মুখোমুখি কবি তৈমুর খান ও কবি গোবিন্দ ধর
মুখোমুখি
কবি তৈমুর খান ও কবি গোবিন্দ ধর
(১)আপনার পরিচিতি দিন?
🗣️ নাম: তৈমুর খান, পিতা ও মাতার নাম : জিকির খান ও নওরাতুন বিবি।
জন্ম: ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭।
জন্মস্থান : বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে।
শিক্ষা: শিক্ষার সূচনা গ্রামেরই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর দাদপুর বাতাসপুর জুনিয়র হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। মাধ্যমিক পর্যন্ত আয়াস হাইস্কুলে( ১৯৮৩)। উচ্চমাধ্যমিক(১৯৮৫) এবং বাংলা সাহিত্যে অনার্স(১৯৮৯) রামপুরহাট মহাবিদ্যালয়ে। মাস্টার ডিগ্রী(১৯৯২) এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পিএইচডি(২০০১) পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বি-এড ট্রেনিং(১৯৯৪) মালদহ গভর্নমেন্ট ট্রেনিং কলেজে।
কর্মজীবন: ১৯৯৮ সালে নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজে অংশকালীন অধ্যাপক হিসেবে যোগদান। ২০০৪ এর জানুয়ারি থেকে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী সহ-শিক্ষক পদে নিয়োগ। বর্তমানে হাজী জুবেদ আলী বিদ্যাপীঠে কর্মরত।
(২)ছোটবেলার বেড়া ওঠা ও তৎকালীন গ্রাম্য কলকাতা কেমন ছিলো?
🗣️আমি কলকাতা থেকে ২২০ কিমি দূরে থাকি বীরভূম জেলার প্রান্তিকগ্রাম পানিসাইলে। রাঙামাটির দেশ বলতে যা বোঝায় আমার গ্রামটি তাই। পুরো বীরভূম জেলা জুড়েই বাউল গান, কবিগান, সত্যপীরের গান, মনসার গান, কীর্তন গান, ভাদুর গান এবং ফকিরি গানের প্রচলন রয়েছে। সেসব গানের আসরে নিয়ম করে উপস্থিত হওয়া জরুরি ছিল। গ্রাম বলতে যা বোঝায় একেবারেই তাই। বাঁশঝাড়, জোনাক-জ্বলা রাত্রি, রাস্তাঘাটে কাদায় ভর্তি বর্ষাকাল, গরুর পাল নিয়ে রাখালের মাঠ পরিক্রমা,হাল-বলদ নিয়ে কৃষকের কৃষিকাজ, মাটির বাড়ি খড়ের চাল বাঁশের খুঁটি, আটচালায় সপ্তাহে দু’দিন গ্রামের হাট, নবান্ন উৎসব, পহেলা বৈশাখের মিষ্টিমুখ, গরুর গাড়িতে চেপে বরযাত্রী ও নতুন বউয়ের আগমন ইত্যাদি এসব নিয়েই আমার গ্রাম। এই পরিবেশেই বড় হওয়া। পাঠশালায় গিয়ে মেঝেতে মাদুর পেতে বসা। স্লেটে অঙ্ককষা, জামার ফুটো পকেটে পেন্সিল ভরে রাখলে হারিয়ে যাওয়া তার জন্য কান্না ইত্যাদি এইসব। তবে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর স্থানীয় এম-এল-এ শশাঙ্কশেখর মণ্ডল-এর ফরওয়ার্ড ব্লক নামক রাজনৈতিক দলের মিছিলে যোগদান করে মাঝে মাঝে কলকাতার এক্সপ্ল্যানেড ময়দান যাতায়াত করা চলতে থাকে। ৮০-৯০ এর দশকে তখন কলকাতা এত জমজমাট ছিল না। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকত। ফেরি ঘাটে লোকজনও কম।
গ্রামকে মানুষ প্রাণস্পন্দনে যেন ভরিয়ে রেখেছে। গাছপালার সবুজ সমারোহে ঘেরা বিস্তৃত মাঠ এবং অস্তমিত সূর্যের আলোয় রাখাল বালকের গরু নিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য যে না দেখেছে তাকে বোঝানো যাবে না। এত দুঃখ-কান্না-ভরা জীবনেও এত সুখের আয়োজন থাকে তা হয়তো গ্রামে জন্মেছি বলেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। বন্দে আলী মিয়া লিখেছিলেন:
“আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর
থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।”
একথা যেমন যথার্থ, তেমনি নদীয়া জেলার জমশেরপুর গ্রামের কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কথাও যথার্থ বলে উপলব্ধ হয়েছে। তিনি ‘জন্মভূমি’ কবিতার শেষে লিখেছেন:
“শোভা বল’, স্বাস্থ্য বল’,—আছে বা না আছে,
বুকটি তবু নেচে ওঠে এলে গাঁয়ের কাছে;
ঐখানেতে সকল শান্তি, আমার সকল সুখ—
বাপের স্নেহ, মায়ের আদর, ভাইয়ের হাসিমুখ;—
তাইতো আমার জন্মভূমি স্বর্গপুরী,
যেথায় আমার হৃদয়খানি গেছে চুরি॥”
এই হৃদয়খানিই চুরি হয়ে গেছে আমার গ্রামের কাছে। মহাত্মা গান্ধী এই কারণেই বলেছিলেন: “The soul of India lives in its villages.”
