ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড আয়োজিত লিটল ম্যাগাজিন উৎসব-২০১৮
****************************************

দেবব্রত সেন

ছোটবেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাতে লেখা দেয়াল পত্রিকার বিষয়টি আমার পরম শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক শ্রী গৌরাঙ্গ সাহা কেমন করে যেন মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হাইস্কুলে এসে শ্রী গোষ্ঠবিহারী সাহা এবং জনাব আব্দুল কাইয়ুম নিজামী স্যারকে পেলাম যাঁরা নিজেরা লিখতেন এবং আমাদেরকে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বিভিন্ন বই পড়তে এবং লেখালেখিতে অনুপ্রেরণা যোগাতেন। ঐ সময়টাতে বেশ কয়েকটি পত্রিকা হাতে লিখে বের করি। ১৯৯৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত পরিবেশে এসে 'লিটল ম্যাগাজিন' এর সাথে প্রথম পরিচিত হই। পরবর্তীতে চট্টগ্রামের কারেন্ট বুক সেন্টার এর শাহীন ভাই একদিন কবি মুশফিক হোসাইন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কবি ময়ূখ চৌধুরী স্যার এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।  সে থেকে যাত্রা শুরু।

এরপর চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের শিক্ষক পরম শ্রদ্ধেয় হাসি চক্রবর্তী এবং  তাঁর স্ত্রী ছায়া চক্রবর্তীর স্নেহ এবং অনুপ্রেরণা আমাকে লিটল ম্যাগাজিন গবেষণা, প্রকাশনা এবং সম্পাদনায় যুক্ত করে। আমার প্রথম পথ চলায় যাঁদের অনুপ্রেরণা এবং আশির্বাদ পেয়েছি তাঁদের মধ্যে কবি ময়ূখ চৌধুরী, কবি মুশফিক হোসাইন, কবি হাফিজ রশিদ খান, কবি আশীষ সেন, হাংরিজেনারেশন কবি দেবী রায়, চিত্র শিল্পী হাসি চক্রবর্তী, কথা সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস, হুমায়ুন মালিক, ডাঃ কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর এবং শ্রীমতি ছায়া চক্রবর্তী উল্লেখযোগ্য। সেই থেকে কখনও প্রত্যক্ষ কখনও পরোক্ষভাবে আজও আঁকড়ে আছি আমার ভালোবাসার 'লিটল ম্যাগাজিন'। কারণ এই লিটল ম্যাগাজিন বা ছোট কাগজ আমার কাছে শিশুর মতো। সন্তানের মতোই একে আগলে রাখার চেষ্টা করি। আমার কাছে মনে হয় এ শিশুই পথ দেখাতে পারে সুন্দর আগামীর। ছোট কাগজ সুন্দর মননের চর্চা কেন্দ্র। 

ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড উৎসব- ২০১৮ তে যোগ দেয়ার নিমন্ত্রণ পেয়ে আমি আপ্লুত এবং অবাক হয়েছি। পাশাপাশি কুণ্ঠিত হয়েছি এই ভেবে যে আমি আজও নিজেকে উজাড় করে ততটুকু দিতে পারিনি যতটুকু চেয়েছি। আমার মতো নগন্য একজন মানুষকে তাঁরা কেন নির্বাচন করলেন এ প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাইনা। লিটল ম্যাগাজিনের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা এবং দুর্বলতার কারণে ত্রিপুরার এ ভালোবাসার আহ্বান উপেক্ষা করতে পারিনি। 

আমি কবি নই। কে কবি আর কে কবি নয় কিংবা কে লেখক আর কে লেখক নয় তা নিয়ে খুব একটা মাথাও ঘামাই না। আমি ছোট কাগজের ছোট একজন কর্মী মাত্র। সুন্দরকে অনুভব করি,ভালোবাসি। যাঁরা সুন্দর মননের চর্চা করেন তাঁদের সংস্পর্শে নিজেকে ঋদ্ধ করি, একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত। গুণিজনদের কথা শুনবো বলেই গিয়েছিলাম ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড উৎসবে-ভালোবাসার কথা, সুন্দরের কথা। প্রাণ ভরে শুনেছি মুগ্ধতা নিয়ে। দেওনদীর স্রোতে অবগাহন করে ত্রিপুরাবাসীর শারদীয় আহ্বান বুকে নিয়ে এসেছি। 

সন্ধ্যা দিদি - জগদীশদাদা এবং গোবিন্দ ধর দাদার বাড়ির আড্ডা, গল্প,কবিতা,গানে মুখরিত ছিল দেওনদী এবং তার দুই ধারের ঘাসফুল কাশবন। সুন্দর আর প্রাণের এ মিলনমেলায় উপনীত হতে পেরে আমি মুগ্ধ,বিমোহিত এবং আশান্বিত। আনন্দের বন্যায় ভাসতে ভাসতে বারবার কেবলই আমার মনে হয়েছে, ভালোবাসার কাছে কাঁটাতার কেন পৃথিবীর সব প্রতিবন্ধকতাই তুচ্ছ...

0 Comments