কবিতাগুচ্ছ || গোবিন্দ ধর
গোবিন্দ ধরের একগুচ্ছ কবিতা
কবির ভূখন্ড কবির কবিতা
চলুন বরং বিকাশঝোরা লিখি।লিখি বিষাদবালক কিংবা অনন্তছুঁতুর।লক্ষ্মীর পাঁচালী কিংবা কনিষ্কের মাথা লিখি।না হয় বরং হোক নতুন করে শ্রীরামকাহিনী।এ সময় চাইছে আত্ম উপাখ্যান।মুখাপেক্ষী নয় বরং লিখে নিন আত্নার নিজস্ব পতাকা।পতাকার রং হোক শীতলকুচির লাইনে দাঁড়ানো ভোটার গুলি খেয়ে মৃত্যুর পর যে রক্ত ফিনকি দিয়ে রাঙিয়ে ছিলো পৃথিবীর মাটি সেই রক্তরাঙানো নিজস্ব পতাকায় লিখুন জিওলছড়ার জাপনজয় রিয়াং হাঁটতে হাঁটতে কোথা থেকে কোথায় এলেন।কীরকম নাইশিংটিলায় একজন রমণীর বুক থেকে টুপটাপ অর্নগল করুণাঝরে অথচ তিনিও কেন দেশের ভেতর বিদেশী।লিখুন আপনাকেই লিখতে হবে ডেমছড়ার রাবারবাগানে যে পুরুষ তার প্রেমিকার সাথে মিলনের আগেই খুন হয়ে যান।লিখুন পানিসাগরের সেই মানুষটির কথা যে বিয়ে বাড়ি থেকে রাতে খাওঅদাওয়ার পর নিজের বাড়ি আর ফিরতে পারেনি।লিখুন কলমজীবী আপনি।আপনাকে মনে রাখতে হবে ভূমিরীতির দৃষ্টিভঙ্গি লোকগল্প সৃষ্টির যথেষ্ট সম্ভাবনা নিয়ে চারপাশে পড়ে আছে পানাপুকুর।অবহেলিত কাঞ্চনদীঘি।লিখুন আভাঙারধলাই।আনোয়াছড়ারজল তিরতির মিশে যায় মনুজলে।চৈতন্যছড়া কেমন লাফিয়েলাফিয়ে গারো মেয়েটির বিনুনি ডিঙিয়ে কিরকম মনুতে মিশে গেছে। দেওজল কেমন কলকল সঙ্গমে আসে মনুহালাইমুড়ায়।এসব না লিখে তুমি কি লিখছো কবি?অন্ধ বড় অন্ধ সময় চলছে।এ মাটির কান্না থামাতে আপনার কলমহোক শিলছড়ির বিজনঝর্ণা।লিখতে হবে আত্মারখুন দিয়ে।
কবির আত্মার কেোন বেইল নেই। একা একা একাকিত্ব ঘুচবে না কবির।কবির বুকে নূপুর বাজে আবার কান্নাজল গড়ায় কলকল।তাই নিজেকে না জেনে আনন্দ কোথায়।কান্না কোথায়।নিজের বাঁধাইশিল্পীবাবাকে আঁকতে আঁকতে চলেছি।রিপুজানা মাকে আঁকতে আঁকতে চলেছি। প্রতারক মেয়েটিকে আঁকতে আঁকতে চলেছি। তাও সাঁকো পেরিয়ে তৃণভূমি আঁকতে পারিনি।বিজয়নদীর কল্লোল আঁকতে পারিনি।তসবীরঅক্ষর আঁকতে পারিনি।বাঁশপাতার মর্মর আঁকতে পারিনি।শূকরের মৃত্যুযন্ত্রণা আঁকতে পারিনি।মগজে বয়লার মোরগ ঢুকে আছে।তাকে আরো শাণিত করতে ক্রমাগত ঘষছিমাজছি তাও ঝা-চকচকে চাঁদ আঁকতে পারিনি। বুলেটের গতি কমাতে পারিনি। বাঁচার নেশায় বুদ হয়ে বলতে পারছি না জীবন এক নেশা হে।