স্রোত প্রকাশনার বিশ্বাস করে বই বেঁচে থাকবে :অনুপ ভট্টাচার্য
স্রোত প্রকাশনার বিশ্বাস করে বই বেঁচে থাকবে
অনুপ ভট্টাচার্য
বাংলা মুল্লুক এবং তার ছায়াঞ্চল, আসাম ত্রিপুরা মেঘালয়ের বাঙালী সমাজে উনবিংশ শতাব্দীকে বলা হত বইয়ের শতক। বিংশ শতাব্দীতে, সঙ্গে এসে জুটল ফিল্মএক বিংশ শতাব্দীর দিন যাপনের মধ্যে গভীর ভাবে ঢুকে গেল টেলিভিশন আর মেনে নিতে হল,মোবাইলের একচেটিয়া আধিপত্য বাদ।এখন তো প্রায় স্লোগানে দাঁড়িয়ে গিয়েছে যে বাস্তবে -আজকাল কিশোর ও যুব সমাজ-কেউ আর বই পড়তে চায় না।ওটা একদম সেকেলে অভ্যাস।সবাইকে ব্যাপারটা মেনে নিতে হবেই সময়ে সঙ্গে চলতে গেলে। সময় যে দ্রুত হাঁটছে।
উত্তর ত্রিপুরার স্রোত সাহিত্য গোষ্ঠীর কর্ণধার কবি ও কথাকার শ্রীযুক্ত গোবিন্দ ধর এবং তার সহযোগিরা কিন্তু মোটেই এই ভাবনার শরিক নয়।
তাদের বিশ্বাস, ইলেক্টমিডিয়ার আগুনে পুড়তে পুড়তে ফিনিক্স পাখির মতো বেঁচে থাকবে ডানা মেলে আকাশে উড়বে এবং দিগন্তের মৃত্তিকা স্পর্শ করতে পারবে একমাত্র বই বই-ই শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকবে। বই যে সমকালিন বিষয় আসয়ের চিরকালীন ফটোগ্রাফ।আমার জানামতো,বিদেশে গ্রন্থ পাঠের সাম্প্রতিক প্রবণতা স্রোত সাহিত্য গোষ্ঠীর বিশ্বাসকেই বলিষ্ঠ ভাবে সমর্থন করে।এবং সম্ভবত এই চিন্তা থেকেই জন্ম স্রোত প্রকাশনার।
জন্মলগ্ন থেকে যে শুনেছে, প্রকাশকের কান্না, চোখ খুলেই যে অনুভব করেছে কবি আর গদ্যকারদের অসহায়তা। জ্ঞান হবার মুহূর্তেই যার মনে হয়েছে বাংলা প্রকাশনা এই রাজ্যে মুমূর্ষু শিল্পের অন্তর্গত। কোনো কিছু প্রাপ্তির আশা ছেড়ে, নিষ্ঠাভাবে কাজ করে এর প্রাণ সঞ্চার করতে হবে বলে গোবিন্দের মত প্রকাশকরা মনে করেন অথচ এখানে এমন তো হবার কথা ছিল না।রাজন্য আমল থেকে শুরু করে, এ রাজ্যের বাংলা ভাষার সাহিত্য সেবীরা তাদের সৃষ্টি নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে বন্দিত ও সমাদৃত হয়েছেন বহুকাল ধরে।
সেই সুমহান ঐতিহ্যকে স্মরণ করেই স্রোত প্রকাশনার কর্ণধার লেখক গোবিন্দ ধর নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মুকাবিলা করে বেশ ক'দশক ধরেই তার সৃষ্টিশীল সহযোদ্ধাদের নিয়ে লিটল ম্যাগাজিন ও পুস্তক প্রকাশনার কাজ শুরু করে চালিয়ে যাচ্ছেন। আজও প্রকাশক শ্রী ধর এবং সহযাত্রীরা বিশ্বাস করেন, যে জমি সুদীর্ঘ দিন ধরে সুফলা ছিল, তা কখনো বন্ধ্যা হতে পারে না।দরকার শুধু যুগোপযোগী সার দিয়ে তাকে উর্রব করে তোলা,যাতে নবীন প্রবীন লেখকরা শুধু তাদের সৃষ্টির প্রতি দায়বদ্ধ থেকে লেখার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন সততার সঙ্গে।
বাকি দায়িত্ব তো এরাজ্যের প্রকাশকদের। যা প্রকাশকের ভূমিকায় স্রোতের নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও যথাযথ, পালন করে যাচ্ছেন। সে দিন কথাপ্রসঙ্গে জানা গেল উনি মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করেন বাংলা বই এর পাঠক এখনও রাজ্যে এবং দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছেন। এবং আগামী সময়েও থাকবেন।
শুধু সত্যান্বেষি পাঠক ও দায়িত্বশীল লেখকদের কাছে এ রাজ্যের প্রকাশকদের হয়ে আমার বিনম্র অনুরোধ -আসুন আমরা সবাই মিলে সচেষ্ট হই,যাতে এ রাজ্যের বাংলা প্রকাশনা জগতে প্রকাশক গোবিন্দ ধরদের প্রচেষ্টাকে গৌরবোজ্জ্বল করে তুলতে সার্বিক আন্তরিক প্রয়াস নিতে পারি রাজ্যবাসী আমরা প্রত্যেকে।
0 Comments