বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক ফেইসবুক পোস্ট : নানাজনের মন্তব্য 

গোবিন্দ ধর 


আমাদের বিমল চৌধুরী অশোকানন্দ রায়বর্ধন কল্যাণব্রত চক্রবর্তী থেকে শ্যামলাল দেববর্মা চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং বিমল সিনহা কুমুদকুণ্ডু চৌধুরী বদরুজ্জামান,শ্যামল ভট্টাচার্য দেবব্রত দেব দুলাল ঘোষ শ্যামল বৈদ্য  রণবীর পুরকায়স্থ তপোধীর ভট্টাচার্য বিকাশ সরকার দেবীপ্রসাদ সিংহ অজিত রায়, রবীন্দ্র গুহসহ বহির্বঙ্গের কয়েকজন উজ্জ্বল কথাসাহিত্যিক প্রথাবিরোধী সুবল দত্তের মতো কথাসাহিত্যিক পেয়ে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যকে মূল ভূখণ্ডের সাথে জুড়ে দিয়েছেন আজ না হোক পরশু এ বিষয়ে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা হবে।তখন নিশ্চিত বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যকে আর উপেক্ষিত জানালা বলা অসম্ভব হবে বরং বলতে বাধ্য হবেন ত্রিপুরা মেঘালয় মণিপুর আসাম দিল্লী বিহার ঝাড়খণ্ড এমন কি লণ্ডনসহ তৃতীয় বিশ্বকে নিয়েই আমাদের বৃহত্তর বাংলা সাহিত্য ভুবন।


কান্তারভূষণ নন্দী :তপোধীর ভট্টাচার্যর কথাসাহিত্য সম্পর্কে দয়া করে কিছু যদি জানালে উপকৃত হব।
গোবিন্দ ধর : তপোধীর ভট্টাচার্য গল্পও তো লিখেন।আর এই মন্তব্য নিশ্চয়ই পূর্ণাঙ্গ নয়।নিছক গবেষণাও নয়।শুধুমাত্র আবেগ।আপনারা এ বিষয়ের গবেষক। বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখা হোক আপনাদের কলম থেকে। হোক একক বা সমবেত উপায়ে।বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নয়তো আরো বহুযুগ পরেও লেখা হবে না।পরস্পর পরস্পরের দিকে কলম তেড়ে আসবে।কিন্তু কলমকে ইতিহাস লেখার কাজেও নিয়োজিত করা দরকার।অনেকেই আমরা বুক ফুলিয়ে এনতেন করার গল্প আড্ডায় আড্ডায় ভাঁড়ের চায়ে চুমুক মেরে পরিবেশন করি।শ্লাঘা অনুভব করি।মন্দ নয়।কিন্তু পাশাপাশি আপনি আমি আমরা আসল কাজটাও করতে হবে।তবেই আবহমান পাঠক উপকৃত হবেন।ইতিহাসের উপেক্ষিত বৃহৎ বাংলার বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ জাগবে।নতুন প্রজন্মের নিকট বার্তাটি আরো পৌঁছে দিতে হবে।আপনি অনেক করছেন তবু থেমে গিয়ে পিছনে থাকানোর সময় হয়তো এখনো আসেনি।এগিয়ে যেতে হবে।

কান্তারভূষণ নন্দী: আমি গবেষক নই মোটেও। উত্তর-পূর্বের লেখালিখি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। উত্তর-পূর্বের অনেক কথাসাহিত্যিকের লেখাই পড়া হয়নি, কিন্তু পড়তে আগ্রহী। সেই আগ্রহ থেকেই জানতে চেয়েছিলাম।

গোবিন্দ ধর : আপনি কি আমি অবগত আছি।যা আমার জানার বাইরে তা আমি বলার কে বলুন?

শতদল আচার্য:আজকাল আবেগ দিয়ে গবেষনা হয় বলে এগুলি কদিন পরে পচে যায়।

গোবিন্দ ধর : আমি গবেষণা করছি না বন্ধু। আমি আমার মন্তব্য লিখছি।সে অধিকার একজন পাঠক হিসেবে আমার আছে।কিন্তু গবেষকের সে অধিকার নেই। তিনি সত্যি উদঘাটন করতে পাঠকের নিকট বাধ্য। ছলবল চাতুরী তার কাম্য নয়।কিন্তু অসংখ্য গোল্ড মেডেল স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত গবেষক পি এইচ ডি ডিগ্রি প্রাপ্তদের বাক্য গঠনও সঠিক নয় উনারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র পেয়ে বহু বিশ্ববিদ্যালয় আলোকিত করে আছেন ছিলেন। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবেন।
আমি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজায় পা রাখিনি।আবার গবেষণা আমার বিষয়ও নয়।আবেগ বিষয়।কারণ আমি আমাকে কবিতায় লিখি।