মহেশপুর,নটিংছড়া,জগন্নাথপুর, মনুভ্যালি,রাংরুং চাবাগান না গেলে জীবন কত সহজ অথচ কত যন্ত্রণায় ওরা হাসে ভাদুগায়।পারছি না পারছি না।এই ব্যর্থতার ছাই মেখে গুণ গুণ করে যে ছায়াটি আমাকে মাড়িয়ে যেতে চায় তার নিকট হাঁটুভেঙে বসি গল্প বলি চৌদ্দজন দিব্যকান্তি পুরুষের ছাতিমবৃক্ষে লুঁকিয়ে স্বপ্ন আঁকার গল্প।একটি রিসাই পারে লক্ষ পুরুষের দামাল ঝলকানির আওয়াজ থামাতে।কোথাও কি ভুল হচ্ছে? কোথাও কি তরুণেরা থেমে গেছে? ঘেমে গেছে?নাকি তরুণদের ঘুমের টেবলেট কেউ রাতেরভাতে গোপনে মিশিয়ে দেয়?আঠারোয় আটকে দিলে সুকান্তপুজো করে বিদ্যাসাগর আসেন না ঘরে ঘরে। এ কথা কেউ বলবে না কবি।বরং লিখে নাও নিজস্ব ভূগোল।আঁকো লাবডুব।আঁকো পাঠশালার দুন্দুবুড়িউপাখ্যান।শব্দবাজি নয় শব্দবাজি নয় শব্দের গতরে লুঁকানো শব্দের আওয়াজ চাষ করি এসো।কবি আপনিই পারেন সায়দাছড়ায় ভেসে যাওয়া শিমুলফুলের সৌন্দর্য আঁকতে।কবি আপনিই পারেন বিড়িপাতাছড়ার কান্না লিখতে।হৃদয়ে আঁকুন সাইমা-রাইমার কলকল।আঁকুন সিকামনুকতাই। আঁকুন ঘন্টাপাখির ক্রমাগত আওয়াজ।লালমাটির শিকারি আঁকুন। আঁকুন দেওনদীরজল।মেঘ আঁকতে আঁকতে আপনি শুধু প্রেমিক হলেন প্রেমিকার কান্না আঁকতে লাগে জুরির সাঁতার । আঁকুন থালগাঙের জেলে জীবন।নওয়াগাওয়ের যশোয়া হালামের কন্ঠ থেকে লুফে নিন হেড়ম্বসাম্রাজ্য।শচীন কর্তার কন্ঠ থেকে নিন ভাইধনের বোন।ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ থেকে নিন তুলি।বীরচন্দ্র থেকে নিন বৈষ্ণব পদাবলী।আঁকুন পাহাড়টিলাজলজলা নীরমহল আর বৈশাখী ঝড়ের মতো লিখে নিন আপনার জীবনের ধারাপাত। বনজলটিলালুঙ্গা সমতটের বিস্তীর্ণ নদীখাতই একজন কবির ভূখণ্ড। তাকেই আঁকতে হবে।তাতেই লেগে আছে ঊনকোটির ঝর্ণাজল।মনে রেখো এ ছাড়া বেইল নেই কবির,শিল্পীর,কলমজীবীর,শব্দচাষীর,কথাশ্রমিকেরও।
১৯:০৪:২০২১
সকাল:০৬:১৫মি
কুমারঘাট।
কাটাকাটি ঘুড়ি
উড়াতে চেয়ে লাটাই হাতে বালক।
তুমি এক কাটাকাটি ঘুড়ি
মাঞ্জা সূতোয় কেটে গেলে?
২৬:০৩:২০১৯
ভুল এক রক্ত চুষা ভাম্পায়ার
তাহলে জীবন কি শুধুই ভুল?
ভুল বর্ণমালায় গড়েপিঠে নিজেই নিজেকে
ভুলের চক্রব্যুহে জড়ানোই জীবন?
জীবন লাঙ্গির নেশার মত শুধুই ভুল আঁকড়ে
আরো ভুলের সরণি বেয়ে আরো ভুল আরো
ভুল আরো আরো শুধুই ভুল চিত্রমালা?
