গোবিন্দ ধরের নদী নদীর গোবিন্দ 
হারাধন বৈরাগী 


৪.দেওমনুসঙ্গম দেওভ্যালীর সাহিত্য চর্চার সেকাল ও একাল:


           দেওমনু সঙ্গম তথা কুমারঘাটের সাহিত্য সংস্কৃতির অতীত জানতে আমি কবি গোবিন্দ ধরকে নিম্নলিখিত প্রশ্ন করেছিলাম।তখন কবি নিজের কথায় আমাকে স্তরে স্তরে সাজিয়ে আমার প্রশ্নের মিমাংসা তুলে ধরেন। কবি যা বলেছেন তা হুবহু এখানে তুলে ধরছি। 

      প্রশ্ন( ১) হারাধন বৈরাগী:
আপনার রাতাছড়া থেকে কুমারঘাটে আসা ছিল সময়ের অপেক্ষা। আপনি রাতাছড়া থেকে কুমারঘাটে আসার পর কবিতা আন্দোলন অসম্ভব বেগবান হয়েছে। কুমারঘাটে সাহিত্য সংস্কৃতির বন্যা বইছে। দেওমনু উপছে উঠছে কবিতা গল্পের বানে।নৌকোবোজাই   কবিতা গল্প কবি ছোটে চলেছে মেঘনার দিকে।এর টান এসে লাগছে কাঞ্চনপুরেও,এই ইতিহাসটা যদি একটু বলেন। আমি দেওপারের সেকাল একালে আরো কিছু যোগ করতে চাই।
এই অংশে কম লেখা হয়েছে। 

        গোবিন্দ ধর:আমার সাহিত্য সংস্কৃতি জীবন তো ১৯৯১ সালে একটি কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে।কিন্তু ছোটবেলা থেকে ক্লাসের খাতায় আঁকিবুঁকির জন্য স্যারের বকুনি কম পড়েনি।তাও খাতায় তারপ্যাচ দিতাম।আঁকতাম।লেখতাম।কেন কে জানে।হয়তো তখনো রোগ নির্ণয় করতে পারিনি।ভেতরে ভেতরে আগ্নেয়গিরি জ্বলে উঠছিল সেই ছোটবেলায়।১৯৯৪ সালে নাটকে হাতেখড়ি। তাও ছোটবেলা যাত্রানাটকের মহড়া আর যাত্রাপালা,ঢপ,রামায়ণ মহাভারতপালা - এগুলো কিছুটা যাত্রা নাটকেও খের(খড়) বিছানো থেকে গ্রীণরুমের পোশাক আসাক আগুপিছু করতেও আমি বাউন্ডেলের মতো রাতাছড়া কাটিয়েছি।আমার কবি হওয়া কিংবা সাহিত্যিক হওয়ার সাধনা কিংবা বিন্দুমাত্র চেষ্টা চরিত্র ছিল না।তাও আমাকে দিয়েই করিয়ে নিল আমার আত্মার অসুখ। 

     রাতাছড়ায় আমিই প্রথম সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা শুরু করি।তারপর মহামায়া নাট্যসংস্থা গঠন করে নাট্য আন্দোলন শুরু করি।আমার লেখা নাটক মঞ্চস্থ হয়। ১৯৯৫ সালে আমার লেখা নাটক প্রতিদিনের প্রতিবাদ মঞ্চস্থ হয়।তারপরই স্রোতস্বিনী সাংস্কৃতিক সংস্থা গঠন।কিছুদিনের মধ্যেই অনুভব করি আসলে অন্যকোন কাজ আমাকে হাতছানি দিচ্ছে। স্রোত লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ।উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন পুঁথি পাণ্ডুলিপি গবেষণা ও সংরক্ষণ কেন্দ্র গঠন তারপর - পরপর বই প্রকাশ,রাতাছড়ায় লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী ও বই উৎসব, লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী বার কয়েক করি।২০০৩ সালে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন পুঁথি পাণ্ডুলিপি গবেষণা ও সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকেও লিটল ম্যাগাজিন প্রদর্শনী ও বইমেলা রাতাছড়ায় আয়োজন করি।একই সাথে রাতাছড়ায় সীলস্কীন প্রিন্টিং প্রেস করি।ছাপিও বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিন বই।লিপলেটও ছাপা হতো।কিছুদিন কৈলাশহর কাটাই।তারপর ২০০৩ সালে কুমারঘাট আসি। আমি রাতাছড়া থাকতেও কুমারঘাট আসতাম।প্রেসে স্রোত প্রকাশ করতে গিয়ে তখন মা লক্ষ্মী লেটার প্রেসে নিয়মিত যেতাম।যতদূর মনে পড়ে উল্লেখযোগ্য কারো নাম প্রেসমালিক নৃপেন্দ্রলাল দেবনাথ আমাকে জানাতে পারেননি।খুঁজ করতে করতে কুমারঘাট চষে বেড়িয়েছি। দাপাদাপি চলছে।শুরু হল - এই পক্ষ সাহিত্য আড্ডা। এ আমি কুমারঘাট আসার আগেই শুরু করি-নীলিমেশ পাল ও স্থানীয় আরো কয়েকজনকে নিয়ে।আড্ডায় আমন্ত্রণ করে আনতাম নীলমনি দে-কে।চাকুরী সূত্রে দন্তচিকিৎসক ডক্টর মোয়াজ্জেম আলী মহোদয় তখন কুমারঘাটে।আমার সাথে পত্রযোগে পরিচয় ছিল। তাঁকেও কুমারঘাট হাসপাতালের কোয়ার্টারে খুঁজে পাই।তাঁর বাসায় প্রথম এই পক্ষ আড্ডার জন্ম হয়।এই পক্ষ পনেরো দিনে একবার আড্ডা বসতো।তখনই পদ্মশ্রী মজুমদার আড্ডায় আমার আমন্ত্রণে আসেন।এরকম আরো কয়েকজন এসছেন আমার আমন্ত্রণে।কুমারঘাটে আসলে এখনো স্থানীয় মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিকাশের শেকড়ের গভীরতা কম।কারণ এখানের প্রায় সকল জনগণ পার্শবর্তী অঞ্চল থেকে ব্যবসা করতেই এসে বসবাস করছেন।ধীরে ধীরে পাবিয়াছড়া কুমারঘাট হয়ে ওঠে।তবুও এখনো কৈলাসহরের মতো সাংস্কৃতিক শেকড়ের গভীরতা কমই।এই পক্ষ- এক সময় ব্যস্ত কোলাহলের কাছে পরাজিত। 

         তারপর হয় কুমারঘাট উৎসব ২০১২ সালে।এখানেই বলতে গেলে স্রোতের সাফল্য।কুমারঘাটের সকলকে যুক্ত করে তখন এই উৎসবের আয়োজন করি।তারপর পরপর চারবার কুমারঘাট উৎসব হয়।তখন আমার কাজকে সহযোগিতা করেন গোপালচন্দ্র দাস, বিপুলকুমার দাস,উমা মজুমদার,সুপ্রিয়া দাস ও আরো কয়েকজন।
 
            ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক সুব্রত দেব, বিজয় রায় ও দুলাল সাহা মিলে পদধ্বনি প্রকাশনার  সহযোগিতায় কুমারঘাট বইমেলা প্রথমবারের মতো উযাপন হয় পাবিয়াছড়া দ্বাদশমান বিদ্যালয়ে।সেখানেও আমি আমার লেখা একটি বই সহ মেলায় অংশগ্রহণ করি।টেবিল নিয়ে বসি।
নীলিমেশ পাল থাকতেন ফটিকরায়ের কৃষ্ণনগর।সব মিলিয়ে আমার হাতে যা তথ্য উঠে আসে, কুমারঘাট উৎসবের মুখপত্র- উৎসব সমাচারে লিপিবদ্ধ করি।যতদূর খবর ছিল মণিহার নামে একটি কাগজ প্রকাশিত হত কুমারঘাটে।তাও কে কে করতেন তখন তেমন কোন ইতিহাস উঠে আসেনি।শুধু জানতাম এর সাথে জড়িত ছিলেন গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, রতিরাম দাশগুপ্ত, বিপুলরঞ্জন আচার্য এবং নিরঞ্জনকুমার ঘোষ।কিন্তু কুমারঘাট উৎসবে বিপুলরঞ্জন আচার্য নিজের উপস্থিতি সত্ত্বেও সঠিক কোন তথ্য তিনি দিতে পারেননি মণিহার পত্রিকা সম্পর্কে ।পরবর্তী সময় আমি মণিহারের একটি সংখ্যা থেকে জানি এর সম্পাদক ছিলেন গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। এরপর ক্রমাগত কুমারঘাটে নির্ঘোষ স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবারের উৎসব, লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন, সংরক্ষণ ও গবেষণা প্রতিনিয়ত  চলছে।লিটল ম্যাগাজিন  গিল্ড গঠন,উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় প্রকাশনা গিল্ড,দেও মনু মঞ্চ,শ্রীহট্টীয় লৌকিক সংস্কৃতি সংস্থা, শ্রীহট্ট সম্মেলনী,বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ, সৃষ্টিলোক সাংস্কৃতিক সংস্থা, গঠন থেকে শুরু করে এই অঞ্চলের সকল লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের নেপথ্যে আমার কোলাহল যুক্ত।নামকরণেও আমার প্রস্তাব যুক্ত।এমন কি লেখক গঠন,সাংস্কৃতিক আন্দোলন আজকের যে রূপ তার সিংহভাগ সৃষ্টিতে স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনার অবদান আছে বৈকী।গোবিন্দ ধরের হয়ে উঠা এই সাহিত্য সংস্কৃতি ও যাপনেই। 

(২)আপনি আসার আগে কুমারঘাটে কারা সাহিত্য চর্চা করেছেন?

