কবিতায় কবিতায় উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গ||গোবিন্দ ধর
কবিতায় কবিতায় উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গ
গোবিন্দ ধর
আমরা অশোকানন্দ রায়বর্ধনদা অভীককুমার দে সঞ্জীব দে ও গোপালচন্দ্র দাসদা।গত ১৬ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল:২০১৮ এক কবিতা ভ্রমনে বেরিয়েছিলাম উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গ।
আমরা আসামের লামডিং শহরের নন্দিনী আয়োজিত ভাষা প্রণাম ও সাংস্কৃতিক উৎসবে যোগ দিই।জয়শ্রী আচার্য আমাদের আমন্ত্রণ করেন।তাঁর ডাকে আমরা বেরিয়েছিলাম।ট্রেনের টিকিট আগে থেকে কাটা ছিলো।আমরা আগরতলা শিলচর ট্রেনে উঠে বদরপুর রাত্রিবাস করি ঐদিন।পরদিন ট্রেন ৮টা চল্লিশে। আমাদের টিকিট ছিলো হোজাই অব্দি।১৭এপ্রিল ট্রেন গিয়ে বিকেল তিনটে তিরিশেই পৌঁছে লামডিং।
এখানেই আমাদের তিনদিন বইমেলা।আমরা স্রোত প্রকাশনা ও বইবাড়ি নিয়ে যাই।১৮-২০ এপ্রিল এই তিনদিন নন্দিনীর অনুষ্ঠানে আমরা ছিলাম।জয়শ্রী আচার্য আমাদের হাতে দেন স্বরণিকা"অস্মিতা"।নন্দিনীর এই অনুষ্ঠান বিগত দুবছর থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে।এবার তিনবছর হলো।আসামের বাংলাভাষার ১১শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই অনুষ্ঠান হয়।এবছরও ১৯মে স্মরণ করতে নানা আয়োজন ছিলো।সকালে ছিলো শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ অর্পণসহ নানা আয়োজন।
১৮এপ্রিল ছিলো শিশু নির্যাতন প্রসঙ্গে আলোচনা।আলোচনায় কবি ও গবেষক অশোকানন্দ রায়বর্ধন আলোচনা করেন।তাঁকে উত্তরীয় দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
২০এপ্রিল এই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি রাত ১২নাগাদ হয়।
পর দিন হোজাই থেকে আমাদের জলপাইগুড়ি যাত্রা। ধূপগুড়ি স্টেশন।এখানে ২২এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল থাকবো।আর আশপাশ ঘুরবো আমরা।২২এপ্রিলই আমারা ভূটান জয়গাঁ হয়ে পৌঁছলাম।ধূপগুড়ি পৌঁছার আগে কবি অলোকসুন্দর সরকার বারবার যোগাযোগ রাখছেন।আমরা বিভা হোটেলে পৌঁছতেই তিনিও উপস্থিত হন।একটু বইপত্র বিনিময় হয়।তারপর রাত সাড়ে নয়টায় খেতে যাই আমরা।অলোকবাবু আবার রাতে ভাত খান না।
