আত্মক্ষর:পর্ব-১৪

গোবিন্দ ধর

মহিষ চরাতে গিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম।দিবাস্বপ্ন।তার কোনটাই হয়নি বাস্তবের পৃথিবীতে।তবুও স্বপ্ন দেখতে মজা।এই ধরো আমি হবো রাখাল রাজা।সবাই মহিষ দেখবে। আমি বসে বসে মঙ্গল কাটাকাটি খেলবো।সাতঘুঁটি খেলবো।মহিষটা এদিক ওদিক হলে অন্যরা দেখবে।সন্ধ্যা বাসায় আসবো মহিষের পিঠে চড়ে।পা'য়ে কাঁদাটিও লাগবে না।এমন রোজদিন ভাবতাম।এমন দিন হোক আমার।হয় না।দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইলো না।স্বপ্ন চিরকাল দূর বহুদূর তেপান্তরের মাঠ বরাবর। শেষ অব্দি ঘামে নেয়ে একশা হয়ে বাসায় নিয়ে আসতাম।মহিষ গোয়ালঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে নিতাম।তারপর পা -হাত নিজের মতো করে ধুঁয়ে নিয়ে ঘরে আসতাম।সন্ধ্যার আলোয় সব কাঁদামাটি জলের ঝাঁপটায় পা-হাত থেকে তাদের মায়া ছেড়ে আমায় ছেড়ে যেতেই চাইতো না।আমি তখন ক্ষেতে বোনা সর্ষের তেল হাত পায়ে মেখে কাঁদা ছাড়াতে প্রলেপ দিতাম।কাঁদার খুব অভিমান সর্ষের তেল ডিঙ্গিয়ে দেখা গেলো তিনি আবার আমার দিকেই চেয়ে আছেন।এমন দিনটা আর কোথাও পাই না।যা কিছু সব স্বপ্ন আজ।স্বপ্নগুলো বাসী।নেই নেই আমার কাছ থেকে স্বপ্নরা উড়ে গেলো কোন সুদূরের তেপান্তরের মাঠের
' পরে।আমি তখন হারিয়ে যেতাম।আমি তখন রাখাল রাজা।
মাঝে মাঝে মা কাঁঠাল বীচি ভাজা করে দিতেন।চাল ভাজাও দিতেন।গামছার মুড়ে করে নিয়ে যেতাম।খেতাম।ভালো লাগতো।মজা করে খেতামও।রসনায় কি তৃপ্তি পেতাম।সে সব সোনালীদিনগুলো,বিকেলগুলো,মহিষচরানো বিকেলগুলো,গোল্লাছুটের বিকেলগুলো কবেই তো হারিয়ে গেছে।
আমিও ধীরে ধীরে বয়:কালের দিকে এগিয়েছি।তখন বন্দী,লাই,মইন,কাবাটি,সাতঘুঁটি,মঙ্গল কাটাকাটি,কুতকুত কি না খেলতাম।কাবাডিও খেলতাম।কাবাডি খেলায় দুইগ্রামের আমিই রাজা।পেরে ওঠার তো সমবয়সী কেউ ছিলো না।কেউ কেউ বড়রাও আক্রান্ত ছিলো আমার খেলার বুদ্ধি মত্তায়।কত কত দিন কাবাডি খেলায় আমিই প্রথম হতাম।
আমার সাথে ফুটবলের বনিবনা হয়নি।হয়নি ভলিবল কিংবা ক্রিকেট কিংবা টেবিল টেনিস।কিংবা বাস্কেটবল।
মাঝে মাঝে  তাসও খেলতাম।শুধু ২৯।কিংবা ওয়ানইয়ার।তার বেশি নয়।
উঁকি ঝুঁকি দিয়ে তিনতাসী দেখেছি।আমার মাথায় সেসব ঢুকেনি।খেলায় আমি সব সময় পিছিয়ে পড়া বালক।পড়ায়ও মাথা খুলতে অষ্টমশ্রেণির ঘানি টেনে যখন পাশ করে নবম শ্রেণিতে উঠলাম হঠাৎ আমার কাছে অনেক কিছু সরল হলেও বাহান্ন তাসের তিপ্পান্ন নং খেলায় আমি পরাজিত হতাম সর্বদা।
আমি মহিষের পিচু সময় কাটিয়ে বড় হতে গিয়েও যেটা পারিনি বাহান্ন তাসের পর যে খেলা শুরু হয় আজোও আমি শিখিনি।খেলায় খেলোয়াড় নয়।খেলারসাথি ছিলাম।ফুটবলে লাথি দেওয়ার আগেই মনে হতো আমার পা ভেঙ্গে যাবে।নখ উল্টে যাবে।এমনি হয়নি এমনও নয়।পা মচকে বাসায় এসেছি  বহুদিন।বলিনি বাবাকে।মাকে কানে কানে বলতাম।
আরো একটি খেলায় আমার উৎসাহের অন্ত ছিলো না।খেলাটির কি নাম দেবো ভাবছি।
আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে বড় টিলা ছিলে।টিলার উপর থেকে সুপারীর খোলে বসে নিচে নামতাম।আমরা বলতাম চল ভছল দিয়ে আসি।ভছল মানে সুপারীর খোলে টিলার উপর খাঁড়া অংশে বসলে খোল সমেত নিচে নেমে আসতাম।তখন তো আর মহেন্দ্র জীপ গাড়িও ছিলো না।আমার আবিষ্কার করা ভছল গাড়ি চড়েই বিকেল কাটিয়ে দিতাম।হাতে টেনেও টানা সুপারী ছুঁই এর গাড়িও ছিলো সামন্য দূরত্ব অতিক্রমের একমাত্র ছুঁইগাড়ি।এক্কাদেক্কায়ও চড়তাম।নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কতবার মুখ তুবড়ে পড়িনি এমন নয়।
এরকম কত ছোট ছোট খেলায় কত আনন্দই না হতাম।তারপর ডাংডিং।কানামাছি।অনেক খেলেছি।কিন্তু ব্রীজ খেলা আজোও আমার মাথায় ঢুঁকেনি।এতটাই বুদ্ধি আমার।

১৭:০৬:২০১৭
সকাল:৫:৩০মি।
কুমারঘাট।

0 Comments