ভুল এক রক্তচুষা ভাম্পায়ার -সে পাঠ শেষেও
আরো আরো চক্র ও চক্রান্তের কাছে
হারতে হারতে জীবন পচা শামুকের মতো।
জীবন শাঁখেরকরাত -শুধু আসতে যেতে
হৃদয় মনন শরীরকে খুবলে খুবলে খায়।
প্রতিটি সিঁড়ি টপকাতেই ভুলের রক্ত চুষা জোঁক
মেরুদণ্ড চোখ হৃদয় খেখো ভুল এসে ঝেঁকে বসে।
অস্থিসার শূন্য প্রাণ হৃদয় খুবলানো এই আমি
দশচক্রে ভুত দেখি সাজানো বাগানে।
২৩:০৬:২০২১
সকাল:০৮:৩০মি
কুমারঘাট।
হৃদয়হাওর জুড়ে গভীর অসুখ
হৃদয়হাওর জুড়ে গভীর অসুখকৃষি লাফিয়ে
ধানচারার মতো আকাশ ছুঁতে চায়।
অসুখের গাছ অনেক বড় হয়ে গেলো অজান্তে।
ডালমূল শাখা তার ছড়িয়েছে মাটি ও আকাশতারায়।
কতটুকু গভীরে গেলে অসুখ ডানা মেলে
পাঠ নেই ডানায় লেগে থাকা মারণঅসুখ রেখেছি যত্নে।
ডানায় ঝাপটে অসুখহরিয়াল উড়ছে আকাশে
তার কামগন্ধ ঘ্রান এসে লাগেনি,সময় ক্রান্তিলগ্নে।
প্রতিদিন শরীরের আড়মোড়া ভেঙে গেলে
তোমাকেই কাছেপিঠে রেখেছি,মুখে চুপ।
হৃদয়হাওর থেকে কিচিরমিচির শব্দ করে
একটি বিকেল গড়িয়ে পড়ে মরুমায়া রূপ।
চোখের গভীর থেকে ভালোবাসা গলে পড়ে
অসুখ হেসে বলে এসব মিছে অভিনয়।
শরীরে লেগেছে গ্রহণ ভুলের দাপট
আমিই ভূমিষ্ট নতজানু সবিনয়।
২২:০৬:২০২১
সকাল:০৬:৪৭মি
কুমারঘাট।
এমন নয় একটু আধটু
এমন নয় একটু আধটু মন পড়তে পারি না।
এমন নয় একটু আধটু চোখ পড়তে পারি না।
এমন নয় একটু আধটু চাল-চলন বুঝি না।
এমন নয় একটু আধটু হৃদয় বুঝতে পারি না।
এমন নয় একটু আধটু অসুখ কোথায় জানি না।
এমন নয় একটু আধটু সময় পড়তে পারি না।
এমন নয় একটু আধটু খেয়াল-খুশি বুঝি না।
এমন নয় একটু আধটু যত্ন-আত্তি করি না।
এমন নয় একটু আধটু হাওয়া বুঝতে পারি না।
এমন নয় একটু আধটু সত্যি কি তা জানি না।
২৩:০৬:২০২১
সন্ধ্যা:৬টা
কুমারঘাট।
যাপনচিত্র
ঠিক কিরকম আঁকবো অতিমারির সময়
বাজারের চিত্র, ঘরগৃহস্থলি সংসার
স্ত্রী পুত্র পরিজনের কেউ সুখে নেই।
বাজার ফেরত সবজির মতো বাড়ির বাইরে
গেলেই, নিজেকে ধুয়েমুছে রাখা জীবন
সেনিটাইজার মাক্স অক্সিমিটার আইসিতে নেওয়া
কোভীড পেশেন্ট সবখানেই লেগে আছে বিষাদের রঙ।
ঘরে ঘরে টুংটাং বাসনকোসন হাঁড়িপাতিল
মুখভার করা আষাঢ়ে মেঘ,শ্রাবন শ্রাবন মন
তাও কোথাও তাল কেটে পেকে যায় তাল।
তিল থেকে তাল হয়ে পড়ে যায় গৃহসুখ।
গৃহের অসুখ রেখে সেনিটাইজ জীবন থেকে
ভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে এত তোড়জোড়!
সব ঘরে নেমেছে কিছু বিষাদছায়া সকলেই
তীব্রভাবে সবুজ সবজীর মতো সতেজ হতে চায়
কোথাও তবুও বিকেলের অবিক্রীত সবজীর মতো
মনের গভীরে এসে মলিনতা নীড় বানায়।
এখান থেকে শুরু হলে বিশল্যকরণীর জোড়া লাগানোর প্রয়াস,আর ফিরবে কি ফুরফুরে সকাল?