গোবিন্দ :কুমারঘাটে তেমন চর্চার পরিবেশ ছিল না।যা হয়েছিল তাও থেমে যায়।ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে  থেকে আমিই টেনে আনি মণিহারের প্রকাশকে।কুমারঘাটের অতীত এরকম। 

কুমারঘাটের ইতিবৃত্ত ও তথ্য পঞ্জি এবং গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য 
-------------------------------

২০০৩ সালের আগে যখন লেটার প্রেস কুমারঘাটের ছাপাছাপির একমাত্র মাধ্যম তখন শ্রী নৃপেন্দ্রলাল দেবনাথের প্রেস ছিল।প্রেসের নাম, "লক্ষীনারায়ণ প্রিন্টিং প্রেস"। কুমারঘাটের দেবরায় মেডিসিনের দোকানের প্রায় পাশে ছিল নৃপেন্দ্রদার প্রেস।সময়ের সাথে সাথে তিনি নিজেকে আপগ্রেড না করায় সে প্রেস এখন বন্ধ।১৯৯৫ সাল নাগাদ নীপেন্দ্রদার কাছে জানতে পারি গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য একজন কুমারঘাটের সাহিত্যিক।তার বাসা নৃপেন্দ্রদার প্রেসের ঠিক পেছনেই ।একদিন উনার বাসায় যাই।এক সাথে দীর্ঘ সময় সাহিত্য নিয়ে কথা হয়।যদিও সেদিন আমি অন্য একটি কারণেও উনার সাথে দেখা করেছিলাম।সে সময় তিনি কুমারঘাটে সাহিত্য চর্চার তেমন রূপরেখার বর্ণনা করতে পারেননি।কারণ তখন ততটা সাহিত্যের প্রসার হয়নি ।দুটো লেটার প্রেসের একটি লক্ষীনারায়ণ প্রিন্টিং প্রেস আর অন্যটি এখনো আছে নাম দাস প্রিন্টিং প্রেস।দাস প্রিন্টিং প্রেস সময়ের সাথে অপসেট প্রিন্টিং এ যাওয়ায় এখনো চলছে। গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য মহোদয়ের সাথে আমার আর দেখা না হলেও সেদিন বুঝতে পারি তাঁর পান্ডিত্যের কথা।তিনি খুব রসিক মানুষ ছিলেন।বয়স্কদের মাঝে এর এখনও প্রচার আছে। 

রতিকান্ত দাশগুপ্ত 
-------------------------

তিনি কতটুকু কবি কতটুকু গল্পকার সময় বলবে।তাঁর কবিতাগুলো কখনো পাঠকের নিকট পৌঁছলে এর একটি মূল্যায়ন সম্ভব। কবিতা না পড়ে সে মূল্যায়ন করা অবান্তর।
প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত একজন বড় মনের মানুষ ছিলেন একথা তাঁর ছাত্রছাত্রীরাও বলেন। একজন সহজ সরল অসম্ভব ভালো মানুষ।তিনি শিক্ষক। ধর্মনগর বি বি আই থেকে আর কে আই কৈলাসহর শিক্ষকতার পর কুমারঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনমাসের জন্য অস্থায়ী ভাবে ডেপুটেশনে আসেন।তিনি বিজ্ঞানের শিক্ষক। বিজ্ঞানের শিক্ষক হয়েও তিনি সকল বিষয়েই দক্ষতা রেখেছিলেন।নজরুল সঙ্গীতের প্রতি ছিল তাঁর গভীর ভালোবাসা।তৎকালিন সময়ে আকাশবাণী থেকে রাত ১০:৩০ টায় প্রচারিত হতো নজরুলগীতি, সহকর্মী থেকে ছাত্র সকলকে নিয়ে তিনি সঙ্গীত শুনতেন।এ থেকে তাঁর সঙ্গীত প্রীতির কথা জানা যায়।

ফেইসবুকের আমন্ত্রণ লিপি
--------------------------------------

নীলিমা দাশগুপ্ত মহোদয়  ফেইসবুকে লিখলেন:
"মণিহার" লিটলম্যাগাজিন দ্বিতীয় সংস্করণ আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে সাহিত্য আলোচনা সন্ধ্যা ও কবি সংবর্ধনা কবিতা পাঠ ।
১১:০১:২০১৯ইং
স্থান-কুমারঘাট কো-অপারেটিভ, আপ্যায়ন কনফারেন্স হল।
প্রধান অতিথি-শ্রীযুক্ত প্রদীপ কুমার নাথ, কবি ও সমাজসেবী।
সভাপতিঃশ্রীযুক্ত জ্যোতির্ময় পাল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
বিশেষ অতিথি-কবি জহর দেবনাথ, কবি বিধাত্রী দাম ও কবি দীপাল দাস।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা-শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র সিনহা। আয়োজক---নীলিমা দাশগুপ্ত, সম্পাদক।

অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ফেইসবুকে লিখলেন


"প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে "মণিহার"লিটল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সন্মানীয় সভাপতি বিশেষ অতিথি।  নাচ,গান,কবি সংবর্ধনা ,কবিতা পাঠ, "মণিহার" নিয়ে আলোচনায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল সাহিত্য সন্ধ্যা। কবি সাহিত্যিক প্রেমীদের ভালোবাসা আমার  মনের মণিকোঠায় অম্লান হয়ে থাকবে।পরম প্রাপ্তি আমার।"

রঞ্জিত চক্রবর্তী লিখলেন

(১)
"স্বর্গীয় কবি রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহোদয়ের স্মৃতিচারণে মণিহার লিটল ম‍্যাগাজিন সম্পাদক নীলিমা দাশগুপ্ত আয়োজিত মণিহার লিটল ম‍্যাগাজিন অনুষ্ঠানে কবি সন্মাননা ও কবিবৃন্দের স্বরচিত কবিতা পাঠের পর অন্তিম লগ্নের একটি স্থির মুহুর্ত।১১:০১:২০১৯ ইং।

ছবি ঋণ- কবি গোপালচন্দ্র দাস।
স্থান- কুমারঘাট কো-অপারেটিভ কনফারেন্স হল।”

(২)রঞ্জিত চক্রবর্তী :

"শ্রদ্ধেয় রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহোদয়ের স্মরণ সভায় ১১/১/২০১৯ ইং তারিখের আলোচনায় মাননীয় কবি বিপুলরঞ্জন আচার্য ও শ্রদ্ধেয় নিরঞ্জন ঘোষ মহোদয়ের বক্তব্য থেকে জানতে পারলাম মাননীয় শিক্ষক গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য-ই ছিলেন মণিহারের সম্পাদক। তাছাড়া আজকালের প্রতিবেদনে মাননীয় কবি জহর দেবনাথের নাম উঠে আসে, যদিও তিনি ঐ-দিন ঐ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন, কিন্তু যেকোনো কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। ঐদিন কবি বিষ্ণুলাল ঘোষ ও উপস্থিত ছিলেন না হয়তো ভুল বশতঃ এই নাম আজকাল পত্রিকায় উঠে আসে।"

ইতিহাসের সন্ধানে
--------------------------

এটুকুর অপেক্ষায় ছিলাম।ইতিহাস আমার বিষয় নয়।তবুও কেন যে ইতিহাসের পেছনে দৌড়ি জানি না।হয়তো নেশা। না হয় জানার আগ্রহ।কুমারঘাটের কিছু কিছু ইতিহাস আমার নাগালে আসতে শুরু করে প্রকৃতপক্ষে ২০০৩ সাল থেকে।এক শীতের সকালে হঠাৎ প্রয়াত শ্রদ্ধেয় দিলীপ ঘোষ ল্যাণ্ডফোন থেকে আমায় ফোন দিলেন।গোবিন্দ কোথায়?আসো সময় থাকলে গান্ধী মিষ্টান্ন ভান্ডারে। গান্ধী মিষ্টান্ন ভান্ডার কুমারঘাট পাবিয়াছড়া স্কুল রোডে।গেলাম।চা খেতে খেতে বিভিন্ন আলোচনার ফাঁকে 'মণিহার' প্রসঙ্গের কথা আসে।চা পর্ব চলতে চলতে এক সময় উনার ফিচারগুলো নিয়ে একটি বই করার আহ্বানও জানিয়েছিলাম।তিনি তখন বলেছিলেন,তাঁর কাছে ফিচারগুলো নেই।আমি কালেকশন করতে পারলে বইয়ের রূপ দিলে উনার আপত্তি নেই ।আমি পারিনি।কারণ আমার তত দৌড় নেই।আমি এও জানি প্রতিটি শহর ও গ্রামের ইতিহাস,স্মৃতি ধ্বংশ হয় মানুষের অবহেলা অজ্ঞতাহেতু।ইতিমধ্যে দিলীপ ঘোষের জীবিত অবস্থায়ই তাঁর ফিচারগুলো হারিয়ে গেছে।রাজনৈতিক ফিচারের কথা বাদ দিলেও তিনি কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে যে ফিচার লিখেছেন তা কুমারঘাটের কৃষিদলিল হতে পারতো।আমাদের অবহেলায় সেগুলো সংরক্ষণ না করায় তা হয়তো চাইলেও আর পাবো না।
দিলীপদার তাড়াহেতু সেদিনের গল্পকথা ইতি টেনে তিনি উঠলেন।আমিও বাসায় চলে আসি।

কুমারঘাট উৎসব:২০১২
---------------------------------

আমার মাথায় চাপলো কুমারঘাটকে সাংস্কৃতিক শহর গড়ার ভূত।ইতিমধ্যেই কুমারঘাট নাচ গান বইমেলার শহর হিসেবে অনেকেই জানেন।
কিন্তু কুমারঘাট তো সাহিত্যেরও শহর হতে পারে।এই ভূত বছরের শুরু থেকে আমার মাথায় চেপে বসে।মিটিং আর মিটিং। নানা জনের সাথে মিটিং চলছে।নানা পরিকল্পনা মাথায় ভূত হয়ে চাপছে।কুমারঘাটের সকল সংস্কৃতি মনষ্কদের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রথম মিটিং এর ডাক দিই কুমারঘাট উচ্চতর বালিকা বিদ্যালয়ে।সেদিন প্রায় ৪০-৫০ জন মিটিং এ উপস্থিত হয়েছিলেন।সিদ্ধান্ত হয় কুমারঘাট উৎসব:২০১২ অনুষ্টিত হবে।আয়োজক স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনা।তারপর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে আরো চার থেকে পাঁচবার কুমারঘাট কপারেটিভ অফিশঘরসহ নানা জায়গায় সভা বসে।আলোচনা চালিয়ে যাই একজন দুজন করে অনেকের সাথে।তখন আবার আলোচনা হয় দিলীপ ঘোষদার সাথে।আলোচনায় মণিহার প্রসঙ্গ আবার আসে।তখন দিলীপদা বলেছিলেন মণিহারে লিখতেন,গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য, নিরঞ্জনকুমার ঘোষ,বিপুলরঞ্জন আচার্য ও তিনি নিজেও।সেদিনও মণিহারের সম্পাদক কে ছিলেন তিনি মনে করতে পারেননি।তবে তিনি বলেছিলেন সবাই কবিতা লিখতেন।নিরঞ্জনকুমার ঘোষ ইংরেজি কবিতা লিখতেন।