শতদল আচার্য: অবশ্য ই গবেষণা বিষয় নয় । আবেগ নিয়ে কাজ করেন তবে ভুল তথ্য থাকলে এটা ধরে ই আজকালের গবেষণা হয়ে যায়। আপনার কথা সত্য । বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই আছেন বাংলা লিখতে পারে না । এই উত্তরটা  তপোধীর ভট্টাচার্যের  মত মানুষরা দিতে পারবেন । এদের মত মানুষরা খেয়ে নিয়ে অনেককেই  চাকরী দিয়ে দেন।

সবচেয়ে শেষ কথা ভালো থাকুন । কবিতায় থাকুন।

গোবিন্দ ধর :চাকরী পাওয়া তো কৌশলগত পরিকল্পনা। কে কিভাবে তার সার্টিফিকেটকে কাজে লাগবে উনার বিষয়।কিন্তু একটা বিভাগে উত্তীর্ণদের তো সার্বিকভাবেই সফল হতে হয়।সেক্ষেত্রে শুধু একজনের দায় নয় টোটাল সিস্টেমেরই গলদ।শুধু তপোধীর ভট্টাচার্যকে আমি এ বিষয়ে এই জায়গায় নিয়ে ভাবা অসম্ভব। তবে অধিকাংশ অধ্যাপকদের মধ্যে মানসিকভাবে নানা লালসা পিপাশা আমাদের উচ্চ শিক্ষাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।আর একবার উচ্চ শিক্ষার গোল্ডম্যান শংসাপত্র পেয়ে উচ্চস্বরে উত্তরপূর্বাঞ্চলের গবেষকও বলতে তাঁর আর জিবে আটকায় না।তিনি নানা লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদককে লিটল ম্যাগাজিন বিক্রি করতে সাহায্য করে তাঁর গবেষণা পত্র সেই সকল লিটল ম্যাগাজিনে ছাপানোরও ছাড়পত্র বাগিয়ে নিচ্ছেন। এসবও আমাদের বহির্বঙ্গের বাংলা সাহিত্যকে পিছিয়ে দিচ্ছে। শুধু কারো কারো নাম উচ্চারণ করলেই কিংবা আমাকে হেয় করলেই উত্তর পূর্বাঞ্চল কিংবা বহির্বঙ্গের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নির্ভুল হয়ে যাবে এমন নয়।অধ্যাপক গবেষক ডক্টরেটদের অনেকের সম্মিলিত পরিকল্পনাই আজও উত্তর পূর্বাঞ্চল তথা বহির্বঙ্গের সাহিত্য জাতে উঠার সিঁড়ি ডিঙ্গাতে পারেনি।
আমার হয়তো শতদলকে পছন্দ নয় আমি শতদলকে বাদ দিলাম,কান্তারভূষণ নন্দী বাদ দিলেন গোবিন্দ ধরকে কিংবা শিশিরকুমার সিংহ গোটা ত্রিপুরার বাংলাসাহিত্যের ভুলেভরা ইতিহাস লিখে বাজারজাত করে বসলেন তখন আমাদের গবেষকেরা কোথায় প্রতিবাদ করলেন?আসল কথা হলো তপোধীর ভালো নয় মার্কা ভাবনা থেকেই আপনার এই মন্তব্য। আর আমি সমবেতভাবে এই অঞ্চলের বাংলাসাহিত্য বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের অংশ বলে কয়েকটি নাম উল্লেখ করলাম।কান্তারভূষণ নন্দীদা একটু বুদ্ধি প্রয়োগ করে আমাকে খুঁচিয়ে দিলেন আর বন্ধু শতদল একধাপ আগ বাড়িয়ে নাম ধরেই বললেন।অথচ ফেইসবুকের এটুকু আলোচনা মন্তব্য কোনো গবেষণা পত্র নয়।এগুলো নিয়ে যতটুকু মাথাব্যথা ততটুকু মাথা ব্যাথা দেখিনি আসামের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখায়?অথচ সুদূর ত্রিপুরা বসে স্রোত প্রকাশনা বরাকের বাংলা সাহিত্য প্রথমখণ্ড ড.মৃণালকান্তি দেবনাথকৃত গ্রন্থ প্রকাশ করতে দুঃসাহস দেখিয়েছি।ত্রিপুরার বাংলা সাহিত্যচর্চার ইতিহাস শ্যামল ভট্টাচার্যকৃত গ্রন্থ প্রকাশ করেছি।ঝাড়খণ্ডের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস গৌতম চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ করেছেন।বাদ বাংলার বাংলা  কবিতা রীতির বিরুদ্ধে রীতি রবীন্দ্র গুহকৃত গ্রন্থ স্রোত প্রকাশনা প্রকাশ করতে দুঃসাহস দেখিয়েছি।যা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। লোদ্রভার কাছাকাছি শ্যামল ভট্টাচার্য কৃত উপন্যাস পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমি থেকে সুতপা রায়চৌধুরী পুরস্কার :২০১০ উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রথমবার পেয়েছে স্রোত প্রকাশনা। এই বইটি ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য।