ঘরে ঘরে টুংটাং বাসনকোসন হাঁড়িপাতিল সংসার
কোথাও তাল কেটে দূরে তাবলায় সঙ্গত বাজে
বাজে ভাঙামন ডেকে আনা করোনা ডেল্টাপ্লাস।
ক্রমাগত লকডাউন করোনাকার্ফু এক দুই বাড়ছে
ঘরের ভেতর আরো আরো ঘরের সংখ্যা বাড়ে
সকালের টাটকাফল বিকেলেই হলদেটে যাপন
এই ক্রান্তিলগ্নে মন ক্রমশঃ টুকরো টুকরো ছন্নছাড়া
ক্যানভাস আঁকে গৃহসুখ, গৃহের ভেতর আরো এক গৃহ।
২৬:০৬:২০২১
সকালঃ৮টা
কুমারঘাট।
ডাস্টার
আগাছাগুলো পরিস্কার করে দিতে হয়
যেমনটি ব্ল্যাকবোর্ড থেকে আঁকিবুঁকি
রেখা মুছে দিতে হয় চকচকে রাখতে।
এরকমই কিছু ভুল কিছু স্বপ্ন মুছে দিতে
একটি ডাস্টার জরুরি।
পেছন পেছন আসা বিষপিঁপড়ে
মাঝে মাঝে কামড়ে দিলে পিষে ফেলা জরুরি।
জরুরি ধান খেত থেকে আগাছা উপড়ে ফেলা।
কাটাকাটি করে অঙ্ক করতে নেই
মুছে নিলে ঝাঁ চকচকে একটি ব্ল্যাকবোর্ড
পুনরায় শুরু করতে যথেষ্ট।
দিন শুরুর আগে হোমওয়ার্ক সেরে নিলে
নির্ভুল গন্তব্যে পৌঁছা যায়।এক্ষেত্রে ভুলগুলো
মুছে দিতে একটি ডাস্টার জরুরি।
২৮:০৬:২০২১
রাত:১০:২৪মি
কুমারঘাট।
নিমকহারাম
দীর্ঘ সময় থেকে নুনভাত খেয়ে
দীর্ঘদিন থেকে নিমক খেয়েও
সহজেই ভুলে গেলে স্মৃতিচিহৃ?
কখনোই প্রতিদান চাইনি
গুন গাও বলিনি কোথাও?
বলেছি ভালোবাসো।করেছি
হাঁটু ভাঙা বিশ্বাস পুনঃস্থাপনের,
কাতরপ্রার্থনা।বিনিময়ে তৃতীয়পক্ষ
এসে নষ্টনীড়ে তা দিলে
প্রসব করে অশ্বডিম্ব, কালখণ্ড
সে সব লিখে রাখে বিষন্ন সুন্দর।
২৯:০৬:২০২১
দুপুর:০৩টা ৪৫মি
কুমারঘাট।
ভাষা আমার মাটি হয়ে গেলো
মাটির ভাষা জানি না বলে,ভাষা
আমার মাটি হয়ে যায়।
ধান আর আগাছার মতো একই জমিন জুড়ে
লিখতাম বেঁচে থাকার সালোকসংশ্লেষ।
পরস্পর বিপ্রতীপ কলম ও সাদা পাতার টান
খাতার পর খাতায় শুধই আঁচড় কেটেছি।
লিখেছি অভিমান। লিখেছি রাগ অনুরাগ
মাটির ভাষা জানি না বলে সব অহংকার
মাটি হয়ে গেলো।ভাষা আমার মাটি হয়ে গেলো।
এখনও মান হয় অভিমান হয়।রাগ হয় বিরাগও।
লিখি সাদা পাতায় একান্ত অভিমান।
ভাষা আমার অভিমানে গুলে গুলে যায়।
ভাষা আমার মাটি হয়ে যায়। শরীর ভরে
আগাছার মতো বেঁচে থাকে রক্তাক্ত জখম।
০২:০৭:২০২১
রাত:১১:৩০মি
কুমারঘাট।
সময় গড্ডালিকা অথবা ডারউইনবাদ
তাহলে সকলেই বড্ড আত্মকেন্দ্রিক নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।
একদিকে ভয় অন্যদিকে মশারির ভেতর বোকা মোবাইল পরস্পর পরস্পরকে বিপ্রতীপ মেরুর দিকে টানছে।
এই সময় কেউ কারো নয়।
অন্য কোনো এক যাদুবিশ্বাস নিয়ে সামাজিক দূরত্বে আছি।
জড়সড় ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছি নিজের দেওয়াল।
ক্রমশ গুটিয়ে নিচ্ছি নিজের চারপাশ মুখরিত উৎসব।
এই সময় পাশের বাড়ির কেউ কোভীড আক্রান্ত হলেও
দূরের হাতছানির নিকট সামান্য মনে হয়-গৃহসুখ।
চিৎকার চেঁচামেচি নয় সাংঘাতিক ভয়।
সত্য আড়াল রেখে পরস্পর ঘরের ভেতর
আরো অনেক ঘর হিসিপাওয়া বালকের মতো
বিপ্রতীপ দাঁড়িয়ে আছে।
সময় যত ঘুরপাক খেতে খেতে সরে যায়
