গোবিন্দ ধরের নদী নদীর গোবিন্দ: হারাধন বৈরাগী
গোবিন্দ ধরের নদী নদীর গোবিন্দ
হারাধন বৈরাগী
১.ত্রিপুরার বাংলা কবিতায় নদ-নদী
জল প্রাণের জননী।জলহীন জীবন ভাবা যায় না।তাই জীবনের শুরু থেকেই প্রাণে জলে মাখামাখি।আদি কাল থেকেই নদী ঝর্ণা খাল বিলের পারেই মানুষের বসতি।ফলে জল বা নদীচরিত লাভ করে মানুষ।মানুষের আত্মক্ষরণের এক নাম সাহিত্য আরেক নাম সংস্কৃতি। তাই আমরা দেখি সাহিত্যের আদি নিদর্শনে নদী তার গতিময়তা কবিতা-গানে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে। শুধু বাংলা নয়, পৃথিবীর সকল সাহিত্যেই নদী গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মানুষের যাপন, বিকাশ ও ঐশ্বর্যনির্মাণ, ইতিহাস, লড়াই -সংগ্রাম-সবকিছুতেই নদী প্রাণ সঞ্চার করেছে। নদী কখনো বন্ধু,কখনো শত্রু। নদীকে এড়িয়ে মানুষের যাপনও ঐশ্বর্য নির্মাণ অকল্পনীয়। নদীভিত্তিক আঞ্চলিক বিভিন্ন উপন্যাসে এ সত্য নানাভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, ধরা পড়েছে বিভিন্ন রূপে।। নদী ও মানুষ একে-অপরের পরিপূরক।সাহিত্যের প্রত্যেকটি শাখাতেই তার উপস্থিতি। নদীবিহীন জীবন অকল্পনীয়। ‘চর্যাপদ’, ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য’, ‘মহাভারত’, ‘মনসামঙ্গল কাব্য’, ‘চণ্ডীমণ্ডল কাব্য’, ‘অন্নদামঙ্গল কাব্য’, ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনা’, প্রভৃতি কাব্যে নদী কোন না কোন ভাবে স্থান গ্রহণ করেছে। এই সকল সাহিত্যে নদী এসেছে নানাভাবে, বিচিত্র রূপে।
নদী রবীন্দ্র-সাহিত্যেরও বিস্তৃত স্থান দখল করে রয়েছে। ‘আমাদের ছোট নদী’র মতো শিশুতোষ রচনা কেবল নয় বাংলাদেশের পদ্মা নদী এবং শান্তিনিকেতনের কোপাই অথবা কলকাতার গঙ্গা নদীর সঙ্গে বিশাল ব্যাপ্ত শিল্পজগৎ গড়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের। শিলাইদহের ‘পদ্মা’ বা ‘গড়াই’ নদীর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কবিকে মোহিত করেছে। ‘পদ্মা’ নদী ছিল তাঁর শিল্পসাধনসঙ্গী। এই পদ্মাতীরে বসেই কবি তাঁর অন্তর্নিহিত কবিধর্মকে আবিষ্কার করেছেন। পদ্মার কলধ্বনিতে শুনেছেন বাংলার জনজীবনের কোলাহল। পদ্মার কাছে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পেয়েছেন জীবনের আশ্বাস, এগিয়ে চলার মন্ত্র।
প্রমথনাথ বিশী‘ছিন্নপত্র’কে ‘পদ্মার মহাকাব্য’ বলে অভিহিত করেছেন। ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, চৈতালী’র মতো কাব্য গড়ে উঠছে এ-সময়।
নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে তাঁর অজস্র গান। ‘ছুটি’ গল্পের ফটিক, ‘সুভা’ গল্পের সুভা বা ‘সমাপ্তি’ গল্পের ‘মৃন্ময়ী’কে তিনি পেয়েছেন নদীর তীরেই। ‘পোস্টমাস্টার’, ‘মেঘ ও রৌদ্র’ বা ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর মতো গল্পের সৃষ্টিও পদ্মার পারেই। ‘দেনাপাওনা’, ‘শাস্তি’, ‘স্বর্ণমৃগ’ গল্পের সৃষ্টির পেছনে রয়েছে পদ্মাপাড়ের জনজীবন। ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথের একটি উপন্যাসের নাম ‘নৌকাডুবি’। নদীতে নৌকাডুবির ফলে সৃষ্ট জটিলতায় আখ্যান এগিয়েছে এখানে।
নদী কেবল সভ্যতা সংস্কৃতির নির্ভেজাল হিতকর অনুষঙ্গ নয়,ভাঙ্গনও তার কারুকাজ।এই ভাঙ্গাগড়া নিয়েই নদী ও জীবনের জলজচলন।সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো ত্রিপুরার বাংলা কবিতায়ও নদনদী একটা উল্যেখযোগ্যভূমিকা পালন করে চলেছে।
ত্রিপুরায় অসংখ্য নদনদী ও জলাশয়ের সমাহার। এগুলির তীরে গড়ে উঠেছে পাড়া গ্রাম জনপদ। জনজীবনের এগুলির প্রভাব আবহমান বাংলা কবিতার মতো ত্রিপুরার বাংলা কবিতায়ও অন্যমাত্রা এনেছে।ত্রিপুরার বাংলা কবিতায় নদী বিভিন্ন কবির কাছে বিভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছে। নদী কখনো কেবল প্রতীক হিসেবে, কখনো নদী পূর্ণরূপ নিয়ে উঠে এসেছে কবিতায়। কখনো হয়ে উঠেছে নারী হিসেবে, কখনো প্রেমিকা, কখনো নদী প্রতিপক্ষ হয়ে ফুঠে উঠেছে।কারুর কাছে নদী আবার বাল্যসখী হিসেবেও ধরা দিয়েছে। ।কারুর সাথে আবার বয়সের সাথে সাথে নদী সম্পর্ক পাল্টিয়েছে।কারুর কাছে নদী জীবনের ত্রিকাল ছুঁয়েছে অনন্য অনুভবে। নদীর কাছে কেউ কেউ দেখেছেন জীবনের বাঁচাবাড়ার আশ্বাস আবার নদীই কখনো হয়ে উঠেছে কাপালিনী।কারুর অনুভবে নদী সংস্কৃতি ও সংস্কারের অনুষঙ্গ। এত সবের পরেও নদীই যেন জীবনের দ্যোতক হয়ে উঠেছে। নদীর সাথে সখ্যতা পাশাপাশি মান অভিমান কিছুই বাদ যায়নি। নদী যেন জীবনের শ্বাসপ্রশ্বাস, জলজীবন- জীবনের জল। নদী কারুর কাছে ঘরগেরস্থালী, কারো কাছে মাতৃক্রোড় ও কবরস্থান। প্রেম ও পয়ার। স্বর্গ নরক। এই অনুষঙ্গে আমি ত্রিপুরার কবিতায় নদনদী বিষয়ক কয়েকটি কবিতা তুলে ধরছি।
যখন ত্রিপুরায় আধুনিক কবিতার বুদবুদ উঠতে থাকে তারও কয়েক দশক আগে বীরচন্দ্র তনয়া অনঙ্গমোহিনীর মধ্যাহ্ন কবিতায় আমরা নদীর কথা পাই। তার কবিতায় নদীকে তিনি সুন্দরভাবে চিত্রায়িত করেছেন।তার কবিতায় গার্হস্থ্য জীবন, পতিপ্রেম প্রকৃতি প্রেম ফুটে উঠেছে। যেমন,
"তাপে তপ্ত বাঁকা পথ ঝরিতেছে ধূ ধূ
কলসী লইয়া কাঁখে চলিয়াছে বধূ
ক্ষুদ্রকায়া স্রোতস্বিনী খরবেগবতী,
পতি সম্ভাষণে দ্রুত চলিছে গোমতী।"
এখানে স্বামী অন্তগতা কবির বিরহী হৃদয়ের বেদনা ভাষা পেয়েছে।
রাজপরিবারের আরেক কবি কমলাপ্রভা দেবীও সে সময়ে কবিতা চর্চা করতেন। তার কবিতায় ও নদী প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।যেমন,
"মিশে গেল নদী সাগরে, একি বিচ্ছেদ নয়?
একি মিলন? এই কি অভেদ আত্মার নির্বাণ?