পরদিন সকাল সাতটা আমরা জয়গাঁ রুয়ানা দিই।১২টা নাগাদ ভূটান সীমান্তে পৌঁছি।দুটি মারুতি রিজার্ভ করে আমরা ভূটানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই।একটু সামনে যেতেই তোর্সা।তার বুক চিরে জল তরঙ্গ দিয়ে নামছে।বুকে পাথর তাই জল যেন লাফাচ্ছে। জল ঠেলেই গাড়ি এই অংশ নদীর উপর দিয়ে পেরিয়ে রাজা মাথা পৌছলো।পথে বুদ্ধমঠ।বুদ্ধ সন্যাসী।সারা মঠেই নীরবতা বজায় আছে।প্রকৃতির সৌন্দর্য অপরূপ। বুদ্ধ মঠে বুদ্ধের পাশে লামা বসে আছেন।একদল শিক্ষার্থী বুদ্ধ ধর্মের পাঠ নিচ্ছে। নীরব।মুখের ভাষা কিম্তু নীরবেই পাঠ যেন।চারদিকে সবুজ।মঠ ঘরবাড়ি কারুকাজ করা।বুদ্ধ মঠের ভেতরে শৈল্পিক আর্ট।তারপর রাজামাথায় আমাদের গাড়ি ছুটছে।পথের সকল বাড়িই কারুকাজ করে চোখে পড়ার মতো।এক জায়গায় রাজার বিজ্ঞাপন।সাথে রাণীও।হাসিহাসি সুন্দর মুখে একটি থামে ছবি হয়ে আছেন।
রাজার মাথা ফুয়েন্টসলিং থোকে জয়গাঁ তোর্সা নদী বেষ্টিত শহর ছবির মতো।মনোরম।মুগ্ধ হলাম।এরকম ছবি শিলং পিক পয়েন্ট থেকে যেমন বাড়িঘরগুলো কাগজের ঘরের মতো লাগে সেরকমই অমেকটা মনে হলো।দূর থেকে ঘরগুলো ছবির মতো দেখায়।
তারপর ফেরার পালা।আসার সময় ভূটান রমণীর হাতে তিরিশ টাকা মূল্যে বড় কাপের কপি পান দারুণ লাগলো।
২২এপ্রিল আমরা হোটেল পালিকায় রাত্রিবাস করবো।পরদিন আমরা যাবো ক্যারন।ভূটান সীমন্ত গ্রাম।
হোটেল পালিকার দেওয়ালে বিভিন্ন দেশের সময় নির্ধারণ করা ঘড়ি।লন্ডন,নিউওয়ার্ক,জাপান,নেপাল বাংলাদেশের সময়ে ঘড়িগুলো চলছে।একসাথে জানা যায় কোন দেশে এখন কটা।আমার খুব ভালো লাগে।
রাতে আমরা খেতে বেরুতে পারিনি সবাই।বৃষ্টি পড়ছিল গুড়িগুড়ি।
আমি একা ছাতি নিয়ে গিয়েছিলাম।
আমর ছাতি নিয়েই সঞ্জীব ও আমহ রুটি আনতে বেরুই।রাত তখন ১১টা।ভাগ্যিশ রুটির দোকান তখনো হাফখোলা।
নিলাম রুটি।অশোকদা রুটি নয় ভাত খাবেন।তাই ভাত নিলাম।আমাদের জন্য রুটি।
রাতে গরম তেমন লাগেনি।মশাও তেমন নয়।কয়েলেই কাপি।
কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি।শরীর এতটাই ক্লান্ত ছিলো।
পরদিন সীমান্ত হাট ভূটান থেকে সকলেই কেনা কাটা করেন।আমিও টুকটাক কিছু নিলাম।কিনলাম সংবাদপত্র।একটি ভূটানের ভাষায়।অন্যটি ইংলিশ নাম"KUENSEL"।
বেলা ১২টায় আমরা বেরিয়ে পড়ি।
ক্যারনের উদ্যেশে।ক্যারনে ২৩তারিখ কবিতা পাঠ ও সম্মাননার আয়োজন করেন জগন্নাথ সিং রাজপুত।
বিকেল সাড়ে চারটায় আমরা গিয়ে পৌঁছি ক্যারন।দারা অসুর আপ্যায়ন করেন।