কুমারঘাট উৎসব সমাচার
------------------------------------

কুমারঘাট উৎসব:২০১২ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা।এই সংকলনে প্রিন্টিং মিস্টেক হিসেবে ছাপা আছে মণিহারের নাম।ভুলছাপায় মণিহার না হয়ে তা মুঞ্জরী নামে ছাপা হয়।কুমারঘাট থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগাজিনের তালিকায় এরকমই আছে।প্রথম থেকে চতুর্থ বার অব্দি কুমারঘাট উৎসব কুমারঘাটের বিভিন্ন জায়গায় পরপর হয়েছিল।সেই সময় নিরঞ্জনকুমার ঘোষ মহোদয়কে সম্মাননা দেওয়া হয়।বিপুলরঞ্জন আচার্য অনুষ্টানে কবিতা পড়েন।শ্রদ্ধেয় দিলীপ ঘোষ কুমারঘাট উৎসবের সূচনাকালে অনেক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন।তখনও নিরঞ্জনকুমার ঘোষ মহোদয় কিংবা বিপুলরঞ্জন আচার্য মহোদয় মণিহারের সম্পাদকের নাম বলেননি।মণিহার সমবেত একটি প্রয়াস ছিল আলোচনায় এরকমই উঠে আসে বারবার।
এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কুমারঘাটে সাহিত্য চর্চার জোয়ার আসে।পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানকে বন্ধ করার নানাহ কুট চালও কম হয়নি।সব কিছু নিয়েই কুমারঘাটে অক্টোবর, ২০১২ সালে দুটো সংস্থা গঠনের ডাক দিই আমি।দুটো সংস্থা গঠনও করি।তারপর করুন কাহিনী।এখানে বললে প্রাসঙ্গিকতা থেকে সরে যাওয়া হবে।তবুও চুপি চুপি জানিয়ে রাখি সংস্থা দুটোর একটি, "আনন্দধারা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা " অপরটি"মাতৃভাষা মিশন"কুমারঘাট শাখা।দুটো সংস্থারই আহ্বয়ক আমি।একই দিনে আমি ২০১২ সালে এই আহ্বানে মাধ্যমে  দুটো সংস্থা গঠন, কুমাঘাটের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নিশ্চয়ই মাইল ফলক।এই সময় কুমারঘাট উৎসব সফল করতে আমাকে অনেকেই সহযোগিতা করেছেন।তাদের মধ্যে কবি গোপালচন্দ্র দাস, বিপুলচন্দ্র দাস,সম্পা বনিক,উমা মজুমদার,শৌভিক পণ্ডিত, সুপ্রিয়া দাস প্রমুখ আছেন। 

ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড গঠন
--------------------------------------------------

২০১৮ সাল।আবার নতন ভূত।ভূত আমার মাথায় বারবার চাপে।
প্রায় তিরিশ পঁয়ত্রিশটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকদের নিয়ে এই সংস্থার জন্ম হয়।আরো সহযোগি খু্ঁজতে শুরু হয়।তখনই আমরা পেয়ে যাই নতুন নতুন অনেককে।

সৃষ্টিলোক ও মনুতট সম্পাদক গোপালচন্দ্র দাস
--------------------------------------------------------------
কুমারঘাট উৎসব:২০১২ সালে করার সময় এবং কুমারঘাট অরগ্যানাইজেশনের তরফ থেকে কুমারঘাট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল :২০১২ করার সময় গোপালচন্দ্র দাস সক্রিয় সহযোগিতা করেন।যদিও
প্রকৃত পক্ষে ২০১৬ সাল থেকেই সাহিত্যে গোপালচন্দ্র দাস উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করেন।তবুও গোপালচন্দ্র দাস উঠে আসেন প্রকৃত পক্ষে ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন উৎসবকে কেন্দ্র করে।
যদিও প্রথম কুমারঘাট উৎসব :২০১২ সালে প্রাক প্রস্তুতি পর্ব থেকে গোপালচন্দ্র দাস, বিপুলচন্দ্র দাস,সুপ্রিয়া দাস,উমা মজুমদার,সম্পা বনিকসহ এক ঝাঁক সাহিত্য প্রিয় লোকজন কুমারঘাটের সাহিত্যচর্চায় আসেন।যদিও পরে উমা মজুমদার,সুপ্রিয়া দাস,সম্পা বনিকরা অনিয়মিতভাবে চর্চা করে চলেছেন।গোপালচন্দ্র দাস বর্তমানে নিয়মিত সাহিত্য সাধনা করে যাচ্ছেন। কুমারঘাট উৎসবের এখানেই সফলতা।
কুমারঘাট উৎসবে সারা দিনরাত আমরা এক করে দিই।বর্তমানে  কুমারঘাটে কেউ লেখালেখি করেন শুনলেই গোপালদা উনাকে একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করার পরামর্শ দিতে থাকেন।নীলিমা দাশগুপ্ত মহোদয়ার নাম আমি বলে দিই।নীলিমাদির প্রথম বই স্রোত প্রকশনা থেকে প্রকাশিত হয়।সাতদিনে বই হয়ে মেলায় আসে ইচ্ছেডানা।নীলিমা দাশগুপ্তের ইচ্ছেডানা প্রকাশের পর পরই তিনিও কবিতার জগতে আসেন।গোপালদা নীলিমা দাশগুপ্তের নিকটও প্রস্তাব নিয়ে যান,একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করার জন্যে। নীলিমা দাশগুপ্ত সেদিন গোপালদাকে বলেন প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত, মণিহার প্রকাশ করতেন।গোপালদাও বলেন তাহলে এটাই আপনি আবার করেন।কিন্তু এখানেই অজান্তে তথ্যগত ভুলটি ঘটে যায়।তা গোপালদা বা নীলিমাদি ততটা নজরে নেননি।এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়,মণিহার নবপর্যায়ে প্রকাশ করার সময় নীলিমাদি গোপালদাকে মণিহারের সম্পাদক গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য যে ছিলেন তা বলেননি।তথ্যটি বললে দ্বিতীয় সংখ্যা বলে যা প্রকাশ হল তাতে তথ্যটি সঠিক করা যেত।তারপর ১১জানুয়ারীর অনুষ্ঠানটিও গোপালচন্দ্র দাসদার অনুপ্রেরণায় হয়েছিল।যদিও নীলিমাদি এই বিষয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেননি।ঐ সনয় সাথে ছিলেন রঞ্জিত চক্রবর্তী মহোদয়ও।মণিহার প্রকাশ ও ১১ জানুয়ারীর রতিকান্ত দাশগুপ্ত স্মৃতিচারণ মূলক অনুষ্ঠানের মূল প্রস্তাবক গোপালচন্দ্র দাস মহোদয়ের প্রতি নীলিমা দাশগুপ্তের আলোচনায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলে সাহিত্যের প্রতি দায়বদ্ধতাই বাড়ত।যদিও তা করা হয়নি।

গোপালচন্দ্র দাস লিখলেন:

"প্রসঙ্গ:- মণিহার ও একটি ভূল সংশোধন।

২০১৮ সালে কুমারঘাটের কবি ও গল্পকার গোবিন্দ ধর ও পদ্মশ্রী মজুমদারের মুখে কুমারঘাটের প্রথম লিটল ম্যাগাজিন মণিহারের কথা শোনে আমি প্রয়াত শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও কবি রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহাশয়ের  ধর্মপত্নী কবি নীলিমা দাশগুপ্ত মহাশয়ার সাথে ফোনে মণিহার নিয়ে আলোচনা করি। পরে বাসায় যাই। কবি নীলিমা দাশগুপ্ত জানান যে,উনার প্রয়াত স্বামী ১৯৮৩ ইং মণিহার প্রথম সম্পাদনা করেছেন। আমি, পূর্বে যারা মণিহারএ লিখেছেন তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে পূর্বের একটি মণিহারের কপি নিজ হাতে এনে সেই কপি ত্রিপুরার লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ কেন্দ্রে জমা দেওয়ার জন্যে বলি। জানি না উনি দিয়েছেন কি না।তার পর ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন উৎসব কুমারঘাটে অনুষ্টিত হয়। অনুষ্টানে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদকরা। সেই অনুষ্টানকে কেন্দ্র করে মণিহার দ্বিতীয় সংখ্যা বের হয়।আমি লেখা সংগ্রহ থেকে ডিটিপি ,প্রচ্ছদ সব কিছুতে সহযোগীতা করেছি। এই লিটল ম্যাগাজিন উৎসবে একটি ম্যাগাজিনও আত্মপ্রকাশ করে,সেই ম্যাগাজিনের নাম হল 'লিটল ম্যাগাজিন বার্তা' 'কুমারঘাটের লিটল ম্যাগাজিন' শিরোনামে মণিহার কুমারঘাটের প্রথম লিটল ম্যাগাজিন ও প্রয়াত কবি শিক্ষক রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহাশয়কে কুমারঘাটের প্রথম লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক বলে উল্লেখ করেছি।
বিগত নভেম্বর ২০১৮ তাং আমি ও কবি রঞ্জিত চক্রবর্তী মিসেস দাশগুপ্তের বাসায় গিয়ে মণিহারের তরফ থেকে একটি ছোট্ট  অনুষ্টান করার কথা বললে উনার প্রয়াত স্বামীর জন্মদিন ১১ জানুয়ারীতে অনুষ্টান করলে ছেলের সাথে আলোচনা করে করবেন বললেন। ১১ জানুয়ারী কুমারঘাটের কবি সাহিত্যিকরা যথারীতি নিমন্ত্রণ পেয়ে অনুষ্টানে যাওয়ার পর,প্রয়াত কবি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় রতিকান্ত দাশগুপ্তের সহযোগী বন্ধু ব্যাক্তি শ্রীযুক্ত নিরঞ্জনকুমার ঘোষ ও শ্রী যুক্ত বিপুল রঞ্জন আচার্যি মহোদয় বক্তব্যে বলেন:- মণিহার লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত নয়,মণিহার এর সম্পাদক শ্রীযুক্ত গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য যিনি এখন‌ও জীবিত আছেন। প্রয়াত কবি রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহাশয়কে দায়িত্ব দিলে উনি সেই দায়িত্ব নেননি। বাংলা ও সংস্কৃতে শ্রীযুক্ত গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্যির প্রগাঢ় জ্ঞান থাকায় সর্বসম্মতিক্রমে শ্রীযুক্ত ভট্টাচার্যিকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এলাকায় একজন সৎ ও উদার মনের শিক্ষক হিসেবে প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত ছিলেন সর্বজন খ্যাত বহুল পরিচিত প্রিয় ব্যক্তিত্ব। শ্রীযুক্ত কবি নিরঞ্জনকুমার ঘোষ মণিহারের পুরণো কপি পেশ করেন যাতে লেখা আছে সম্পাদক শ্রীযুক্ত গোবিন্দ প্রসন্ন ভট্টাচার্য।উনারা আর‌ও বলেন ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ যে সংস্করণে মণিহার ২য় সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ ২য় সংখ্যা এর আগেই বের হয়েছে। আমি এখানে লেখার আগে কবি নীলিমা দাশগুপ্তকে ফোন করলাম,উনি বললেন:- প্রথম সংখ্যা আমার বিয়ের আগে হয়েছে।
মূলতঃ মণিহার ১৯৮৩ ইংরেজীতে আত্মপ্রকাশ করেনি,আত্মপ্রকাশ করেছে ১৯৮০ ইংরেজীতে।
মণিহার একটি চতুর্মাসিক পত্রিকা ছিল।,পূর্বে বৎসর পাঁচেক চলেছে।কাজেই সংখ্যা নিরুপণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
মণিহার এর সম্পাদক শ্রদ্ধেয় প্রয়াত কবি রতিকান্ত দাশগুপ্ত ছিলেন না,সম্পাদক হলেন বর্তমানে কলকাতা বাসী শ্রীগোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। মণিহার কুমারঘাটের প্রথম লিটল ম্যাগাজিন নিঃসন্দেহে। মণিহার এর কবিরাও প্রথম কুমারঘাটের কবি। এনির্ভূল। শ্রীযুক্ত গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্যর সম্পাদনা করা লিটল ম্যাগাজিন বর্তমানে কে সম্পাদনা করলো বা ভবিষ্যতে করবেন ,সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়।আমার আলোচ্য বিষয় হল আমার ভূল সংশোধন।ইতিহাস যাতে বিকৃত না হয়।
যাই হোক ১৯৮০ সালে যারা এই মহৎ উদ্যোগ নিয়েছিলেন,আমি সৃষ্টিলোক ও মনুতট সম্পাদক গোপালচন্দ্র দাস সবাইকে নতশিরে প্রণাম জানাই। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্যে মণিহারের কবিরা হবেন আলোর দিশারী।"