তখন নিজেকেই মানুষ নয় আমার দেশ বলেই মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ হয়তো এই বোধ থেকেই উপলব্ধি করেছিলেন:
“জানি নে তোর ধনরতন
আছে কি না রানির মতন,
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে॥”
গ্রামের বর্তমান
💚
হয়তো বছর কুড়ি হবে অর্থাৎ ২০০০ সালের পরের কথা বলছি। গ্রাম অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। গ্রামের এই পরিবর্তনের পেছনে আছে সংকীর্ণ রাজনীতি এবং ইন্টারনেট ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার। অতীত ঐতিহ্যের অনেক কিছুই মুছে ফেলতে বসেছে সাম্প্রতিক প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা। যে মানবিক সৌজন্যের ব্যাপ্তি ও মূল্যবোধের একটা সহনশীল মাধুর্য ছিল তা আজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। শহরমুখী হওয়ার দৌড় এবং চাকরি-বাকরির অন্বেষণ ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এই গ্রামটিরও ঐতিহ্য পরম্পরাকে ভেঙে দিতে বসেছে। রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, টাইম কল এসেছে, গ্রামে বসেছে বহু দোকানপাটও। রড-সিমেন্ট থেকে শুরু করে কাপড়-জুতো, মনোহারী এমনকী ওষুধপত্র পর্যন্ত সবই পাওয়া যাচ্ছে। উঠে গেছে নাটক-কবিগানের মঞ্চ। কাঠকুটো পাতার জ্বালেও আর কেউ রান্নাবান্না করে না। গরুর পাল নিয়ে রাখালকেও মাঠে দেখা যায় না। বট গাছের ডালে চেপে পুকুরের জলে আর কেউ ঝাঁপ দেয় না। এক মাস ধরে ইক্ষুরস বের করে গুড় তৈরি করার সেই ইক্ষুশালও আর নেই। নাপিত-চর্মকার তাদের পেশা ত্যাগ করেছে। শীতকালে মোটা খদ্দর সুতি কাপড় গায়ে দিয়ে আর কেউ সূর্যের জন্য অপেক্ষা করে না। গ্রামে এখন মিছিল ঢোকে, রাজনীতির মিছিল। পার্টির সদস্য চাঁদা আদায় করার জন্য লোক ঘোরে। উভয় সম্প্রদায় এখন অনেকটাই সাবধান। সব মিলিয়েই গ্রাম এখন শহরমুখী। তার আত্মাও ছেঁড়া ভারতবর্ষের আত্মার মতো। করুণ হাত-পা ছুঁড়ে কিছু প্রাচীন বৃক্ষ ঐক্যের মন্ত্র উচ্চারণ করে। মানবিকতার আবেদন জানায়। কিন্তু পাল্টে যাওয়া মানুষ! হ্যাঁ পাল্টে যাওয়া মানুষদের চিনতে পারি না। মাঝে মাঝে হাতে হাত রাখতেও ভয় করে। তখন রবীন্দ্রনাথকেই মনে মনে স্মরণ করি:
“দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান,
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান,
নীবারধান্যের মুষ্টি, বল্কলবসন,
মগ্ন হয়ে আত্মমাঝে নিত্য আলোচন
মহাতত্ত্বগুলি। পাষাণপিঞ্জরে তব
নাহি চাহি নিরাপদে রাজভোগ নব—
চাই স্বাধীনতা, চাই পক্ষের বিস্তার,
বক্ষে ফিরে পেতে চাই শক্তি আপনার,
পরানে স্পর্শিতে চাই ছিঁড়িয়া বন্ধন
অনন্ত এ জগতের হৃদয়স্পন্দন।”
( চৈতালি)।
আর কি সেই দিন ফিরে আসবে যেদিন করিম চাচাকে ধরণী মুখুজ্জে বলবে: ‘হুঁকোটা একটান দিও!’ কিংবা লাল মোহাম্মদ বলবে সত্যব্রত ব্যানার্জিকে: ‘কই হে একবার তামুক সাজো দেখি!’
আমাদের সেই স্বপ্ন দেখার অভ্যাসটি কিন্তু এখনও থেকে গেছে।মাঠে হই হই করে ফুটবল খেলার অভ্যাসটিও।
(৩)আপনার পারিবারিক জীবনবৃত্তান্ত চাই।
🗣️ পারিবারিক জীবন বলতে আমরা ছিলাম চার ভাই, তিন বোন আর মা-বাবা। পরিবারের মোট ৯ জন সদস্য। বাবা ছিলেন একাকী রোজগার করার মানুষ। সমবায় ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে আশির দশকে মাত্র ৫০ টাকা বেতন পেলেন। তাতে সংসার চলত না। তাই ক্ষেতে-খামারে পরের জমিতেও বাবাকে জনমুনিষের কাজ করতে হতো। একবেলা অথবা আধাপেটা খেয়ে আমাদের বড় হতে হয়। আমি ছাড়া বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা আর তেমন কেউ লেখাপড়ায় অগ্রসর হতে পারেনি। লেখাপড়া করতে করতেই রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতে মুম্বাই যেতে হয়েছে। প্রায় চারবার মুম্বাই শহরে গেছি। সেখানে মোট বহনের শ্রমিকের কাজও করেছি। সেই টাকা রোজগার করে এনে লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছি। ছোট ছোট ভাই-বোনেরা মাঠে-ঘাটে কাজ করে ক্ষুন্নিবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছে। আমাকেও করতে হয়েছে সেই কাজ। মাঠে মাঠে গরু চরানো থেকে ঝরেপড়া ধান কুড়ানো এবং ইঁদুরের গর্ত থেকে মাটি খুঁড়ে ধান সংগ্রহও করতে হয়েছে। এমনকি কলেজে পড়াকালীনও ক্ষেতে-খামারে কাজ করতে হয়েছে। পরবর্তীকালে লেখাপড়া শেষ হলে টিউশনি করাই একমাত্র জীবিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০০৪ সালের চাকুরিতে যোগদানের পর আমাকে চলে যেতে হয় মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরে। ২০০৫ সালে বীরভূম জেলার নলহাটি ব্লকের অন্তর্গত বসন্ত গ্রামে ১২ই এপ্রিল সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হই। তারপরের কয়েক বছরের মধ্যেই ভাই-বোনদেরও সব বিয়ে হয়ে যায়। আসে পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা। ২০১২ সাল নাগাদ আমি চাকুরিস্থল পরিবর্তন করে চলে আসি বীরভূম জেলার আমার সদর শহর রামপুরহাটে। আমার সঙ্গে আমার পিতা-মাতাও। এখন সেখানেই আছি। ২০২৩ সালে মে মাসে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে মারা যায় ছোট ভাই রুকুন খান এবং এই বছরই ২৫ শে ডিসেম্বর মারা যান আমার বাবা। বর্তমানে মা-ও অসুস্থ। আমার দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ে বড় নাম তিয়াসি খান বর্তমানে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কলেজে পড়ছে। ছেলে শ্রেয়ান খান এ-বছরই মাধ্যমিক।
(৪)লেখালেখিতে হাতেখড়ির ইতিহাস বলুন প্লীজ?