কবিতা পাঠ সম্মাননা পর্বের পর রাত তখন দশটা।
পর দিন সকালে বৃষ্টি অঝোর ধারায় পড়ছে।জগন্নাথজির বাসায় নাস্তা সেরে ডুয়ার্সের প্রকৃতি দেখতে দেখতে আমরা চলে এলাম ধূপগুড়ি।
২৪ তারিখ সারাদিন বিশ্রাম।২৫ তারিখ শিলিগুড়ি কবি রিমি দের সাথে মিট করি।রিমি দের বাসায় কবিতা আড্ডা হলে।বই বিনিময় হলো।চা পান হলো।মিষ্টি খাওয়া হলো।রিমি দে,লিটল ম্যাগাজিন"পদ্য" সম্পাদনা করেন।তা্র অনেকগুলো ব কবিতা বই আছে।
রিমি দে পেশায় ঘোষক রিমি দে শিলিগুড়িতে পদ্য নামে একটি কবিতার কাগজ করে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন।শিক্ষা এম এ।ইতিমধ্যে তাঁর কাব্যগ্রন্থ মেঘবন্দি,লীনতাপ,বরফকুচির দিন,অর্ধেক সাপ,মৌ স্বাক্ষর, রাবণ,অন্য রাবণ,কালো বেড়াল পাঠকের কাছে কবিতার আকাশ ঢেলে দিয়েছে।
নয়ের দশকের একজন অন্যতমা তিনি।তিনি কবিতাকে ডাক নামে পদ্য বলতেই ভালোবাসেন।প্রেমের মতো তাঁর এক উল্লেখ্য সংযোজন।প্রচ্ছদ :অমিতাভ মৈত্র।বইটি স্রোত প্রকাশ করবে।
রিমি দে দিলেন" কালো বেড়াল"।আমি কথাশিল্পী শ্যামল ভট্টাচার্য স্রোত সংখ্যাটি তুলে দিই।
এখান থেকে বেরিয়ে আমরা আসি জলপাইগুড়ি। কবি শশাঙ্কশেখর পালের মোবাইল দোকান সাগরিকায়।তিনি দিলেন তাঁর,"কাঁকড়ের রোদ মুখ"কবিতার বইটি।
চা হলো।
তারপর শশাঙ্কদা আমাদেরে নিয়ে গেলেন কবি প্রবীর রায়ের বাসায়।কবিতা হলো।দীর্ঘ আড্ডা পাঠ আলোচনায় আমরা প্রাণিত হলাম।
কবি শশাঙ্কশেখর পাল আমাদের সাথে দেখা হওয়ার পর যা বললেন:
"২৫শে মে ২০১৮ বিকেলে ত্রিপুরা থেকে এলেন বন্ধু অশোকানন্দ রায়বর্ম্মণ সহ আরও চার বন্ধু। সরাসরি চলে এলেন আমার কর্মস্থল 'সাগরিকা প্লাস', মার্চেন্ট রোড। এলেন কবি গোপালচন্দ্র দাস গোবিন্দ ধর সঞ্জীব দে অশোকানন্দ রায়বর্ধন আর অভীককুমার দে। পড়া হল অনেক সাদের কবিতা পড়া হল। কথায় কথায় পশ্চিমবাংলা বাংলাদেশ আর ত্রিপুরার কবিতাচর্চা নিয়েও মত বিনিময় হল। সুন্দর কিছুটা সময় উপহার দেওয়ার জন্য ত্রিপুরার বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। তাদের হাতে তুলে দিলাম আমার শেষ কাব্যগ্রন্থ 'কাঁকরের রোদ মুখ'। ওনাদের পক্ষ থেকে আমিও পেলাম ক'য়েকটি পত্রিকা ও গ্রন্থ। খুব তাড়াহুড়ো। কোথায় যাই। চলে গেলাম বিনা নোটিশে সরাসরি প্রবীর রায়ের বাড়ি শ্যামলছা'য়। তারিখ ২৫শে মে দু হাজার আঠারো।"
