর্তমান সত্যও হয়।এই-ই হয়।ইহা স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক যা তা বিহারের পূণিয়ায় আপনি বসবাসরত একজন সৃজনশীল মানুষ। আর আমি সুদূর ত্রিপুরার রাতাছড়ায় বেড়া ওঠে নানা পরিক্রমার পর বেশ কিছুদিন কুমারঘাটের হালাইমুড়া আছি।অথচ লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন আমাদেরকে এক অনুষ্ঠানে পরিচিত করে তুলে।পরপর বার কয়েক দেখা কথা বলার মধ্যে দিয়ে সামান্য পরিচয় ঘটছে।আপনার লেখালেখির জগতে সেরকম পরিচয় হয়নি।এখনো আমাদের কাজের বিস্তার আমরা জানি না। হয়তো একটু বুঝি অবিভক্ত পশ্চিমবঙ্গের সাথে বিহার ও অভিবক্ত বিহারের সাথে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সাহিত্যের নাড়ির যোগ আছে।বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ আছে।শরৎশ্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যোগাযোগ আছে।।এই পরিপ্রেক্ষিতে দূরত্ব বিষয় নয়।বিষয় আমরা সকলেই বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের অংশ।বৃহৎবঙ্গকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস অনেক লেখা হয়েছে এগুলো আসলে অধ্যাপকীয় মারপ্যাচ।এসবে আমি নই।আমি বুঝি একদিন বৃহৎ বাংলার বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস লেখা হবে।আর কাজের প্রাথমিক সূত্রধরের কাজটি এ বছরের প্রকাশনা মঞ্চ আয়োজিত ও স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনা এক দীর্ঘ লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে এগুচ্ছে। কিছু কিছু কাজকর্ম হয়েওছে।আরো হবে।এরই একটি দিক হলো পারস্পরিক সম্পর্ক শ্রদ্ধা বিশ্বাস আলোচনা মুখোমুখি আড্ডা লেখাপত্র বিভিন্ন অঞ্চলের লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশের সুযোগ গড়ে ওঠা তখন মূল কাজটিই বিচ্ছিন্নভাবে করেও করা হয়।আপনরা ও আমরা সে ও তাহারা আমরা তো আসলে সেই কাজটিই করে যাচ্ছি। এই জায়গায় জানবো আপনার চর্চার ক্ষেত্র ও তার ব্যাপকতা।
বলুন কেন লেখেন?কী লিখেন।কী লিখতে কী লেখেন?
চৈতালী সান্যাল:আমি একটি সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পন্ন পরিবারের সন্তান । পরিবারের অনেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত , আমি নিজে একটু আধটু গল্প লিখি ,। ছোট থেকে নাটক করতাম , কবিতা আবৃত্তি করতাম । এখন শ্রুতি নাটক করি বা করাই । নিজের সম্বন্ধে বলতে খুব কুন্ঠা হচ্ছে ।
এবার আমার ইনি যিনি আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু , উনি হলেন মূলত কবি আবার বক্তা। অনেক জায়গায় ওনাকে ডাকে কোন কোন বিষয়ের উপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য । পেশায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক অধিকারী ।
