এক ফর্মার কবিতা:ভোরবেলার কবিতাগোবিন্দ ধর
এক ফর্মার কবিতা:ভোরবেলার কবিতা
গোবিন্দ ধর
(১)নীলগিরি পর্বতে এক সন্ধ্যা
সন্ধ্যায় এক নীরবতা নেমে আসে সারা পাহাড় জুড়ে
না পাহাড় কেবল নয় পর্বতেও,শহরেও।
নিস্তব্ধতায় আদিম মায়া নামে সময় স্বরণী বেয়ে
ঘোর লাগে। কোথাও আলো নেই। দাবানল নেই।
দিনেও নীলগিরি পর্বতে বাঘ হরিণ ভাল্লুক
নিজস্ব স্বাধীনতায় অভয়ারণ্য আমাজনে ঘুরে।
সন্ধ্যার মায়াবী অন্ধকার আরো গাঢ়তর হয়ে
চারদিক নিস্তব্ধ এখন দিকচক্রবালের কোথাও
একটুও আলো নেই। পশুরা স্বাধীন।
মায়া মোহনীয় নিকষ অন্ধকার সৌন্দর্যের বিস্তার
সভ্যতা এখানে এসে থমকে দাঁড়ায়
জঙ্গলের আদিম সংগীত বাজে, লাভডুব লাভডুব।
সকাল:৬টা২০মি
২৯:০৩:২০২৫
ব্যাঙ্গালুরু।
(২)তোমাকে
দূরে কোথাও ক্রমশঃ ফিকে হয়ে যাওয়া বিশ্বাস
ক্রমশঃ ক্ষয়ে যাওয়ার পর চাঁদ
আমরা এখনো তোমাকেই সঠিক দিশারি মানি।
তুমি পলাশরাঙা স্বপ্ন ফেরি করেছিলে কাঁঠাল ত্রিপুরায়।
তুমি মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশের দিকে তুলে ছিলে
ঘরে ঘরে জুঁই ফুলের মতো থালায় সাদা ভাত ফুটুক।
কাঁঠালবিজি আর বন আলু ছিলো পূর্ব পুরুষের ক্ষুধা মেটানোর সম্বল।সেখান থেকে আমাদের গর্বের স্মার্ট সিটি।
তুমিই রূপকার।তুমিই শৈল্পিক কলমে এঁকেছো
লংতরাই আমার ঘর।আমাদের ঘর হাপনরাজার সবুজ।
০৪:০৪:২০২৫
সন্ধ্যা :৬টা১৫ মি
কুমারঘাট।
(৩)শূন্য দশমিক এক মিনিট
মৃত্যুর নিকট থেকে ফিরে এলাম।
অথচ কেউ জানতেও চাইলো না।
মৃত্যুর রঙ কেমন?
মৃত্যুর হাত পা হৃদযন্ত্র আছে কিনা?
কেউ একজনও জানতে চাইলো না
মৃত্যুর সময় কেমন অনুভব হয়?
অথচ সূর্যের সব থেকে নিকটতম গ্রহে
আমার কোনো মিত্র নেই?
আমার কেউ নেই
সকল সুখী মানুষ নিরুত্তাপ উদাসীন নিষ্ঠুর,কালঘুম
ঘুমায়।
অথচ মৃত্যুর নিকট থেকে ফিরে আসার রঙ ঘ্রাণ
তোতো না মিঠে কিংবা আরো কোনোরকম?