🗣️লেখালেখির হাতেখড়ি মূলত বাড়ির পরিবেশ থেকেই। গরিব মানুষের একটা বাড়ি, কিন্তু তা একটু ভিন্ন রকমের। বাবা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস ছিল বাবার। বিভিন্ন প্রাচীন সাহিত্য রামায়ণ, মহাভারত,আলিফ-লায়লা, হাতেমতাই, জঙ্গেখয়বর, বিষাদসিন্ধু ইত্যাদি বইগুলি সুর করে পড়তেন। সেইসব বইয়ের গল্প এবং ধ্বনি ঝংকার আমার মনের মধ্যে ক্রিয়া করত। কল্পনার রাজ্যে মুক্তি পেতাম। যুদ্ধের ঝনঝনাৎকার আবেগকে নাড়িয়ে দিত। একটা বিস্ময়কর অনুভূতির জগৎ তখন থেকেই খুলে যায়। পয়ারের মাধুর্য ঐকতান মনের মধ্যে লেফট-রাইট করতে থাকত। কিন্তু তখন লিখতে চাইলেও ভাষা পেতাম না। চরম দারিদ্র্যের কষাঘাত, বস্ত্রহীন-খাদ্যহীন জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই যেতে হতো আমাদের। তখনই কিছু গুনগুন এলোমেলো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মনের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটাত। সেসবই লেখার মধ্যে আশ্রয় চাইত। এই ধরুন স্কুল যাচ্ছি আলপথে হেঁটে হেঁটে। ক্ষেতের দুই পাশে সরিষা ফুল ফুটেছে। তখনই লিখতে ইচ্ছে করত—
“সরষে ফুল সরষে ফুল
তোর সুগন্ধে হই আকুল।
রোজ পথে হচ্ছে দেখা
তাইতো ভুলি মনের ব্যথা।
হলুদ রাঙা পাপড়ি নেড়ে
কেমন করে দোলাস মাথা?
আমার এখন অনেক খিদে
কে শুনবে বল আমার কথা?”
পঞ্চম শ্রেণিতে আমাদের দ্রুতপঠনে ছিল বিদ্রোহী নজরুল বইটি। সেই সময় ওই বইটি বারবার পড়তাম। নজরুলের ‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছো মহান’ পাঠ করতে করতেই কবিতা লেখার সূচনা। কিন্তু তখনকার কবিতা ওই ব্যক্তিচেতনায় অভাব-অভিযোগের ভিতরেই সীমাবদ্ধ। পরবর্তীকালে হাতে এসেছিল সুকুমার রায়ের রচনা সমগ্র। সব মিলিয়েই কবিতা রচনা আমার কাছে একটি আশ্রয় বা আড়াল হয়ে উঠেছিল। সেখানে বাঁচার এবং নিজের স্বপ্নকে লালিত করার আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলাম।
৫)আপনার লেখালেখিতে বাবা কীরকম ভূমিকা রেখেছিলেন?
🗣️
কবিতা লেখার প্রেরণা পেয়েছিলাম বাবার কাছ থেকেই। বাবার মৃত্যুর এক বছর পর এই লেখাটিতে বাবাকে নিয়েই স্মৃতিচারণা করলাম।
বাবাকে হারালাম। দেশ স্বাধীনের আট বছর আগে বাবা পৃথিবীতে এসেছিলেন(১৯৩৯-২০২৩)। তারপর বাংলা ভাগের বহু কাহিনি শুনেছিলেন। কত মারামারির কথা, কত কষ্টের দিনের কথা বাবা জানতেন। চার বছর বয়সে বীরভূম জেলায় রামপুরহাটের গান্ধীপার্কে মহাত্মা গান্ধী আসার খবরও বাবা শুনেছিলেন। তাও আমাদের বলতেন। বাবাকে আমি একটা জ্যান্ত ইতিহাস হিসেবেই মনে করতাম। জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন কিভাবে সব খবর পেতেন? বাবা বলেছিলেন, রেডিও শুনতাম। কারো কারো রেডিওতে খবর হত, তা শুনতে যেতাম। বাবার মুখে শুনে শুনেই দেশ সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মায়। ভারতবর্ষের আসল পরিচয় ছোটবেলাতেই জানতে পারি।
আমারও বয়স তখন প্রায় চার বছর। বাবার ঘাড়ে চেপে এ গ্রাম সে গ্রাম চলে যাচ্ছি কবিগানের আসরে। তখন চারণ কবি গুমানি দেওয়ান বিখ্যাত কবিয়াল। বেশ কয়েকবার বাবার কোলে বসে তাঁর গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। আর শুধু কবিগানই নয়, সত্যপীর, মনসার পালাগান, যাত্রাপালা, লেটো দলের গানও শুনেছি। শিশুবেলাটা সেই ভাবেই কেটেছে।
বাবা কৃষি সমবায় ব্যাংকের সামান্য পিয়ন ছিলেন। প্রথমদিকে মাসিক ভাতা ছিল দশ টাকা। তারপর হয় ৫০ টাকা। তারপর শেষ পর্যন্ত বেড়ে হয়েছিল ২০০০ টাকা। মাঝে মাঝে বাড়তি কিছু অনুদানও পাওয়া যেত। কিন্তু তাতেও সংসার চলত না। একবেলা ব্যাংকের কাজ করেও বাবাকে ঠিকাকর্মী হিসেবে পরের বাড়িতে কাজ করতে হত। কখনো ধানের বীজ তোলা, কখনো আখের পাতা ভেঙে চারাগুলিকে সোজা করে বাঁধা। আবার কখনো কখনো ঘাস কেটে বিক্রি করা। খুদকুঁড়ো জোগাড় করে সন্তানদের মুখে তুলে দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। তবে আশ্বিন-কার্তিক দুই মাসে অভাবের তাড়না বীভৎসরূপ ধারণ করত। তখন উৎসব উপলক্ষে ছাগলের পাঁঠা বা খাসি কেটে মাংস বিক্রি করলে সেই গেরস্থ বাড়ি থেকে তার চামড়াটা বাবা আনতেন কিছু টাকার বিনিময়ে। সেইটি বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতেন। তার ফলে কখনো কখনো দুই থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত লাভ হত। এতেও আহারের সংস্থান হত। এভাবেই সংসারের লোনা স্বাদ পেতে পেতে আমরা বড় হচ্ছিলাম।