মণিহার:২০১৮ তথ্যগত ভুল
--------------------------------------

ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ডের সদস্য হন নীলিমা দাশগুপ্ত।প্রকাশ হবার সমস্ত সহযোগিতা করেন গোপালচন্দ্র দাস। মণিহার দ্বিতীয় সংখ্যার সম্পাদক নীলিমা দাশগুপ্ত।১৯৮০ সালে মণিহার প্রথম প্রকাশিত হয়।আর দ্বিতীয় সংখ্যা ২০১৮ সালে।এরকমই একটি ইতিহাস তৈরী হয়েছিল।

রতিকান্ত দাশগুপ্তের স্মৃতিচারণ
-------------------------------------------

নীলিমা দাশগুপ্ত ঠিক যেরকম ফেইসবুকে আমন্ত্রণ করেছিলেন,"*মণিহার*লিটলম্যাগাজিন দ্বিতীয় সংস্করণ আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে সাহিত্য আলোচনা সন্ধ্যা ও কবি সংবর্ধনা কবিতা পাঠ।
11/1//2019/ইং

স্থান-কুমারঘাট কো-অপারেটিভ, আপ্যায়ন কনফারেন্স হল।
প্রধান অতিথি-শ্রীযুক্ত প্রদীপ কুমার নাথ, কবি ও সমাজসেবী।
সভাপতি ও -শ্রীযুক্ত জ্যোতির্ময় পাল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
বিশেষ অতিথি-কবি জহর দেবনাথ, কবি বিধাত্রী দাম ও কবি দীপাল দাস।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা-শ্রীযুক্ত রবীন্দ্র সিনহা। আয়োজক---নীলিমা দাশগুপ্ত, সম্পাদক।"

স্মৃতিচারণমূলক এই অনুষ্ঠানে মণিহারের একটি সংখ্যার চারটি পাতা তুলে দেন নিরঞ্জনকুমার ঘোয বর্তমান মণিহার সম্পাদক নীলিমা দাশগুপ্তের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে। এতে পরিষ্কার লেখা আছে সংখ্যাটির সম্পাদক গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। নিরঞ্জনকুমার ঘোষ মহোদয়ের আলোচনায়ও উঠে আসে মণিহারের সম্পাদক বরাবরই গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য ছিলেন।তিনিসহ প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত, বিপুলরঞ্জন আচার্য এরা ছিলেন মণিহারের লেখক সহযোগি।শ্রদ্ধেয় বিপুলরঞ্জন আচার্যের আলোচনায়ও তা প্রকট হয়।
আলোচনায় উঠে আসে প্রয়াত দিলীপকুমার ঘোষও লিখতেন এতে।তপন ঘোষ মহোদয়ের আলেচনায় একথা উঠে আসে।সহযোগি তিনজনের আলোচনায় উঠে আসে মণিহারের প্রকৃত সম্পাদক গোবিন্দ প্রসন্ন ভট্টাচার্য। 

মণিহার দ্বিতীয় সংখ্যা:২০১৮
--------------------------------------

এই সংখ্যাটির তথ্যগত ভুল আলোচনায় উঠে আসে।সুতরাং কুমারঘাটের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের তথ্যগত বিকৃতি (অনিচ্ছাকৃত)ঘটে যাচ্ছে বলেই আমার এই দীর্ঘ আলোচনা ও এই প্রবন্ধ লেখার প্রচেষ্টা। 
এই অনুষ্ঠানে আলোচনায় উঠে আসা তথ্য থেকে আমরা জানতে পারলাম মণিহারের সহযোগি প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহোদয়ও একজন।সুতরাং তিনি সম্পাদকের প্রিয়জনও।সহযোগি আর দুজনের একজন বিপুলরঞ্জন আচার্য অন্যজন নিরঞ্জনকুমার ঘোষ।সুতরাং শ্রদ্ধেয় রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহোদয় মণিহারের একজন সহযোগী। বর্তমান সম্পাদক দ্বিতীয় সংখ্যা :২০১৮ বলে যে সংখ্যা প্রকাশ করেছেন তা হবে নব পর্যায় মণিহার প্রথমবর্ষ প্রথম সংখ্যা।না হয় তথ্য বিকৃত হবে বলেই মনে করি।পাশাপাশি নিরঞ্জনকুমার ঘোষ ও বিপুলরঞ্জন আচার্য মহেদয়ের আলোচনায় জানতে পারি গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য সম্পাদিত মণিহার বছরে তিনটি সংখ্যা প্রকাশিত হতো।আর মণিহার প্রকাশিত হয়১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত।সুতরাং বছরে তিনটে ধরে হিসেব করলে মণিহার পাঁচ বছরে ১৫(পনের)টি সংখ্যা বেরিয়েছে। মণিহার তখন লেটার প্রেস থেকে বের হত।আর মণিহারের দাম ছিল বিশ পয়সা।মণিহার বিক্রিও করতেন সমবেত সহযোগিরা।
মণিহার তৎকালিন প্রশাসক কুতুব আলী,অধ্যাপক ফণিভূষণ নাথ ও অধীর চক্রবর্তীর কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।সুতরাং একটি সংখ্যা পাওয়ার পর বৃহত্তর একটি সমস্যার সমাধান হল সহজেই।এজন্যই আমাদের ইতিহাসের সংরক্ষণ খুব গুরুত্ব বহন করে।বিশেষত লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষণ না হলে একদিন তা হারিয়ে যায়ই।বিশেষ কোন কারণ ছাড়া তাকে সংরক্ষণ কেউ করতে চান না।কি হবে একটি ছোট পত্রিকাকে সংরক্ষণ করে এমনই ধারনা আমাদের।কিন্ত কে জানে এই ছোট একটি লিটল ম্যাগাজিনই হয়তো মাইল ফলক হবে একদিন।মণিহার একটি সংখ্যা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমাণ করল ছোট হলেও ছোট নয় একটি লিটল ম্যাগাজিন।

পরিশেষ
------------
পরিশেষে এই উপসংহারে আসা যায় কুমারঘাটে সাহিত্য চর্চার বীজ রূপিত হয় মণিহার প্রকাশের মাধ্যমে।আর মণিহারের সম্পাদক ছিলেন গোবিন্দপ্রসন্ন ভট্টাচার্য মহোদয়।মণিহারকে সহযোগিতা করতেন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহোদয়,নিরঞ্জনকুমার ঘোষ মহোদয়,বিপুলরঞ্জন আচার্য মহোদয় এই চারজনই।কুমারঘাটের সাহিত্য আন্দোলনে এই চারজন আমাদের নিকট  ভগিরথ।আমার আলোচনা কোথাও মণিহারকে হেয় কিংবা শ্রদ্ধেয় প্রয়াত রতিকান্ত দাশগুপ্ত মহোদয়ের অবদানকে ক্ষুন্ন করার জন্য নয়।প্রকৃত তথ্য উঠে আসুক চাই।মণিহারের সংখ্যা যা নিরঞ্জনকুমার ঘোষ ১১ জানুয়ারী :২০১৯ এর অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধেয় নীলিমা দাশগুপ্তের হাতে তুলে দেন তা নিশ্চয়ই তিনি সংরক্ষণ করে রাখবেন।আরো সংখ্যা কেউ যদি আমাদের হাতে তুলে দেন আমরা তা কুমারঘাটের প্রথম লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে সবগুলো সংখ্যা একত্রে প্রকাশ করতে পারলেও পূর্বজদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের সুযোগ  হবে বলে বিশ্বাস রাখি।

১৯:০১,২০ ২০

 

         এই নদীসঙ্গম আর দেওতীর বরাবর জনসমাগম ও শিক্ষাসংস্কৃতির আলো উন্মেষের সাথে সাথেই এই অঞ্চলে জীবিকার কারনে ত্রিপুরার অপ্রান্তজন কবিরা পরিযায়ীপাখির মতো এসে কিঁচিরমিচির শুরু করেন।তাঁরা কোনো না কোনোভাবে দেও অববাহিকায় স্থানীয় মননজমিন কর্ষনে উল্যেখযোগ্যভূমিকা পালন করেছিলেন।কুমারঘাটে নাট্য অভিনেতা দিব্যেন্দু নাগ পূর্তবিভাগে, সুলেখক ও কবি প্রদীপবিকাশ রায় কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কে,কবি বিশ্বজিৎ দেব,তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরে,ছড়াকার কাজল চক্রবর্তী, নগর পঞ্চায়েতে(বর্তমানে কুমারঘাটে তিতু হয়েছেন)গল্পকার প্রাবন্ধিক অরূপরতন শর্মা  বনবিভাগে,কবি মোয়াজ্জ্বম আলী স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরি করে গেছেন, হিমাদ্রি দেব টি আর টি সি কন্ট্রাক্টর হিসেবে নিত্য আনাগোনা করেছেন।কবি মৃদুল বনিক খাদ্যবিভাগে চাকরি করে গেছেন। যদিও তাঁরা কুমারঘাটে সাহিত্য সংস্কৃতিবিষয়ক কোন সাময়িক প্রকাশে বিশেষ কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি। তবু তাঁদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখার কোন কারন নেই। কারন বিংশ-শতকের আট - নয় ও শূন্যদশক নদীসঙ্গমের তীরবর্তীকুমারঘাট ও তৎসন্নিহিত রাতাছড়ার বাতাস যে তাঁদের আত্মক্ষরনজাত পজিটিভ এনার্জি বা ধনাত্মক উর্যায়  জারিত হয়েছিলো- তা বলার অপেক্ষা রাখে না।যোগশাস্ত্র বলে গুরুর পাশে বসে ধ্যান আরাধনা করলে শিষ্য অতিসত্তর সিদ্ধি লাভ করে। কেননা গুরুদের চারপাশে নাকি পজিটিভ এনার্জি সর্বদা ক্রিয়াশীল থাকে।
       
