দিনপঞ্জিকা:২৮:০৬:২০২৩ || গোবিন্দ ধর
দিনপঞ্জিকা:২৮:০৬:২০২৩
গোবিন্দ ধর
সকাল সকাল বিকাশ সরকার দিনমজুর থেকে যিনি কথাসাহিত্যিক কবি এবং যুগশঙ্খের উত্তরপূর্বের সম্পাদক "কবিতা দিন,ছাপি'বলতেই টুং করে উঠলো ম্যাসেজ অপশন। আমি প্রথমে আমার গন্তব্য পথের ছবি তুলে দিলাম। তারপর বাইক চালানোর ছবিও।তারপর ভিডিও কল। তারপর তিনিও কল দিলেন।সব মিলে দীর্ঘ পথ 'যাইতে যাইতে শেষ হয় না পথ কেবলই আঁকা /খরার গুণে গুড়ো হইলো প্রজাপতির পাখা" এমন চলছি তো চলছি।টিপটপ বৃষ্টি। টাপুরটুপুর বৃষ্টি। রেনকোট ভিজে ভেতরই হুশিয়ারীতেও লেগে শীত শীত টের পাচ্ছি।
কিন্তু বিকাশ আজ আমার দীর্ঘ পথের ক্লান্ত শরীর ঝটিকায় হালকা করে দিলেন।
বললাম পাঠাবো।যাই পৌঁছে গিয়েই দেবো।স্কুল অনেক দূর।মাঝে মাঝে আরোহনের ভিডিও ক্লিপ পাঠাচ্ছি। তিনিও সঙ্গ দিয়ে গেলেন পথের।
আমার এই পাওয়া পরম পাওয়া।কোথায় সাহিত্যের উচ্চতর এন্টেনায় বসেও বিকাশ আমাকে মুগ্ধ করেন মোহিত করেন বহুবার।হঠাৎ দীর্ঘ নিরবতা তিনিই ভেঙে বলেন"কোথায় আছেন,পাত্তা নেই যে?"এই প্রশ্নে তাঁর স্নেহ,ভালোবাসা মোমের মতো গলে পড়ে।
বাংলা সাহিত্যে বিকাশ অদ্বিতীয়।
ডুয়ার্সের চা-বাগান সীমান্তের ডাক ফেলে,কচির প্রেম বুকে ধারণ করে বিকাশ আমাদের আপনজন হয়ে লিখেন "বিকাশঝোরা''লক্ষ্মীর পাঁচালী " কত কি।বিকাশ দেশ পত্রিকা থেকে আনন্দ বাজার কোথায় নেই। তবুও বিকাশ লিটল ম্যাগাজিনের আজীবন প্রচ্ছদ থেকে সম্পাদনায় আমাদেরকে দিয়েছেন অনেক।
একবার আমি আর তিমির দে যৌথভাবে বিকাশকে আবিষ্কার করতে চেয়েছি। তাঁকে নিয়ে আস্ত একটি মুখোমুখি বিকাশ সরকার প্রকাশ করেছি।যত দিন যায় মনে হয় বিকাশের মধ্যে আরো অনেক কিছু লুকিয়ে আছে যা আমার কাছে ধরা পড়েনি।
বিকাশ ভাত শিকার করার জন্য আসামের গুয়াহাটি ফুটপাতেও কাটিয়েছেন।
আজ বিকাশ যুগশঙ্খের গুয়াহাটি সংস্করণের সম্পাদক।একজন ভাতশিকারীর সফলতা এখানেই।
যদিও বাম মতাদর্শে বিশ্বাস রেখে এখনো বিকাশ দৃঢ়চিত্তে সামনেই হাঁটেন তবুও হারিয়েছেন ডুয়ার্সের সৌন্দর্য। কচির সোনামুখ। কাকার রক্তমাখা শরীর।তবুও বিকাশের মধ্যে পাই হাজিরাকামলার দিনলিপি। এখনো লেখেন আজান ফকির নিয়ে তার সাম্যবাদী উপন্যাস।
তাঁকে যত আবিস্কার করতে চাই ততোই আরো উজ্জ্বলতায় আলোকিত বিকাশের মধ্যে নিজের সাথে নিজের দ্বন্দ্বের নানা ঘাতপ্রতিঘাত লড়াই যুদ্ধগুলো ধরা পড়ে।
বিকাশের রুটির লড়াই না থাকলে এই বিকাশ হয়তো আমরা পেতাম না।লক্ষ্মীর অকাল প্রয়াণে কবির ক্ষতবিক্ষত মনের ডাইরী হতো না সেই পাঁচালী।
বিকাশ আর আমি, আমি আর বিকাশ কোথাও সাহিত্যের স্তরে এক পঙক্তির নয়।তবুও বিকাশের ভাত শিকার আমারই ভাত শিকারের মতোই।
এখানেই তিনি আর আমি এক।
সে জন্য বিকাশের কাছে আমি হাতকড়া পরা।
বিকাশ কিছু চাইলে তড়িৎ প্রবাহের মতো দিতে পারলেই পরিত্রাণ পাই।
বিকাশ এমনি করে আবারও কখনো বলবেন :একটি কবিতা দিন তো ছাপি।
আমিও আরেকটি দিন নতুন করে বাঁচবো বলে মৎসবালিকার নিকট যেমন মেলে দিই নিজেকে তেমনি বিকাশের আমন্ত্রণ আমার বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
২৮:০৬:২০২৩
0 Comments