কিন্তু আর পাঁচটা মানুষের মতো দারিদ্র্যগ্রস্ত হলেও বাবা দিশেহারা হয়ে পড়তেন না। বাবার একটা অন্য জগৎ ছিল। যতই অভাব থাকুক, উনুন না জ্বলুক, সন্ধেবেলা একটা কুপি জ্বেলে বাবা বই নিয়ে বসতেন। পয়ারে লেখা প্রাচীন সাহিত্যগুলি বাবা কোথা থেকে জোগাড় করে এনেছিলেন তা জানি না। যেমন হাতেমতাই, বড় মওতনামা, জঙ্গেখয়বর, আলিফ-লায়লা, কস্সুল আম্বিয়া ইত্যাদি আরো বহু বই। বাবার বেতন যখন ৫০ টাকা হল, সেই সময় বেশ কিছু টাকা অনুদানও পেয়েছিলেন। কিন্তু বাড়িতে সেই টাকা দেননি। সেই টাকা দিয়ে প্রায় হাজার তিনেক টাকার রামায়ণ-মহাভারত, বেদান্ত, তারাশঙ্কর-বঙ্কিম-বিভূতি রচনাবলী কিনেছিলেন। এইসব বইপত্র রাখার তেমন জায়গাও বাড়িতে ছিল না। এত বই দেখে মা বাবার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করেছিলেন। সারা বছরে একখানা ভালো শাড়ি কেনার পয়সা জোটে না যার, তার এমন বই কেনার শখ কেন? বই পড়লে কি খাবার পাওয়া যাবে? কিন্তু শুধু ঝগড়াই নয়, মা কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নিরক্ষরা মা বইয়ে কী লেখা থাকে তা জানতেন না। সুতরাং তাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টাও বৃথা। তাই বাবাও কিছু বলেননি।
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীনই বই পড়ার নেশা চেপে যায়। ৮ টাকা সংগ্রহ করে বাবাকে দিয়েছিলাম একটা গল্পের বই কিনতে। প্রথম বাবা সেই ‘দেশ-বিদেশে রূপকথা’ বইটি কিনে এনেছিলেন। ছোটবেলায় এই বইটিই আমার সঙ্গী ছিল। কতবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়তাম তার কোনো ঠিক ছিল না। আরেকটু বড় হলে দেখেছিলাম ঘরে রাখা ছিল একটি ছোট্ট পুরনো টিনের বাক্স। সেইটি খুলে তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেয়েছিলাম বাবার ছবি আঁকা একটি খাতা। বাবা হাতি-ঘোড়া, গরু-মহিষ, মাছ ও পাখির ছবি এঁকে তাতে হাত মকসো করেছিলেন। আর পেয়েছিলাম বাবার ছোটবেলার কড়া-গণ্ডা,বুড়ি-চোখ লেখা একটি গণিতের বই। ইংরেজির একটি গল্প বইও পেয়েছিলাম যাতে রঙিন রঙিন অনেক ছবি ছিল। বাঁদর হাতি শেয়াল কাক ও কুমিরের কত রকম গল্প ছিল তাতে। আরেকটি সাহিত্য সংকলনে পেয়েছিলাম বেশ কিছু কবিতা।সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, জসীমউদ্দীন, নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায় প্রমুখ বহু কবির কবিতা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ এবং বিভূতিভূষণের গল্পও। এইসব বইয়ের সঙ্গেই আরেকটি বই পেয়েছিলাম মৌলানা কোরবান আলীর ‘মনোয়ারা’ উপন্যাস। এই বইটি বাবার বিয়েতে কোনো শুভার্থী উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। আমার স্কুল পাঠ্যের সঙ্গে এই বইগুলিও একসঙ্গে মিশে গেছিল। ক্লাসের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলেই এগুলি খুলে পড়তাম আর বাবার ছোটবেলাকে অনুভব করতাম। হ্যাঁ ভুলে গেছি, সেই যুগে বাবা ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছিলেন। তখন বিদ্যালয়ে বেতন দিতে হত বলে টাকার অভাবে আর পড়া হয়নি।
তবে প্রতিদিন উঠোনে তালাই পেতে বাবা সুর করে যখন প্রাচীন পুঁথিগুলি পড়তেন তখন মন স্বাভাবিকভাবেই একটা কল্পনার রাজ্যে পাড়ি দিত। অচেনা জগৎ আর যুদ্ধবিগ্রহের নানা রকম বর্ণনা কৌতূহলী করে তুলত। শ্রোতা হিসেবে শুধু আমিই মুগ্ধ হতাম না, গ্রামের অনেক বয়স্ক মানুষও মুগ্ধ হয়ে মুখে একপ্রকার চুকচুক শব্দ করত।পয়ারের সুর-মাধুর্যে সেদিন খিদেকেও উপেক্ষা করতে পারতাম। হতে পারে কোনো শ্রমিকের বাড়ি, হতে পারে নিরন্ন উপোস দেওয়া ঘর, হতে পারে কুপির আলো, তবুও সেই বাড়িতে বাড়ির মানুষ বই পড়ে। সুরে সুরে মাতিয়ে রাখে মন। এমনকি সব অভাব তাচ্ছিল্য ভ্রূকুটিকেও তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারে। ‘বিষাদসিন্ধু’র কারবালা প্রান্তরের গল্প পড়ার গুণে মানুষকে কাঁদিয়ে দেয়। আবার হাতেমতাই এর অসামান্য সাফল্য মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। আলিফ-লায়লার অলৌকিক ঘটনায় মন সিক্ত হয়ে ওঠে। আল্লাহকে যেন আমরা চোখের সামনে উপলব্ধি করতে পারি। এভাবেই বড় হচ্ছিলাম। সেই বড় হওয়া আজও থেমে নেই।
মৃত্যুর মুহূর্তে বাবা শুনতে চাইলেন কয়েকটি কবিতার আবৃত্তি। বাবার প্রিয় কবিতা ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘দুই বিঘা জমি’, ‘পুরাতন ভৃত্য’, ‘পরশমণি’ সেসব শুনতে শুনতেই নিজেই আবৃত্তি করলেন ‘কৃপণ’ নামের একটি কবিতা:
"দোকান করে রামু দামু মিলে দুটি ভাই
দুই জনেতে বেজায় কৃপণ বাজে খরচ নাই।
একজন দেয় জিনিস মেপে, আর একজনা বসে
পয়সাগুলি বাক্সে তোলে হিসাব করে কষে।
বড় ভাই যায় দু ক্রোশ দূরে যেথায় তাদের বাড়ি
ছোট ভাইটি নিবিয়ে আলো ঘুমায় তাড়াতাড়ি।
রোজই যাবার সময় দামু ভাইকে যায় যে বলে
নিবিয়ে দিবি আলো যেন সারারাত না জ্বলে।
একদিন রামু বাড়ির দিকে ক্রোশ খানেক পথ গিয়ে
হঠাৎ তাহার মনে এল, আলোটি নিবিয়ে
দেবার কথা ভাইকে আসিনি তো বলে!
কী সর্বনাশ আলো যদি সারারাতই জ্বলে!
