কথাবিশ্ব || গোবিন্দ ধর
কথাবিশ্ব || গোবিন্দ ধর
কবিরা আসতেই থাকেন। প্রতিনিয়ত কবির জন্ম হয়।আমি তুমি সে তাহারা সকলেই একদিন প্রথম কবিতাটি লেখেন।তাই নতুনকে সব সময় স্বাগত। পুরোনো কবিরা বলে কিছু নেই। যতদিন একজন কবি লেখেন ততদিনই একজন কবি তরুণ। তিনিই তারুণ্যের প্রতীক।প্রতিনিয়ত নতুন কবিদের আগমন আমার নিকট বাতিঘর আবিস্কারের সমান।
কেউ বলেন এত কবি কেন?কেউ বলেন কোথায় কবি?কেউ কেউ বলেন তারাই কবি। বাকী সব পাখি সব।
কবি কারা?কে দেবে সার্টিফিকিট?কবির কোন শংসাপত্র আদৌ প্রয়োজন?
কেউ কেউ কবি বলেছেন জীবনানন্দ। কেউ কেউ ঘেউ ঘেউ। ঘেউ ঘেউও কবি।কেউ কেউও কবি।কবির কোনো দল নেই। দলদাস হলেই কবি হওয়া যায় এমনও কোন বিষয় নেই। মতাদর্শে অবিচল থেকেও কবি হতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ধর্ম ও জিরাফে থেকে কবি হওয়া কঠিন।
কবি হতে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি-গোঁফ থাকা জরুরী নয়।আবার দাড়িগোঁফ ওয়ালাও কবি হতে আপত্তি নেই। প্ল্যানসেভ কবিও কবি হতে আপত্তি নেই। কবির কোনো লিঙ্গান্তর দরকার নেই। কবি কবিই।কবি স্তী বাচক শব্দ কবিনি বলার প্রয়োজন নেই। সুতরাং দাড়ি থাকলেই শুধু কবি তা কিন্তু নয়।দাড়ি থাক বা না থাক কবি তো কবি-ই।কবির বিপরীত শব্দ কবিনিও নয়।
কবিকে মূলত কবিতাটিই লিখতে হয়।যদি কবি কবিতা লিখতে পারেন তো আমাজন অঞ্চলে বসেও তিনি কবি পরিচিতি পেতে পারেন।আর রাজাধানীর নাড়ুগোপাল নাড়ু খেয়ে পদ্য লিখেও কবির তকমা নাও পেতে পারেন।যদিও সরকারী মেলা চত্বর তাদেরই পদভারে মঞ্চ কাঁপতে কাঁপতে ভেঙেও যেতেও পারে তবুও কবি যদি তার লেখায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে অক্ষম হোন তো আমি তুমি সে তাহারা যতই মঞ্চ কাঁপানো গলা চিলচিৎকারে মাইক ফাটিয়ে কবিতা পাঠ শেষে বুকের ছাতি ছাপান্ন করে টগবগিয়ে নামলেও তিনি কবি হয়ে গেলেন এমন নয়।
কবির কাজ ক্রমাগত পাঠাভ্যাসে নিজেকে তৈরী করা। নিজেকে তৈরী করে এমন স্তরে পৌঁছতে হবে কবিকে যেন তিনি আর আমি কবি বলতে হয় হয় না।কবিকে পাঠকই খুঁজে বের করে পাঠ করবেন।এইটুকু তৈরী না হওয়া অব্দি কবির কাজ ক্রমাগত পাঠাভ্যাস আর লিখে যাওয়া।
অসংখ্য কবিতার জন্ম দিতে দিতে কবি মাঝে মাঝে কবিতাগুলো জলাঞ্জলি দিয়ে দিতে হবে মনু দেও বিজয় ধলাই কিংবা হাওড়া অথবা গোমতীর জলে।সেই ত্যাগ একজন কবির থাকা জরুরী।যেদিন অসংখ্য কবিতা জলাঞ্জলি দিয়েও কবির মনে হতাশার চিহ্ন থাকবে না। কবি সেই তখন আবার লিখবেন।ক্রমাগত লিখবেন।লেখালেখা খেলাই কবির কাজ।লিখবেন।কাটবেন।আবার লিখবেন।প্রয়োজনে সব লেখা জলাঞ্জলি দিয়ে কবি আবার তার টেবিলে বসবেন।
সারাজীবন লিখতে লিখতে কবি সাকুল্যে একটি কবিতাও যদি লেখেন যা কালখণ্ড পেরিয়ে বেঁচে থাকবে মানুষের অন্তরে প্রকৃতপক্ষে একজন কবি তখনই সফল।তখনই তিনি কবি।আমি তুমি সে তাহারা অনেকেই লিখি।কিন্তু কজন সেই কালখণ্ড অতিক্রম করতে পারবো তাও কালখণ্ড জানে।
আমাদের আলোচনা সমালোচনা কিংবা অসংখ্য শংসাপত্রে যতই কবিকে কবি শিরোপা দেওয়া হোক সেই শিরোপা পাওয়া কবিদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত কালখণ্ড অতিক্রম করতে অক্ষমই থেকে যেতে হবে।
কেউ কাউকে শংসাপত্রে প্রত্যয়িত করে দিলেই তিনি কবি শিরোপা, কবিমুকুটমণি জাতীয় কিছুই কিচ্ছু নয়।
কবির কাজ তৈরী হওয়া আর ক্রমাগত শাণিত তরবারির মতো কবিতাটি লিখে নিজেকে সাময়িক প্রসব বেদনা থেকে নিস্তার দেওয়া।এছাড়া কবির কোন দল বল লোকবল সংগঠন সংস্থা মঞ্চ সভা পারিষদ পরিষদ সংসদ নির্বাচন কমিশন কিচ্ছু দরকার নেই।
২৪:০৫:২০২০
দুপুর:৪:৩০মি
0 Comments