আসাম, কানাইর আখড়া:অনালোকিত ইতিহাস ও
বিশ্ব মানবধর্ম পরিষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব

চৈতন্য ফকির 



কথাপৃষ্টা 

আসাম উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। আসামের অধিবাসী বা আসামের ভাষাকে অসমীয়া নামে আখ্যায়িত করা হয়। তবে আসামের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসী বাঙালী। ব্রিটিশ শাসনকালে বিশেষ করে ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে ব্রিটিশরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অনেক শ্রমিক এনেছিলেন চা বাগানের জন্য। যার মধ্যে অন্যতম রাজ্য ওড়িশা, বিহার (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডসহ)।

১৮২৬ সালে ইয়াণ্ডাবু চুক্তির মাধ্যমে আসাম প্রথম ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ প্রদেশ মূলত চা, রেশম, পেট্রোলিয়াম এবং জীববৈচিত্রের জন্য বিখ্যাত। আসাম বাড়ি এক শৃঙ্গযুক্ত ভারতীয় গণ্ডার এছাড়াও এখানে বুনো মোষ, বেঁটে শূকর, বাঘ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষিত হয়েছে। এশীয় হাতির অন্যতম বাসস্থান হল আসাম। এ রাজ্যটি বন্যপ্রাণী পর্যটনের ক্ষেত্রে ক্রমেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হয়ে উঠছে।

নামের উৎপত্তি

পর্বতবাহুল্যবশত ভূমি অসমতল (অসমভুমি) হওয়ায় রাজ্যটি অসম (অপভ্রংশে ‘আসাম’) নামে অভিহিত - এ মত কেউ কেউ প্রকাশ করে থাকেন। অপর মতে, ‘অসম’ প্রতাপবিশিষ্ট আহম জাতি কর্তৃক একসময়ে অধিকৃত হওয়ায় প্রদেশটির নাম আসাম হয়েছে।

আসামের অন্যতম নগর কামরূপের প্রাচীন নাম প্রাগ্‌জ্যোতিষপুর। এখানে পৌরাণিক যুগে নরক নামধেয় জনৈক রাজা ছিলেন। তারই পুত্র মহাভারতবর্ণিত ভগদত্ত। তার পরবর্তী রাজগণের নাম যোগিনীতন্ত্রে বর্ণিত হয়েছে। তাদের কীর্তি গৌহাটি প্রভৃতি স্থানে এখনও কিংদংশে দৃষ্ট হয়। এছাড়াও খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে কামরূপ নামে এই অঞ্চলের পরিচিতি ছিল। এই অঞ্চলে আহোম সাম্রাজ্য (১২২৮-১৮৩৮) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে এই রাজ্য "আসাম" নামে পরিচিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভৌগোলিক অবস্থান

উত্তর-পূর্ব ভারতের এ রাজ্যটি হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত এবং এর অভ্যন্তরে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ, বরাক উপত্যকা এবং উত্তর কাছাড় পর্বতমালা। উত্তর-পূর্ব ভারতের আরও ছয়টি রাজ্য, যথা অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় দ্বারা আসাম পরিবেষ্টিত এবং আসামসহ প্রতিটি রাজ্যই উত্তরবঙ্গের একটি সঙ্কীর্ণ অংশ দ্বারা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত। এছাড়াও আসামের আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে।

প্রাগৈতিহাসিক যুগ

আসাম এবং এর আশপাশের এলাকাগুলিতে প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। সতেরোশো থেকে আঠারোশো শতকের মধ্যে লেখা কালিকাপুরাণ অনুসারে আসামের প্রাচীনতম শাসক ছিলেন মহীরঙ্গ।

আদিযুগ এবং মধ্যযুগ

৬৪০ সালে হুয়েনথসাং যখন এই প্রদেশে পর্যটন করেন, তখন কুমার ভাস্কর বর্ম এখানে রাজত্ব করতেন। পরে পালবংশীয় বৌদ্ধরাজগণ এখানে কিছুকাল রাজত্ব করেন। ১৩শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আহম জাতি এ স্থান অধিকার করে। এ জাতি উত্তর ব্রহ্ম এবং চীনসীমান্তবাসী সান বংশসম্ভূত। এ জাতির রাজা চুহুম ফা সর্বপ্রথম হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৪৯৭ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। তার পরবর্তী রাজার অব্যবহিত পরবর্তী আহমজাতীয় রাজা চুচেং ফা ১৬১১ থেকে ১৬৪৯ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার সময়েই শিবসাগরে শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় এবং হিন্দুধর্মই রাজধর্মরূপে গৃহীত হয়। তার পরবর্তী রাজা চুটুম্‌লা ১৬৫০ সালে ব্রাহ্মণগণ কর্তৃক ‘জয়ধ্বজ’ নামে অভিহিত হন। তার রাজত্বকালে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সুবিখ্যাত সেনাপতি মীরজুমলা রাজ্য আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু, তিনি বিশেষভাবে সফলকাম হতে পারেননি। এরপর আহমরাজগণ গোয়ালপাড়া পর্যন্ত অধিকার বিস্তার করেন।