দু পয়সার তেল হবে ক্ষতি নাই কো কোনো ভুল
সেখান থেকে ফিরল রামু মন বড় ব্যাকুল।
দোকান ঘরের সামনে এসে করতে ডাকাডাকি
দামু উঠে দরজা খুলে শুধায়, দাদা নাকি?
বাড়ি যেতে ফিরে এলে খবর তো সব ভালো?
রামু বলে দেখে যেতে নিবল কিনা আলো।
দামু বলে আলোটা তো নিবিয়েছি তক্ষুনি
কিন্তু দাদা, একটি কথা বলো দেখি শুনি!
তুমি যেখান থেকে ফিরে এলে তোমার দু-ক্রোশ হবে চলা
ক্ষয় কি এতে হল না ওই জুতোর দুটি তলা?
রামু বলে, ভাইরে, আমি যে তোর দাদা
তবে আমায় ভাবিস কেন এত বড় হাঁদা!
যেখান থেকেই ফিরেছি ঠিক সেখানটাতে গিয়ে
জুতো দু-পাট প'রব পায়ে এই দ্যাখ্ না চেয়ে!
বগলদাবায় জুতো আমার হিসাব কি মোর নাই?
দামু বলে, সাবাস দাদা, চরণধূলি চাই ॥”
কবিতাটি কার লেখা, কোন বইয়ে ছিল তা আজও জানতে পারিনি। অথচ হামেশাই এই কবিতাটি বাবা শোনাতেন। আরেকটি কবিতা ছিল ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর’। এটি অবশ্য আমরা সবাই জানি কালীপ্রসন্ন ঘোষ (১৮৪৩-১৯১০)-এর লেখা। ছোটবেলার নানা স্মৃতি, নানা গল্প বাবার মুখে অসাধারণ মনে হত। সেসব শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়তাম। পরোক্ষে বাবা-ই যে আমাকে কবিতার প্রতি আসক্ত করে তুলতেন তা বলাই বাহুল্য।
সাংসারিক জীবনে বাবা একেবারেই বিষয়ী ছিলেন না। যেটুকু জমি-জমা ছিল অভাবের তাড়নায় তা স্বল্পমূল্যেই বিক্রি হয়ে যায়, কিন্তু তাতেও বাবার আফসোস ছিল না। বলতেন, এসব অনিত্য বস্তু, চিরদিন একজনের থাকে না। কোনো গেরস্থ বাড়িতে চাল ধান আটা গম ধার নিতে নিতে এক সময় বাবাকে শুনতে হত “এবার তোমার জমিটা লিখে দিতে হবে, টাকা পরিশোধ হয়ে গেল।” তখন না লিখে দিয়ে আর উপায় ছিল না। এভাবেই একে একে প্রায় সব জমি-জমা নিঃশেষ হয়ে যায়। তখন বাবা ‘দুই বিঘা জমি’র উপেনের মতোই হয়ে যেতেন। কতবার ওই কবিতাটি আবৃত্তি করতেন। সারাদিনে বাবা খুব সামান্য কিছু খাবার খেতেন। না পেলে তাও খেতেন না। খেজুর গাছ অথবা তাল গাছে তাড়ি পাততেন। মাটির বড় বড় ভাঁড়ে সেই রস নামাতেন। সুমিষ্ট রস কিছুটা লালচে রং হত। কিন্তু নিজে কখনো খেতেন না। দশ পয়সা অথবা কুড়ি পয়সা গ্লাস বিক্রি করতেন। এই পয়সা দিয়েই কিনতেন চাল ও আনাজপাতি। কখনো সেই সুমিষ্ট রসও পেকে গিয়ে তাড়িতে পরিণত হত। গাঁ-ঘরের খুচরো মাতালেরা সেই রস পান করে যেত। সামান্য যে জমিটুকু থাকত তাতেই চাষবাস করতেন। কিছুটা মসূুরি, তিসি, আখ এবং পেঁয়াজ ও আলু চাষ হত। অর্থ উপার্জনের এসব ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। একবেলা খেয়ে, অন্যবেলা উপোস দিয়ে আমরা বড় হচ্ছিলাম। অলৌকিক কোনো শক্তির অপেক্ষা করছিলাম। হয়তো সে এসে আমাদের উদ্ধার করবে।
মৃত্যুর আগের মুহূর্তে বাবার শেষ কথাটি ছিল: “অনেক বই রেখে গেলাম, বইয়ের কখনো অনাদর করো না। মাঝে মাঝে পড়বে। পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় আমি দাগ দিয়ে রেখেছি। মূল্যবান কথাগুলি সহজেই বুঝতে পারবে।” বইয়ের আলমারিতে উইপোঁকা ধরেছিল। বহু বই নষ্ট করে দিয়েছে। বাবা শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহাভারতটা নষ্ট করেনি তো? সে-বাজারে পাঁচশো টাকা দিয়ে ওই বইটি কিনেছিলাম!” বাবাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, না, ওই বইটি ঠিক আছে।
বাবা শুনে পাশ ফিরে ছিলেন । অনেক মানুষ দেখতে এলে, বাবা তাদের বলেছিলেন, “তোমাদের কি কোনো কবিতা মনে নেই? আমাকে একটা শোনাও না!” মৃত্যু শয্যায় শায়িত থেকে কে কবিতা শুনতে চেয়েছিল? এই নিয়ে আমি বহু ইতিহাস খুঁজেছিলাম, কিন্তু আজও পাইনি। যে লোকটি মাত্র ছয়টি শ্রেণিতে পৌঁছেও তা সম্পূর্ণ করেনি, সেই লোকটি কবিতাকে এত ভালবেসে ছিল? স্তম্ভিত হয়ে গেছিলাম কথাটি শুনে। তাহলে বাবার সত্তাটি কি আমারই সত্তা? বাবার মহাভারতের সামনে দাঁড়িয়ে আজও স্মরণ করি। গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’ বইটি আমার কাছে আজও এক দর্শনের তাত্ত্বিক বই বলে মনে হয়। অথচ বাবা এই বইটি পড়েও দাগ দিয়েছিলেন। ‘বিষাদসিন্ধুর’ সাধুভাষার দীর্ঘ বিশেষণগুলির নিচেও বাবা দাগ দিয়ে রেখেছেন। তাহলে এগুলোও কি বাবা বুঝতে পেরেছিলেন? না কোনো সন্দেহ নেই। বাংলা ব্যাকরণ আর পাটিগণিত আমি বাবার কাছেই শিখেছিলাম। বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়ার আগ্রহ তখন থেকে জন্মেছিল। নিজের মুখটিও আয়নার সামনে দেখি আর নিজেকেও বাবার মতোই অনুভব করি।