এবার আমরা বিহারে বাস করি আজকের বিহার আর কিছু বছর আগের বিহারের আকাশ পাতাল তফাৎ । এখন বাংলা আর পড়ানো হয় না । অধিকাংশ বাঙ্গালী পশ্চিম বঙ্গে বা বাইরে চলে গেছে। পূর্ণিয়ায় মুস্টিমেয় কিছু মানুষ বাংলা ভাষাপ্রেমী আছেন । এমনি গান বাজনা য় তাও ইন্টারেস্ট আছে কিন্তু লেখালেখি আমার বাপের বাড়ি সহ দু চারটে ঘর । কাজেই আমরা বৃহত্তর বাংলার মুখাপেক্ষি হয়ে আছি । বাংলা যাতে নিশ্চিণ্হ না হয় তাই আমাদের বিহার বাঙালি সমিতির লক্ষ ।
গোবিন্দ ধর :আমি একটি সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পন্ন পরিবারের সন্তান । পরিবারের অনেকেই লেখালেখি র সাথে জড়িত , আমি নিজে একটু আধটু গল্প লিখি ,। ছোট থেকে নাটক করতাম , কবিতা আবৃত্তি করতাম । এখন শ্রুতি নাটক করি বা করাই । নিজের সম্বন্ধে বলতে খুব কুন্ঠা হচ্ছে ।
এবার আমার ইনি যিনি আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু , উনি হলেন মূলত কবি আবার বক্তা। অনেক জায়গায় ওনাকে ডাকে কোন কোন বিষয়ের উপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য । পেশায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক অধিকারী ।
এবার আমরা বিহারে বাস করি আজকের বিহার আর কিছু বছর আগের বিহারের আকাশ পাতাল তফাৎ । এখন বাংলা আর পড়ানো হয় না । অধিকাংশ বাঙ্গালী পশ্চিম বঙ্গে বা বাইরে চলে গেছে। পূর্ণিয়ায় মুস্টিমেয় কিছু মানুষ বাংলা ভাষাপ্রেমী আছেন । এমনি গান বাজনা য় তাও ইন্টারেস্ট আছে কিন্তু লেখালেখি আমার বাপের বাড়ি সহ দু চারটে ঘর । কাজেই আমরা বৃহত্তর বাংলার মুখাপেক্ষি হয়ে আছি । বাংলা যাতে নিশ্চিণ্হ না হয় তাই আমাদের বিহার বাঙালি সমিতির লক্ষ ।
চৈতালী সান্যাল:দ্যাখো আমার লেসার অপারেশন হয়েছে অনেক বার চোখে ড্রপ দিতে হচ্ছে। আবার ১৯ তারিখ কোলকাতা যাব ২২ এবং ২৯ আমার দু চোখের অপারেশন হবে ফলে প্রচুর লোক আমাদের সাথে দেখা করতে আসছেন বা ফোন করছেন । এত ধানাই পানাই করছি এই বোঝাতে যে আমার এখন সময় খুব কম তবু দু/ চার কথা লিখছি ।
আমার মা , দাদা , ছোড়দা , দিদি প্রত্যেকেই মূলতঃ কবি । দাদার বেশ কয়েকটি বই শান্তিনিকেতন বা কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে । আমার দিদি অসম্ভব ভাল লেখেন কিন্তু প্রকাশ করতে চান না । ছোড়দা আই আই টি খড়গপুরের খুব উজ্জ্বল কৃতি ছাত্র ছিল । তবে সাহিত্যেও তার ভাল দখল ছিল । আমাদের এখানে সিরিয়াস নাটক প্রথম ওই করায় , তার কয়েকটিতে আমিও অভিনয় করি । দু:খের বিষয় ১৯১৮ সালের ১৪ ই এপ্রিল ৬২ বছরে আমরা তাকে হারিয়েছি । আমার দাদার ছেলে অঙ্কনরায় প্রধানত সংগীতশিল্পী কিন্তু সে ও সাহিত্যের লোক । ছোটদের পত্রিকা আলোর সমুদ্দুরের সম্পাদক এছাড়া বড়দের কাগজের সংগেও আছে যেমন এখন শান্তিনিকেতন । ওর ও অনেক বই প্রকাশিত হয়েছে। শান্তিনিকেতনে ওকে সবাই মান্যতা দেয় ।