ব্রিটিশ আসাম

১৯০৭-১৯০৯ এর সময় পূর্ব বাংলা ও আসামের মানচিত্র
আহমরাজগণের মধ্যে রুদ্রসিংহ সর্বাপেক্ষা অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আহমরাজগণ অন্তর্বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণবশতঃ হীনবল হয়ে পড়েন। ১৭৯২ সালে রাজা গৌরীনাথ সিংহ, দারাংয়ের কোচ রাজা এবং মোয়ামারিয়া নামক ধর্মসম্প্রদায়ের নেতৃগণ কর্তৃক সিংহাসনচ্যূত হন। ভারতের ইংরেজ সরকার দেশীয় রাজ্য সম্বন্ধে হস্তক্ষেপ করা হবে না, এ নীতি অবলম্বন করে উদাসীন থাকাতে, আহম রাজা ব্রহ্মরাজকে মধ্যস্থতা করতে আহ্বান করেন। এরফলে ব্রহ্মবাসীরা রাজ্য অধিকার করে এবং কঠোরভাবে শাসনদণ্ডের পরিচালনা করতে থাকে। ১৮২৪ সালে ব্রহ্মরাজের সাথে ইংরেজদের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৮২৬ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ব্রহ্মরাজের সাথে ইংরেজের যে সন্ধিস্থাপনা হয়, এরফলে ইংরেজ এই প্রদেশটি প্রাপ্ত হয়। নিম্ন আসাম তখনই সাক্ষাৎভাবে ইংরেজের শাসনাধীন হয়। ১৮৩২ সালে বার সেনাপতি বা মাটক রাজা ছাড়া উত্তর আসাম রাজ্য আহম সিংহাসনাধিকার-প্রার্থী পুরন্দর সিংহকে দেয়া হয়। কিন্তু তার সময়ে উক্ত প্রদেশে শাসন সম্বন্ধে নানা বিশৃঙ্খলা উপস্থিত হওয়ায় এটিও ইংরেজদের অধিকারে চলে আসে।

বঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের সঙ্গেই শ্রীহট্ট ও গোয়ালপাড়া ১৭৬৫ সালে ইংরেজদের অধিকারভূক্ত হয়। অপুত্রক রাজা গোবিন্দচন্দ্রের মৃত্যুর পর ১৮৩০ সালে কাছাড় ইংরেজের হস্তগত হয়। পরে তুলারাম সেনাপতির দেশ, গারো পর্বত, খাসী পর্বত, জয়ন্তী পর্বত, নাগা পর্বত প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলো ইংরেজের অধীনতা স্বীকার করে।

স্বাধীনতা পরবর্তী

স্বাধীনতার পর আসাম রাজ্যের পুনর্গঠন হয়। ১৯৬৩ সালে নাগা পার্বত্য জেলা নিয়ে গঠিত হয় নাগাল্যান্ড। ১৯৭০ সালে গারো , খাসি ও জয়ন্তিকা নিয়ে মেঘালয় অন্তরাজ্য গঠিত হয় যা পরে ১৯৭২ সালে পূর্ণ রাজ্যের রূপ পায়। ১৯৭২ সালে অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরাম কেন্দ্র স্বাসিত অঞ্চল ঘোষিত হয় পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে তা পূর্ণ রাজ্যের রূপ পায়।

সরকার ব্যবস্থা

আসামের প্রশাসনিক বিভাগ

আসাম প্রদেশকে প্রথমে বাঙ্গালার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনে রাখা হয়েছিল। ১৮৭৪ সালে একে জনৈক চিফ কমিশনারের শাসনাধীন করা হয়। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গব্যবচ্ছেদ উপলক্ষে এই রাজ্যকে পূর্ববঙ্গের সাথে একত্রিত করে জনৈক নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীন করা হয় এবং পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যা পুরাতন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের শাসনাধীন থাকে। ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর দিল্লীর করোনেসন দরবার উপলক্ষে সম্রাট যে ঘোষণা পাঠ করেন, এরফলে দুই বঙ্গ মিলে একটি প্রদেশ; আর বিহার, উড়িষ্যা ও ছোটনাগপুর নিয়ে একটি নূতন প্রদেশ গঠিত হয়। প্রথমটি একজন গভর্নর এবং দ্বিতীয়টি একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অধীনতায় দেয়া হয়; আসাম প্রদেশকে পূর্বের ন্যায় জনৈক চিফ কমিশনারের শাসনাধীন করা হয়। ১৯১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই ঘোষণা কার্যে পরিণত হয়েছিল। পরে ১৯২১ সালের নূতন সংস্কার বিধি অনুসারে বড় বড় প্রদেশগুলোর ন্যায় আসামও একজন গভর্নরের শাসনাধীন হয়েছে।