সারাজীবন বাবাকে দেখেছি কম আহার করতেন, খুব কম পোশাক-পরিচ্ছদও ব্যবহার করতেন। এমনকি ব্যবহৃত জলও খুব কম খরচ করতেন। মনে মনে সারাদিন তসবিহ তেলাওয়াত করাই ছিল বাবার একটা অভ্যাস। কোনো সময় দীর্ঘ সেজদায় লুকিয়ে পড়তেন। পার্থিব কোনো বিষয়েই তেমন আসক্তি ছিল না। তাই দুঃখ-যন্ত্রণা বাবাকে কাঁদাতে পারেনি। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে তবু তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরত, কেন ঝরত তার কারণ কখনো বলেননি। আজও বাবাকে চোখের সামনে দেখতে পাই না, কিন্তু মনের ভেতর তিনি বেঁচে রয়েছেন। আজও তিনি নির্দেশ দেন, "লোভ থেকে দূরে থেকো। সত্য ছাড়া কখনো মিথ্যে বলবে না।" এ কথা কি সত্যি সত্যি আমরা পালন করতে পারছি? বারবার সেই পরীক্ষার সামনেই উপস্থিত হচ্ছি।
(কবিতা লেখার প্রেরণা পেয়েছিলাম বাবার কাছ থেকেই। বাবার মৃত্যুর এক বছর পর এই লেখাটিতে বাবাকে নিয়েই স্মৃতিচারণা করলাম।)
৬)বই প্রকাশের অনুভূতি বলুন।
🗣️বই প্রকাশের আনন্দের অনুভূতি বিয়ে করে বাসর ঘরে যাওয়ার থেকেও বেশি কিংবা ভিন্ন রকমের। প্রথম বই যখন প্রকাশিত হয় তখন সেই বইটি বুকে নিয়ে সারারাত ঘুমাই। বারবার নাকের কাছে এনে বইয়ের ঘ্রাণ নিতে থাকি। বইয়ের মলাটে হাতের স্পর্শ করে সুখ পাই। নিজের লেখা পংক্তিগুলি চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিজের সন্তানের মতো। সমরেশ বসুর জীবনীতে পড়েছিলাম, তাঁর প্রথম বই বেরোলে তিনি গায়ের জামা খুলে জড়িয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচিয়েছিলেন এবং ঘরে এনেছিলেন। সুতরাং এই আনন্দের সঙ্গে অন্যানন্দের তুলনা হয় না।
৭)কবে থেকে মনে হলো আপনি একজন কবি?
🗣️ আমি ছোট থেকেই নাকি নিজের মনেই নানা রকম কথাবার্তা বলতে থাকতাম। আমার কাছে কোনো শ্রোতা থাকত না,বা কাউকে উদ্দেশ্য করেও কিছু বলতাম না। শুধু নিজে নিজেই এক রকমের অভিনয় বা তর্ক-বিতর্ক চলত। বাড়ির লোকেরা বা বন্ধু-বান্ধবেরা অনেক সময়ই তা লক্ষ করত। এটাকে সবাই পাগলামি হিসেবেই দেখত। এই কি ছিল কবির লক্ষণ? কিন্তু নিজেকে কখনো কবি বলে মনে হয়নি। ১৯৮৪ সালে প্রথম কলেজ ম্যাগাজিনে কবিতা প্রকাশিত হলেও, কিংবা তার দু'বছর পরেও লিটিল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হলেও নিজেকে কবি বলে মনে হয়নি। ২০০২ এ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও কিংবা ২০০৩ এ শারদীয়া দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও নিজেকে কবি বলে মনে হয়নি। আজ পর্যন্ত নিজেকে কবি বলে দাবি করি না। মনে হচ্ছে ভালো লেখাটি এখনো লিখতে পারিনি।
৮)আপনার লেখালেখির জীবনের সাথে কুটুমবাড়ি মিলনপল্লীর অবদান আছে কতটুকু?
🗣️আমার লেখালেখি জীবনের সঙ্গে কুটুমবাড়ি মিলনপল্লির অবদান আছে যথেষ্টই। তখন আশির দশকে কলেজের ছাত্র। ‘বিকল্প’ পত্রিকার সম্পাদক বললেন ‘দৌড়’ পত্রিকায় লেখা পাঠাতে এমনকি তিনি ঠিকানাও দিলেন। ওই তখন থেকেই লেখা পাঠানো শুরু হলো। তখন মধুমঙ্গল বিশ্বাস কাজের সূত্রে শান্তিনিকেতন আসতেন। সেখানেই তিনি একদিন ডেকে পাঠালেন। পরিচয় হওয়ার পর থেকেই তখন প্রথম কলকাতা দুর্গানগরে দৌড়ের মাসিক সাহিত্য সভায় উপস্থিত হতাম। প্রায় শূন্য পকেটেই আমাকে যেতে হতো কলকাতায়, কিন্তু ফেরার সময় তিনি টিকিট কেটে দিতেন অথবা খরচ দিতেন। দৌড়ের সাহিত্য আড্ডায় পরিচয় হয় বিখ্যাত কয়েকজন সাহিত্যিক-কবির সঙ্গে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: সুবীর মণ্ডল, সঞ্জয় গুহ ঠাকুরতা, তীর্থঙ্কর মৈত্র, চিত্তরঞ্জন হীরা, বিদ্যুৎ প্রামাণিক, সনৎ কুণ্ডু, প্রশান্ত হালদার, রাজীব ঘোষ প্রমুখ আরো অনেকের। মধুমঙ্গল বিশ্বাস দাদার আন্তরিক ব্যবহার এবং কবিতার প্রতি গভীর ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। একদিন গিয়ে দেখি, মধুমঙ্গল দাদা সদ্য বিয়ে করেছেন। ঘরে নতুন দীপিকা বৌদি। ভাড়ার রুম মাত্র একটাই। একটাই চৌকি পাতা। সে সময় একটা বিছানাতেই আমরা তিনজনে ঘুমিয়ে ছিলাম। সাহিত্য অনুষ্ঠানে গিয়ে কখনো কখনো দু-তিন দিন আমাকে থেকে যেতে হতো। মধুদার ভালোবাসা ও প্রশ্রয়ে আমার এই কলকাতায় আগমন। তেমনি ‘দৌড়’ পত্রিকায় একপ্রকার জোর করেই আমাকে দিয়ে গদ্য লেখান। পুস্তক সমালোচনা লেখান। ‘হৃদয়পুর’ দীর্ঘ কবিতার কাগজে আমাকে দীর্ঘ কবিতা এবং দীর্ঘ কবিতা বিষয়ক গদ্যও লেখান। শুধু এখানেই ক্ষান্ত হননি, আমার প্রথম কাব্য ‘কোথায় পা রাখি’(১৯৯৪) প্রকাশ করেন। ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন দু একবার হোস্টেল খরচও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরও দুটি কাব্য ‘বৃষ্টিতরু’(১৯৯৯) এবং দীর্ঘ কবিতার কাব্য ‘প্রত্নচরিত’(২০১১) প্রকাশ করেন। এই ‘প্রত্নচরিত’ কাব্যটিই ২০১৫ সালে ‘দৌড়’ সাহিত্য পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়। ২০২৩ সালে এসেও আমাকে নিয়েই ‘দৌড়’-এর একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন। সুতরাং আমার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশে প্রায় ৪০ বছর ধরেই ‘দৌড়’ লালন পালন করে চলেছে। কখনো সেখানে আন্তরিকতার অভাব দেখিনি।
৯)একজন কবিকে কবি হয়ে উঠতে আদৌ কারো সহযোগিতা দরকার হয়?