এবারে অজয় সান্যালের কবিতা অনেক পত্র পত্রিকায় বেড়িয়েছে বা এখনও বেড়োয় , অনেকেই ওনার কবিতা গুলি বই হিসেবে ছাপার জন্য জোড় করেন কিন্তু উনি তাতে এখনও সাড়া দেন নি । আমার ও ওই অবস্থা আমার গল্প ছাপা হয়েছে বা এখনও অনেকে চাওয়ায় ছাপতে দিয়েছি । আর আমরা দুজনে পছন্দ করে এক হয়েছি , এটুকু বলতে পারি ফাঁকির বাঁশি বাজেনি , দুজনে ই তোমাদের মত লোকেদের সাথে সম্পর্ক রাখতে সচ্ছন্দ বোধকরি । কোন রকম ডগমা আমাদের মধ্যে নেই । আমরা শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনের দিক্ষিত কিন্তু মতুয়ার বুদ্ধি রাখি না । মুক্তমনা লোকেদের ভাল লাগে। বলতে পার শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লাইন ধার করে বলতে পারি , ধর্মে আছি জিরাফেও আছি ।
গোবিন্দ ধর :এই কথা তো সাংঘাতিক হয়ে গেলো? একই সাথে ধর্মে ও জীরাফে থাকা তো ভয়ঙ্কর।আমি হয়তো আপনার কথার সুর ধরতে পারিনি।যদি হ্যাঁ হয় তো কথাটির ব্যাখ্যা চাই।না হয় তো ঠিক আছে। পরবর্তী কথায় আমরা আড্ডা চালিয়ে যাবো।আর হ্যাঁ আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।চোখের ছানি অপারেশন আজকাল চোক্ষু হাসপাতাল বেশ উন্নত হয়েছে। আশা রাখি আপনি বিনা বেগে সফল অপারেশন করিয়ে নিতে পারবেন।জানেন নিমহান্স আছি। গত সোমবার অকস্মাৎ আক্রমণ করলো তাতে কয়েক মিনিট সেন্স ছিলো না। পাশাপাশি মাথায় আঘাত লাগলো।হাত কেটে গেছে। চোখে আঘাত লেগেছে। চশমা ভেঙে গেছে। গতকাল ১৬ আগষ্ট ২৩ সেন জনস্ হাসপাতালে গিয়েছিলাম চশমার পাওয়ার পরখ করে ব্যাঙ্গালুর থেকে কিনবো আশায়।পথে অনেক খরচা হলো আসা যাওয়ায়।কিন্তু যথা সময়ে পৌঁছাতে পারিনি।সকাল নয়টায় হাসপাতালের আউট পেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট খোলে আর চারটায় বন্ধ হয়।আমি পৌঁছলাম বিকেল চারটা দশ মিনিট নাগাদ। কিন্তু দেখাতে পারিনি। সময়ের কি মূল্য দেখুন।আর পথে এক কাপ চা খেতে খেতে দীর্ঘ একা পথ চলা সিদ্ধান্ত নেওয়া আর আকস্মিক বিপর্যয়ে মাথাটাও বিগড়ে আছে। ভাবলাম একটু হালকা হই।একটা সুখ টান দিচ্ছি। কোথা থেকে ট্রাফিক পুলিশ এসে ছবি তুলে নিয়ে ব্ল্যাক মেল করে বসলো।বললো হয় থানায় যেতে হবে।নয়তো ২০০ টাকা ফাইন দিতে।শেষ পর্যন্ত বলে কয়ে ১০০ টাকা দিলাম।বললাম ছবির রেকর্ড ডিলিট করতে।বললো করবে।আমি লুকিয়ে ধুমপান করছি। নিজের জীবন নষ্ট করছি।কিন্তু তাদের আইন আমাকে মানতে বাধ্য। কিন্তু আমি থানায় বড়বাবুর সাথে কথা বলতে যাইনি কারণ সময় সংকট। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ যে ১০০ টাকা নিলো তা ঘোষ।এই ঘোষ দেওয়া নেওয়া দুটোই তো অপরাধ। কিন্তু তিনি অপরাধ করলেন। আমিও তাতে সম্মতি দিলাম।অথচ ত্রিপুরা হলে আমি আইনের আশ্রয় নিতাম।আসল কথা হলো নেশাদ্রব্য বিক্রি করবো দেদার। অথচ পান করা অপরাধ।আমি এই আইন মানি না।আমি পান বা খেলে যা অপরাধ তা সরকার কেন টেক্সের জন্য বাজারজাত করবেন তাও তো সংবিধান স্বীকৃত নয়? এই হচ্ছে আমাদের ভারত! এই ভারত আমার ভারত হলে কষ্ট হয়।পাশাপাশি অনেক কষ্ট সহ্য করেই জীবনে চলতে হয়।আপনি আমি আমরা এরকমই আছি।কিন্তু ধর্মে ও জিরাফে থাকা এক সাথে কিরকম সম্ভব তা কিন্তু বুঝতে পারিনি। একটু বলবেন?
