আলোচনা :তৈমুর খান কথাপৃষ্ঠা :২||এক পঙক্তির দ্রোহবীজ অন্তরীক্ষীয় বিমোচন
দ্রোহব্রীজ :এক পঙক্তির আত্মবিষ
আলোচনা :তৈমুর খান
কথাপৃষ্ঠা :২
এক পঙক্তির দ্রোহবীজ অন্তরীক্ষীয় বিমোচন
----------------------------------------------------
এক পঙক্তির ৭৫ টি কবিতিকা নিয়ে কবি গোবিন্দ ধরের এই ‘দ্রোহবীজ এক পঙক্তির আত্মবিষ’। জীবনের অন্তরায়, বহুমুখী প্রজ্ঞা, আত্মদ্রোহ এবং বিচ্যুতির এক সংবেদ্য সংকলন বলা যায়। কবিতিকাগুলিতে লক্ষ করা যায় কথিত ও অকথিত এক স্বয়ংক্রিয় যাপনের ঘোরে কবির অবারিত হওয়া। চলনে বলনে নিজ অভিজ্ঞতাকে স্পষ্ট করে তোলা।
বাংলা কবিতা নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে চলেছে যে, বর্তমানে তা প্রতিমুহূর্তে একটি রূপান্তর শিল্প বলা যায়। জীবনের দ্রুততা, শূন্যতা, অনিশ্চিন্ততা, ভঙ্গুরতা, কঠোরতার সম্মুখীন হতে হয় কবিকেও। স্বাভাবিকভাবেই মহাকাব্যের সামুদ্রিক বিন্যাসে তাঁর অবগাহন প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। তখন গীতিকাব্যের উচ্ছল ধারায় চুম্বকীয় কয়েক ফোঁটা ক্ষরণ ও গলনের শব্দ নির্গত হয়। বক্তব্যের আস্ফালন সেখানে থাকে না। গুরুগাম্ভীর ছান্দিক গর্জনও প্রশ্রয় পায় না। অন্তরীক্ষীয় বিমোচনে উপলব্ধির সূক্ষ্ম রশ্মি বেরিয়ে আসে। তা নৈঃশাব্দ্যিক আত্মচারী অন্তরাল গূঢ়তায় ছিন্ন ও ক্ষিন্ন মেদুরতা নিয়ে জেগে ওঠে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ভাষাহীন শূন্যতার আয়োজনে অলিখিতই থেকে যায়।
দীর্ঘদিন কাব্য চর্চা করে আসা কবি গোবিন্দ ধরের এই এক পঙক্তির কবিতিকাগুলি এভাবেই আহরণ করেছে এক একটি আত্মিক চেতনার পর্যায়। ‘নিজের ছায়ার কাছে নিজেই আমরা খাটো’, অথবা ‘পাখিটি গান শেখাতে এসে গান হয়ে গেলো’ এরকম পংক্তি দিয়ে কাব্যের শুরু করে ‘জীবনের শহর থেকে ঝরে পড়ে নকল ইট’, ‘নিদ্রাকাতর নির্ঘুম সময়ের চোখ’, ‘মরীচিকাময় জীবন’ ইত্যাদি সবই এসে ধরা দিয়েছে।আত্মস্থিত দার্শনিকবোধ থেকে সময় ও জীবনচেতনার নানা স্তরে কবি বিচরণ করেছেন। ‘দ্রোহবীজ এক পঙক্তির আত্মবিষ’ এখানেই যেন তার বিনাশ ও জন্মান্তরের পরিধি রচনা করেছে।
তৈমুর খান
রামপুরা হাট,পশ্চিমবঙ্গ
0 Comments