কেউ জানতে চায়নি কেমন আছি শূন্য দশমিক এক মিনিট।
০৫:০৪:২0২৫
ভোর:৪টা
কুমারঘাট।
(৪)প্রতিদিনের কবিতা
দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিই।
নেচে-কুঁদে বেঁচে থাকার কত কসরত করি।
জাস্ট ভুলে থাকি তচনচ করা সকল কুমন্ত্রণা।
রাতে খুব কম ঘুম হয়।ঘুমের টেবলেট খাই না।
খেতে গেলেই মনে পড়ে হত্যাপ্রবণ নানা কুকথা।
বেঁচে থাকার গভীর পজিটিভ মাইন্ডসেট রাখি
নিজেকে সকল পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশ, বিপন্ন
মানুষের যন্ত্রণাগুলো বুকে লুকিয়ে রেখে
দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিই। বেঁচে থাকা গোপনশিল্প
বয়ন করি। ছিঁড়ে ফেলার সকল হাতছানি থেকে
দূরে রাখি আমার অবয়ব।মনন ও মেধা।
তবুও এক সাংঘাতিক বিপন্নতার বিষন্নতার
মুখোমুখি আমার চলন আনন্দপল্লীর নিকট
অথচ পথের কাঁটায় বিদ্ধ বিকেল মাড়িয়ে হাঁটি
আগামীর বীজতলায়।
১০:০৪:২০২৫
সকাল:৮টা২০মি
এস.ই অফিস, কুমারঘাট।
(৫)ভোরবেলার কবিতা
চারদিকে বাংলা স্বরচিহ্নের মতো
নানা রকম মুখোশ পরে মানুষগুলো সারাক্ষণ
এই যে নিজের বাদ্য বাজায়
তাদের আসলে আর কাজ নেই।
তারা বাংলাবলয়ের বাইরে নয় তবুও
বাংলা তাদের আক্ষরিক অর্থে নিজের মনে করে না।
এই সাংঘাতিক বলয় থেকে পরিত্রাণ প্রার্থনা ছাড়া
আপাদ উত্তরণ জানা নেই।
শুধু বিভাজিত মানুষের দৌড় দেখি আর ভাবি
প্রতিবন্ধী জীবন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে
ভেতরের হায়নাকে বেঁধে রেখে
শিখে নিতে হবে জরুরী বাংলা শব্দবলয়।
১৩:০৪:২০২৫
ভোর:৬টা
কুমারঘাট।
(৬)উটির সকাল
লাভচিহ্নের মতো জীবন সবুজ হতে পারে
এই বিশ্বাস থেকে একগুচ্ছ সবুজের মায়ায়
নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম মারিচের ছলনায়।
চৌকাঠ মাড়িয়েই দেখি থ্রী ডায়মনশনে
পাত্রের আকার ধারণ করে আছে
এক একজন ছবিমানুষ।
আমিও কি তাহাদের কেউ হয়ে আছি?
তুমিও কি তাহাদের কেউ নয়?
সকল উদেশ্য পথই আঁকাবাকা সবুজ।
আমিও আরো সবুজের সমারোহ বাড়াতে
বুকের ভেতরের বোতাম খুলে দিই
নীলগিরির সবুজ মাড়ানো ফুরফুরে বাতাস
হুহু করে ঢুকে গেল উটির সকাল।
১৩:০৪:২০২৫
সকাল:৬টা৪০মি
কুমারঘাট।
(৭)আদৌ কেউ ভালো আছি
চারপাশ মুখরিত কলধ্বনি কেঁপে কেঁপে ওঠে
বুকের বাম পাশ।
সব চেয়ার বড় নড়বড়ে হয়ে আছে -তাতেই
কেমন বসে থাকে রাজা রাজাধিরাজ একসুরে
বলে ওঠে আমিই স্বৈরশাসক যমুনার কংস।
জনগন পিপীলিকা হয় চুপ করে বসে থাকো
নয়তো বৈষম্যবিরোধী পক্ষ
যার কোনো কথায় আইনী অধিকার নেই
যার সব গনতান্ত্রিক অধিকার শূন্য।
এরকম প্রজাদের শাসন করার মজাই আলাদা
প্রকৃত উপশম আদায় অসম্ভব তাদের।
রাজার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলা যাবে না।
রাজা সুখনিদ্রায় কাটিয়ে দিতে চান- শতাব্দীর পর শতাব্দী।
এখন নীরেন্দ্রনাথ নেই নরেন্দ্রনাথ নেই
কে বলবে রাজা উলঙ্গ?
