প্রকাশনা মঞ্চ আয়োজিত তৃতীয় ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন ও গ্রন্থমেলা :২০২৩||অনুভব
একটি আয়োজন ও স্বর্ণস্মৃতি||নুরুল শিপার খান
....................................................................
.
স্টুডেন্ট হেলথ হোম অডিটোরিয়ামটা এক নিমিষেই জমে উঠল। চারদিকে শুধু নতুন বইয়ের গন্ধ। ভেজানো দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই জহরলাল দাদার চিৎকার 'এ নুরুল দা তুমি এসে গেছো।'
.
অডিটোরিয়াম এর চারপাশ দিয়ে তিন সারিতে টেবিল সাজানো আছে। তখনো পুরোপুরি হল জমে ওঠেনি। যখন আমি পৌঁছলাম, যথাস্থানে আমার প্রকাশনার ব্যানারটা টানানো হলো। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানে বিদেশী সংস্থা হিসাবে একইবৃন্ত শিল্প সাহিত্যের রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন করলাম।ভীষণ ভালো লাগছিল বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে সুদূর ভারতীয় উপমহাদেশের পাহাড়ি প্রদেশ ত্রিপুরার আগরতলার একটি রাজ্যস্তরের সাহিত্যানুষ্ঠানে একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া, এটা যে কতটা আনন্দের ব্যাপার সেদিন আমি ভালোভাবেই বুঝেছিলাম।
.
গোবিন্দ ধর দাদার সাথে এই প্রথম দেখা। মোবাইলে বার কয়েক দেখেছিলাম ওনার গোঁফওয়ালা ছবি। তাই ভদ্রলোককে চিনতে অসুবিধা হয়নি! কাজ পাগল এই মানুষটা ভীষণ অমায়িক। যদিও তিনি প্রকাশনা মঞ্চের সদস্য হিসেবে ছিলেন তারপরেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
.
বিজন দাদার কথা আর কি বলবো। কবি বিজন বোস।এক অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ তিনি। ওনাকে আমি যত দেখেছি ততোই অবাক হয়েছি। সারাদিন আঠার মতো ঠোঁটে এক ঝলক হাসি লেগেই থাকে। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি আমার খোঁজখবর রেখেছেন প্রতিনিয়ত। প্রকাশনা মঞ্চের সম্পাদক তিনি। একদা বিজন বোসের সাথে কথোপকথন চলছিল হঠাৎ চোখের সামনে নিয়তি রায় বর্মন দিদিভাইকে পেয়ে গেলাম। যিনি প্রকাশনা মঞ্চের এই আড়ম্বরের অনুষ্ঠানের সভানেত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনিও ভীষণ অমায়িক, আগে থেকেই আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন তিনি। আমার স্টলের সামনে এসে চমক দিলেন শিবানী দিদিভাই।
তিনিও আমাকে অনেক ভালোবাসেন অনেক স্নেহ করেন। একটা উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো শিবানী দিদিভাই আমার বইয়ের প্রথম ক্রেতা যিনি টাকা দিয়ে আমার থেকে একটা বই কিনেছিলেন। এভাবে দেখতে দেখতে পুরো হল ভরে গেল লোকে, কেউ কবি, কেউ সাহিত্যিক, কেউ আবৃত্তি শিল্পী, কেউ কণ্ঠশিল্পী, কেউ আবার বইয়ের প্রকাশক। চাঁদের হাট রীতিমতো।
.
একদিকে চলছে বইমেলা অপরদিকে চলছে মঞ্চে গুণীজনদের সংবর্ধনা। অন্যান্য গুণীজনদের সাথে হঠাৎ মাইকে আমার নামটা ঘোষণা করা হলো। মঞ্চে আসন গ্রহণের জন্য, আমরা মঞ্চে বসলাম একে একে সবাইকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জানানো হলো। এরপর কবি সন্ধা ভৌমিক এর কুসুমিতা নামক একটি ম্যাগাজিনের মোড়ক উম্মোচন আমাকে দিয়ে করানো হলো। যদিও আমি এতকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু তাৎক্ষণিক বিষয়টা ভাবতেই আমার ভীষণ ভালো লাগলো । ভালোবাসা সম্মান কোন কিছুরই কমতি ছিল না সেদিনের আয়োজনে।
২৬ তারিখ বিকাল থেকে শুরু হল ২৭ তারিখ রাত নয়টায় প্রোগ্রামের সমাপ্তি ঘোষনা করা হলো।
অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষনা করা হলো। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে লেখক কবি কণ্ঠশিল্পী প্রকাশক এসেছিলেন অনুরূপ বাংলাদেশ থেকেও লেখক কবি প্রকাশক গিয়েছিলেন। এই আয়োজনের খাবারেও কোন ত্রুটি ছিল না এবং থাকার জন্য ভগৎ সিং সরকারি হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভারত বাংলাদেশের এই যে সাহিত্যের মেলবন্ধন, সাহিত্যের একটা মিলন মেলা এটা আমার হৃদয়ে চিরজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রায় পাঁচ শতাধিক লেখক কবি প্রকাশক সংগীত শিল্পী দের নিয়ে এই আয়োজন হয়েছিল। এত বড় একটা আয়োজন অথচ কত মসৃণভাবে পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন আয়োজকরা। যেহেতু এই ধরনের প্রোগ্রামে আমি প্রথম সে ক্ষেত্রে আমার ভেতরে উত্তেজনা ভাবটা খুব বেশি ছিল। আমি মেঘ না চাইতে জল পেয়েছিলাম।
বরাবর ই আমি বন্ধু প্রিয় মানুষ ,নতুন নতুন লেখক কবিদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়া থেকে শুরু করে ছবি তোলা প্রতিটা মুহূর্ত যেন একটি প্রাণীর উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছিল। আয়োজনটা আসলেই ত্রুটিমুক্ত ছিল। আগরতলা ছেড়ে এসেছি পাঁচ দিন হলো কিন্তু ওইখানকার প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহূর্তের স্মৃতিগুলো হৃদয়ে অম্লান হয়ে ভেসে বেড়াচ্ছে।
ভুলিতে পারিনা যেন কিছুতেই। এ স্মৃতি ভুলবার নয়।
0 Comments