আত্মক্ষর:পর্ব-১৮গোবিন্দ ধর
আত্মক্ষর:পর্ব-১৮
গোবিন্দ ধর
বাবা যখন একুশ বছর তখন বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।মায়ের মাত্র নয়।এত ছোটবেলা মায়ের বিয়ে হলেও মা থাকতেন দাদুর বাসায়।মায়ের বাবা সতীশচন্দ্র সেন।অবিভক্ত ভারতের ভানিগাছ দাদুর বাসা।তারপর দাদুও বড় রায়টের বছর পাবিয়াছড়া চলে আসেন।দাদু আর সুশীতল ধর পাবিয়াছড়া একই সময়ে আসেন।দাদুর তেমন জমিজমায় লোভ ছিলো না।আমাদের মা মাসি মিলে তাঁরা সাত বোন।দুই ভাই।এখনো মায়ের চার বোন জীবিত।মা আমাদের ছেড়ে চলে যান ১৯৯৬সালের এক সকালে।দীর্ঘ রোগ ভোগ দেখে ৪ঠা মে 'র সকালে হঠাৎ বলি এবার বিদায় দাও মাকে।প্রায় সাথে সাথে মা শেষ নি:শ্বাস ছাড়েন।আমি কাঁদিওনি।মায়ের কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না।মা মরে গিয়ে বেঁচে যান।শেষ সময় মায়ের হার্ট নষ্ট হয়।কিডনিও।সারা জীবন শ্বাস রোগে কষ্ট পান।আমি দেখেছি।মায়ের কষ্ট আমি সহ্য করতে পারতাম না।শ্বাস কষ্ট অনেকটা বংশগত।মায়ের বাবারও ছিলো।আমি দেখেছি আমাদের সুনী মাসিও শ্বাস কষ্টের ব্যামোতে কষ্ট পেতেন।এসব কষ্ট দেখে দেখে বড় হলাম আমি।আমার জীবন শুধু কষ্ট দেখে বড় হওয়া।আমাদের সুনী মাসী দাদুর বাসায় থাকতেন।মেসোকে দেখিনি। একবার দাদুর বাসায় জ্বর থেকে উঠে মায়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে এই সুনী মাসীর হাতে রান্না লাউ চিংড়ীর চচ্চড়ি খেয়েছি।কি স্বাদ রাঁধতেন মাসী। এখনো সে স্বাদ আর লাউচিংড়ীতে পাইনি।জ্বরের মুখে আমার অপূর্ব লেগেছিল। মাও সুস্বাদু করে রান্না করতেন। দিদিমাকে দেখিনি।দাদু খুব ফর্শা ছিলেন।আমাদের মা মাসী মামারাও তাই সুন্দর।আমি একবারও মা মাসী আর মামাদের এক সাথে পাবিয়াছড়া পাইনি।আলাদা ভাবে দেখেছি।সকলের গঠনগত চেহারা প্রায় এক রকম।আমার অহংকার হতো।ভালো লাগতো।
দাদুকেও সুন্দর দেখেছি।সে তুলনায় আমরা সুশ্রী হইনী।আমাদের বাবা ঠাকুরদাও সুশ্রী ছিলেন।বাবাকে ধুতিপাঞ্জাবী পরলে রাজপুত্তর লাগে।অফিসের বাইরে সামাজিক অনুষ্ঠানে বাবা ধুতি পরতেন।যদিও বাড়ি আর বাজারে লুঙ্গী পরেই যেতেন।একমাত্র অফিশেই স্যুট পরে যেতেন।সব পোষাকেই বাবাকে সুন্দর লাগতো।ধুতি পাঞ্জাবীতে উত্তম কুমারকেও হার মানাতে পারতেন বাবা।এমন বাবার সাথে মায়ের বিয়ে দিতেই দাদু বয়স যে হয়নি হয়তো ভুলে গেছিলেন।মেয়েদর এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়া উচিৎ নয়।যাক আমাদের মা তো বিয়ের পর পরই দীর্ঘ দিন দাদুর কাছেই ছিলেন।
২৩:০৬:২০১৭
সকাল:৭টা ১৫মি
কুমারঘাট।
0 Comments