          যোগশাস্ত্রের ফলিত প্রমান অবশ্যই দেওমনুসঙ্গমের চারপাশ ঘিরে থাকা জনপদে স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের স্পোরাডিক সৃষ্টি।সেই সময় থেকে এই সময় অবধি কুমারঘাট ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে অসংখ্য কবি সাহিত্যিক ও গল্পকার দ্বিজত্ব লাভ করেছেন।এঁদের একটা তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো। 

              গোবিন্দ লাল ভট্টাচার্য(প্রয়াত) রতিকান্ত দাশগুপ্ত(প্রয়াত), গোবিন্দ ধর, পদ্মশ্রী মজুমদার,সুপ্রিয়া দাস, গোপালচন্দ্র দাস,রঞ্জিত চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, অনিতা ভট্টাচার্য, গোপালকৃষ্ণ সেন, উত্তম দে, কাজল চন্দ্র চক্রবর্তী, অনুজ পাল, গৈরিকা ধর, নীলিমেষ পাল, উমা মজুমদার, মেখলা গোস্বামী, রবীন্দ্র সিংহ, বিপুল আচার্য, উৎপল মল্লিক, সুমিতা পাল ধর, গৌরব ধর, মোশাহেব আলি শাহ্, গোকুল ধর, আলাল উদ্দীন, শিবুরঞ্জন দে, কথাকলি মিশ্র, সুকেশ মালাকার
নিত্য মালাকার,বিজয়লক্ষ্মী সিনহা, সন্ধ্যা দেবনাথ, জগদীশচন্দ্র দেবনাথ, সজলকান্তি দেব, অভিজিৎ চক্রবর্তী, মধুমিতা দেব সরকার-গবেষক, কুমার মিশ্র, সম্পা বণিক, তৃণা বণিক, বিজয় রায়, স্বপনকুমার বৈষ্ণব, হেমন্ত দেবনাথ, শংকর বসুরায়, মণিকা চক্রবর্তী, প্রদীপ মুখার্জি, লিটল দাস, অমিশা দাস, তপন বণিক, অরুণচন্দ্র দেব, অবনীচন্দ্র দেবনাথ, রণধীর শুক্লবৈদ্য, সুভাস চন্দ, নিরঞ্জন কুমার ঘোষ, মানিকলাল দাস, আজিজুর রহমান, বিষ্ণুলাল ঘোষ, পূর্ণাংশু শেখর মিশ্র, দীপাঞ্জলী ভট্টাচার্য
, শর্মিষ্ঠা দত্ত, সুকেশচন্দ্র মালাকার, অবনী দেবনাথ, ভাস্কর দাস, আলাল উদ্দীন, ভানুলাল দত্ত, কাজল মালাকার
, শেখর ভট্টাচার্য, নীলিমা দেব, বিপুলচন্দ্র দাস, মুকুল দেবনাথ, দীপেন চক্রবর্তী, সুমন্ত দেবনাথ
সীমা দেব, কাজল চক্রবর্তী, নীলিমা দাসগুপ্ত, অজান্তা পুরকাস্থ্য, গোপালকৃষ্ণ সেন, বিপুলকুমার আচার্য, শুভ্রজ্যোতি মজুমদার বনবিহারী বড়ুয়া, সজলকান্তি দেব, অমর সিংহ, সরূপা দত্ত, ইপ্সিতা ঘোষ, নীলমনি দে--প্রমুখ। 

        আর তাঁদের হাতেই আজ  বিকশিত হচ্ছে নুতন প্রজন্মের মননজমিন ।বিকশিত হচ্ছে চারাগাছ-মনিহার, কবিতাঘর, উত্তরাক্ষ, একাল, প্রয়াস, এইপক্ষ, নিবেদন, ধ্রুবতারা, সিদং, স্রোত, স্রোতস্বিনী, এই সময়, উৎসব সমাচার, বইবাড়ি, এখন সময়, তুলিকা, কাব্যমুখ, ঊনকোটি, ক্রিয়েটিভ, সৃষ্টিলোক, সময়.কম,অন্যভূমি,
অন্যপাঠ,পারমিতা,জয়িতা,ঊনকোটি,সমকাল,সৃষ্টিলোক,মনুতট,লিটল ম্যাগাজিন বার্তা,দোলনা ইত্যাদি কগজগুলি।শিশুকাগজ - দোলনার সম্পাদিকা ত্রিপুরার সব থেকে বয়সে কনিষ্ঠ গৈরিকা ধর।আর এতো সব কর্মকান্ডের আড়ালে যিনি সারথি - তিনি আর কেউ নন কবি গোবিন্দ ধর।
 
             স্রোত আয়োজিত পর পর কবিতাউৎসব কুমারঘাটে উদযাপন - এই অঞ্চলের লেখকদের প্রাণসঞ্চার ঘটিয়েছে। কুমারঘাট বইমেলাও কবি লেখকদের কাছে এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ছোট অঞ্চল।অনেকেই লিখছেন।আরো আসবেন লেখায়।দেওমনু আড্ডা প্রাণসঞ্চার করছে কবি লেখকদের চর্চায়।

       ১লা অক্টোবর ২০১৮ সন্ধ্যায়- মণিহার সম্পাদক নীলিমা দাশগুপ্তার বাসায়  জন্ম হয় 'দেও- মনু সাহিত্য মঞ্চ'। সভাপতিত্ব করেন কবি উৎপল মল্লিক।কার্যকরী কমিটিতে রয়েছেন-অনিতা ভট্টাচার্য :সভাপতি, পদ্মশ্রী মজুমদার :সহ সভাপতি, রঞ্জিত চক্রবর্তী :সহ সভাপতি, গোপালচন্দ্র দাস:সম্পাদক, উৎপল মল্লিক:সহ সম্পাদক, নীলিমা দাশগুপ্তা:কোষাধ্যক্ষ, পূর্ণাংশুশেখর মিশ্র:সহ কোষাধ্যক্ষ। গোবিন্দ ধর, সন্ধ্যা দেবনাথ, মধুমিতা দেব সরকার, গৈরিকা ধর, জগদীশচন্দ্র দেবনাথ, সুমিতা পাল ধর, অমিশা দাস, দীপেন চক্রবর্তী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, গৌরব ধর-সদস্য সদস্যরা। 

      এই সংস্থাটির উদ্দেশ্য প্রতিমাসে সাহিত্যআড্ডা আয়োজন করে কুমারঘাট তথা দেও মনু অঞ্চলের সাহিত্য কে সমৃদ্ধ করে নতুন নতুন সাহিত্যপ্রেমীদের একত্রিত করে যাওয়া। ।আড্ডা চলছে। চলবে। 

          দ্বিতীয় আড্ডা বসেছে স্রোত পরিবারের ঘরে।আড্ডায় ছিলেন:দেও-মনু, সাহিত্য মঞ্চ, আয়োজিত আড্ডায় উপস্থিত, কবি, উৎপল মল্লিক, গোপালচন্দ্র দাস, রণজিৎ চক্রবর্তী, অনিতা ভট্টাচার্য, পদ্মশ্রী মজুমদার, গৈরিকা ধরএবংকবি গোবিন্দ ধর স্বয়ং। সবার আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে চলুক আড্ডা এই আমাদের প্রত্যাশা।


   কাঞ্চনপুর- সাহিত্য চর্চার সেকাল ও একাল
---------------------------------

           বিংশ-শতকের সাতের দশক থেকে পরিযায়ী কবিরা  বিভিন্ন সময়ে কর্মসূত্রে  কাঞ্চনপুরে এসেছেন। এসেছেন কথাসাহিত্যিক শ‍্যামাচরন ত্রিপুরা( হাথাইবুড়াসা) , গল্পকার ননী কর,কবি সেলিম মুস্তাফা, গল্পকার দেবব্রত দেব, কবি সত্যেন্দ্র দেবনাথ,চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং, গল্পকার বলাই দে,মনিকা বড়ুয়া, প্রাবন্ধিক শ্যামলকৃষ্ণ বনিক,কবি বিশ্বজিৎ দেব, কবি চিত্রামল্লিকা চাকমা,কবি শেখর ভট্টাচার্য প্রমুখ। 

         এই সময়  কবিতাপূরুষ  সত্যেন্দ্র দেবনাথ কাঞ্চনপুরে ছিলেন। সংসার বিবাগী এই মানুষটি কোথাও বেশীদিন তিতু হতে পারেননি। মূলবাড়ি ছিলো বাংলাদেশের সমসেরনগরে। পারিবারিক কোনো কারনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এখানে, সেই যৌবনে। বাড়ি ছিল ছিলো বাংলা দেশের সমসের নগরে। একভাই ছিলেন আমেরিকার টেক্সাস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক । বাড়ি ঘরে আর ফিরে যাননি।হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। কাঞ্চনপুর এসে প্রথম পূর্তদপ্তরের অফিসের  কাছে বাড়ি করে ফার্মেসি খুলে ডাক্তারি করতে থাকেন। তাকে লোকে জয়বাংলা ডাক্তার বলে ডাকতো। সেখানে কয়েক বছর থেকে কাঞ্চনপুরের বৌদ্ধমন্দির রোডে চলে আসেন।  ১৯৮০এর নভেম্বরে আরেক কবিতাপূরুষ সেলিমমুস্তাফা ধর্মনগর থেকে  কাঞ্চনপুর এসে  গ্রামীন ব্যাংকে প্রথম চাকুরীতে যোগদান করেন।তিনি কাঞ্চনপুর থানার  পুকুরের উল্টো দিকে সতীশ চাকমার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ।১৯৮৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে ছিলেন।ইতিমধ্যে আগরতলা থেকে  এখানে এসে গ্রামীন ব্যাংকে চাকুরিতে যোগদান করেন আরেক প্রতিভাবান যুবক দেবব্রত দেব।  এখানে এসে কবি সেলিম মুস্তাফার সাথে একই ঘরে ভাড়াটে উঠেন। ফলে তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।আর  সেলিম মুস্তাফার মাধ্যমে আরেক সত্যেন্দ্র দেবনাথের সাথে তার পরিচয় হয়। 