🗣️অবশ্যই হয়। আমার এক কবি বন্ধু বলতেন, সুন্দরী বউকে ঘরে বন্দী করে রাখাটাই সৌন্দর্যের সংরক্ষণ নয়। তেমনি প্রতিভাকে নিজের মধ্যে রেখে দেওয়াটাই প্রতিভার কদর নয়। উভয় ক্ষেত্রেই প্রকাশ দরকার। আর এই প্রকাশটা হয় অন্যের দ্বারা। একজন কবি-সাহিত্যিককে তুলে ধরতে পারেন প্রকাশকগণ। আর তার ফলেই তিনি পৌঁছে যেতে পারেন বৃহত্তর পাঠক সমাজের কাছে।
১০)আপনার কবি জীবনের সাথে লিটল ম্যাগাজিন কতটুকু ভূমিকা রেখেছে?
🗣️আমি মূলত লিটিল ম্যাগাজিনেরই লেখক। তবে বাণিজ্যিক কাগজগুলি মাঝে মাঝেই আমার লেখা চেয়ে নিয়েছে মূলত লেখার গুণ বিচার করেই। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশিত লিটিল ম্যাগাজিনগুলিতে আমি প্রচুর কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছি। এখনো লিখছি। এতই লিখেছি যে তার সংখ্যা গণনা করা রীতিমতো মুশকিল।
১১)সকল টানাপোড়েন শেষে আপনি এখন মূলস্রোতের একজন লেখক। আদৌ তাতে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন ভূমিকা রেখেছিলো?
🗣️লিটিল ম্যাগাজিনের ভূমিকা ছিল বলেই আমার লেখার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্যিক কাগজগুলোর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকে লিটিল ম্যাগাজিনের লেখকদের প্রতি। সেখান থেকেই তারা মান বিচার করে লেখক নির্বাচন করেন। সাহিত্যের সূতিকাগার হচ্ছে লিটিল ম্যাগাজিন। একজন লেখক সেখান থেকেই লালিত পালিত হয়ে বিশাল মহীরুহে পরিণত হন। আমার ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।
১২)আপনি যদি লিখতে আসতেন না তো কি করতেন?
🗣️লিখতে না এলে হয়তো আর পাঁচজন মানুষের মতোই সংসার করতাম আরো গভীরভাবে। বৈষয়িক বিষয় সম্পত্তি হয়তো অনেক বৃদ্ধি পেত। সাহিত্যসৃজনের যে একটা আলাদা আনন্দ আছে সেই আনন্দের আস্বাদ পেতাম না।
১৩)কখন মনে হলো আপনি লেখালেখিতে অনিবার্য?
🗣️কলেজে পড়াকালীন যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম, তখন দেখেছিলাম আমাদের পাড়ায় বিয়ের পণ দিতে পারেনি বলে একটা মেয়ের বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও বর আর বিয়ে করতে আসেনি। বরের জন্য সেজেগুজে সারারাত অপেক্ষা করেছিল, কিন্তু শেষে হতাশ হয়ে পড়েছিল। সমাজের চোখে মেয়েটি হয়েছিল লগ্নভ্রষ্টা। তাকে নিয়েই একটি ছোটগল্প লিখেছিলাম ‘স্বপ্নভাঙা রাতের আলো’ নামে। গল্পটির শেষ পরিণতিতে লিখেছিলাম, মেয়েটি বিদ্রোহিনী হয়ে সমাজের মুখাপেক্ষী না থেকে তাদের বাড়ির চাকরকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। গল্পটি পড়ে চারিদিকেই হৈচৈ পড়ে যায়। আমাকে তখন একদল লোক মার-মার কাট-কাট করতে থাকে তো আর একদল লোক বাহবা দিতে থাকে। সমাজ এবং সামাজিক প্রথাকে উচিত শিক্ষা দিতে হলে লেখাটিই আমার কাছে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।
১৪)মফস্সল থেকে একজন আবহমান বাংলা সাহিত্যে অনিবার্য হয়ে ওঠতে কতটুকু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে?
🗣️কাঠখড় পোড়ানোর কথা যদি বলেন তাহলে আমি তো লেখার ক্ষেত্রে সেরকম কিছুই পুঁজি বিনিয়োগ করিনি। দু-একটা ক্ষেত্রে কিছু বই সামান্য টাকা দিয়ে প্রকাশ করতে হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই টাকাও ফেরত পেয়েছি প্রকাশকের সততায়। এ বছরও কয়েকটি বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রকাশকগণ চেয়ে নিয়েছেন। কয়েকটি পুরস্কারের ক্ষেত্রেও(যে পুরস্কারের অর্থমূল্য নগদ ১০,০০০ ও ৫০০০) যা আমাকে প্রদান করেছেন, সেইসব কর্তৃপক্ষদের আমি ঠিকমতো চিনতামই না।
১৫) আমাদের বাংলা সাহিত্যে একজন লেখক আসলেই কি জীবদ্দশায় প্রকৃত মূল্যায়ণ পান?
🗣️ কখনোই না। জীবনানন্দ দাশ পাননি। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জীবদ্দশায় প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না। মৃত্যুর ১০০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
১৬)লেখক স্বত্ব পাওয়া কতটুকু জরুরি একজন লেখকের জন্য?