এটি ত্রিপুরার কবিতায় একটি নুতন দিক। আধুনিক নয় কিন্তু প্রশ্নের পর প্রশ্ন সাঁজিয়ে এগিয়ে যান কবি।
আবার ত্রিপুরার বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সলতে যারা পাকিয়ে ছিলেন তাদের অন্যতম বিধুভূষণ ভট্টাচার্য ।তার কবিতায় সরাসরি নদী নাহলেও জল জলার গন্ধ পাই। তার কবিতায় সময়ের সংকেতময়তা ফুটে ওঠেছে। যেমন-
"সেতুটুকু হলে পার-সেতুর ওপার
ধূয়া ধূয়া কুয়াসার ধূসরে বিলীন
ঘষা ঘষা ঘোলাটে মলিন
অচেনা বেপথু ঘর,
ছায়া ছায়া জীব জমি জলা বালুচর। "
সলিলকৃষ্ণ দেববর্মন ত্রিপুরার আধুনিক যুগের প্রথম পর্বের অন্যতম কবি। তার কবিতায় নদী প্রসঙ্গ উঠে এসেছে অন্যমাত্রায়।তার কাব্যগ্রন্থ 'জলের ভেতর বুকের ভেতর' একটি কবিতায় নদী উঠে এসেছে এইভাবে। যেমন-
'বুকে রক্ত, ফুল দিও না কুমুদ্বতী
শয্যা ছাড়ো, সূর্যে আকাশ লাল
দাও, বাজাই পুরোনো দিনের শিঙা,
নদীর বুকে জোয়ারের জল চিকচিক
এসো মাঝি তাতেই ভাসাই ডিঙা।' (লুসুম্বার আত্ম শোক)
ত্রিপুরার বাংলা কবিতার আরেক ভগীরথ বিজন কৃষ্ণ চৌধুরী । উত্তরাধিকার হল তার শব্দ চেতনা, ঋজুভাষা শক্তিশালী ও সতন্ত্র উচ্চারণ।নদীর অনুষঙ্গে লেখা তার কবিতা, সন্ধ্যায়' তৃষ্ণা'
"হঠাৎ নদীর ধারে আপাত চা পানের খড়ো ঘরের ঝাপগুলো
তারাতারি বন্ধ, ধারির ফোকরগুলো দিয়ে কেরোসিনের
চকচকে আলো, এখন সহস্রাক্ষ এই ঘরে ফিসফিস
ভিড়, কাঁচের তৈজস বাজে, এক্ষুনি কিয়দংশ তরল আসরে
এখানে গলা ভিজাবে, দিনের দাবদাহে পোড়া খসখসে
সেই কাঠ কাঠ লোক গুলো, এতক্ষণ পাথর পাথর যে ছিল
একান্ত কঠিন সেও অবশেষে
মেঘ হবে জল হবে নদ নদী হবে। "
আরও তার একটি কবিতা 'বনরুই'
অসাধারণ নদী অনুষঙ্গ উঠে এসেছে, যেমন-
" ছলৎ ছলাৎ নদীজলে একদিন লেজ ঝাপটাতে
ঝাপটাতে অবশেষে ডাঙায় উঠে এলে
সবুজ আরণ্যক ভূমি জুড়ে ঘুরে ফিরে
অবশেষে নদীতীরে রেশমের মতো
সোনালি মসৃণ বালুকায় ঘর হল বাঁধা।"
আবার পাঁচ ও ছয়ের দশকের অন্যতম কবি কল্যাণব্রত চক্রবর্তীর কবিতায়ও নদী অনুষঙ্গ উঠে এসেছে।সেমন, -
" কোথাও বিদীর্ণ ছায়া অভিশপ্ত খেলা করে নাকো
বরং নিদ্রিত নদী সম্ভাবিত জন্মের প্রহরে
আলোকের অর্ঘ্য তোলে,
পাখালিরা শব্দ আনে অমৃতের পক্ষ বিধূননে। "(আলো ও অন্ধকারে)
আবার নদী অন্তরঙ্গ হয়ে উঠে যখন কবির কাছে সময়ের এক চরম সত্য ধরা পড়ে। যেমন -
" মায়াদয়াহীন বিশ্বস্ততায় অন্যতর