কে বলবে:প্রেমই একমাত্র হোক গনতান্ত্রিক অধিকার।
১৪:০৪:২০২৫
সকাল:০৬:৩০মি
কুমারঘাট।
(৮)অস্থির দোলনকাল
বুকের ভেতর কবিতা নেই।
দিনপঞ্জিকার পাতা উল্টে গেছি
গোটা চৈত্র সংক্রান্তি।
নেই সুখ ও পাখি
নতুনের আনন্দ নেই উচ্ছ্বাসও।
তবুও নববর্ষ। দিনলিপি নতুন।
যতদূর চোখ যায় শুধু অন্ধকার ।
এই সংকট সময়ে আরোগ্য নেই।
আছে সাংঘাতিক হিংস্রতার চোরাস্রোত।
শিরদাঁড়া টান টান নেই
তবুও চৈত্র সংক্রান্তির দিনগুলো পেরিয়ে
এসো ভোরবেলার কিচিরমিচির।
লাল সূর্যের আলোয়
গোটা কবিতা উপত্যকায় নেমে আসুক
জোড়া শালিক সুখ।
১৭:০৪:২০২৫
ভোর:৩টা৫০মি
কুমারঘাট।
(৯)পাখি ডাকে অবিকল
নাম না জানা একটি পাখি
হয়তো কাঠঠোকরো
অবিরত ডাকেনি গন্তব্যে যেতে হবে বলে?
ডাকেনি কি পাখিটি অবিরত ?
যেভাবে অসুখ এসে ক্রমশঃ গিলে খেতে চায়
অস্থি মজ্জা যাবতীয় অঙ্গ পতঙ্গ সব।
পাখিটি সর্বভুক সব খায় সে।
তার ডাকে সাড়া না দিলেও সে ডাকে।
সে নিয়ত ডেকে চলে - বলে গন্তব্যে চলো।
সকল ঠিকানা তার চেনা।
যতই লুকোচুরি খেলি, চুপিচুপি
কানের কাছে এসে সে ডেকে ওঠে।
সকল অগোছালো কাজকর্ম রেখে
এত তাড়াতাড়ি যেতে চাই?
পাখিটি বুঝে না এসব। তার শুধু
তাড়া দেওয়া কাজ।
ফুঁটো নৌকো ভেদ করে দেওনদী অসুখ
নিরিবিলি বিলি কেটে
সিঁদেল চুরের মতো ঢুকে গেছে
বক্ষ পিঞ্জিরার মাঝে।
সত্যি সত্যি চলে যাবো
অবিকল পাখি ডাক শুনে
অসম্পূর্ণ আত্মখনন রেখে?
চলে যাবো? নদী কি সত্যি ডাকে?
১৭:০৪:২০২৫
বেলা:৩টা০৫ মি
কুমারঘাট।
(১০)তোমাকে পথ ভেবে হেঁটেছি বহুদিন
বাবা শিখিয়েছেন বাঁদিক বরাবর হাঁটতে।
তারপর ব্যস্ত শহরের জেব্রাক্রসিং পেরিয়ে
একদিন মেঠোপথ থেকে উঠে আসা বালক
তোমাকে দিকনির্দেশনা মনে করে হেঁটেছি।
তোমাকে পথ ভেবে হেঁটেছি বহুদিন।
তখনও অলিগলি সরুবাঁকা আঁকাবাঁকা পথ
বিচিত্র সব নির্দেশচিহৃে গন্তব্যে পৌঁছতো।
আমিও শিখেছি তোমার মন্ত্রণায়।
তুমিও পথই ছিলে।
পথে ছিলে -আকাশকালো করা ঘূর্ণিঝড়
পথের চিহ্ন সব মুছে গেছে
এখন তুমি আর পথ নয়- অস্থির কালবৈশাখী।
২৮:০৪:২০২৫
সকাল:০৯:৫০ মি
কুমারঘাট।
(১১)বৃষ্টিমেয়ে
প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষায় কাটে
কেউ একজন ডেকে নিয়ে বলবে
বহুদিন মুখোমুখি বসিনি...