চৈতালী সান্যাল:প্রথমে বলি হঠাৎ আক্রমণ কে করল? আর আঘাত গুরুতর নয় আশাকরি খুব চিন্তিত থাকলাম । আর পুলিশ বা প্রাশাসনিক নৈতিকতা বিশেষ করে অন্য রাজ্যে আর কহতব্য নয় মন নিরাশায় ভরে যায় ।
মাথার আঘাত লেগে সেন্স চলে গেছিল , নিমহান্সের কোন ডাক্তার কে দিয়ে প্রাইভেটে হলে ও দেখিয়ে নাও ভাই আমার , এটি আমার অনুরোধ পরবর্তীতে যাতে কোন কমপ্লিকেশন না হয় ।
আমি ধর্মে আছি আর জিরাফে আছি বলতে বোঝালাম তথাকথিত ধার্মিক আমি নই , তিলক চন্দন বা ফেজ টুপি তেও নয় কিন্তু কেউ যদি অন্যকে মানসিক শারীরিক আঘাত না করে নিজের মতাদর্শ নিয়ে চলে তাহলে তার সাথে আমার বিরোধ নেই , আমার ধর্ম মানব ধর্ম তার মাঝে প্রকৃতি ও আছে , পরিবেশ ও আছে কিন্তু আমি ধর্মান্ধ নই । আর জিরাফে আছি বলতে সাধারণ জীব সমাজে যে সমস্ত অমলিন আনন্দ আছে তার সাথে ও আছি । দুটোয় কোন বিরোধ নেই শুধু মানুষ যার সাথে মিশচি সে যেন সাচ্চা হয় সে জেন ভেকধারী না হয় বা কট্টর ধার্মিক মানে অন্য মতকে মানে না এরকম না হয় আবার সবকিছু নস্যাৎ করে নিজের মতকেই সর্বপোরি , ধর্ম মানেই বাজে এরকম ও না হয় । বুঝলে ? আমি কি তোমায় বোঝাতে পারলাম ?
গোবিন্দ ধর :
হ্যাঁ বুঝতে পারছি। আজকাল যেভাবে পাড়ায় পাড়ায় শনিমন্দির গজিয়ে উঠেছে তাতে শতনাম বাদ দিয়ে হনুমান চালিশা পাঠের প্রতিযোগিতা চলছে। এই সময়ে শুভচিন্তা জারিত রেখে এগিয়ে যাওয়া কঠিন বিষয়। তবুও আমাদের নিকট শুভ চিন্তায় জারিত থাকাও জরুরী। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছি।তিনি বলেছিলেন অসুবিধে হলে জানাতে। তা তেমন নয়।একটু ব্যথাা তো আছেই।চশমা এখনো নেওয়া হয়নি।
বলুন বিহার নিয়ে আরো কথা?
চৈতালী সান্যাল:আমাকে সবাই জোর করায় আরেকজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছি পরে সময় করে তোমায় একটু পুরো বিহারের বিষয় না হলেও বিহারের অন্যতম শহড় পূর্ণিয়া নিয়ে বলব ।
গোবিন্দ ধর :ঠিক আছে। অপেক্ষায় আছি।
১৫:০৮:২০২৩
নিমহান্স, ব্যাঙ্গালুরু।
0 Comments