ডেমছড়া ধরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্য অনাআবিস্কৃত ঝর্ণায় || গোবিন্দ ধর
ডেমছড়া ধরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্য অনাআবিস্কৃত ঝর্ণায়
গোবিন্দ ধর
ডেমছড়া ধরে হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্য বলতে প্রায় বিশ কিমি দূরে এক অনাআবিস্কৃত ঝর্ণায় পাথরের উপর বসলাম আমরা নয় জন।আমাদের বৃক্ষরাম সিপি এস বি স্কুলের সহকর্মী পাঁচ জন।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজু দাস,পান্ডব দেববর্মা, পতিরাম রিয়াং,ভুলুকুমার দেববর্মা এবং আমি।স্থানীয় জনজাতির দুজন এল সি রিয়াং ও স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান এবং রাজুবাবুর বোন জামাই। আর আমার প্রিয় বন্ধু কবি ও কথাসাহিত্যিক হারাধন বৈরাগী। দীর্ঘ দিন থেকে এরকম এক আড্ডায় যাকে চেয়েছি বহুবার।তিনি কাঞ্চনপুর থেকে সকালে আমাদের আড্ডায় আসলেন।
হারাধন বৈরাগী পেশায় শিক্ষক। কবিতা,গল্প ও গদ্যে সাবলীল বিচরণ। 'হাসমতি ত্রিপুরা', 'হৃদি চম্প্রেঙ', 'খুমপুই পাড়ায়'(কাব্যগ্রন্থ)। 'খুমপুই থেকে সিকামনুকতাই'-ত্রিপুরার জনজাতি জীবনের আদি হৃদিমালা;একটি ব্যতিক্রমী গদ্যগ্রন্থ।।'বুরাসা'(গল্পগ্রন্থ),'সমকালীন ত্রিপুরার পনেরোজন কবির কবিতা (যৌথসংকলন),'ব্যাটিং জোন'(অখণ্ড বাংলার নির্বাচিত অণুগল্প সংখ্যা/ যৌথসংকলন ),'নীহারিকা নির্বাচিত ত্রিপুরার তরুণ কবিদের কবিতা'(যৌথসংকলন)।'৫৪জন গল্পকারের ২১৬টি অণুগল্প' (যৌথসংকলন)।'ত্রিপুরার সাহিত্যে নদ-নদী ও গোবিন্দ ধর'(যন্ত্রস্থ),ছায়াতরু(ত্রিপুরার সাম্প্রতিক ছোটগল্প/যৌথসংকলন),'তবু ভালোবেসে যাবো'(একটি প্রেমের গল্প সংকলন /যৌথ)।নিয়মিত লিখে চলেছেন এপার ওপারের সমসাময়িক বিবিধ পত্রসাহিত্য ও লিটলম্যাগাজিনে। অসম্ভব জঙ্গলআউলিয়া।ভালোবাসা জঙ্গল,জনজাতি,জুমজীবন-জীবননিকষ।তারপর আমরা ধীরে ধীরে গন্তব্যে হাটঁতে হাটঁতে বের হই।
বেলা তখন এগারটা অতিক্রম করেছে। সকালেও কেউ খাইনি।রান্নার আয়োজন করতে শুরু করলাম সকলেই।ভাত বসলো বাঁশের চোঙে। ভাত রান্না শেষ।প্রকৃতি দেখছি আর দেখছি চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। লংতরাই পাহাড়ের জনজীবনের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্যে মোহিত।ঝর্ণার জলে বারবার চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ স্নান সারলাম।কেউ কেউ তো লতা বেঁয়ে উপরে উঠলাম।নামলাম।আবার উঠলাম।খাওয়ার আয়োজনের পাশাপাশি প্রকৃতির অপার বিস্ময় এই অঞ্চলে না এলে ইহ জীবনেও দেখার সুযোগ হতোনা।
এবার ভাতের থালায় কিছু তো চাই। পাহাড়ে সহজ উপায়ে রান্না করতে গোদকের জুড়ি মেলা ভার।যদিও পর্ক,চিকেন ছিলো।তবুও আজকের মেনু গোদক।
গোদক তৈরীর জন্য নানা রকম উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।এখানে আমরা চিংড়ি মাছ,কাঁকড়া, লাঠিমাছ,পেঁয়াজ,জুমের খেত থেকে পুক মরিচ সংগ্রহ করে আনলাম।এগুলো প্রকৃতি থেকে আমরা সংগ্রহ করেছি
তাই এতে মিশানো হলো রসুন,নুন,কলাগাছের কচি অংশ, সিঁদল একটি মৃত্তিঙ্গাবাঁশের লম্বা আঁখ ওয়ালা অংশে প্রথম সব পদ ঢুকিয়ে দিয়েছি।তারপর উপরের ফাঁকা অংশ বন্ধ করে দিয়ে আগুনে হালকা আঁচে বসিয়েছি। একটু সময় বাঁশে আগুনের আঁচ লাগানো হয়ে গেলে বাঁশ একটু কালো কালো আকার ধারণ করতেই বুঝতে হবে গোদক রেডি।আগুন থেকে বাঁশ সরিয়ে নিন।তারপর কলা পাতায় সবগুলো ঢেলে নিন।
সুঘ্রাণ ম ম করবে।জুমের খেতের চাল আগে থেকেই ভাত রান্না ছিলো।পরিমান মতো নিন।খেতে শুরু করুন। জিবে রসনায় তৃপ্তির জল আসবে নিশ্চিত। যারা পাশে থাকবে তাদের জিবেও জল টলটল করবে।খিদে না পেলেও চেটেপুটে খাবার ইচ্ছে নিশ্চিত হবেই হবে।জুমের পুক মরিচ ঝালের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।আর তাতে রসনায়ও জল লকলক করে।মনে হবে আপনি অপার আনন্দসাম্রাজ্যে বসবাস করছেন।
এই অনাআবিস্কৃত ঝর্ণা একদিন হতে পারে পর্যটকদের নিকট সৌন্দর্য অবলোকনের ইলিপেন্টপলস।আর লংতরাই জুড়ে পাথরের প্রকৃত ম্যাচুরিটি যখন আসবে তখন ত্রিপুরা হতে পারে অর্থনৈতিক ভাবে এক সমৃদ্ধ রাজ্য।আমাদের পাথর পররাষ্ট্রে রপ্তানি হতে পারবে বিশ্বাস করি। এত পাথর। বড় ছোট মাঝারি। যে দিকে চোখ যায় পাথর আর পাথর।মনে হয় এখানেই থেকে যাই এক গুহামানবের মতো।
২৬:০৮:২০২২
0 Comments