ডারউইন ততই প্রাসঙ্গিক।
০৫:০৭:২০২১
রাত:১০ঃ:২১মি
কুমারঘাট।
সেই পাথরটি
খুব ভেঙেচুরে গড়গড়িয়ে নেমে যায় অজান্তেই।
শুরুর সময়ের কাছে ফিরে ফিরে গেলেও
বারবার শুরু তো কঠিন।
যতবার সাফল্যের নিকট যেতে চাই
ততবারই গড়গড়িয়ে যায় সেই পাথরের গল্প।
আবার উঠে দাঁড়িয়ে তুলে আনি পরশ পাথরটি।
আবার ঠিক পাহাড়ের চূড়োয় পৌঁছে যায় যায়
গড়গড়িয়ে নেমে যায় পাথরটি।
সেই পাথরের গল্পের কাছে মিলেমিশে যায়
একটি পেরেক আর হাতুড়ির গল্প।
যদিও সবশেষে উঠে দাঁড়ানোই সাকুল্যে কাজ।
এই পথকে বারবার এতো কাদামাটি করে রাখে
বিষন্ন সুন্দর করে রাখে সময়বেলা
পরিপাটি করতেই চলে গেলো-রাতাছড়ার দিনগুলো।
চল্লিশের দিনগুলো সুখেরই ছিলো-কাটছিলো বেশ।
কিরকম হঠাৎ বলা নেই কথা নেই পরপর
পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলে পরিখায়
নিমিষেই জল বাড়ে।পুনরাবৃত্ত আর কত?
আর কতবার শুরু করা যায় পাথরটি পাহাড়ে তুলবো।
০৭:০৭:২০২১
রাত:০৮টা:১০মি
কুমারঘাট।
ক্রান্তিকাল
সকলেই চলে যায় -সকলেই চলে গেছে
অন্য কোন কুডাক শুনে।
সকলেই আসে চলে যাওয়াই মূল গল্প।
ধরে রাখতে যত চাইবে, সে
ততই দূরন্ত গতিতে চলে যায়।
দরজায় খিল এঁটে আটকে রেখো না
যে যেতে চায় যাক, বরং
তাকে সদর দরজা অব্দি এগিয়ে দিতে হয়
ভুল করে কিছু স্মৃতি রেখে গেলে
বলে দিই:শরীরের গন্ধ নিয়ে যাও।
ছায়ার ফিতে নিয়ে যাও।বহুদিন আগে
করিডরে রেখে দেওয়া গল্প নিয়ে যাও।
নিয়ে যেও ভ্রুপ্লাক যন্ত্রটিও-গত শীতেও
পাখির মতো সাজিয়েছো যা দিয়ে।
আলমারির গোপন বাক্সে কিছু চিঠি ছিলো
আগেভাগে ভরে নিও ভেনিটিব্যাগে।
সাজিয়ে রাখা ফাইলে সমস্ত লেখা
নিয়ে যেও, কোথাও স্মৃতি থাকলে
ছেটে দিও।কবিতায় নিই সে তুমিও জানো।
নেই উপন্যাসের নিভাঁজ নানা ডালপালায়।
সামান্য যা আছে মনের সবুজ গালিছায়
যাওয়ার আগে নিয়ে যেও।
কাছাকাছি থেকেও যোজনদূরত্বে থাকা ক্রান্তিকাল
যেতে চাও যাও সব কিছু নাও-একা একা
পড়ে থাক শূন্য সময় সজারু কাঁটায়।
১২:০৭:২০২১
রাত:০৯টা
কুমারঘাট।
অলৌকিক শ্রাবণ নামবে
ভালো বাসতে বাসতে ফতুর এই নীল দিগন্ত।
তাতেই লেগে আছে জীবাশ্ম।
জীবনের গান থেমে গেলে সবই শূন্য।
অলৌকিক পাহাড় থেকে হঠাৎ ঝর্ণা থেমে গেলে
ক্রমশ নদীজল শুকিয়ে মিশে যায় আনবাড়ি।
অরণ্যরোদনে বিশ্বাস নেই হাতছানি নেই
তাড়িত অসুখ থেকে পরিত্রাণ নেই জেনেও
হঠাৎ ঝড় থেমে যাবে এই চিত্র আঁকি
বুকের গোপন করিডোরে।
সব ব্যথা নেমে যাবে সব অসুখ থেমে যাবে
এক অলৌকিক বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
শ্রাবণ নামবে গলগল অগ্নিপিণ্ডে-ততদিন
শূন্যের নামতা লিখি।
১৩:০৭:২০২১
দুপুর:০৩:৫৫মি
কুমারঘাট।
দেহতত্ত্ব
শরীর মাটির ঘর মেরামত করে
তাকে রেখে দিও।
যখন দূরের ডাক সারারাত আসে
দূরে ঠেলে দিও।
যাবার আগেই লিখি ধারাপাতে পদ্য
আরো প্রেম চাই।
কোথাও হারিয়ে গেলে রেখোনা মনে
ভেবো ছিলো ছাই।
১২:০৭:২০২১
দুপুরঃ১২টা
কুমারঘাট।
পদ্যাণু
এক.