আসাম বর্তমানে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা নিযুক্ত একজন রাজ্যপাল দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে।

ব্রিটিশ শাসনোত্তর আসাম

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই আসাম সহ পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতে অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট হতে শুরু করে। যার ফলে ওই অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব দাবী করে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই আসামে অধুনা বাংলাদেশ (তখনকার পূর্ব পাকিস্তান) থেকে শরণার্থীরা আসতে শুরু করে। ১৯৬১ সালে মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চালিহার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস পরিচালিত আসাম সরকার বিধানসভায় একটি বিল পাশ করে, যার মাধ্যমে পুরো রাজ্যে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে অসমীয়াকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দক্ষিণ আসামের কাছাড় জেলার বাঙালিরা ভাষা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে তারিখে এই ভাষা আন্দোলন চলাকালীন আধা-সামরিক বাহিনীর গুলিতে এগারোজন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। এর পরে চাপের মুখে ভাষা বিলটি প্রত্যাহৃত হয়।

বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকের পর থেকে আসামে বিভিন্ন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যথা, আলফা এবং ন্যাশনাল ডেমক্রেটিক ফ্রন্ট অব বড়োল্যান্ড ইত্যাদি জন্ম নেয়।

আমাদের যাত্রা শুরু

সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ি ২৬ নভেম্বর ২০২২।উদ্দেশ্য কানাইবাজার আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে যোগ দেওয়া।আর আশপাশ পরিদর্শন। শ্রীহট্ট যখন বৃহত্তর ভারতের অংশ তারও আগে থেকে আসামের কানাইবাজার, আছিমগঞ্জ,পাথারকান্দি,নীলামবাজার,চাঁন্দপুর,কুর্ত্তি হাওয়ার ছিলো প্রাচীন জনপদ।বৃটিশ আমলেও এসকল অঞ্চলে বৃটিশ ক্লাব,চা বাগান,বিরাট মাঠ এখনো এ অঞ্চলে স্মৃতি হয়ে আছে। জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী কুত্তি হাওয়র পেরিয়ে চাঁন্দপুর বৃটিশ ক্লাব সংলগ্ন বড় মাঠে জনসভায় ভাষণ দিতেন ইন্দিরা গান্ধী। 

কানাইর আখড়া ও শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত 

প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো কানাইর আখড়,কানাইবাজার,আছিমগঞ্জ, করিমগঞ্জ,অসমে অবস্থিত । অসম আগরতলা সড়কের পাশে ঐতিহাসিক এই কানাইর আখড়া। প্রতিবছর আষাঢ় মাসে রথের মেলা বসে।কানাইর আখড়ায়। পাশের গ্রাম মৈনাতে বসবাস করতেন 'শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত' নামক বিখ্যাত গ্রন্থের লেখক  অচ‍্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি। এ অঞ্চলেই বাস করতেন বিখ্যাত সংগীতশিল্পী রঞ্জিত পুরকায়স্থ মহোদয়।তিনি দেশ বিদেশের বিখ্যাত শিল্পীদের শিক্ষা গুরু ছিলেন।এই কানাইবাজার গ্রামে বসেই অচ‍্যুতচরণ চৌধুরী  শতাধিক গ্রন্থ রচনা করে বিখ্যাত । গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে  পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের সাব্রুম লামডিং রেলপথ। আছে কানাইবাজার রেল স্টেশন। কানাইবাজার অঞ্চলটি প্রাচীন প্রতাপগড় রাজ‍্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। জনশ্রুতি আছে 
প্রতাপগড় রাজ‍্যের প্রাচীন নাম ছিল সোনাই কাঞ্চনপুর। অসম ডিস্ট্রিক্ট গেজেট  থেকে জানা যায় প্রতাপ সিংহ নামে জনৈক রাজা এই অঞ্চলে রাজ‍্য প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতাপ সিংহের নাম অনুসারে এই রাজ‍্যের নাম হয় প্রতাপগড়।
কানাইর আখড়ায় প্রতিষ্ঠিত দেবমূর্তি এক সময় পূজা পেতেন প্রতাপগড়ের রাজপাটে। ভয়ানক যুদ্ধে প্রতাপগড় বিদ্ধস্ত হলে পুরোহিত কর্তৃক লঙ্গাই নদীর তীরে কোন এক জায়গায় মৃন্ময় মূর্তিটি মৃত্তিকা অভ‍্যন্তরে লুকিয়ে রাখা হয়। 
জনশ্রুতি অনুসারে আনুমানিক সাড়ে পাঁচশত বছর পূর্বে লঙ্গাই নদীর জলধারা থেকে  ঠাকুর ফকির নামে এক বৈষ্ণব  মূর্তিটি উদ্ধার করে কানাইর আখড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন।  পরবর্তীকালে ফকিরদাস বৈষ্ণব নামে পরিচত হোন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তে নামক গ্রন্থে ঠাকুর ফকিরের উল্লেখ রয়েছে।
এখানে  পাঁচশত বছর থেকে আষাঢ় মাসে রথযাত্রা অনুস্টিত হয়। ত্রিপুরা ও বরাক উপত‍্যকার নানা প্রান্ত থেকে দর্শক আসতেন। জাত ধর্ম নির্বিশেষে সকল অংশের মানুষ এতে এখনো অংশগ্রহণ করেন।
ঠাকুর ফকিরের নানা অলৌকিক কাহিনী এই অঞ্চলে প্রচলিত আছে। কয়েক বছর পূর্ব পর্যন্ত আখড়ায় সুরভী নামে কামধেনু ছিল। সাম্প্রতিক কালে আখড়ার উন্নয়নে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন।
এই অঞ্চলের নানা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। 

