ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় সম্প্রতি হয়ে গেলো তিনব্যাপী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা :২০২৩
ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় সম্প্রতি হয়ে গেলো তিনব্যাপী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা :২০২৩
ত্রিপুরা :৩১:০৭:২০২৩:ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় সম্প্রতি হয়ে গেলো তিনব্যাপী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা :২০২৩।
জামতাড়া মানেই হ্যাকারদের স্বর্গরাজ্য। জামতাড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে ওয়েবসিরিজও। এই নামটা শুনলেই মনে হয়, এই বুঝি সব লোপাট হয়ে গেল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে। আসানসোল-ঝাড়খণ্ড সীমানার বাঙালি প্রধান সেই জামতাড়া এবার একেবারে অন্য কারণে শিরোনামে। এখানেই হয়ে গেল সম্প্রতি হয়ে গেলো তিনব্যাপী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামাঙ্কিত লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা :২০২৩।
প্রথম বইমেলা। ঝাড়খণ্ডের যে জেলাকে শুধুমাত্র অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই জামতাড়া নজির গড়ল সাঁওতাল পরগনার প্রথম বাংলা লিটল ম্যাগাজিন ও বইমেলার আয়োজন করে।ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার বাঙালিরা আয়োজন করেন এই বইমেলার। পশ্চিমবঙ্গ,ঝাঁড়খণ্ড,বিহার,ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বাঙালি, কবি, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী,প্রকাশক ও লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের মিলন উৎসবে এই বইমেলা ছিল জমজমাট। গোটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক কবি ও গবেষক তন্ময় বীর মহোদয়। তিনি মূলত সকলের মধ্যমণি ও আয়োজকদের নানাভাবে সহযোগী হিসেবে সূত্রধরের কাজ করে একসূত্রে সংগ্রথিত করেছেন সকল কবি সাহিত্যিক ও সম্পাদক প্রকাশকদের। প্রথম দিন প্রকাশিত হয় আয়োজক গোষ্ঠীর ড. দীপককুমার সেন সম্পাদিত শিল্পে অনন্যা ও সুবল দত্ত :সাহিত্যের বিভা।এই পর্বে সকলের সাথে স্রোত সম্পাদক কবি গোবিন্দ ধরও উপস্থিত ছিলেন।
এই জামতাড়া জেলারই কার্মাটারে বিদ্যাসাগর নিজের জীবনের শেষ বছরগুলি কাটিয়েছিলেন। আর তাই জামতাড়ায় প্রথম বইমেলাও বিদ্যাসাগরের নামেই উৎসর্গ করা হল। গত ২৮, ২৯ এবং ৩০ জুলাই জামতাড়াতে লিটল ম্যাগাজিন ও বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জামতাড়া সেন্ট অ্যান্থনি স্কুল প্রাঙ্গণে এই বইমেলা এবং লিটিল ম্যাগাজিন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
শুধু ঝাড়খণ্ডের নয়, আসানসোল,কলকাতা, ত্রিপুরার স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনা, ঝাড়খণ্ড, বিহার ও বাংলাদেশ থেকে কবি, সাহিত্যিক এবং বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতি এই মেলাকে সমৃদ্ধ করেছে। আয়োজকদের মধ্যে বিশিষ্ট গবেষক ও লেখক নবারুণ মল্লিক জানান, “বহু বছরের স্বপ্ন ছিল জামতাড়ায় বাংলা বইমেলা হবে। জামতাড়ায় বহু বাঙালি রয়েছেন যাঁরা এই রাজ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন সংস্কৃতি মাধ্যমে। এঁদের সবার সহযোগিতা নিয়েই এই বইমেলা এবং লিটিল ম্যাগাজিন মেলা করতে পেরেছি। আমরা আয়োজনের কোন ত্রুটি রাখিনি। প্রথম বছর বলে হয়তো কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।” প্রকাশকদের মধ্যে স্রোত, আইডিয়া এই বইমেলায় অংশ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিন রাজ্যে ও বাংলাদেশের প্রচুর বাংলা লিটল ম্যাগাজিনের স্টল করা হয়েছিল। কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ছিল বাউল,লালন সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির।আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন স্রোত সম্পাদক কবি গোবিন্দ ধর, আরিত্রিক সম্পাদক দুর্গাদাস মিদ্যা,অমলেন্দু চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ পালসহ দূরেরখেয়ার বাপী চক্রবর্তীসহ অনেকেই।