কোন অনুভব বেড়ে উঠেছে ইতিমধ্যে.,
প্রসিদ্ধ দোলাচলে গড়িয়ে চলে বিমূর্ত মানুষ
করতল চুইয়ে আসা রক্তে নদীর জলে রঙ ধরে না।
আবার কবি দুঃসময়ে নদীর কাছে আশ্রয় খুঁজেন প্রিয় শিশুকে নিয়ে - তিনি বলেন-
তবুও যেতে হয় যখন দুঃসময়ে। প্রিয় শিশুকে
সযত্নে সাদা তোয়ালে জড়িয়ে বুকে নিয়ে আমি
নদীর ভাংঙা পাঁজরের কাছে গিয়ে বলেছি, এই
মৃত শিশুকে তুমি কোলে তুলে নাও, এ আমার সন্তান
সে পিতার এক কানাকড়িও খায়নি কোনদিন,
স্পর্শ করেনি মাটি, উদাল ফুলের আভা এখনো
কপালে লেগে আছে। "
(এইখানে আমার পংক্তিমালা)
খগেশ দেববর্মন ছয়ের দশকের আরেকজন উল্যেখযোগ্য কবি।তিনি 'প্রান্তিক 'কবিতা সংকলনের সম্পাদক ছিলেন।
তার কবিতায় নদী নারীর মতো ধরা দিয়েছে। যেমন,
" তাকে ছুঁয়ে দেখো,
সম্মুখে তোমার যে নারী নদীর মতো পড়ে আছে।
তার পীবর স্তনে শরাহত যুবাদের সংমিশ্রিত ঘ্রাণ,
অথচ অবাক হবে এ নারী ঋতুমতী একুশ অঘ্রান।
(ঋতুমতী)
এই সময়ের আরও দুজন কবি হলেন করবী দেববর্মন ও অপরাজিতা রায়।ত্রিপুরার জল হাওয়া মাটি জঙ্গল নদীর ঘ্রাণ তাদের কবিতায়।
" যেমন করবী দেববর্মনের কবিতায়-
"সময় এগিয়ে গেছে উজানী বাতাস পথ ঠেলে ঠেলে
লোঙা আর পাহাড়ের বুক বেয়ে
একশ এক ডম্বুর প্রাপ্ত দুধের ফেনার মতো
গর্জিত নর্তনে সময়কে নিয়ে গেছে গোমতী রোখায়।"( ত্রিপুরা আমার )
আবার অপরাজিতা রায়ের কবিতায়-
" নীল পাহাড়ের ছায়া পড়ে যেন দূর আকাশের গায়
গেরুয়া নদীর জলে
প্রান্তদেশের কাহিনী বুঝি হারায়
কত ইতিহাস ধুয়ে ধুয়ে নেওয়া গোমতী মনুর ঢেউ,
বাকে বাকে উপকথা,
রেখা রঙ দেখে ভাবি কথাকার কেউ। "(ত্রিপুরা)
আবার ছয়ের দশকে ত্রিপুরায় হাংরি আন্দোলনের অন্যতম বিশিষ্ট কবি প্রদীপ চৌধুরীর কবিতায় ও উঠে আসে নদীর কথা।সভ্যতার অন্ধকারময় চেহারা তুলে আনতে তার বলিষ্ঠ উচ্চারণ সকলের নজর কাড়ে। যেমন তার -" একটি
অনুভব"কবিতায় তিনি বলেন-
" নদীটাও বাঁক নিল শেষে
তখন শীতের শেষ বীতপত্র সারি সারি গাছ
শব্দিত হলো না কিছু, স্থবিরতা আশ্বাস দিলো না;
নদীটাও বাঁক নিলো নিঃশব্দ নিঃশেষ। "
আবার, 'জ্বর 'কবিতায় বলেন-
"একজন তাড়িত মানুষের কোন বয়স নেই
একজন বিপ্লবীর প্রধান হাতিয়ার
তার বুকের গভীর জ্বর
একজন কবির জ্বর প্রবাহিত নদী।"
কবি অনিল সরকারের কবিতায় নদী-
" আমার চামড়ার নীচে এক লাল নদী
