আশরাফ আলী (মুহাম্মদ রাজু)থেকে রাজা হাসানই আজকের শিল্পী রাজা হাসান

গোবিন্দ ধর 


রাজা হাসানের সাথে পরিচয় সেই ৫ম উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সাহিত্য সম্মেলন ২০০১ সালে কৈলাসহর তিনদিন চলাকালীন। রাজা হাসান তখন লোকগীতি পরিবেশন করেছিলো।তখন রাজা হাসানের পরিচয় রাজা হাসান নয়।সে এক অন্য গল্প।তখন 
আশরাফ আলী (মুহাম্মদ রাজু)।বাবা ইসমেদ আলী।মা আসমা বেগম ২০০১ সালে কবি ও ত্রিপুরার শিক্ষামন্ত্রী অনিল সরকার মহোদয় আমাকে এক দায়িত্ব দিলেন উত্তর পূর্ব ভারত সাহিত্য পরিষদের কুমারঘাট শাখা গঠন করতে হবে।যথারীতি একদিন সম্মত হয়ে মাননীয় অনিল সরকার মহোদয়কে কুমারঘাট আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করেছিলাম।তিনি কথা মোতাবেক এক রাতে কুমারঘাট দেওলজে  আসপন।কুমারঘাট কৈলাসহরের কবি সাহিত্যিক ও কয়েকজন শিল্পীকে জড়ো করেছিলেন তখনকার আই ও কবি বিশ্বজিৎ দেব।এখন দেও লজ হয়ে গেছে কুমারঘাট মহকুমা শাসকের অফিস। সেদিন এসেছিলেন কবি হিমাদ্রি দেব, বিধাতৃ দাম।কুমারঘাট থেকে আমি নীলিমেশ পালও ছিলাম।সেই উত্তরপূর্ব সাহিত্য পরিষদ গঠনের দিন কবি বিশ্বজিৎ দেব শিল্পী রাজাকে নিয়ে আসেন। সেই সাহিত্য আড্ডা ও সংস্থা গঠনের দিন বিধায়ক বিজয় রায় মহোদয়ও উপস্থিত ছিলেন।শুরু হলো আড্ডা।এক সময় রাজার গানের পালা।মানে 
আশরাফ আলী (মুহাম্মদ রাজু) তখন তার নাম।মঞ্চে কবি মন্ত্রী অনিল সরকার,হিমাদ্রি দেব আর বিধায়ক বিজয় রায় মহোদয়।আমরা এক এক করে কবিতা পাঠ করে শেষ। কবি অনিল সরকার মঞ্চে চোখ মুদে কবিতা শুনলেন।মঞ্চে বসে ডাইরীতে কবিতা লিখলেন ধামাইল নামের কবিতাটি।একদল যুবক যুবতী... এরকম ছিলো কবিতাটি।তারপর গান শুরু হলো।কবি আরো তন্ময় হয়ে শুনছেন।রাজা তখনও রাজা নয়।সে গান করছে। আরো গান।বাউল। রাধারমণ,হাসান,লালন।এক সময় অনিল সরকার বললেন তুমি শুধু হাসান নয়।আজ থেকে আশরাফ আলী (মুহাম্মদ রাজু) হবে রাজা হাসান।আগামীকাল তুমি আমার সাথে আগরতলা যাবে।হাসান অবাক।তার এক শার্ট।একটি গায়ের চাদর। আর কিচ্ছু সাথে নেই। হাসান বললো আমার তো কিচ্ছু সাথে নেই। এই আমি একা।বাবাকে মাকে বলতে হবে।মন্ত্রী বললেন কাল তুমি আমার সাথে আগরতলা যাবে।আমার ফার্মে কাজ করবে।গান করবে।আর কোন কাজ নেই তোমার।হাসানকে আমরা বুঝালাম।সে রাজী হলো।দেওলজের মালিক বিভু দেব একজন নাট্যশিল্পী।তিনি এগিয়ে এলেন।বললেন এই নাও আমি তোমায় ৩০০ টাকা দিলাম।রাজার পুঁজি এই ৩০০ টাকা সাকুল্যে। পরদিন আশরাফ আলী (মুহাম্মদ রাজু) হয়ে গেলো রাজা হাসান।মন্ত্রীর কনভয় আগরতলাগামী।রাজা জড়োসড়ো। সেও বসে আছে।তখনও রাজা ক্লাসিকেল কিংবা হারমোনিয়াম জানতো না।তারপর অনিল সরকারের প্রচেষ্টায় রাজার অসীম ধৈর্য্য ও অধ্যাবসায় তাঁকে গড়ে তুললো আজকের রাজা হাসান। শিল্পী রাজা হাসান।এখন সে রাজ্যে বহিঃরাজ্যে প্রতিবেশী দেশেও শিল্পী রাজা হাসান। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে চাকুরীও করে।অনিল সরকার তাঁকে গানের পাশাপাশি পড়ালেখাও করিয়ে মাধ্যমিক পাশ করান।
পরবর্তী সময় সে ডিপ্লোমা কোর্স করে। সে এখন সফল একজন শিল্পী। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের চাকুরীজীবিও।
বাবা ইসমেদ আলী মাতা আসমা বেগমের আশরাফ আলী (মুহাম্মদ রাজু) শিল্পী রাজা হাসান। 

১৮:১১:২০২২
সময়:১০টা৪৫মি
ডেমছড়া।

0 Comments