কবি পুলিন রায় :সাহিত্য সংগঠক ও ছোটকাগজ ভাস্করের সম্পাদক :গোবিন্দ ধর
কবি পুলিন রায় :সাহিত্য সংগঠক ও ছোটকাগজ ভাস্করের সম্পাদক
গোবিন্দ ধর
হঠাৎ একদিন আগরতলা থেকে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন: "আমি পুলিন রায়।ছোটকাগজ ভাস্কর সম্পাদনা করি।আমরা কয়েকজন মণিপুর যাচ্ছি। আপনার সাথে দেখা করতে চাই। " কথাগুলো শুনে ভালো লেগেছিলো।আমি ততো বড় কেউ নয়।তারপরেও তিনি আমাকে ফোন করে ভাস্কর দিতে চাইছেন এতে আমি যারপর নাই আনন্দিত ও খুশি হয়েছি।আমি সেদিন বলেছিলাম আমি তো আগরতলা থাকি না।আমি ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলায় কুমারঘাট থাকি।তিনি তখন আমাকে বললেন :"আপনাকে ভাস্করের একটি সংখ্যা দিতে চাই। কিভাবে দেবো?"বলেছিলাম আগরতলা কর্ণেলচৌমুহনী উদয়শংকর ভট্টাচার্য মহোদয়ের প্রিন্টিং ইউনিট নন্দনচর্চায় ভাস্করটি রাখার জন্য। তিনি কথা মতো ভাস্কর রেখেছিলেন।পরবর্তী সময় নন্দনচর্চা থেকে লিটল ম্যাগাজিন ভাস্কর সংগ্রহ করেছি।
একটি লিটল ম্যাগাজিনের যতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন ভাস্করের সংখ্যাটি হাতে নিয়ে উপলব্ধি করতে পেরেছি তা সংখ্যাটিতে বিদ্ধমান।
তারপর থেকে পুলিন রায়দার সাথে মানসিক সখ্যতা গড়ে ওঠে।
সদ্য অবসরে গেলেন ছাতক উপজেলার শিক্ষা আধিকারিক হিসেবে। পরপর কয়েক বার তিনি উপজেলায় শ্রেষ্ঠ আধিকারিক হিসেবে সম্মানিত হয়েছেন।
গত ৩রা মার্চ ২০২৩ সালে তাঁর সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ভাস্কর এর তেত্রিশ বছর উদযাপন উপলক্ষে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।আমি উপস্থিতও হয়েছিলাম।তিনি উপহার দিয়েছেন আনন্দ বেদনার তেত্রিশ বছর একটি সুসংগঠিত অনুষ্ঠান। একটি ছোট পত্রিকা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল ভূমিকা স্থাপন করে যা অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিল। ভারত বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক এবং উল্লেখযোগ্য কবি সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখে ছিলেন বলেই ভাস্কর সম্পাদক তাঁদের আমন্ত্রণ করে একসাথে জড়ো করেছিলেন অনুষ্ঠানে। একজন ছোট পত্রিকা সম্পাদকের সম্পাদনার পাশাপাশি সারা বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি লক্ষ্যে রাখা জরুরি তা তিনি তাঁর আমন্ত্রিত অতিথিদের আমন্ত্রণের মাধ্যমে ঘোষণা করতে পেরেছিলেন।আনন্দ বেদনার তেত্রিশ বছর পর্বে ছোট পত্রিকার নানা সমস্যা উঠে আসে আলোচকদের আলোচনায়।আসলে প্রায় প্রত্যেক ছোট পত্রিকা সম্পাদকের সমস্যা একই।সেগুলো আলোচিত হয়।
তারপর ২০২৩ সালে তিনি পারিবারিক আনন্দ ভ্রমণে এসেছিলেন ত্রিপুরা। আমার সাথে বৌদি দুই সুযোগ্য সন্তানসহ এক সকাল কাটিয়েছিলাম তাঁর সঙ্গে। যদিও আমি ততোটুকু সময় দিতে পারিনি আমাদের গৌরব ধর তখন জি বি হাসপাতালে এডমিট ছিলো।তবুও তাঁদের সান্নিধ্যে সময় কাটিয়ে আমার বিচলিত মন সেদিন একটু হলেও শান্ত হয়েছিল। তাঁর পরিবার আমার সাথে স্বল্প সময়ের মধ্যে মিশে নিজের পরিবারের একজন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
একজন সাহিত্যিক কত বড় মনের অধিকারী হলে এরকম মানুষকে আপন করে নেওয়া সম্ভব কবি সম্পাদক পুলিন রায় তার দৃষ্টান্ত।
তিনি কবি।এ যাবৎ প্রকাশিত অসংখ্য কাব্য সংকলন প্রকাশিত। পেয়েছেন দেশ ও দেশের বাইরের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান। আমারাও সেদিন তাঁকে স্রোত সাহিত্য সম্মান প্রদান করতে পেরে সাহিত্যের এক দায়বদ্ধতা কার্যকর করতে পেরেছি বলে আমরা আনন্দ পেয়েছি।
কিন্তু আমাদের স্রোত প্রকাশনা আয়োজিত না না অনুষ্ঠানে তাঁকে বারবার অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েও ভিসা জটিলতা ও শিক্ষা আধিকারিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য ছুটি মঞ্জুর না হওয়ায় অনুষ্ঠানে পাইনি।আক্ষেপ রয়েই গেলো আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁকে সম্মানিত করতে পারিনি।ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা উপলক্ষে প্রকাশনা মঞ্চ আয়োজিত অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। কিন্তু একই জটিলতায় তাঁকে আমরা উপস্থিত করাতে পারিনি।
এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত। সময় অফুরন্ত।কিন্তু এখনো সেই ভিসা জটিলতা।
ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ বাংলা ভাষাভাষী তিনটি অঞ্চল। চাইলেই পরস্পর পরস্পরের মধ্যে সাহিত্য সাংস্কৃতিক হৃদ্যতা বাড়ানো যেতো সরকারি পর্যায়ে।অথচ বাংলাদেশের সাথে আমাদের যেমন আরো সৌহার্দ্যপূর্ণ যোগাযোগ হওয়া জরুরী তেমনি বাংলাদেশের জন্যও একই রকম সৌহার্দ্যময় পারস্পরিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক সমাবেশ হওয়া সম্ভব। আমাদের সেই লক্ষ্যে সাহিত্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের যোগাযোগ অনেকটা গড়ে উঠেছিল। রাজনৈতিক পালাবদলে কিছু স্লথ হয়ে গেছে আদান-প্রদান। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক পালাবদল হলেও দুদেশের সম্প্রতি সৌন্দর্য পারস্পরিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক হৃদ্যতা বাড়ানো প্রয়োজন। দুই রাস্ট্র ব্যবস্থার ভেতরে এমন কোনো আইন তৈরী হতেই পারে মানবসম্পদ আসা যাওয়া যেন বন্ধ না হয়।এতে পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত থাকতে নিশ্চয়ই বিশেষ ভূমিকা নেবে।
আর কবি পুলিন রায়দের মতো সাহিত্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তো এমনই চান চিরদিন।
তাঁর কবিতাও ভালোবাসার কথা বলে। সিলেটের বিস্তীর্ণ হাওর নদী নালা চা বাগানের সহজিয়া জীবনবোধের গভীরতা ধরা পড়ে কবি পুলিন রায়ের কবিতায়।
কবিতা আমাদের সমস্ত ব্যারাম থেকে বিশল্যকরণীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বিশ্বাস রাখি।
২৭:০৬:২০২৫
0 Comments