প্রবীরদা আমাদের কবিতা শুনে যা বললেন:"বাংলাকবিতা চর্চার ক্ষেত্রে অন্য দেশ অন্য রাজ্যের দিকে তাকাতেই হয়। না হলে সামগ্রিক ছবিটা স্পষ্ট হয়না। আজ শ্যামলছায়ায় হঠাৎ এলেন কবি শশাঙ্কশেখর পাল ত্রিপুরার কয়েকজন কবি গোপাল চন্দ্র দাস গোবিন্দ ধর সঞ্জীব দে অশোকানন্দ রায়বর্ধন আর অভীক কুমার দে কে সঙ্গে করে। অনেক কবিতা পড়া হল। কথায় কথায় পশ্চিম বাংলা বাংলাদেশ আর ত্রিপুরার কবিতাচর্চা নিয়েও মত বিনিময় হল। সুন্দর কিছুটা সময় উপহার দেওয়ার জন্য ত্রিপুরার বন্ধুদের আমার ভালবাসা।"তিনি আমায় তুলে দেন তার তিনটি কবিতার বই।বইগুলো হলো:বর্গ পরিচয়,উদ্দেশ্য বিধেয়,এবং "বাকি অংশটুকু"।
এই বিনিময় পাঠ আড্ডা চলতে চলতে রাত সাতটা।বেরুতে হলো।না হয় গাড়ি পাওয়া কষ্টকর। যদিও সত্যিকারেই ধূপগুড়ি পৌঁছতে আমাদের একটু কষ্ট হয়েছে।রাত সাড়ে নয়টায় আমরা হোটেল বিভায় আসি।তারপর সাথী হোটেলে রাতের খাওয়া সেরে এলাম আবার বিভায় তখন রাত সাড়ে দশটা।
আগামীকাল বিকেল চারটে বাইশে আলুয়াবাড়ির ট্রেন।স্টেশন থেকে টটো ধরে বিশটাকার ভাড়ায় ইসলামপুর গিয়ে পৌঁছলাম।এখানেই ছিলো আমাদের মূল আমন্ত্রণ। স্টেশনে নেমেই রোববারের সাহিত্য আড্ডার সম্পাদক সুশান্ত নন্দীকে ফোন করলাম।তখন সবে সন্ধ্যে ঘড়িতে রাত সাতটা।
আজ উত্তরবঙ্গ সাহিত্য উৎসব:২০১৮ কবিতা পাঠের আয়োজন।সূর্য সেন হল।আমাদেরকে সরাসরি হলেই যেতে বললেন সুশান্তদা।হলে আমাদেরকে মঞ্চে বসতে হলো।তখনো ট্রেনের দখল যায়নি।কবিতাপাঠ চলছে।অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত নয়টা কি সাড়ে নয়টায় আমরা তারপর ইসলামপুর বাস টার্মিনাসে আসলাম টটো করে।নেমে চা পান করা হলো।তারপর গেষ্ট হাউসের রুমে গিয়ে একটু মুখে চোখে জল দিলাম।ক্লান্তি কিছুটা গেলো।কিছুক্ষণ পরেই গেষ্ট হাউস লাগুয়া হোটেলে আমাদের রাতের খাওয়ার আয়োজন।নামলাম।তৃপ্তিতে খাওয়া হলো।টক দই মিষ্টিসহ।টকদই আমার খুব প্রিয়।
খাওয়া দাওয়ার পর রাতে একটু পরিচয় পর্ব হলো।কবি বাপ্পাদিত্য দে,কবি দেবাশিষ এর সাথে।নেপাল থেকে গজল লেখক কবি অশোক বহরার সাথেও পরিচিত হলাম।নেপালের রাষ্ট্র ভাষায় চর্চা করেন অশোক বহরা।যদিও নেপালে প্রায় ১২০টির উপর ভাষা আছে।একেক অঞ্চলে একেক ভাষায় চর্চা হয়।
বাপ্পাদিত্য সম্পাদনা করেন,:"কালের কন্ঠ"।দুটি সংখ্যা আমার হাতে তুলে দিলেন।আমিও আমার,ত্রিপুরার লিটল ম্যাগাজিন বইটি দিলাম।অশোক বহরাকেও এই বইটি তুলে দিই।
