দ্রোহ:এক পঙক্তির আত্মবিষ|| গোবিন্দ ধর 

উৎসর্গ
প্রাবন্ধিক 
মানবর্দ্ধন পাল
তিনি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়
বাংলাদেশ ও ভারতের 
সাহিত্য সংস্কৃতির আছড়ে পড়া 
তিতাসের ঢেউ। 


কথাপৃষ্ঠা 

কবিতা আঙ্গিকে ও অন্তরে অনেকরকম। ভাবের বহুমাত্রিকতায় কবিতা এক অঙ্গেই-যে কত রঙিনাযুত হীরকজ্যোতি ধারণ করে  তা-ও বর্ণনাতীত। এক অপার-অতল বিস্ময়বিভার নাম কবিতা। কখনো একটি শব্দ-মাধুরি, একটি উপমা, একটি চিত্রকল্প, একটি প্রতীক কিংবা শুধু একটি বাকপ্রতিমাই সার্থক কবিতা হয়ে ওঠে। কেন না, শব্দ ব্রহ্মতুল্য।

বহু সর্গে বিভক্ত মহাকাব্য যেমন একটি কবিতা তেমনই 'ঈশ্বর হলেন অগ্নি, যিনি এই হৃদয়ে থাকেন।'-- এই একটি পংক্তিও পূর্ণাঙ্গ কবিতা। বিশেষ স্টাইলে শব্দ সাজিয়ে চিত্রল কবিতা বিনির্মাণ যেমন প্রাচীন একটি চৈনিক ধারা তেমনই তিন পংক্তির অন্ত্যমিলযুক্ত 'হাইকু' জাপানি কবিতার একটি বৈশিষ্ট্য। এমন বিচিত্রবিধ রূপায়ণ লক্ষিতব্য বিশ্বকাব্যমঞ্চে।

বাংলা কবিতায় তেমনই চমক-জাগানো একটি ধারা-- এক পংক্তির কবিতা। বিচ্ছিন্নভাবে তেমন সৃষ্টি কেউকেউ করেছেন কিন্তু এক পংক্তির শতেক কবিতা দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কবিতার বই বাংলা ভাষায় উভয় বঙ্গে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। রবীন্দ্রনাথের অনু কবিতার সংকলন 'কণিকা'র কথা মনে রেখেও বলব, গোবিন্দ ধরের 'দ্রোহবীজ'  এখানে একক ও অনন্য। মহাকাল বিচার করবে এর শিল্পসাফল্য। পাঠকপ্রিয়তা নির্ণয় করবে এর নান্দনিকতা। কালের খেয়া নির্ধারণ করবে তার পারানির মূল্য। প্রেম ও দ্রোহের আলকেমি এবং জীবন-জগতের শিল্প-রসায়নের প্রকাশ অণু পরিমাণ হলেও তা থেকে অগ্নিগিরির শিল্পলাভা উদ্গীরণ হতে পারে। গোবিন্দ ধরের 'দ্রোহবীজ' সেই আশার আকর।
মানবর্দ্ধন পাল
অতিথি অধ্যাপক 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্ববিদ্যালয় 
বাংলাদেশ।




