কুমারঘাটে সতীশচন্দ্র সেন ও আমাদের ইতিবৃত্ত গোবিন্দ ধর
কুমারঘাটে সতীশচন্দ্র সেন ও আমাদের ইতিবৃত্ত
গোবিন্দ ধর
অবিভক্ত ভারতের মৌলভীবাজারের বর্তমান বাংলাদেশের ভানুগাছ উপজেলার ধনাট্য ব্যক্তিত্ব সতীশচন্দ্র সেন ছিলেন পরহিতৈষী। দেশভাগের আগে বর্তমান ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অবিভক্ত উত্তর ত্রিপুরার পাবিয়াছড়া চলে আসেন।বর্তমানে পাবিয়াছড়া ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট মহকুমায় অবস্থিত।
কথিত আছে তিনি এবং সুশীতল ধর একসাথে পাবিয়াছড়ায় বসতিস্থল নির্মান করে বসবাস শুরু করেন।তখনও পর্যন্ত পাবিয়াছড়ায় তেমন লোকজন স্থায়ীভাবে বাস করতেন না।পরবর্তী সময় ধীরে ধীরে গ্রীপ কোম্পানির আসাম আগরতলা ৪৪ নং জাতীয় সড়ক নির্মানের সময় পাবিয়াছড়ায় একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়ার পর পাবিয়াছড়া কুমারঘাট হয়ে যায়।পূর্বে দেওনদের পশ্চিম অংশ ছিলো কুমারঘাট। পূর্ব অংশ পাবিয়াছড়া।
হাত তোলা ভোটে গাইবাছুর চিহ্নের কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন গোপেশচন্দ্র দেব। তিনি কুমারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মনোনীত ছিলেন।আর পূর্ব অংশ পাবিয়াছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হাত তোলা প্রধান সুশীতল ধর। ১৯৮৮ সালে কুমারঘাট নগর পঞ্চায়েত হয়।আর ২০১২ সালে কুমারঘাট মহকুমা হয়।পাশাপাশি কুমারঘাট নগর পঞ্চায়েত থেকে পুর পরিষদের গেজেট প্রকাশ হয় সরকারের তরফে। তখনও কুমারঘাট ও পাবিয়াছড়া অঞ্চল ঘণ বনাঞ্চল ছিলো।বাঁশ আর ছনে বন ছিলো গভীর অরণ্য। বাঘ থেকে বন্যশয়ূর বনমোরগ ভালুক এমন কি বন্য হাতিও কুমারঘাটে ছিলো।হাতি ধরার খেদাও ছিলো। বনের হাতি তখন কি আর লোকালয়ে আসতে হতো? না নিশ্চয়ই। কারণ মানুষের এত ঘনবসতি ছিলো।ধীরে ধীরে কুমারঘাট হয়ে ওঠে রেলশহর।দার্চইয়ের আনারস বিশ্ববিখ্যাত ক্যুইন জাতের আনারস।এর জন্য দারচৈ এখন পরিচিত। দারচৈ দার্লংয়েরা বসাবাস করেন।আর বিস্তৃর্ণ কুমারঘাটে মিশ্র জাতির বসবাস শুরু হয়।হিন্দু মুসলিম সবাই পরস্পর পরস্পরের ভাই ভাই। এখানের সকলের মুখের ভাষা পূর্ববঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা শ্রীহট্টীয়। শ্রীহট্টীয় ভাষাকে সিলেটিও বলা হয়।কিন্তু এক সময় সিলেটের ভাষাকে নাগরী বলা হত।এই নাগরীর আবার লিপিও আছে।ইতিহাসে সিলেটের জাতিকে বাঙ্গালী বলতেন না।