          মহাকাল  বুঝি তাই চেয়েছিল। এখানেই সত্যেন্দ্র আর সেলিমের সাহিত্যচিদাত্মায়  অসম্ভব জারিত হোন দেবব্রত । লিখতে লাগলেন কবিতা ও গল্প।আসলে সত্যেন্দ্র দেবনাথ ও সেলিমমুস্তাফার সাথে দেবব্রত দেবের দেখা হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। এর অন্তরালে সূচিত হয়ে যায়  ত্রিপুরার গল্পের এক অন্যভূবনের রচয়িতার সময়ের বালিজলে শাণিত হওয়ার পালা। ।সেলিমের সাথে দেবব্রতের  দেখা না হলে আজ ত্রিপুরার গল্পভূবনের ইতিহাস হয়তো  অন্যভাবে লেখা হতো। 

           আর এই ত্রয়ীই সূচনা করলেন কাঞ্চনপুরের এক নুতন অধ্যায়। তারা এখানে প্রথম অক্ষর খোদাইয়ের কাজে হাত লাগালেন। তখন সত্যেন্দ্র দেবনাথের ফার্মেসীর পেছনে একটি কক্ষে প্রতিদিন  তাদের সাহিত্যে আড্ডা বসতো। দেশ পত্রিকার কবিতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সারা দেয়ালে আঁঠা দিয়ে লাগিয়ে সত্যেন্দ্র দেবনাথ তার ফার্মেসির পেছনের রুমটা সাজিয়েছিলেন আড্ডার জন্য ।এই আড্ডায় ধীরে ধীরে যোগ দিতে থাকে এই অঞ্চলের কিছুসংখ্যক স্থানীয় যুবক।দাশু দেবনাথ, চন্দ্রলাল নাথ(চন্দ্র নাথ ছদ্মনামে লিখতেন) বিশ্বজিৎ সাহা, সুজিত সিংহবড়ুয়া(সাক্যসিংহ বড়ুয়া ছদ্মনামে লিখতেন) অতুল নাথ, সীতেশ চৌধুরী, অজিত সাহা, বাবুলবিকাশ বড়ুয়া, কর্ণমনি রিয়াং, কৌশিক ভট্টাচার্য, বিমলেন্দু দেব, গোপেন্দ্র নাথ, জনেশ আয়ন চাকমা সুকুমার চাকমা, মিনা চাকমা প্রমুখ।এই সাহিত্যচক্রের প্রভাবে দেওভ‍্যালির কাঞ্চনপুর, দশদা ও তৎসংলগ্ন  মাছমারা পেঁচারতল নিয়েএকটা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল গড়ে ওঠে। 

             তাদের লেখা ও ত্রিপুরার অন্যান্য অঞ্চলের কবি ও গল্পকারদের লেখা নিয়ে কাঞ্চনপুর থেকে বেরোতে থাকে  একে একে ওই সময়ের শক্তিশালী কয়েকটি লিটলম্যাগ-মন্বন্তর, এই বনভূমি, ছায়াপথ।ওই সংখ্যাগুলিতে কবি অরুন বণিক, নকুল রায়, কিশোররঞ্জন দে, সবিনয় দাশ, রীতা ঘোষ প্রমুখ কবি ও গল্পকারদের লেখাও ছাপা হয়ে ছিল। ।সত্যেন্দ্র দেবনাথের  সম্পাদনায় এই বনভূমি ও দেবব্রত দেব ও সত্যেন্দ্র দেবনাথের যৌথ সম্পাদনায় মন্বন্তরের বের হয়েছিল কয়েকটি সংখ্যা।এই কাগজগুলি কাঞ্চনপুরে এই প্রথম সাহিত্য সংস্কৃতির মননজমিন কর্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে থাকে। এই আড্ডাখানা ছাত্রযুবাদের মনে অসম্ভব আলোড়ন সৃষ্টি করে।তখন সেলিম মুস্তাফাকে আমরা অতিকবিতা পূরুষ ভাবতাম। সেলিম  নাম শুনলেই  তাঁর প্রতি আমাদের অসম্ভব awe জাগত।শিক্ষিত যুবকদের মুখে মুখে ফিরতো  তার নাম।

          সত্যেন্দ্র দেবনাথের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সত্যেন্দ্রদা বার দুয়েক আমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন।তিনি একবার একটা খাট আমার গ্রামের এক  মিস্ত্রির হাতে তৈরী করে এনে ছিলেন। সত্যেন্দ্রদার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল বিশ্বজিৎ সাহার মাধ্যমে। বিশ্বজিতের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বিশেষতঃ আমার বাবার সাথে তার বাবা কার্তিক সাহার ঘনিষ্ঠতা ছিল।আর এই থেকেই কাঞ্চনপুর আসলেই বিশ্বজিতের বাড়িতে আসতাম।কবিতা লিখে সত্যেন্দ্রদাকে দেখতাম। সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে হত বলে তাদের সান্ধ্যআড্ডায় যোগ দিতে পারতাম না। তাই তখন  সেলিম মুস্তাফা কিংবা দেবব্রত দেবের সাথে আমার আর দেখা হয়নি।মনে আছে আমার এক বন্ধু ছিল বিমল চাকমা।সে সেলিম মুস্তাফাকে চিনতো।তবে তারও ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না কবির সাথে ।সত্যেন্দ্রদার সাথে পরিচয়ের আগে সেই আমাকে একদিন  বলে, কাঞ্চনপুরে একজন বড়মাপের কবি এসেছেন নাম সেলিম মুস্তাফা।বিমল খুবই সাহিত্যপ্রেমী ছিল।ইচ্ছে করলেই লিখতে পারতো। কিন্তু রাজনীতির চোরাস্রোতে হারিয়ে গেল।

           
           এই ত্রয়ী ছোটোদের জন্য তিনটি দেওয়াল পত্রিকাও করেছিলেন। । একটা খুব সুন্দর হওয়াতে  কাঞ্চনপুর স্কুল (মর্নিং সেকশন) দেওয়ালে টাঙানোর জন্য নিয়ে যায় ।  অজিত সাহার ভাইয়ের চায়ের দোকানে ১৫ দিন পর পর আরও  দুটো দেয়াল পত্রিকা টাঙানো হত । এমন  একটার নাম ছিল দেও ।এটি একবার  টানানো হয় কাঞ্চনপুর থানার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে পোস্ট অফিসের বারান্দায়।।আর এই 'দেও'য়েই আমার প্রথম কবিতা ছাপা হয়েছিল। কবিতাটির দুটি লাইন এরকম-'আমি চলেছি কোন মরাপ্রান্তর দিয়ে /জীবনের স্বপ্নগুলো ডুবে যায় অতল গহ্বরে।' সেদিন কি উন্মাদনা আজ ভাষায় প্রকাশ করার নয়। 

            একবার দেবব্রত দেব সেলিম মুস্তাফা শিবেন্দ্র দাশগুপ্ত মাছমারায়  গৌতম চাকমার বাড়িতে গিয়ে সারারাত কাজ করে একটা দেয়াল পত্রিকা লেখেন ।এটার নাম ছিল 'মনোবীজ' । সেটা সমীরণ বড়ুয়ার 'নীলাচল' নামে চায়ের দোকানে টানানো হয়েছিলো। "এই বনভূমি" হাতে লিখে দিতেন শিবেন্দ্র দাশগুপ্ত ।তিনি কাঞ্চনপুর গ্রামীন ব্যাংকের আরেক কর্মচারী। কমলপুর  ছিলো তার বাড়ি । 

         ব্লক থেকে সাইক্লোতে ছেপে এনে দিতো সত্যেন্দ্র শুক্লবৈদ্য নামে ব্যাঙ্কের একজন পিওন । সমরেশ দেব  তখন কাঞ্চনপুর ব্লকের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি ব্লকের  সাইক্লোমেশিনে ছাপার সুবিধা দিতেন।বেশ কিছু সংখ্যা বেরিয়েছিল । তবে ছাপা হয়ে  বেরোয় একমাত্র ''মন্বন্তর'  । ফার্মেসীর বরদাকান্ত শর্মা( শ্যামাসঙ্গীত গাইতেন ) তাঁদের সংবর্ধনা দেন এই কাগজের জন্য । সেটাই ছিল কাঞ্চনপুর থেকে প্রকাশিত প্রথম কোনো মুদ্রিত কাগজ ।  এখানে বলা দরকার-কাঞ্চনপুরে ১৯৮১তে প্রথম প্রকাশিত সাহিত্যপত্র হলো-এইবনভূমি।দ্বিতীয় মন্বন্তর। তৃতীয় ছায়াপথ। ।এই থেকে উৎসাহিত হয়ে আরেকটি লিটলম্যাগ 'সমিধ'কাঞ্চনপুরের স্থানীয় দুইযুবক কৌশিক ভট্টাচার্য ও বিমলেন্দু দেব  যগ্মভাবে সম্পাদনা করতেন।এই কাগজের সাথে স্থানীয় আরেক যুবক জড়িত ছিল নাম দেবাশীষ নাথ।এটির কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশের পর আর বের হয়নি।

         কাঞ্চনপুর কবিতা উপত্যকা ।সেলিম মুস্তাফার দুটি কাব্যগ্রন্থ - ছোরার বদলে একদিন, ইতি জঙ্গল কাহিনী, বিশ্বজিৎ দেবের নিরিবিলি সেন্ট আইটেম, ডাঃ শ্যামলকৃষ্ণ বণিকের আনন্দ বাজারের ডায়েরি ও কথাকার শ্যামল বৈদ্যের - নাইথিং একটি ব্রু মেয়ের নাম এখানকার মাটি ও মানুষকে নিয়েই লেখা। 


             সাহিত্যের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা থেকে সেলিম সত্যেন্দ্র দেবব্রত এই ত্রয়ী, কাঞ্চনপুরে মননজমিন কর্ষনের যে সূচনা করেছিলেন তা তাদের  অগ্রবর্তী কিংবা তাদের পরবর্তী দু'জন  ছাড়া আর কেউ করেননি।তারা সকলেই পরিযায়ী - পরিযায়ীই থেকে গেছেন।