বুকের ভেতর মেঘশিলাখণ্ড হয়ে আছে
কেউ একজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে
হৃদপুকুরে বৃষ্টিমেয়ে টাপুর টুপুর নাচবে।
কেউ একজন বলবে-তুমি না এলে
ঘর খালি খালি লাগে।
কেউ একজন বলবে :এসো কিন্তু...
০৩:০৫:২০২৩
রাত:১০টা১০মি
কুমারঘাট।
(১২)তিন প্রজন্মের উপাখ্যান
গোবিন্দ মানিক্যের কিরাতভূমিতে আমার জন্ম নয়।একাত্তরের যুদ্ধ শিশু আমি।আমার জন্মের সময় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিং।রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে সামিল ভারত স্বাধীন হওয়ার আরো দু বছর পর।তখনই বাবা ঠাকুরদার হাত ধরে ছেঁড়া মানচিত্র বগলে নিয়ে চলে আসেন কাঁঠাল ত্রিপুরায়। ঠাকুরদা দেবেন্দ্রনাথ শিক্ষক ছিলেন।তাঁর পিতা দীপরাম রতিরামের বাধ্য সন্তান ষোল হাল জমিনের মালিক।আমাদের পূর্বপুরুষ বর্তমান বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার মিঞারপাড়ায় বসবাস করতেন।আজও দেবেন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠিত মিঞারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় বিদ্যাসাগরের বর্ণবোধ শেখায়।অথচ মনুনদীর পাড় ঘেসা সেই গ্রাম আজও অজ পাড়া গাঁ।ঠাকুরদা ও আমি তিন প্রজন্ম ধরে বর্ণবোধ শেখাতে শেখাতে অন্ধকার দূর হয়নি।অ-তে এখনো অজগর তেড়ে আসে।
০৮:০৫:২০২৫
রাত:১১টা১৫মি
কুমারঘাট।
(১৩)একটি ধারাবাহিক সংবাদ
রবীন্দ্রনাথের সাথে বাবার দেখা হয়েছিল
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায়।
তাদের মধ্যে কথোপকথনের ধারাভাষ্য নেই।
তখন সহজলভ্য ছিলো না ডিজিটাল ক্যামেরা।
ছিলো না হাতে হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল।
১১০ দশ বছর আগে বাবার বয়স কত ছিলো?
মেরেকেটে গোঁফ না ওঠা যুবক।
ঠাকুরদা শিক্ষক। পিতামহ সরকারী উকিল।
অথচ তিনটুকরো না হয়ে যাওয়া ভারতবর্ষে
বাংলাদেশ থেকে উত্তরপূর্বে রেল যোগাযোগ ছিলো।
এখন আমাদের রেল আছে সড়ক আছে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে রক্তমাংসের জীবনে
এক সিটিতে পাঠিয়ে দিতে পারি:শেষের কবিতার দেশে।
অথচ মেধায় কিলবিল নেই উত্তরণের স্বপ্ন নেই।
আমরা বড় বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি সামাজিক দূরত্বে।
আর ভাবী প্রজন্মকে রবীন্দ্রবিমুখ করতে
সারাক্ষণ হিপকনৃত্য শেখাই।
০৯;০৫:২০২৫
সকাল:১২টা
কুমারঘাট।
(১৪)মেঘনোলিয়া
অনেক দিন পর টানা ঘুম হলো।ঘুম তো নিদ্রা। দীর্ঘ সময় নিজের মধ্যে না থাকা।কে আমি ভুলে গিয়ে অচেতন নিদ্রায় কেটে গেলো সময়।বহুদিন ঘুম হতো না।