সতীশচন্দ্র সেনের সাত মেয়ে দুই ছেলে।আমাদের মা মাসীদের মধ্যে মা হলেন তৃতীয়তম মেয়ে।আর মামা শৈলেশচন্দ্র সেন সবার বড়।কনিষ্ঠ পুত্র সমরেন্দ্র সেন।ছোট মামাকে সবাই সমর সেন বলেই চেনেন।পাবিয়াছড়া বাজারের মাছ শেড সংলগ্ন এক পাশে মামাদের বাড়ি।অন্যপাশে তৎকালীন ফুট কন্ট্রোলার হরেন্দ্র দে আমাদের বড়মাসীর বর।সাংঘাতিক দাপটে ছিলেন তিনি।বর্তমানে মা সহ পাঁচজনই পরলোকে। ছোটমাসি আগরতলা গান্ধী মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন চাকুরিজীবী ছিলেন।ব্যক্তিত্বময় কৃষ্ণ দত্ত বর্তমানে কলেজটিলায় অবসরকালীন আছেন।মাসিও আগরতলায় স্টাফ নার্সের চাকুরীরত ছিলেন।বর্তমানে অবসরে আছেন। মা গৃহী মানুষ। মা ছিলেন বাবার মতো বইপোকা।বইয়ের সাথে সারাদিন কাটাতেন।
সতীশচন্দ্র সেন নিরহংকারী হিসেবে পরিচিত। দিদা সুশীলা সেনসহ সংসারে সুখে শান্তিতে বসবাস করেন।দাদুর ছিলো শ্বাসকষ্ট ব্যারাম।আমরা যখন বাবার সাথে যেতাম উনার রোগযন্ত্রণা দেখে কষ্ট হতো।দিদাকে তেমন মনে পড়ে না।
বর্তমান কুমারঘাট বাজারে ঢুকতে ডান দিকে সতীশচন্দ্র সেন মার্কেটে ছোট মামার দোকান ভিটে ভাড়াটিয়ারা ব্যবসা করেন।
যতটুকু মনে আছে তিনি বেশ উঁচু লম্বা ছিলেন।বেশ সুগঠিত শরীর। নাক সূঁচালো। বয়সকালেও বেশ সুন্দরী ছিলেন দিদা।হাঁটাচলায় ছিলো আভিজাত্য। কথায়ও তিনি বাকপটু। মিস্টি কিন্তু ধার ছিলো।দাদুও সকলের সাথে থেকেও নিজের ব্যক্তিত্বে তিনি পৃথক থাকতে না চাইলেও ছিলেন।
বড় মামা খাদ্য রসিক ছিলেন।প্রচুর ঝাল খেতেন।আমাদের রাতাছড়ার বাড়িতে প্রায়ই দুএকদিন থাকতেন।তখন দেখেছি মায়ের কম ঝাল তরকারিতে মামার হতো না। তিনি নিজের পাঞ্জাবির পকেট থেকে কাঁচালঙ্কা বের করে ভাতের সঙ্গে খেতেন।আমাদের পার্শ্ববর্তী পাড়ায় বড় মামার শ্বশুড়বাড়ি।সে জন্যেও বাবার সাথে ছিলো বড় মামার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। যদিও মায়ের বড় ছিলেন বড় মামা।কিন্তু বাবার সাথে ছিলো গলায় গলায় সম্পর্ক। কতদিন দেখেছি কুমারঘাট চা খেতে দুজনকে।এমনও দেখেছি এক কাপ চা দুজনে ভাগ করে খেতে।
তাদের সম্পর্কে কখনো দূরত্ব দেখিনি।কিন্তু কুমারঘাটে এলেও অকারণে বাবাকে কখনও শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে রাত্রিযাপন করতে দেখিনি।শুনেছি বড় মামা শ্বশুড়বাড়িতেও কাঁচামরিচ নিয়ে যেতেন পকেটে ভরে। ঝালের প্রতি মামার ছিলো সহজাত টান।অথচ বড় মামা পিতৃদশায় একমাস হাঁড়ি চাপাননি।উনুন ধরাননি।কোনো কিছু আগুনে সেঁকা খাননি।শুধুমাত্র ফল আর কাঁচা দুধ হবিষ্যন্ন হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
৩০:০৪:২০২৫
রাত:০৮:৩০ মি
কুমারঘাট।
0 Comments