আসানসোলের বিশিষ্ট চিকিৎসক ও কবি ডাক্তার অরুনাভ সেনগুপ্ত জানান, “আমরা দুটি গাড়ি মিলে আসানসোল থেকে বেশ কয়েকজন রওনা দিয়েছিলাম জামতাড়ায়। জামতাড়াকে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে অশোভন কলঙ্কের জন্য। কিন্তু সাঁওতাল পরগনার প্রথম বইমেলায় আমরা যে আমন্ত্রণ ও আতিথেয়তা পেয়েছি, তা আমাদের কাছে সৌভাগ্যের। অসাধারণ আয়োজন প্রতিবছর যাব।” তবে শুধু আসানসোল থেকেই নয়, এ রাজ্যের কলকাতা থেকে এবং অন্যান্য জেলা থেকেও প্রচুর কবি জামতাড়ায় এই প্রথম বইমেলায় উপস্থিত হয়েছিলেন।পাশাপাশি ছিলেন ত্রিপুরার স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনা। বাংলাদেশের শতরঞ্জি ও কচিকাঁচা দুটো লিটল ম্যাগাজিন। উপস্থিত লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যে স্রোত, সুতপা, শব্দপ্রতিমা, টাট্টুঘোড়া, আরিত্রিক,ত্রিষ্ঠুপ,প্রৈতি, বিহার বাঙালি সমিতি, শৈলী এবং আয়োজক গোষ্ঠীর শিল্পে অনন্যাসহ আরো অনেক লিটল ম্যাগাজিনের স্টল ছিলো মেলায়।
সকল লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের উত্তরীয় ও শংসাপত্র দিয়ে বরণ করা হয়।
এছাড়াও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিটল ম্যাগাজিন মেলার অন্তিম দিন দুটি স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় ,দুই জন বিশিষ্ঠ লেখক ও অধ্যাপককে । একটি স্বর্গীয় কালীপদ ঘটক স্মৃতি পুরস্কার ও অন্যটি স্বর্গীয় অজিত রায় স্মৃতি পুরস্কার কালিপদ ঘটক স্মৃতি পুরস্কার পান লোকসংস্কৃতিবিদ ও লেখক দিগেন বর্মন ।
অজিত রায় স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয় রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. গৌতম মুখোপাধ্যায় । গৌতম বাবুকে সম্মানিত করেন মেলার আয়োজন সমিতির সভাপতি ও শিল্পে অনন্যা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ড দীপক কুমার সেন । দিগেন বাবু কে সম্মানিত করেন আয়োজন সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুর্গা দাস ভাণ্ডারী ।
সুতপা সাহিত্য পত্রিকা বিশ্বনাথ দে সম্মান :২০১৯,পাতাবাহার সম্মান :২০২৩ তুলে দপন স্রোত সম্পাদক ও কবি গোবিন্দ ধর মহোদয়কে।পাশাপাশি স্রোত দক্ষিণারঞ্জন ধর সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় ভারত জ্ঞান বিজ্ঞান পরিষদের সর্বভারতীয় সম্পাদক ড.কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়, শিল্পে অনন্যার সম্পাদক ড.দীপককুমার সেন,সুতপা সম্পাদক রাজকুমার সরকার ও পাতাবাহার লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক অমল দাস মহোদয়কে। পাশাপাশি সুষমারাণী ধর স্মৃতি স্রোত সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হয় কবি ও প্রকাশপর্ণা সম্পাদক ড.অপর্ণা গাঙ্গুলী এবং নাজনীন সুলতানা মুক্তি মহোদয়াকে।
তিনদিনের এই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামাঙ্কিত লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে বাংলা সাহিত্যে এক মাইলস্টোন রচিত হলো।পরবর্তী বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের বাঁক নির্ধারিত হতে এই অনুষ্ঠান হবে বাংলাভাষীদের নিকট প্রেরণা। সকল লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকেরা উজ্জীবিত এধরণের চিন্তাবীজ ছড়িয়ে পড়ুক বাংলা ভাষাভাষী সকল অঞ্চলে আয়োজকেরা ও লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকেরাও এরকমই মনপ্রাণে উদ্বুদ্ধ হয়েই সমাপ্তি হয় অনুষ্ঠান।
0 Comments