অভিশপ্ত বিমান ও তাঁর যাত্রীদের জন্য আমরা মনে মনে শোকাহত|| গোবিন্দ ধর
অভিশপ্ত বিমান ও তাঁর যাত্রীদের জন্য আমরা মনে মনে শোকাহত
গোবিন্দ ধর
আমরা শুধু সামনের দিকেই এগুতে পারি; আমরা নতুন দরজা খুলতে পারি, নতুন আবিষ্কার করতে পারি – কারণ আমরা কৌতুহলী। আর এই কৌতুহলই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা!
~ওয়াল্ট ডিজনি
অভিশপ্ত বিমান ১৯৫৩ সালে করাচী থেকে ঢাকা গামী। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়।ঝড়ঝাপটা। বিমানটির পাইলট প্রথম ঢাকায় নামতে চান বিমানটি।সঠিক বার্তা পাননি।তারপর চট্টগ্রাম। না নেই নামার নির্দেশ।তারপর কৈলাসহরে নামাতে চান পাইলট বিমানটি।না সিগন্যাল নেই। তারপর সম্ভবত রাডার আর কাজ করেনি।আগরতলার দিকে যাওয়ার সময় লংতরাই পাহাড়ের খাড়াই চড়াই ঘুরে ধুমাছড়ার সেই উৎস ্মুখে বিমানটি ঘনজংগলে ধাক্কা খায়।বিমানে ছিলেন ৫৬ জন স্কুসহ যাত্রী। সবাই সেদিন প্রাণ হারান।ভোর অব্দি একজন বিমান সেবিকা তিরতির প্রাণ নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল আপ্রাণ। স্থানীয় এক শুকনো মাছ বিক্রেতা গভীর জংগল মাড়িয়ে পাহাড়ের ওপারে ব্যবসা করতে যেতেন।হঠাৎ বাঁশের ডগায় ওড়না দেখে লক্ষ্যে পৌঁছে সেই মেয়েটির মাথা কোলে নিয়ে শেষ জল ধুমাছড় থেকে তুলে এনে মুখে দিলে সেও ঢলে পড়ে।কথিত আছে বিমানে ছিলো প্রায় আশি কেজি স্বর্ণ।বিমানসেবিকা আকারে ইংগিতে বলেছিল। ব্যবসায়ী তখন বিমানের চৌচির হওয়া লাশের মধ্যে সকালের রোদের ঝিলিক অন্বেষণ করে পেয়েছিল স্বর্ণের প্যাকেট।তিনি শুকনো মাছের খারাং ভর্তি করে ধুমাছড়ায় নিয়ে আসার পর আরো অসংখ্য মানুষ সেখান থেকে সোনা সংগ্রহ করে আনেন।পরবর্তী সময় শুকনো মাছ বিক্রেতাকে সবাই সোনা ভাই বলে সম্বোধন করেন। অঞ্চলের চালাক মানুষ কেউ জামাই বলে যত্নআত্তি করে সোনা ভাই এর নানা কৌশলে সব স্বর্ণ হাতিয়ে নেন।পরবর্তী সময় সোনা ভাই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করেন।
আর বিমানের ৫৬ জন যাত্রীকে গণকবর দেওয়া হয় তৎকালীন সরকারের ব্যবস্থায়।
এই যাত্রীদের মধ্যে ছিলপন একজন সদ্য বিবাহিত আর্মী।তাঁর স্ত্রী দীর্ঘ বছর দুর্ঘটনার দিন এই স্থানে অতি কষ্টে উপস্থিত হতেন।তার ভালোবাসার প্রকাশ করতেন চোখের জলে। তিনি ঐ অঞ্চলে স্টীলের একটি ফলক পোঁতে ছিলেন।তাঁর নামও খোদাই করে রেখেছিলেন।কালক্রমে সে চিহ্ন এখন আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু জনশ্রুতি আছে তাঁর চোখের জলে ভালোবাসার টান।করাচী থেকে তিনি আসতেন।একবার হাতির পিঠে চড়ে অভিশপ্ত সেই জায়গায় পৌঁছে মোম জ্বালিয়ে ছিলেন।তার পরিবারেরও একজন সদস্য একবার এসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে যান।