দাসপ্রথা

এই অঞ্চলেই আবিষ্কৃত হয়েছে মানুষ ক্রয়-বিক্রয়ের মর্মান্তিক দলিল। মধ‍্যযুগে ঘটে গেছে নানা যুদ্ধ বিগ্রহ। এর মধ‍্যেই বেড়ে উঠেছিল সুফি- বৈষ্ণব ভাবাদর্শ। মানুষের মহা মিলনের আবহে কানাইর আখড়ার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু দাসপ্রথার জন্য কানাইবাজার ইতিহাসের বুকে এখনো কুখ্যাত হয়েই আছে।

আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব :২০২২

আমরা দশ জনের টিম ত্রিপুরা থেকে বিশ্ব মানবধর্ম পরিষদ আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব এ যোগদান করি।কবি মন্টু দাস ও তাঁর গৃহিণী কবি নিভা চৌধুরী  , নিবারণ নাথ ও উনার গৃহিণী, রতন চন্দ ও তার গৃহিণী, কবি আলপনা নাথ ও আমি।
বদরপুর থেকে পরিমল দাস,করিমগঞ্জ থেকে আসে জাহিদ রুদ্র মহোদয়। 
একটু ব্যতিক্রম এই আয়োজন। ২৬ নভেম্বর ২০২২ বিকেল চারটায় করিমগঞ্জ জেলার কানাইবাজারে 'বিশ্ব মানবধর্ম বিকাশ পরিষদ' আয়োজিত আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে অংশ নিয়েছিলাম নিবারন নাথ,হিমাংশু মোহন্ত,গোবিন্দ ধর,নিভা চৌধুরী,আলপনা নাথ,রতন চন্দ,জয়ন্তী কর্মকার,পরিমল কর্মকার,নিবারন নাথ, মন্টু দাস, রতন চন্দ এবং তার স্ত্রী।  অনুষ্ঠানে কলকাতা থেকে এসেছিলেন একুশ জন,ঢাকা থেকে এসেছিলেন পনের জন। এছাড়া বরপেটা,গৌহাটী,শিলচর,করিমগঞ্জ থেকে অনেকে অংশ নেন। 
কানাইবাজার প্রাচীন জফরগড় পরগনার এক বিখ্যাত স্থান। এই স্থান দরবেশ শাহজালালের সঙ্গী ৩৬০ জন আউলিয়ার অন‍্যতম এক আউলিয়ার যেমন স্মৃতি বিজড়িত,তেমনি এখানে ষোড়শ শতকে আশ্রম গড়েছিলেন বিখ‍্যাত বৈষ্ণব কানাইলাল। অপর দিকে এখানেই জন্ম নেন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের লেখক অচ‍্যুত চরণ চৌধুরী তত্ত্ব নিধি।এখানে বাস করতেন বিখ‍্যাত সংগীতজ্ঞ সঞ্জয় চৌধুরী।
নানা দিক থেকে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলের কৃতি সন্তান নীহার রঞ্জন দেবনাথের তত্বাবধানে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কেয়া গ্রুপের কর্নধার সাহিত‍্যিক মিরাজ হুসেন।

পরবর্তী সময় বিস্তারিত লিখবো।

তথ্যসূত্র:
(১)গোগোল। 
(২)মন্টু দাস,প্রাবন্ধিক, ত্রিপুরা এবং 
(৩)মন্টু  দাস,নিবারণ নাথ ও আমাদের দীর্ঘ আলোচনা।

0 Comments