            ১৯৮৩তে সেলিম চলে গেলেন পানিসাগর দেবব্রত ফিরে গেলেন আগরতলায়। সত্যেন্দ্র আরও কিছুদিন রইলেন। তারপর  সত্যেন্দ্রও চলে গেলেন কৈলাশহরে। গ্রামীণ ব্যাংকে এলেন আরেক কবি  চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং । তিনি ও সুব্রত সাহা নামে একজন, সত্যেন্দ্র দেবনাথের ছায়াপথ সম্পাদনা করেছিলেন। চন্দ্রকান্তদার সাথে বিশ্বজিৎই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। মাঝেমধ্যে আসতাম তার কাছে।ছায়াপথে লিখতাম।ছায়া পথে ছাপা আমার প্রথম কবিতা 'জলজ'।কবিতাটি এরকম-পাহাড়ের ভেতর আরেক পাহাড়/গন্ধহরিণের পিছু পিছু অসংখ্য ব্যাধ--/।এতে লিখতেন মনিকা বড়ুয়া, সমরেন্দ্র রায়সরকার, অপরাজিতা ঘোষাল, বিশ্বজিৎ সাহা প্রমুখ।বিশ্বজিৎ ছাড়া বাকী তিনজন ছিলেন বহিরাগত। অবশেষে তারাও চলে গেলেন। নির্বাপিত হল এখানে সাহিত্যের আগুন। এই আগুন দাউদাউ জ্বালাবার জন্য কেউ আর রইল না।

        আমার বাড়ি ছিল কাঞ্চনপুর থেকে ১২কিমি উত্তরে উজানমাছমারার দূর্গাপুর গ্রামে। আমি ছায়াপথের সম্পাদকের সাথে আড্ডা দিতে বিশ্বজিৎ সাহার ডাকে পায়ে হেঁটে কাঞ্চনপুর আসতাম।তখন এখানে গাড়িরও যথেষ্ট অভাব ছিল।ছায়াপথ  ছাপা হত বিশ্বজিতের দাদা সুজিত সাহার ছাপাখানায়।বিশ্বজিৎ ও আমি মাঝেমধ্যে ছাপার হরফগুলি সেটিং করতাম। প্রুফ দেখতাম।হরফে ছেপে ম্যাগাজিন বের করা সহজ কাজ ছিল না। যখন কাজ চলত, আমি উন্মুখ হয়ে থাকতাম কবে ম্যাগ বের হবে।নির্ধারিত দিনে উজানমাছমারা থেকে এসে বিশ্বজিতের সাথে দেখা করতাম।দেখতাম ছাপার কাজ তখনও শেষ হয়নি।এত পথ হেঁটে এসে কাঞ্চনপুর থেকে মনখারাপ করে আবার হেঁটে বাড়ি ফিরে যেতাম।এরকম অনেকবার হতো। কিন্তু যখন ম্যাগ বের হতো সকল দূঃখ ভূলে যেতাম। 

             নব্বইয়ের দশকে বিশ্বজিৎ সাহার সম্পাদনায় কাঞ্চনপুর থেকে' দেওভ্যালী সংবাদ' ও দশদা থেকে 'দেও' নামে আমার সম্পাদনায় আরও দুটি লিটলম্যাগ  প্রকাশিত হয়।দেওভ্যালী সংবাদের সাথে শুরুতে স্থানীয় তিন যুবক দেবাশীষ নাথ, অনুপম নাথ ও রূপক নাথ জড়িত ছিল।আমি তখন দশদাতে চাকরি করতাম। 

          শূন্য দশকে আলোর ফুলকির মতো দেও এর আরও দুটি সংখ্যা খুব কাঁচা লেখা নিয়েই  বের হয়েছিল। 
আমি তখন দশদা থেকে  কাঞ্চনপুর চলে আসি। তাই কাঞ্চনপুর থেকে দেও এর আরো দুটি সংখ্যা বের করি।এই সংখ্যা দুটির একটির আমন্ত্রিত সম্পাদক ছিলেন উজানমাছমারার আরেক যুবক দেবাশীষ নাথ। তাকে কম্পিউটার দেবাশীষ বলে লোকে চিনতো। কারণ সেই প্রথম  কম্পিউটার শিখে এসে কাঞ্চনপুর বাজারে প্রথম সত্য নাথের হোটেলের একটি কক্ষে সিল্কস্ক্রিনে ছাপাখানা খুলে।এই ছাপাখানা  থেকেই ওই দুটি সংখ্যা বের হয়।আমি ও স্থানীয় লেখকরা ছাপার পর নিজেরাই বাঁধাইয়ের কাজ করেছি।এই কাগজ গুলিতে তখন  লিখেছেন,চন্দ্র লাল নাথ, দেবাশীষ নাথ,রূপক নাথ, অনুপমা নাথ, রোজি নাথ, লাকি চন্দ, দেবাশীষ নাথ,লক্ষণ নাথ,কৃপাময় নাথ, সীতেশ চৌধুরী, বাবুল বিকাশ বড়ুয়া, সজারু (সজারু আমার ছদ্মনাম) প্রমুখ।

          ২০০৮এর সেপ্টেম্বর এ 'এই বনভূমি'র রজত সংখ্যা বের হয়। সম্পাদনা করি আমি নিজে।এই সংখ্যার উপদেষ্টা মণ্ডলীতে ছিলেন সীতেশ চৌধুরী, বিশ্বজিৎ সাহা ও বিশ্বজিৎ দেব।এটি বিশ্বজিৎ সাহার ছাপাখানা (পূরাতন সরকারী মার্কেট) থেকে বের হয়েছিল। এতে লিখেছিলেন বিশ্বজিৎ দেব, সেলিম মুস্তাফা, সন্তোষ রায়, গোবিন্দ ধর, পদ্মশ্রী মজুমদার, লক্ষন নাথ, সজারু, দেবাশীষ নাথ, কৃপাময় নাথ, নীলিমা দেবনাথ, অরুণ চাকমা, চিত্রামল্লিকা চাকমা, শৈলেন্দ্র শর্মা, অনুপমা নাথ, সীতেশ চৌধুরী বিশ্বজিৎ সাহা, সুজিত চন্দ্র দাস, লালমোহন নাথ, দেবব্রত দেব, কিশোর রঞ্জন দে। এখান থেকেই ২০১১তে- দেওভ্যালি সংবাদের দুটি সংখ্যা বের হয়। এতেও স্থানীয়রাই লেখেন। দীপক নাথ, মৃত্যুঞ্জয় শর্মা, মনিলাল নাথ, বঙ্কিম দেবনাথ প্রমুখ।

          
        ২০১৪,২২অক্টোবর দেওমুখ নামে আরেকটি সাহিত্যপত্র প্রকাশিত হয়।এটি কাঞ্চনপুরের একটি ক্লাব নেতাজী ক্রীড়াসংঘের মুখপত্র।আমিও এর সম্পাদক হিসাবে ছিলাম।এর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয় ২০১৫, ২ ৩ জানুয়ারি। এই সংখ্যাগুলিতে লিখেছিলেন নিরঞ্জন চাকমা, মালবিকা চাকমা, চিত্রামল্লিকা চাকমা, বঙ্কিম দেবনাথ, মনিলাল নাথ, অতুল চন্দ্র নাথ, সুজিত চক্রবর্তী দেবাশীষ রায়, সধাকর নাথ, বিশ্বজিৎ সাহা, মৃত্যুঞ্জয় শর্মাপ্রমুখ।ত্রিপুরা রাজ্য মাতৃভাষা মিশনের মুখপত্র কাঞ্চনশ্রীর প্রথম সংখ্যা ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ এ প্রকাশিত হয়।এটির সম্পাদক ছিলেন অমলকান্তি চন্দ।১৮ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ বড়হলদি রাধামাধবপুর হাইস্কুলের হীরকজয়ন্তীপালন উপলক্ষে একটি স্মরণীকা প্রকাশিত হয়। আমি এটিরও সম্পাদক মণ্ডলীতে ছিলাম। 


           বর্তমানে ত্রিপুরার অন্যতম ছড়াপূরুষ অমলকান্তি চন্দ আছেন আমাদের মাঝে।তিনি ছোটদের কাগজ 'রসমালাই' র সম্পাদক ।এর প্রথম প্রকাশ ২০০৯ এ। ১-১-২০০৯, তিনি  কদমতলা (ধর্মনগর) থেকে কর্ম সূত্রে বদলি হয়ে   কাঞ্চনপুরে আসেন।কবি ও ছড়াকার অমলকান্তি এখানে এসেই আত্মীয়  অমিতাভ সিংহ বড়ুয়ার সাথে মিলে 'রসমালাই' নামে একটি শিশু কাগজ বের করার পরিকল্পনা করেন।আর কিছুদিনের মধ্যেই  কাঞ্চনপুরের কৃষিবিভাগের  অফিসে দুজনে মিলে এক রাতে ডিটিপি আর প্রুপ দেখা শেষ করেন। পরদিনই দেবাশীষ নাথের ছাপাখানা থেকে এটি ছেপে বের করা হয়। রসমালাইয়ের  নামাকরণ করেছিলেন ত্রিপুরার বিখ্যাত ছড়াকার বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী।১২জানুয়ারী ২০২০ প্রকাশিত রসমালাইর নামলিপি করেছেন কবি মিলনকান্তি দও।
রসমালাই এখন শিশু সাহিত্যের কাগজ হিসেবে এপার অপার বাংলায় উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা অর্জন করে চলেছে।কাঞ্চনপুররের মাটি ও মানুষকে নিয়ে লেখা তার বইগুলি হল: ১)আয়না উড়ি -ছড়ার বই। 
২)প্রত্ন মুহূর্ত 
৩)ভালোবাসার পাথরকুচি -কবিতার বই 
৪)চচ্চড়ি -যৌথ ছড়ার বই 
৫)ছন্দছড়ায় বিজ্ঞান -বিজ্ঞানের ছড়ার বই। এই বইটি অদ্বৈত পুরস্কার প্রাপ্ত। 
অমলকান্তির মূল বাড়ি  কমলপুর হলেও জন্ম কাঞ্চনপুরের দশদায়।তার বাবা  তখন দশদাতে চাকরি করতেন ।তার মামার বাড়ি দশদায় ও শ্বশুরবাড়ি কাঞ্চনপুরে। ।দেওভ‍্যালকেই নিজের মাতৃভূমি ভাবেন। ভালোবাসেন।কাঞ্চনপুর সাংস্কৃতিক বিকাশে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

        কাঞ্চনপুর থেকে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে লিটলম্যাগ বনতট। সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে।নামকরণ করেছেন কবি সেলিম মুস্তাফা।মূলত এটি কবিতার কাগজ হলেও অনুগল্প, প্রবন্ধও ছাপা হয়। 