🗣️ লেখক স্বত্ব পাওয়া অবশ্যই জরুরি। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেই সৃষ্টির মর্যাদা রক্ষার্থে স্বত্বও দরকার। লেখকের জীবদ্দশা কাটলেও তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্য তাঁর অধিকার থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
১৭)আপনার কবিতাভাষা অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র। প্রত্যেক লেখক বা কবিকে নিজের স্বর স্পষ্ট করতে কতদিন লেখালেখি করা প্রয়োজন?
🗣️ নিজস্ব স্বর তৈরি তো প্রথম থেকেই হয়ে যায় যদি কবি সচেতন থাকেন। জীবনানন্দ দাশ ‘ঝরাপালক’ লিখে বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর কবিতার মধ্যে নজরুল ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বেশি মিশেছেন। তাই পরবর্তী কাব্যগুলিতেই তাঁর স্বকীয়তা ফুটে ওঠে। সুতরাং স্বকীয়তার জন্য নির্দিষ্ট সময় নয়, দরকার সচেতনতা।
১৭)কতদিন চর্চার পর প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ করা প্রয়োজন লেখতে আসা একজন তরুণকে এ বিষয়ে কিভাবে গাইড করা দরকার?
🗣️ আমি মনে করি একজন তরুণ কবিকে প্রথমত লিটিল ম্যাগাজিনগুলিতে লিখে তাঁর পাঠক তৈরি করা দরকার। পাঠক তাঁকে চিনুক, জানুক। তারপর পাঠকেরাই অনুভব করবে তাঁর কাব্যগ্রন্থ সংগ্রহ করার। আজকাল অনেক প্রকাশক তরুণ কবির কাব্যগ্রন্থ বিনা পয়সায় প্রকাশ করছেন। যদি লেখার গুণমান সেরকম হয় তাহলে তাঁকে আর ভাবতে হবে না।
১৯)ইদানীং দেখছি সম্মাননা প্রদান করতেও লেখক থেকে আয়োজক সংস্থা ও ব্যক্তিরা টাকা চেয়ে নিচ্ছেন। এটা আদৌ বাংলা সাহিত্যের মঙ্গল? লেখকের উপকার হয় এরকম?
🗣️ বাংলা সাহিত্য এই কারণেই দূষিত হয়ে চলেছে। এখানে সততার বড়ই অভাব। পুরস্কার দিতে হলেও কর্তৃপক্ষ টাকা নিয়ে পুরস্কার দিচ্ছেন। সম্মাননা প্রদান করছেন তাও ওই টাকার বিনিময়েই। এটা শুধু লোক দেখানো কিছুটা প্রচার পাওয়ার জন্যই করা হয়। এতে মঙ্গল কিছুই হয় না। প্রকৃত আনন্দ থেকে যেমন বঞ্চিত হন, তেমনি এভাবে সাহিত্যিক বা লেখক হওয়াও যায় না। নিজের সঙ্গে ছলনা করা হয়। তার থেকে বরং সম্মাননা না পাওয়াটাই বড় সম্মানের ব্যাপার।
২০)লিটল ম্যাগাজিনও তো লেখকের নিকট থেকে নির্লজ্জের মতো টাকা চাইছেন।এতে লেখকের আদৌ উপকার হচ্ছে?
🗣️ লিটল ম্যাগাজিন যাঁরা করেন তাঁরা সবাই সৎ ও নিরপেক্ষ বা যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি নন। লিটিল ম্যাগাজিনকে কেন্দ্র করে অনেকেই ব্যবসার ফাঁদ পাতছেন। সাহিত্যের মান ও উৎকর্ষ সম্পর্কে এঁদের কোনো ধারণাই নেই। স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্য আজকাল আবর্জনার স্তূপ হয়ে উঠছে। অযোগ্য লেখক এবং অযোগ্য সম্পাদকে ভরে গেছে সাহিত্যের অঙ্গন।
২১)বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি আমাদের মননকে কতটুকু মার্জিত রুচির চিন্তাশীল বিচক্ষণ করে তোলে?
🗣️ সাহিত্য-সংস্কৃতি অবশ্যই মানুষকে রুচিশীল মার্জিত করে তোলে, কেননা তিনি সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা তাঁর চিন্তা ও চেতনায়। তিনি যেমন যুক্তিবাদী, মানবিক বোধসম্পন্ন, তেমনি সংবেদনশীল দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি। তাঁর মধ্যে যেমন ধর্মান্ধতা থাকে না, তেমনি দেশহিতৈষী মানবহিতৈষী কার্যক্রমের বহু পথের সন্ধান থাকে। শিল্পকে মাধুর্যমণ্ডিত করে তোলার মতোই জীবনকেও মাধুর্যময় করে তোলার স্বপ্ন থাকে। সুতরাং তাঁর উদারতা ও কার্যপ্রণালী, দেশপ্রেম ও জ্ঞান ভাণ্ডার দেশবাসীর কাছে অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।
২২)আপনার শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলিত হোক। আর তা হোক স্রোত প্রকাশনা থেকে। এ বিষয়ে আপনার একটি চিন্তাভাবনা বলুন।
🗣️শ্রেষ্ঠ কবিতা একাধিক হতে পারে। স্বনির্বাচিত কবিতাও হতে পারে। স্রোত প্রকাশনী চাইলে করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রকাশনীকেই কবিতা নির্বাচনের দায়িত্ব নিতে হবে।
২৩)স্রোত প্রকাশনা সম্পর্কে আপনার একটু লেখা অনুভব চাই।
🗣️ স্রোত প্রকাশনার নানা উদ্যোগ এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কার্যসম্পাদন আমার কাছে অবশ্যই ভালো লাগার বিষয়। ইতিমধ্যে আমার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন: ‘স্তব্ধতার ভেতরে এক নিরুত্তর হাসি’(২০১৮) এবং ‘কাহার অদৃশ্য হাতে’(২০২৩)। দুটি কাব্যগ্রন্থটির প্রোডাক্ট খুব আকর্ষণীয়। মলাট বাঁধাই ও ছাপানো ঝকঝকে। কাজের মধ্যে নিষ্ঠা ও শ্রমের দেখা পেয়েছি। প্রকাশকের সততায়ও মুগ্ধ হয়েছি। আশা করি স্রোত কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
আপনাকে শুভেচ্ছা সময় দেওয়ার জন্য।
🗣️আমারও নমস্কার জানবেন।
0 Comments