এক ফাঁকে সুশান্ত নন্দী আমায় তার সম্পাদিত,"সেতু, ও,"ইচ্ছে ডানা"তুলে দিলেন।
তুলে দিলেন, তার ও লক্ষ্মী নন্দী সম্পাদিত "শব্দতরী"।
লক্ষ্মীদি কোচবিহারের মেঘলিগঞ্জ শহরের মেয়ে ও বধু।কবিও তিনি।
কবি সুশান্ত নন্দীর সাথে এই পরুচয় হয়েছিলো বাংলাদেশ পীরগঞ্জে।তার পরিচয় না দিলেই নয় তাই :
সেতু, ইচ্ছেডানা ও ইষ্টিকুটুমসহ কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক আপনি।সাথে একটি বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মন্ডলির সদস্য।রোববারের সাহিত্য আড্ডারও আপনি সম্পাদক পুরুষ। রূপকথা নামে আবাসে আপনি রূপকথার পিতা। সাহিত্যের ব্যাপকতার পাশাপাশি একজন চিত্রশিল্পীও আপনি।আপনার পথ চলায় সাহিত্য সাধনা ও সেবায় আমি প্রীত হয়েছি সুশান্ত নন্দী মহোদয়।আপনি ইসলামপুরের প্রবাদপ্রতীম সাহিত্য সাধক।আপনার প্রেরণায় তরুণ প্রজন্মও কবিতায়, সাহিত্যে রাখছে তাদের সাক্ষর। উঠে আসছেন নবীন কবি লেখক।আপনার মনের বিশালতা থেকে শিখবে প্রজন্ম।আপনি কবি ও ছড়াকারও।আপনি দেশ ও বিদেশে সাহিত্য সুনামে ইতিমধ্যে একজন সুসাহিত্যিক হয়ে ওঠায় আমিও আনন্দিত। আপনার পথ চলায় অবিরাম সুস্থতা আমার চাওয়া।এই সুন্দর সৃজনকর্মে আপনি আগামীদিন হয়ে উঠুন প্রবাদপ্রতীম।
উত্তরবঙ্গ সাহিত্য উৎসব ২৮:৪:২০১৮ আমাকে বরণ ও সম্মানার্থে দিলো উত্তরীয় তা আমার এক পরম পাওয়া।
ভালো থাকুন।কাজই হোক কাজের পরিচয়।পথই পারে পথের ভাষায় কথা বলতে।আমাদের তো এই-ই হলো আনন্দযাপন।
ঐদিন কিছু পত্র পত্রিকা বই বিভিন্নজন হাতে তুলে দেন।সেগুলো হলো:
পত্রিকা:
(১)বাংলার এই শহর:সম্পাদক-সমীর ভট্টাচার্য
(২)আন্তর্জাতিক বাংলাভাষা -সংস্কৃতি সমিতি:সম্পাদক-অনিল সাহা
লিটল ম্যাগাজিন:
(১)উত্তরের প্রয়াস:অনিল সাহা
(২)সাহিত্য পত্রিকা:কাকলী মুখোপাধ্যায়
(৩)জললিপি:বিবেক কবিরাজ
(৪)চয়ন:সৌরেন চৌধুূরী
(৫)পর্যাস:দীজেন পোদ্দার
(৬)অভ্রনীল:অনিমেশ মজুমদার(লামডিং)
কাব্য সংকলন:
(১)যুদ্ধ চলছে(নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ) :অালোকসুন্দর সরকার
(২)অনিবার্য কথাগুলো:নিশিকান্ত সিনহা
(৩)ভাঁটফুলের গন্ধ :বিপ্লবকুমার রায়
(৪)নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ :সন্তোষ সিংহ
ছড়া সংকলন:
(১)হারিয়ে গেছে ঠাকুমার ঝুলি:অরুণ কুমার সরকার
রাজবংসী বা কামতাপুরী ভাষা'র উপন্যাস:
(১)দুলাই মাইলানি:প্রসেনজিৎ রায়
সূর্যাপুরী ভাষা:
(১)সূর্যাপুরী ভাষার প্রবচন ও হেঁয়ালি:ভবেশ চন্দ্র দাস
নির্বাচিত রম্য ও ছোটগল্প:
(১)চলার ফাঁকে:ভবেশ চন্দ্র দাস
উত্তরবঙ্গ সাহিত্য সম্মানের পাশাপাশি এসব প্রাপ্তি ছিলো আমার কাছে আরো বড় প্রাপ্তি।কবি সম্পাদক সুশান্ত নন্দীর আমন্ত্রণে ইসলামপুর কবিতা যাপনের প্রাপ্তির ঝুলি এত বিশাল কেনটা ছেড়ে কোনটা বলি।
২৯এপ্রিল আমাদের ট্রেন বিকেল চারটে বাইশে।সুতরাং হাতে সময় অনেক।সুশান্ত বললেন সকালে নাস্ত উনার বাসায়।তারপর বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন করবো আমরা।সকাল আমরা রেডি হওয়ার আগেই সুশান্ত চলে এলেন গেষ্ট হাউস।আমাদের নিয়ে গেলেন নিজের বাসা রূপকথায়।সুশান্তদার মেয়ের নামে আবাস।রূপকথা।নামটি দেখেই জুড়িয়ে গেলো প্রাণ।গতাল এই ছোট রূপকথা নেপালি নাচ নেচে সকলের মন কেড়ে নিয়েছিলো।বাসায় গিয়ে রূপকথাে পাইনি।ও স্কুলে গেছে।মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো কিছুটা
ওকে একটু আদর করতে না পারার ব্যথা নিয়ে কপি নাস্ত সারলাম।তারপর বৃদ্ধাশ্রমে গেলাম।আশ্রম যেন একেবারে আনন্দ আশ্রম। সকলের ব্যবহারে আপ্লুত।সুমন সিং মাত্র তিরিশ বত্রিশের এক বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া শ্বেতি রোগী মহিলার ইংরেজী বাচনভঙ্গী আমাদেরকে আবেগ আপ্লুত করে দেয়।সকলেই খুব ভালো।শুধু ওদের জীবনটা বৃদ্ধাশ্রমে।কারো হয়তো সবই আছে তবুও ওরা এখানে পরিবারের দায় এড়াতে নিজেদেরে একাকী জীবনের সাথে লড়াই করছেন।সেদিন সাথে ছিলেন কবি উদয় সাহা।তিনিও বন্ধু বৎসল।মনে থাকবেন।
এলাম গেষ্ট হাউস।স্নান সারলাম।একটু বিশ্রাম।আবার এলেন সুশান্ত নন্দী।আমরা দুপুরের আহারের সময় তিনি পাশে বসে রইলেন।তারপর খাওয়া শেষে আমরা চলে আসি গেষ্ট হাউস।বিশ্রাম করে বেলা তিনটের সময় আলুয়াবাড়ি স্টেশনে পৌঁছে জানলাম ট্রেন ১১ ঘন্টা লেটে চলছে।তখন মাথায় যেন বাজ পড়লো।বাড়ি আসার তাড়া।মন সকলেরই ত্রিপুরায় চলে আসছে শরীর তখনো আলুয়াবাড়ি স্টেশনে।তাও ট্রপন ১১ঘন্টা লেট।হঠাৎ অশোকদা অসুস্থ হয়ে পড়েন।ফোন করি সুশান্দ্তদাকে।তিনি তখন কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।অগত্যা ডাক্তার বেরাকে তিনি ফোনে সব বলে দিলেন।আমি আর গোপালদা অশোকদাকে নিয়ে গেলাম নার্সিংহোমে।ডাক্তার আসলেন।চিকিৎসা শুরু হলো।