                  আমাদের মাঝে মধ্যমনি হয়ে আছেন আরেকজন-কথাকার দিব্যেন্দু নাথ।স্থানীয় যুবক। বাড়ি  শান্তিপুরে।দোপাতা নামে তার একটি লিটলম্যাগ আছে। ২০১৮ অক্টোবর  থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। কলেবর ধীরে ধীরে বাড়ছে।ইতিমধ্যে সে  কাঞ্চনপুরের জল হাওয়া মাটি ও মানুষ নিয়ে  আইলাইনার নামে একটি উপন্যাস লিখেছে। আরো লেখা চলছে। 

              আমাদের একটি সাহিত্য আড্ডা আছে। এর নাম - দো-বন-রস।এর শুরু হয়েছে ২০১৭এর গোড়ার দিকে।এখানে আছেন কবি রুজি নাথ, কবি চিত্রামল্লিকা চাকমা,মালবিকা চাকমা, সুলেখক নিরঞ্জন চাকমা কবি পঙ্কজ দেবনাথ অনুপমা নাথ,কবি শ্যামল রিয়াং,ছড়াকার গোপেশ সূত্রধর প্রমুখ। 

 
             এতদিন বইমেলা ও মাতৃভাষা মিশনের প্রোগ্রাম ও নেতাজী মেলা উপলক্ষে কবিতা পাঠ হয়েছে।সামর্থ্য মতো কবিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। কখনো জম্পুইর টানে, আমাদের টানে দূর দূর থেকে উড়ে এসেছেন স্বনামধন্য কবি ও কথাকারগন।কবি সন্তোষ রায়,মিলনকান্তি দত্ত, কথাকার শ্যামল বৈদ্য,কবি ও কলামিস্ট তমালশেখর দে, কবি অভিজিৎ চক্রবর্তী বাপ্পা চক্রবর্তী, উমা মজুমদার অপাংশু দেবনাথ,গোবিন্দ ধর, পদ্মশ্রী মজুমদার গৈরিকা ধর, গোপালচন্দ্র দাস, অভীককুমার দে, সঞ্জীব দে, অনুরাগ ভৌমিক, বিপুলকান্তি চক্রবর্তী, রাজেস চন্দ্র দেবনাথ, পার্থ ঘোষ, সুমিতা পালধর,উত্তরবঙ্গের ইসলামপুর থেকেসুশান্ত নন্দী,কলকাতা থেকে কবি হাসমত জালাল,দিল্লি থেকে নাট্যকার ত্বরিৎ মিত্র,ছত্রিশঘর থেকে কথাকার আরতি চন্দ প্রমুখ কাঞ্চনপুরকে ভালোবেসে এখানে বেড়াতে এসেছেন।জম্পুই ঘুরে গেছেন।


       সম্প্রতি স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার কাঞ্চনপুর শাখা গঠিত হয়েছে ৯/৫/২০১৯ইং 

প্রধান উপদেষ্টা :নিরঞ্জন চাকমা
যুগ্ম উপদেষ্টা -হারাধন বৈরাগী
মুখ্য সম্পাদক -অমলকান্তি চন্দ
সভাপতি -রোজী নাথ
সাহিত্য সম্পাদক -অনুপমা নাথ
মুখপত্র সম্পাদক -দিব্যেন্দু নাথ
সংগীত সম্পাদক -অর্পনা বড়ুয়া
নৃত্য সম্পাদক -কৃষ্ণা নাথ
প্রচার সম্পাদক -অভিজিৎ সিংহ  বড়ুয়া
কোষাধ্যক্ষ -অমিতাভ সিংহ বড়ুয়া

সদস্য /সদস্যা

গোপেশ সুএধর, পঙ্কজ দেবনাথ, মালবিকা চাকমা, রাজ নাথ, শ্যামল রিয়াং, বিজয়া চাকমা, শিলু চন্দ, সুব্রত দেবনাথ, জয়ব্রত নাথ


       ১৯শে মে ২০১৯ ' রেইঙ' নামে চাকমা ভাষা ও সাহিত্যের একটি লিটলম্যাগের আন্তর্জাতিক সংখ্যা কাঞ্চনপুর পাবলিক লাইব্রেরীতে প্রকাশিত হয়।অনুষ্ঠানে মোড়ক উন্মোচন করেন কাঞ্চনপুর দ্বাদশমান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  কবি  ভারতভূষণ চাকমা , উপস্থিত ছিলেন আগরতলা বীরচন্দ্র স্টেট লাইব্রেরীর  সিনিয়র লাইব্রেরীয়ান শ্রী মনোরঞ্জন দেববর্মা,কবি মালবিকা চাকমা, রেইঙ এর সাধারণ সম্পাদক কবি  অরুণ চাকমা। 


       গত ১২ জানুয়ারি ২০২০ অনুষ্ঠিত হয়েছে অনুভাবনায় কাঞ্চনপুর সাহিত্য উৎসব ।কাঞ্চনপুরের তিনটি লিটলম‍্যাগাজিন দোপাতা, বনতট ও রসমালাইর যৌথ উদ্যোগে।কবিতা উপত্যকা কাঞ্চনপুরে এই নান্দনিক সাহিত্য উৎসবটি সম্পন্ন হয়েছে আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। 

              ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি, কথাকার ও ছড়াকারদের নিয়ে এদিন চাঁদের হাট বসে কাঞ্চনপুরের রেভিনিউ ডাকবাংলোর কনফারেন্স হলে।সকাল ১১টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়,আর শেষ হয় বিকাল ৪টায়।এই উৎসবে যোগদান করেন এ রাজ্যের কবি ও প্রাবন্ধিক বিমল চক্রবর্তী,গল্পকার দেবব্রত দেব, কবি সেলিম মুস্তাফা, কবি সন্তোষ রায়, কবি সমর চক্রবর্তী,কবি ও লোকগবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধন, কবি অপাংশু দেবনাথ, কবি গোবিন্দ ধর, কবি পদ্মশ্রী মজুমদার, কথাকার জহর দেবনাথ, কবি জ্যোতির্ময় রায়, শ্যামল বৈদ্য প্রমুখ। ।বাংলাদেশ থেকে কবি জাকির আহম্মদ, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কবি সুশান্ত নন্দী ও সন্দীপ সাউ  এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই উৎসব উপলক্ষ্যে আটজন কবি ও সাহিত্যিককে দোপাতা, বনতট ও রসমালাই  সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরা হলেন অশোকানন্দ রায়বর্ধন, অপাংশু দেবনাথ, জ্যোতির্ময় রায়, জহর দেবনাথ, পদ্মশ্রী মজুমদার, সুশান্ত নন্দী, জাকির আহম্মদ, শ্যামল বৈদ্য।অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন  কবি নিশিথ রঞ্জন পাল, কবি সাঁচিরাম মানিক, কবি তমাল শেখর দে,  কবি পার্থ ঘোষ, বাপ্পা চক্রবর্তী , কবি অভিজিৎ চক্রবর্তী , কবি অভীক কুমার দে ও তরুণ কথাশিল্পী জয় দেবনাথ , কবি বিজন বোস , তরুণকবি দেবাশীস চৌধুরী, নীলিমা দাশগুপ্ত, রাজীব মজুমদার, সাচিরাম মানিক, পাপিয়া ভৌমিক, মাম্পি চন্দ, রোজি নাথ, রণিতা নাথ, চন্দন পাল, গোপাল চন্দ্র দাস, গৈরিকা ধর প্রমুখ।এই অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন অশোকানন্দ রায়বর্ধন। সঞ্চালক কবি অভীককুমার দে।উদ্বোধক মণ্ডলীতে ছিলেন এপার অপারের খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকগন। ওই দিন সন্ধ্যারাতে স্রোত পরিবার কাঞ্চনপুর শাখার একটি মনজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর মুখপত্র - খারাঙ প্রকাশিত হয়। 

               কাঞ্চনপুর সাহিত্য উৎসবে সম্মাননা গ্রহণের পর এই  মনজ্ঞ অনুষ্ঠানের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কবি অপাংশু দেবনাথ বলেন, - জানি সে যোগ্যতা আমার নেই তবু কেউ যখন ভালোবেসে হাতে তুলে দেয় এমন আলোাছটা। ঋণ বেড়ে যায় ভালোবাসার মানুষদের প্রতি।সাহিত্যের প্রতি। সাহিত্য কখনোই বিলাস নয়। আত্মবিলাপও নয় । সাহিত্যের একজন অতি সাধারণ ছাত্র হিসেবে এতোটুকু বুঝি, যে কবিতা আপনাকে অনেক কিছু দেয় সে আপনার থেকে কেড়েও নেয় অনেক কিছুই। কবিতা এক অপূর্ব প্রেমিকা। তার সাথে যার প্রেম হয়, তাকে ভাবা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। সে কোনভাবেই তার পাশে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না। সে চায় তার প্রেমিক মানুষটি শুধু তাকে ঘিরে মনোনিবেশ করবে। তার ভাবনায় মগ্ন থাকবে অহোরাত।অথচ এ সময়ে আমরা অনেকেই দু'কলম লিখে নিজেকে কবি বলে ভাবতে থাকি।আমি শুধু ভাবি সমস্ত জীবন ধরে যদি একটি পংক্তি লিখতে পারতাম তাহলে জীবন হয়তো সার্থক হত। আমি সেই পংক্তির জন্য অফুরান সময়  জেগে থাকতে রাজি। 
       
            সত্যেন্দ্র সেলিম দেবব্রত- এই ত্রয়ী কাঞ্চনপুরে প্রথম সাহিত্যের চারাগাছ রোপণ করে যে  আন্দোলন তৈরী করেছিলেন,আজ অণুভাবনায় কাঞ্চনপুর সাহিত্য উৎসব তাদের আন্দোলনকে অন্যমাত্রা এনে দিল।১৯৮৪এর পর প্রায় তিনদশকেরও বেশী সময় ধরে ঘুমিয়ে থাকা উপত্যকাকে  যেন ঘুম ভাঙ্গিয়ে নববলে বলিয়া করে তুলেছে। সাহিত্যের পালে নুতন হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ।এই প্রথম ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কবি ও কথাকারদের দোপাতা বনতট রসমালাই এক  সূত্রে গ্রন্থিত করে কাঞ্চনপুর তথা কবিতা উপত্যকার সাহিত্য চর্চায় একটি নুতন পালক সংযোজন করেছে।আর পাহাড় থেকে সমতলের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে ঘন্টাপাখির ঘন্টার শব্দ।

0 Comments