স্রোত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বিন্দু বিন্দু জল শেখর দাশকৃত উপন্যাস আসামের পনেরটি মহাবিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। স্রোত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত  নির্বাচিত কবিতা পীযূষ রাউতকৃত কবিতা সংকলন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকা ভুক্ত। এসব কি উত্তর-পূর্বের শ্লাঘা নয়?এগুলো আলোচনায় আসুক আপনাদের অধ্যাপকীয় বৈঠকী আড্ডায়।সুযোগ বুঝে এই অঞ্চলের বাংলাসাহিত্যকে প্রথম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকায় আনতে হবে।এগুলো হলো কাজ।একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কাটি নেড়ে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে উত্তর পূর্বাঞ্চলকে ডমিন্যান্ট করা আদৌ সম্ভব নয়।স্রোত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত ত্রিপুরার কথাসাহিত্যি তপোধীর ভট্টাচার্যকৃত গ্রন্থ। নিশ্চয়ই গোবিন্দ ধরকৃত নয়।আমি যা মন্তব্য করতে চেয়েছি এতে ব্যক্তিগতভাবে শতদল আচার্য কান্তারভূষণ নন্দী কিংবা গোবিন্দ ধরকে হেয় করার জন্য নয় কিংবা তপোধীর ভট্টাচার্যকে মাইলেস দিতেও নয়।তপোধীর ভট্টাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্যই।আমার বা আপনাদের সহযোগিতা দরকার নেই তাঁকে বৃহত্তর পাঠকের নিকট পৌঁছাতে। তিনি এতদিনে আবহমান বাংলা সাহিত্যের বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের পাঠকের নিকট উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত। বরং আমরা এখনো আরো সুদূর ভবিষ্যতেও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের পাঠকের নিকট কতটুকু গ্রহণযোগ্য পাঠযোগ্য হয়ে উঠতে পারছি সেই নিরিখে নিজেদেরকে তৈরী করা জরুরী।কারো বিরুদ্ধে বিষাদাগার করলে ধরো আমি আপনার বিরুদ্ধে আপনি আমার বিরুদ্ধে বিষ উগলে ফেইসবুক কাঁপালাম।এতে আদৌ বাংলা সাহিত্যের কিচ্ছু যায় আসে না।শুধু সাময়িক সময়ের জন্য ফেইসবুকারের নিকট হৈহল্লার খোরাক জোগাতে পারবো কিছু সময়।আর আদৌ কিচ্ছু হবে না।সময় এক শিক্ষক। কালখণ্ড অতিক্রম করতে হবে। যারা অতিক্রম করতে পারবেন তাও সময়ই ঠিক করে। এখানেও সময়ের জয় হয়।নিশ্চয়ই আমার মতো ফেসবুকিয়েদের হয় না হবেও না।
বরং আসুন বন্ধু শতদল আচার্য আসামের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখানোর কাজে কাউকে যুক্ত করুন। মেঘালয়ের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস লেখানোয় কাউকে যুক্ত করান।হয়তো কিচ্ছু ইতিহাস সঠিক হলো না তাতেও কিচ্ছু যায় আসে না।শুধু শুরু তো হবে।এই আনন্দও কম নয় কিন্তু। প্রতি নিয়ত আমি বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস কেউ লিখুন চাই।নিশ্চয়ই হয়তো তা সামগ্রিক নাও হতে পারে। তাতেও আমি হতাশ হবো না।শুরু তো হলো।কাউকে ছোট করে হেয় করে বাংলা সাহিত্যের উদ্ধার সম্ভব নয়।বরং দূর্বলতাগুলো ঝেড়ে মুছে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই।আপনাকেই। কান্তারভূষণ নন্দীদেরকেই।শ্যামল ভট্টাচার্যদেরকেই।কিংবা ড.মৃণালকান্তি দেবনাথ অথবা আমাদের রবীন্দ্র গুহ মহোদয়দেরকেই।নয়তো আরো বহুদিন বহুকাল পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা।পিছিয়ে পড়ছি আমরা।মগ্ন চৈতন্য হোক আমাদের। তবেই আমরা সফল হবো নিশ্চিত।

৫:০৮:২০২৩

0 Comments