দুঃসহ জ্বালাবাহী ক্রন্দনের স্রোতে ভরা।"
কবি প্রদীপবিকাশ রায় কবিতায় নদী অসম্ভব দৃশ্যময় হয়ে ওঠে - যেমন,
" হাঁটুর উপর কাপড় তুলে পাহাড়ি বালিকা
হেমন্তের নদী পার হয়ে যায় হরিণী সুলভ
বালুচর তার পদচিহ্ন শুঁকে বেড়ায় বন্য শূকর।"
(অরণ্যের ছায়া)
সাতের দশকের ত্রিপুরার আরেক কবি সেলিম মুস্তাফার কবিতায় নদী উঠে এসেছে নারীর আরেক রূপে। তিনি বলেন-
"দাবি ছিল,
দাবি ফুটে উঠল নদীর পারে পায়ের চিহ্নে-
দাবি মাথা তুলল ভাঙা পুলের খুঁটির মতো-
দাবি নীলাভ সন্ধ্যায় মেয়ে মানুষের মতো
ফুটে উঠল নির্জনতায়,
আমি কোন কথা বলব না,
এখানে শব্দের কোনও প্রয়োজন নেই।( দাবি ছিল)
হিমাদ্রি দেব এই রাজ্যের আরেক সুকবি। তার কবিতায়ও নদীর কথা এসেছে ঘুরে ফিরে। যেমন-
"খরার গুণে গুঁড়া হইলো প্রজাপতির পাখা
যাইতে যাইতে শেষ হয় না পথ কেবলই আঁকা
বানাইন্যা ঘর শূন্য হইলো নদীতে নাই জল
কোথায় যাইমু কারে কইমু মঞ্জিলাগো বল।"
(মঞ্জিলাগো বল)
এ রাজ্যের আরেক সুকবি দিলীপ দাসের কাব্যগ্রন্থ
"বিপিন মাঝির নাও" নদী কাব্য গাথা।যেমন-
"গোমতী ফুঁসতাছে কত্তা।
জল বাড়তাছে,
ঢেউ খেলতাছে
পাক মারতাছে,
এই সময় পাড়ে যাইয়েন না।
কুত্তা, দ্যেহেন চাইয়া,
পাহাড় থিক্যা ক্যামন গইড়াইয়া গইড়াইয়া
লাল ঢল নাইম্যা আইতাছে। (গোমতী ফুঁসতাছে কত্তা)
বা
" ডহরভরা মধ্যরাতে নিয়ে বিপিনমাঝির নাও ঘরে
ফিরছে। নদীর বুক ছুঁয়ে ডিঙি যখন যায়, সুবচনি ঠাকুরুণের/
মতো
নিকষ অন্ধকার বিদীর্ণ হয়ে পথ ছেড়ে দেয়।নদীআজ
চিরশান্তির মতো"
(বিপিন মাঝির নাও, চার)
সাতের দশকের আরেক সুকবি সন্তোষ রায়।তিনি তার নদীমাতৃক কাব্যগ্রন্থে নদীকে নিয়ে লেখেন-
" আজ নির্বাচনী চাঁদ দেখা যাবে বলে
উল্লাস নেই ময়দানে
কেবল চিৎকার ফুঁড়ে ফুঁড়ে আসে ভয়াবহ
উৎসব ফেলে নদীরা গেছে সব প্রমোদ ভ্রমণে
তোরণে, প্রাচীর রঙিন কুঁড়ি ফুটে ওঠে
নির্বাচন বসন্ত আজ পৌর শহরে।"
(শব্দ ক্ষুধার্ত আজ তাকে দাও উপোসী নির্বাচন)
ত্রিপুরার আরেক সুসন্তান কবি নকুল রায়ের কবিতায় নদীভাবনা এরকম-
" কোন প্রিয় মানুষের কথা হারিয়ে গেলে
সভ্যতার অনেক ক্ষতি,
প্রিয়তা অনুশীলনে সমৃদ্ধ হয়। তুমি হারিয়ে গেলে
আমার শরীরে মিশে থাকে না কোনো নদী
আমার আপনভোলা স্রোত খুঁজে না-পাওয়ার বেদনা
আমাকে সমুদ্রে মিশতেও ভয় পেতে হয়। "
(নদী-শ্রীলতা নারী)
0 Comments