সবার আমি ছাত্র সকাল থেকে শিখছি দিবারাত্র ||গোবিন্দ ধর
সবার আমি ছাত্র সকাল থেকে শিখছি দিবারাত্র
গোবিন্দ ধর
স্রোত একটি সাহিত্য পত্রিকা। লিটল ম্যাগাজিন। স্রোত প্রকাশনাও।কিন্তু লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক গোবিন্দ ধর হলেও প্রকাশক গোবিন্দ ধর নন।স্রোত প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী প্রকাশক সুমিতা পাল ধর।স্রোত সম্পাদক একজন অবৈতনিক কামলা।শ্রমিকমাত্র।দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে নিজের খেয়ে বনেরর মোষ তাড়ানোর মতো প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশকের পর বুঝতে পেরেছি অসংখ্য ভুল থেকেই গেছে। এড়িয়ে যাবার অক্লান্ত পরিশ্রম মনোযোগ দেওয়া স্বত্বেও আমি আমার ভাবনাকে ছুঁতে পারিনি।আমার অক্ষমতাকে দায়িত্ব দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল মনে করবেন না।সত্যি সত্যি আমি আজ অব্দি যতটুকু চেয়েছি তার সিকিভাগও নির্ভুল ও প্রতিবন্ধকতা এড়ানো সম্ভব হয়নি।তবুও লেগে থেকেছি।গালমন্দ খেয়েছি।অনেকের সমবেত আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছি।অনেককে শত্রু বানিয়েছি।বন্ধুজন প্রিয়জন ছেড়ে চলে গেছেন।নানা কারণে। কারো লেখা ছাপিনি তো তিনি সম্পর্ক ছেড়েছেন।কারো লেখা ছাপছি বলেও সম্পর্ক ছেড়েছেন।কেউ কেউ সকল সম্পাদকীয় কৌশল শিখে নিয়ে লাথি মেরে চলে গেছেন।কেউ কেউ সহ সম্পাদক হয়েছেন বলে কয়ে।তারপর আমার পিন্ডি চটকেছেন।
ত্রিপুরারয় প্রায় ৫০ টি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের নেপথ্যের কারিগর স্রোত সম্পদনা করেছি বলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নামলিপি থেকে ডিটিপি বাঁধাই এমন কী কাঁধে করে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পৌঁছে দিয়েছি। এসব আমার ভালো লাগে।লিটল ম্যাগাজিনের সৈনিক হিসেবে কাজ করে আমি গর্বিত।আমি আনন্দিত।
স্রোত সাহিত্য পত্রিকা কিংবা লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করতে এসে কত আপনজনকে শত্রু করে ফেলেছি বুঝতে অনেক দেরী হয়েছে। কিন্তু বুঝেছি।
স্রোত একর্টি ইমোশন। স্রোত বাংলা সাহিত্যে কতটুকু ছাপ ফেলেছে সাহিত্য আন্দোলন গড়ে তুলেছে মেফে দেখিনি।কিন্তু স্রোত একটি নামকে আমাদের পরবর্তী সময় ত্রিপুরা আসাম কলকাতায় এই একই নামকে আগুপিছু করে কিংবা সরাসরি স্রোত নামেও আরো অনেক লিটল ম্যাগাজিন বাংলা সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে।এটা আমাদের সাহিত্য আন্দোলনের সফলতা নাকি স্রোত ত্রিপুরার স্রোতকে অপাংতেয় করার অপকৌশল তা গবেষণাজাত।
গর্বের তিরিশ বছর :১০৯৫-২০২৩ স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনা হিসেবে এখন অব্দি
ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো আমাদের আয়োজন :
(১),বই পত্র প্রকাশ বা আবরণ উন্মোচনকে আমরাই প্রথম বই উৎসব এবং পরবর্তী সময় প্রকাশনা উৎসব বলা শুরু করেছি :২০১০
(২)তিনদিন ব্যাপী লিটলম্যাগাজিন উৎসব:১৯৯৫-২০০৩
(৩)বই উৎসব :২০০৫
(৪)কুমারঘাট উৎসব :২০১২-১৫
(৫)আন্তর্জাতিক লিটল ম্যাগাজিন উৎসব :২০১৬