১।গানের দেবীর মতো ধ্যানমগ্ন তুমি।

২। সুন্দর সকাল,আসুক প্রতিদিন।

৩।সকাল থেকে তুলে আনবো গোলাপদিন।

৪।প্রতিটি শরীর বঙ্গপোসাগরের নুন।

৫।এত উত্তাপ আমিই গলে যাওয়া গোলকধাঁধা। 

৬।প্রথম ছুঁয়েছো তুমি শীতকাঁটা শরীর।
৭।বেজে ওঠে দুঃখগান হারমোনিয়ামে। 
৮।তুমিই গোপন ঈশ্বরী যেখানে আমার মুক্তিলেখা।
৯।যুদ্ধশিশুর মতো রুগ্ন নিবেদন তোমার। 
১০।এসো সাপলুডু খেলি।
১১।তোমার কুহুতান শীতল হাওয়ার পাশওয়ার্ড।
১২।বৃষ্টিতে ভিজে তুমি কাক,তবুও রৌদ্রোজ্জ্বল মুখ। 
১৩।বৃষ্টি ও তুমি যেন সুরেলা অসুখ।
১৪।হাঁড়হিম করে নিভিয়ে দিলে ঘুমেরঘোর।
১৫।তুমিই সুন্দরবনের বাঘিনী, কামকলাময়।
১৬।কখনও কখনও তুমি ঊনকোটি টিলায় পাথরপ্রতিমা।
১৭।ধামাইলনৃত্যের মতো কাঁকাল বেঁকানো আমন্ত্রণ, হৃদিজল উপচে পড়ে। 
১৮।তুমিই অমাবস্যা তুমিই পূর্ণিমা। 
১৯।তুমিই,  বাকাচাঁদ থেকে উথলেপড়া আলোর দেবী।
২০।পাতাপড়ার মর্মর শব্দে তোমার উপস্থিতি গুণী। 
২১।পতনের শব্দে তোমাকে হিরণ্ময়ী লাগে।
২২। চোরাঢেউ বুকে চেপে রাখতে পারো তুমি ফল্গু।
২৩।হারমোনিয়ামের রিড ভেবে বাজিয়েছি দ্রোহময়ী।
২৪।তুমিই বেজে ওঠো এত গান লেখা শরীর।
২৫। কথায় সুরারোপ করো আমি সুর হয়ে বাজি।
২৬।সংকল্প থেকে একদিন গান ঝরে পড়ে আঁতর বৃষ্টি। 
২৭।সকালের রোদগুলো আনবাড়ি যায় ব্রাহ্মমুহূর্তে।
২৮।দিকভ্রান্ত চরণ চন্তাই লেখে বিবাহ সংগীত। 
২৯।আকাশবাণী থেকে তুমিই নেমে এসো,গান দিদিমণি। 
৩০। আমি সেই গান হতে গিয়ে লিখি গীতিকা। 
৩১।দ্রোহকাল থেকে ঝরে পড়ে আঁতর বৃষ্টি। 
৩২।ফুটে ওঠো,শাপলা ফুল, বিমোহিত হই।
৩৩।আকাশে লিখি তুমিই ভেজারাই।
৩৪।কখনো কখনো বিরক্তি ঝরে পড়ে দীঘলবাঁকের ছড়ায়।
৩৫।আনোয়া ছড়ায় ঘুমিয়ে আছে কালোমেয়ের স্বপ্নমাখা প্রেম।
৩৬।চিরকুটে ভাসিয়ে দিলাম অসমাপ্ত আত্মজীবনী। 
৩৭।শেকড় থেকে বুঝতে সুবিধা গাছটির বাঁচার তীব্রতা। 
৩৮।আমিই গাছলতাপাতাময় বিন্ধ্যপর্বত।
৩৯।আমিই বিশল্যকরণী লতা। 
৪০।ভীমরুলের আঘাতের চিহ্নগুলো যত্নে রাখি।
৪১।অসময়ে কোকিল ডাকে মরাডালে বসে।
৪২।সংকল্পবদ্ধ প্রতিটি মানুষের কাছে ধরা পড়ে বাঁচার তীব্রতা। 
৪৩।আমিই পতন যার কোন শব্দ নেই। 
৪৪।দ্রোহই আমার প্রকৃত ক্রোধ। 
৪৫।আমিই ক্রমশঃ একাকিত্বের গানে ডুবে আছি।
৪৬।একাকিত্বের শব্দে আমিই ঘোর নিমজ্জিত। 
৪৭।তুমিই কাঁটাতার। একদিকে দেশ অন্যদিকে বিদেশ।
৪৮।আমি মধ্যমগ্রামে আটকে আছি লোহিতকণার স্রোতে। 
৪৯।তুমিই রক্তে দিয়েছো সিংহের  হুঙ্কার। 
৫০।তুমিই পিনিরপিনির বৃষ্টি কাঁকাল বেঁকানো ঢেউ। 

২২:০৬:২০২৫
ভোর:৪টা৩০মি
কুমারঘাট।


দ্রোহ:এক পঙক্তির আত্মবিষ
গোবিন্দ ধর

৫১।তীব্র শীতকাল শেষে বসন্ত অনিবার্য।
৫২।তুমিই মুহূর্ত তুমিই কবিতা।
৫৩।তীব্র আষাঢ় থেকে নেমে আসে বৃষ্টি। 
৫৪।এই শ্রাবণে আরেকটি পাতা বৃন্তচ্যুত হবে।
৫৫।অথচ তুমিই শ্রাবণ বর্ষার সুমিতা।
৫৬।স্বরচিহ্নে লিখি প্রতিটি প্রেমিকার শরীর। 

২৩:০৬:২০২৫
বেলা :১২টা৪০ মি
কুমারঘাট।




0 Comments