আজ তুমি কাছাকাছি। আজ শরীর শান্ত।মনও।দেহমনে শান্তির বারিধারা প্রবাহিত।
শান্ত। খুব ক্লান্তির পর দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে হঠাৎ সকাল দেখি।
আজ পূব আকাশে রোদ ঝলমল নয়।সূর্য ঢাকা আছে তোমার ছায়ায়।তুমি আছো তাই রোদ চলে গেছে মেঘ মেঘ আকাশে।
জানো,আজ বড় শান্ত লাগছে দেহমন।মনে হচ্ছে সারা শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে সিগ্ধ আরাম।
আমি খুব ভোরে সজাগ হয়েছি।এখনো লেগে আছে রাতের আদর আদর শরীর।
ভোরে বেরিয়েছি। আবার সল্পকালীন হাঁটাহাঁটি করে বিছানায় চলে আসি।
দক্ষিণের জানালা খোলা। হাওয়া আসছে তোমার শরীরছুঁয়ে।লাগছে আমার শান্ত শরীরে।শরীর জুড়িয়ে যায় আনন্দবাতাস আজ চারদিকে।
আরো দীর্ঘ সময় বিছানা আর আমি লেপ্টে থাকতে মন চাইছে।
তুমি খুব শান্ত।সিগ্ধ।চিরহরিৎ।
১২:০৫:২০২৫
ভোর:০৬টা২০ মি
কুমারঘাট।
(১৫)চলুন,কিছুতো করি
অনেকেই বলেন, এখন লিখি না কেন?
আমি নিরুত্তর।
নিরুত্তর কেন?
লিখি না কেন এর উত্তর কি হতে পারে?
কবিতা কি লেখা যায়?
না কবিতা কবিকে লিখিয়ে নেয়?
আমার জানা নেই।
চারপাশে এত বিপর্যয় অবৈধ ক্ষমতা দখল
রবীন্দ্রনাথকে মুছে ফেলার কত ফন্দিফিকির
মাঝ আকাশে বিমান দূর্ঘটনা কিংবা
উড়ার সময় নিচে নেমে এসে ক্রাশ
কত ঘটনা হররোজ ঘটেই চলেছে।
একটি ঘটনা থেকে অন্য ঘটনায় যেতে
মাঝখানে কোনো হাইফেন নেই।
বিরতি নেই।
নেই আক্ষেপ কারো।
এমন দুঃসময়ে কবিতা হয়?
লেখা যায়:সুরঞ্জনা ঐ পথে যেওনা কো তুমি?
তিনটি কিশোর একসাথে স্যুইসাইড করে
না সত্যি সত্যি সাঁতার না জেনে জলে নেমেছিলো?
জানি না। আমি সত্যি জানি না।
আমি জানি না এক যুবকের দেহ ফ্রিজে রেখে
খুনিরা কিভাবে ভাতের গ্রাস নামায় খাদ্য নালীতে।
দিনে দিনে সামাজিক পতন এত বেড়ে গেছে
আমরা কেউ কারো জন্য নয়।
এত নিজস্ব ভালো থাকার পায়তারা করছি সকলেই
অথচ মধ্য রাতে তারাখসার আলোক রেখা
আমাদের কবিতায় আর আসে না এখন।
রাতের জোনাকি তাদের মিটমিটে আলো জ্বালিয়ে
এদিক ওদিক ঘুরে আদৌ?
জোছনার আলোয় খোলা মাঠে রোমান্টিক আমাদের আর দেখা মেলে না।
কিশোরেরা বুকের বোতাম খুলে ঋত্বিক রোশন হতে চায়।
যুবেকরা দিনে দিনে আরো অন্ধকারে হারিয়ে যায়।
শিরা পথে বিষনেশায় বোধ হয়ে পড়ে থাকে
বিষন্ন বিকেলের জমিনে।
আমাদের নাকে আসে না চামেলি ফুলের ঘ্রাণ।
সব কেমন এলোমেলো।
এই সময় কবিতা খুব জরুরী?
যুদ্ধের বিপক্ষে দাঁড়াবো না?
মানবতার পক্ষে কথা বলবো না?