(৬),উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কথাসাহিত্যিক উৎসব :২০১৭
(৫)তিনদিন ব্যাপী লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা:২০২১
(৭)ত্রিপুরা অনলাইন বইমেলা :২০২০-২২
(৮)ভ্রম্যমান বইমেলা :২০২২
(৯)ত্রিপুরা বাংলাদেশ বইমেলা :২০২৩
আমরা মনে করি এও একধরনের সফলতা। নয়তো বাংলা অভিধান এতো দৈন্য নয় যে এই স্রোত নামেই অসংখ্য লিটল ম্যাগাজিনের জন্মের প্রয়োজন হয়ে পড়লো।
পেয়েছি অনেক কিছু। হারিয়েওছি।আরো কংক্রিটের সীমানা পেরিয়ে যাবো বিশ্বাস রাখি।
প্রতিমুহূর্তে স্রোত লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকের উপর নানা কূটকৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। পাশাপাশি স্রোত প্রকাশনাও অল্প সময়ের মধ্যে বাংলা সাহিত্যে পরিচিতি ঘটে শ্যামল ভট্টাচার্যের উপন্যাস লোদ্রভার কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য একাডেমির পুরস্কার লাভের মধ্যে দিয়ে।এতে বাজারের রাঘব বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে ফেলার নানারকম অপচেষ্টা চলমান মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো কোনো বন্ধু করেই যাচ্ছেন।
এসব ভালো দিক কি মন্দ বুঝি না। কিন্তু এসব অপকৌশল ডিঙিয়ে পাঠক লেখক শুভাধ্যায়ীদের নিরলস সহযোগিতায় স্রোত আজও চলমান।এই কৃতিত্ব নিশ্চয়ই শুধু শুভানুধ্যায়ীদের নয়।যারা স্রোত সাহিত্য পত্রিকার কৌশলকে কাছে থেকে জেনে বুঝে দূরত্বের পরিধি বাড়িয়ে নিজস্ব লিটল ম্যাগাজিনের গতিবিধি বাড়ানোর জন্য একই কৌশল অবলম্বন করে লিটল ম্যাগাজিন ছাপছেন তাদেরকেও স্রোত সম্পাদক হিসেবে এখনো সহায়তা করতে আমার কোনো কার্পন্য নেই। পাশাপাশি স্রোত প্রকাশনাকেও বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল অবলম্বন করে যারা ডুগডুগি বাজালেন তাদেরকেও আমার কৃতজ্ঞতা। আপনারা এই চেষ্টা করেছেন বলে আমরা আজ তিরিশ বছরে পা দিলাম।
এখনো শিখবো।এখনো নতুন নতুন অপকৌশলের নিকট সাময়িক হোঁচট আর খাবি খেতে খেতে বৃহত্তর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটুও রেখাপাত করার চেষ্টা চরিত্রের জন্য নয় স্রোত নিয়ত প্রবহমান থাকবে আমাকেই আমি আরো সম্পাদনার তাগিদ থেকে।আমার নিজস্ব কোনো জেলাস নেই। জেলাসি নেই। নিরন্তর শিখি।শিখতে শিখতে পথ চলি।চলতে চলতে শিখি।
শিখতে শিখতে একদিন স্রোত প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাবে।স্রোত প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাবে।
এতে আমার কোনো আক্ষেপ থাকবে না। মনে রাখবো স্রোত একটি দু'পাতার লিটল ম্যাগাজিন ছিলো।আছেও। এই দু পাতা থেকে যে হয়ে ওঠা সম্ভব তা স্রোত-ই আমাকে শিখিয়েছে।শূন্য হাতে অনেক অনেক বড় দায়িত্ব পালন করার দুঃসাহসিক স্বপ্ন স্রোত আমাকে দেখিয়েছে।কত রাত স্রোতের জন্য বিনিদ্র কেটেছে। কত বন্ধু হারাতে হয়েছে। কত নতুন নতুন বন্ধু জুটেছেন।সকলের নিকট থেকে কিছু না কিছু শিখেছি। সুতরাং আমার নিকট সকলেই শিক্ষক।
সবার আমি ছাত্র।
সকাল থেকে শিখছি দিবারাত্র।
২৯:০৯:২০২৪
রাত:১১টা২৫মি
কুমারঘাট।
0 Comments