আজও সেই অভিশপ্ত বিমানের ইঞ্জিনের ভগ্নাংশ গভীর জংগলে অবহেলায় পড়ে আছে। তার সামান্য নিকটেই ছড়া এত গভীর যে ৫৯ ফুট হবে উপর থেকে।স্থানীয়দের বক্তব্য এই গভীর জলা অংশে বিমানটির যন্ত্রাংশ এখনো আছে। আছে স্বর্ণও।কিন্তু এতটাই গভীর এই অংশ কারো সাহস নেই নেমে পরীক্ষা করে স্বর্ণ উদ্ধার করে নেবে।
আমরা আজ এই অঞ্চলটি পরিদর্শন করতে যাই হারাধন বৈরাগী, আমার কলিগ পাণ্ডব দেববর্মা স্থানীয় কার্তিক দাস,বাচ্ছু দেববর্মা ও বিক্রম তালুকদার। সকলেই খাড়াইচড়াই মাড়িয়ে সেখানে পৌঁছাতে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ি যেন কখন প্রাণ উড়ে যায় এমন অবস্থা। পাহাড় ধরে আর ফেরার সাহস হয়নি আমাদের। আমরা পরবর্তী সময় আসার সময় ছড়া ধরে ফিরে এলাম। কিন্তু তাতেও আমাদের হাঁকিয়ে উঠতে হয়।
সেই অভিশপ্ত বিমানের চালক বিমানসেবিকা এবং যাত্রীদের জন্য মনে মনে আমরা সকলেই শোকাহত হই।
এই দুঃসাহসিক যাত্রায় আমরা ক্লান্ত। আমরা প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে প্রত্যাবর্তন করি।
বিষন্নতার পাখিটি
মনের ভেতর অসুখপাখি উড়ছে।
এক সাথে থাকে ঘুমায়।
ক্রমাগত আমাকে খায়।
আমি পাখিটির খাদ্য।
পাখিটি পুষতে চাই না।
পাখিটি আমায় ছাড়ে না।
পাখিটি আরো বাসা বানায়।
পাখিটি ডিম পাড়ে।তা দেয়।
আমি তার শিকার।সে আমাকে খায়।
সে আরো গভীরভাবে আমাকে আঁকড়ে বাঁচতে চায়।
আর আমি বিষন্নতায় ডুবি।বিষন্নতা আমায়
আরো বিষন্ন করে।সে আনন্দিত।তার ঠোঁটে চিলতে রোদ।
সে আরো ফাঁকফোকর খুঁজে।
আমি তাকে তাড়াতে চাই।সে আরো যত্নআত্তি করে।
আমি তাকে বলি কেন সে এত ভালোবাসে?
তার কোন জবাব নেই। সে
আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আদর করে।আমাকে
খায়।আমি পাখিটির খাঁচা খুলে বলি উড়ো।
আমি মুক্ত হবো।সে নতুন বায়না ধরে।
আরো আঁকড়ে ধরে। আমি তার সকল আব্দার
পুষিয়ে দিই-বলি সন্ধি করি।
সে তার বাসায় ক্রমাগত তা দেয় -নতুন করে
অসংখ্য বাচ্চা আনে
আমাকে গিলে খায়।আমি তার সাথে
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করি।
সে আসে নতুন আরো ষড়যন্ত্র করে।
আমি কেবল হেরে যাচ্ছি। আমি আরো তার
সাড়াশি আক্রমণে-খড়কুটো হই।
০৬:১১:২০২২
রাত:১১টা৩০মি
কুমারঘাট।
০৬/১১/২০২২
0 Comments