কেউ কি আদৌ আমার হয়
তাহার হয়
কেউ জানি না।
তাও তো দুটি মনের পানসি নাও
শ্রাবণকালে নদী দেখবো চল।
দুই.
নদীর জল ছিলো
স্রোত ছিলো
ছিলো গভীরতাও
ছিলো জলে জল মিশে একাকার তরঙ্গ।
এসো চমকায় বিদ্যুৎ।
১৯:০৭:২০২১
রাত:০৮টা
কুমারঘাট।
এঁকেছি মুখ
কবুতর উড়িয়ে দিয়ে এঁকেছি তোমার মুখ।
মুখ ফিরিয়ে নিলেও আকাশ থাকবে বাতাস বইবে।
ঝড় আসবে।বহুকোটি বছর ধরে অসংখ্য শেওলায়
ঢেকে দেবে মমিশরীর।পাষাণ শরীর।এসো শরীর
পাখি উড়ে যাক অরণ্যসুন্দর প্রকৃতির গহনমাঝে।
কিছুকাল নেচে যাক একটি নির্ভুল সকাল।
ছাদের কার্নিশ থেকে আগাছা উপড়ে ফেললেই
বহুকাল বেঁচে থাকে গৃহসুখি চড়ুই।
চলো,আঁকি মুখ-মুখোশ খোলে রাখো
বিসমিল্লাহ খান বেজে উঠুক।
২৩:০৭:২০২১
বেলা:০৪:৪০মি
কুমারঘাট।
মানুষ কেমন মানুষ থেকে অমানুষই হচ্ছে
মানুষ কেমন টুপটাপ বৃষ্টি ঝরার মতো পড়ছে।
টুপটাপ টুপটাপ মানুষ কেমন মরছে।
বোকা একটি এন্ড্রয়েড গৃহসুখ ভাঙছে।
টুপটাপ টুপটাপ যেন রিলেশন ছাড়ছে।
নতুন নতুন আরো কোথাও মনের সাথে মন মিলছে।
পুরাণো সব ছেড়ে ছোড়ে নতুন করে বাঁচছে।
নিজেই কেবল বাঁচতে চেয়ে গৃহও ছেড়ে দৌড়ছে।
ঘরে নিজের বাচ্চা রেখে নিজের সুখে নাচছে।
মানুষ কেমন মানুষ থেকে অমানুষই হচ্ছে।
২৪:০৭:২০২১
রাত:০৩টা২৯মি
কুমারঘাট।
কালখণ্ড :৩
নিজেকে সুপার মুন ভাবতাম।এখন দেখি আমিই অমানিশা।নেশায় ঘুরপাক খেতে খেতে একটি লাঠিম আমি।বৃত্তের জ্যা ও পরিমিতি বোধ না জানা আমাকেই অতিক্রম করতে করতে বুঝেছি সারাক্ষণ ঘুরপাকই জীবন।দেওয়ালে লেগে থাকা কাদামাটি টপকে হাঁটতে হাঁটতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে চেয়েছি নিরাপদ সড়ক সপ্তাহের সতর্কতায়।
আমারই বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে আমিই লাঠিম।আমিই নষ্ট শশা।আর৷ সব শশধর।আর সব কুমারী প্রতিমা।প্রতিমা নিরঞ্জন হলে শশধর শশব্যস্ত খরগোশ। আর সবই চৌকাঠে লেগে থাকা পদধূলি। জীবন হয় মাঞ্জা সুতোয় কেটে যাওয়া মুণ্ডু নয়তো উড্ডীয়মান ঘুড়ি।
৩১:০৭:২০২১
রাত:২টা১০মি
কুমারঘাট।
0 Comments