সামাজিক ব্যাধি দূর করতে হাত লাগাবো না?
অনাথ আশ্রমে পড়ে থাকা আমাদের মা আমাদের বাবা
তাদের ফিরিয়ে আনবো না ঘরে?
আমাদের তারুণ্যে আবার সত্য ও সুন্দরের আগুন জ্বালাবো না?
আমাদের মা মেয়ে বোনের সম্ভ্রম রক্ষা করতে
আমরা গর্জে উঠবো না বকাটে ছোকরাদের প্রতি?
অন্ধকার আরো ক্রমশঃ গাঢ়তর হয়ে আসছে।
আমাদের কিছু করণীয় আছে।
চলুন আমরা কিছু করি।
১৮:০৬:২০২৫
বেলা:১০:৪৫ মি
এস ই অফিস, কুমারঘাট।
(১৬)একলব্য
কোথায় যাচ্ছি জরিপ করিনি।
তবে কেউ কেউ ভালোবাসে।কেউ কেউ ঘৃণাও করে।
ভালোবাসায় কৃতজ্ঞ আমি।
ঘৃণা অবজ্ঞা আমাকে আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে।
এই যেমন তুমি সামান্য কিছু দিলে
হয়তো মৌখিক অথবা কানে কানে।
আমি তখন গলে গলে মোমবাতির মতো
জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাই।
আবার ধরো তুমি ঘৃণা ছুড়ে দিলে
আমি তখন ভুলগুলোর কণ্ঠনালি চেপে ধরে
আরো দৃঢ় হই।আরো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই
স্থির লক্ষ্যে ছুঁড়ে দিই অর্জুনের মৎস্যচক্ষুভেদ করা তীর।
২৩:০৬:২০২৫
বেলা:০৯টা৫৫মি
কুমারঘাট।
(১৭)মুহূর্তকাল
একদিন খুব একান্তে কাটাতে চাই
মুহূর্তকাল।
একদিন উষ্ণতা অনুভব করতে চাই
মুহূর্তকাল।
একদিন ভালোবাসার মনাক্কাগুলো বিলাতে চাই
মুহূর্তকাল।
একদিন এসো ভিজি আষাঢ়ের বারিধারায়
মুহূর্তকাল।
২৩:০৬:২০২৫
বেলা:১২টা৩০মিনিট
কুমারঘাট।
(১৮)ঘোষণা
আমার কোনো কবিতার খাতা নেই।
লেখালেখির ডাইরি নেই।
লিখি অথচ বিগত পনেরো বছর ধরে
কোথাও সংরক্ষণ করিনি লেখা।
ফেসবুকে লিখি। টুকে রাখি।
সকল লেখাচুরদের অবাধ স্বাধীনতা দিলাম
নিন আমার যেকোনো লেখা
আপনি আপনার লেখা বলে চালিয়ে দিন
ছেপে দিন।
বিনিময়ে আপনি বড় বড় মেমোন্টো নিন
গলায় লটকে দিন মেডেল, বাড়ির শোকেজ
ভর্তি করেন দুনিয়ার স্মারক সম্মাননা দিয়ে।
আমি বিন্দুমাত্র অপবাদ দেবো না।
আমার কোনো কবিতার খাতা নেই।
লেখালেখির ডাইরি নেই।
আমার লেখালেখির আমিই প্রামাণ্য দিনপঞ্জি
প্রকৃত আষাঢ় উৎরে গেলেও আমিই শ্রাবণ।
প্রতিদিন যার শরীর পুড়া গন্ধছাই দিয়ে
লেখা হয় দিনমজুরের বাঁচার কৌশল
পুড়ে পুড়ে আমিই চৈতন্য ফকির।
২৪:০৬:২০২৫
ভোর:৪টা৫০ মি
কুমারঘাট।
GOBINDA DHAR
HALAIMURA KUMARGHAT UNAKOTI TRIPURA :799264
PHONE & WHATSAPP :8787437559
0 Comments