একজন পুরোদস্তুর সংসারী মানুষ। পেশায় শিক্ষক । অন্তরের তাগিদে লেখালিখির সূত্রপাত। দরাজ হাতে লেখেন। সেই হাত দুটি দিয়ে সম্পাদনার কাজ করেন। নিয়মিত বের করেন লিটল ম্যাগাজিন "স্রোত " এবং আরও বেশ কয়েকটি সাহিত্যের কাগজ।এসবকে কেন্দ্র করেই গড়ে তুলেছেন এক‌টি প্রকাশনা সংস্থাও ।কেবল নিজ রাজ্য ত্রিপুরারই নয়, উত্তর-পূর্বঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তসহ বহির্বঙ্গে বসবাসকারী কবি -সাহিত্যিকদের সৃজনশীল কাজকর্মে গুরুত্ব দিয়ে অসংখ্য বইপত্রও প্রকাশ করেছেন। মায় প্রতিবেশী রাষ্ট্র  বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত লেখক কবিদের রচনাদি  প্রকাশেও  বাড়িয়ে দিয়েছেন হাত।
  তাঁর সঙ্গে যখনই যেখানে দেখা হয় ঘুরে ফিরে উঠে আসে লেখালেখি ও প্রকাশনা বিষয়ক আলোচনা।
  এহেন কবি -সম্পাদক -প্রকাশক হলেন কুমারঘাটের গোবিন্দ ধর। এবছর কঠিন কোভিদ সময়ে ৩০ জুলাই,২০২০ তিনি অর্ধশতবর্ষের আঙিনায় প্রবেশ করছেন। প্রতিটি মানুষ  বিশেষত সৃজনশীল কাজকর্মে  জড়িত ব্যক্তির কাছে জীবনের পঞ্চাশটি বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা,  এই সময়ের মধ্যেই একজন মানুষের যাবতীয় স্বপ্ন, আশা- আকাঙ্ক্ষা আর প্রতিষ্ঠার অর্ধেকের বেশি সফলতা পায়। প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গের ক্ষেত্রে তো ৭০-৮০% ফলবতী হওয়া পরিলক্ষিত হয়।
  সে যা হোক,বন্ধুবর গোবিন্দ ধর ত্রিপুরার ফেনি, মনু,দেওনদী থেকে অসমের কুঁশিয়ারা,বরাক ও ব্রহ্মপুত্র হয়ে দুই বাংলার গঙ্গা -পদ্মায় ভেসে কবিতা আহরণ করেছেন। মানুষ, পৃথিবী, প্রকৃতির পাশাপাশি নদী তাঁর বুকের ভেতর উথল -পাতাল বইতে থাকে। তাঁর কলম তখন রূপ নেয় বৈঠায়।...
   গোবিন্দর সাহিত্যসত্তা বৈচিত্রে ভরপুর। ৮টি কাব্যগ্রন্থের পাশাপাশি দুটি ছড়া র বই ,নয়টি প্রবন্ধ ও গবেষণা সংকলন যা মূলত নিজ রাজ্যকে কেন্দ্র করে রচনা করেছেন। এবং সেখানে ই থেমে না থেকে প্রায় ডজনখানেক বইও সম্পাদনা করেছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিমাদ্রি দাব রচনা সমগ্র, বাংলাসাহিত্যের অহংকার কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং ত্রিপুরার প্রথম কবিতাপত্র জোনাকি সমগ্র ইত্যাদি।এতসব কাজকর্ম করেও তিনি সঠিক হাতে হাল ধরে আছেন।নিজের সম্পাদিত পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাও চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বের করছেন আন্তর্জালিক দৈনিক সাহিত্যপত্র।
  উল্লেখিত কাজকর্ম বিগত আড়াই দশকের ফসল।এটা জানার পর স্বাভাবিকভাবেই তেমন এক‌টি মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। বিশেষত কুমারঘাটের মতো একটি প্রান্তিক অঞ্চলে থেকে তিনি তাঁর সাহিত্যসাধনা ও সংস্কৃতিচর্চা যেভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তা যে-কোনো ব্যক্তির কাছে শ্লাঘার বিষয়।আর সে -কারণেই এই অর্ধেক জীবনে তিনি বিভিন্ন স্তরে পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন অসংখ্য।
  প্রচন্ডভাবে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এমন কবির সুবর্ণজয়ন্তী জন্মবর্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। তাঁর সৃ‌ষ্টিশীল কর্মকান্ড বাংলাসাহিত্যে স্থায়ী প্রতিষ্ঠা পাক, এই কামনা। 

  গুয়াহাটি
  ২৮/০৭/২০২০

0 Comments