ঘন্টা তিনেকের মাঝে অশোকদা সুস্থবোধ করলেন।ডাক্তার বেরা নিয়ে গেলেন অশোকদাকে উনার বাসায়।এদিকে খবর পেয়ে নিশিকান্ত সিনহা মহাশয়ও চলে আসলেন নার্সিংহোমে।তিনি এসে বললেন ট্রেন দেরি হলে রাতে হোটেলে চলে আসতে।আমি ও গোপালদা সায় দিইনি।চলে গেলাম স্টেশনে।গিয়ে দেখি অভীকও অসুস্থ। তখন আর মাথায় কাজ করছিলো না। তবুও আবার ফোন করি সুশান্তদাকে।তিনি আবার স্টেশনে গাড়ি নিয়ে এলেন।গেষ্ট হাউস বুক করলেন।নিশিকান্তদা রাতের খাবার বলে দিলেন।সব মিলে তাঁদের আতিথেয়তা আর যত্নআত্তিতে আমরা লজ্জা পাচ্ছি। এত করছেন।অভীক খুব কাহিল থাকায় স্টেশন থেকে সোজা নার্সিংহোমে।আমরা চলে এলাম গেষ্ট হাউস।রাতের খাবারের পেকেট আগে থেকেই সাথে ছিলো।কাছেই ফার্মেসী।আমারও একটু পেট ব্যথা ছিলো।ডাক্তারকে বলে ডিকল নিলাম।ভাত খাওয়ারপর ডিকল খেয়ে রাতের বিছানায় উঠলাম।মনে দুশ্চিন্তা কখন ট্রেন আসে।ঘুম চলে এলো কখন টের পাইনি।সকালে ডাক্তার বেরার ফোন পেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠলাম
তিনি বললেন ট্রেন আটটায় আসছে।চোখে মুখে জল দিয়ে পোশাক চাপালাম।বেরিয়ে গেলাম আবার আলুয়াবাড়ি।স্টেশনমাস্টার বললেন আমাদের ট্রেন নয়টায় আসবে।সময় কাটছিলো না।
এমন সময় ভবেশকান্তি দাস হাজির।তাঁকে গতকাল জানানো হয়নি তাই তিনি সকালে চলে এলেন স্টেশনে।এসে আমাদেরকে সময় দেওয়ায় কখন নয়টা হলো বুঝতেই পারিনি।তখনো ট্রেন আসেনি।জানলাম নয়টা পঞ্চান্ন মিনিটে আমাদের অবোধ আসাম আসছে।
অবশেষে ঠিকঠিক ট্রেন আসলো।তার কিছু আগে ভবেশকান্তি দাসদা চলে যেতো হলো।আমরা যারা যার সিটে বসলাম ট্রেনে।২৯এপ্রিল রাত আটটা নাগাদ গুয়াহাটি ট্রেন থামলো।
রাত ১২টা ৫৫মিনিটে শিলচর গুয়াহাটি ট্রেন।কালদুটো নাগাদ বদরপুর।
লামডিং দাঁড়িয়ে না থাকলে বদরপুর সময়ের আগেই আসতাম।কিন্তু ট্রেন এত ধীরে চলছিলো মনে হচ্ছিলো হেঁটে আসলেও আগে পৌঁছতাম বদরপুর।যাক ৩০এপ্রিল বদরপুর নেমেই বাসে উঠতে হলো।আমরা রাত সাতটায় ধর্মনগর এলাম।তারপর ভাগ্যিশ ম্যাক্স পেলাম না হয় ধর্মনগরই হতো আজকের জার্নির সমাপ্তি।অগত্যা গাড়ি পাওয়ায় রাত সাড়ে নয়টা আমরা কুমারঘাট এলাম।প্রাণে জল এলো।গোপালদা চলে গেলেন সায়দাবাড়ি।আমরা অশোকদা অভীক সঞ্জীবসহ আমাদের দেও অববাহিকার হালাইমুড়ায় যাত্রা সমাপ্তি দিলাম।আমাদের এবারের
আসাম উত্তরবঙ্গের কবিতা যাপন ছিলো বৈচিত্র্যময়।নানা ঘটনায় অভিজ্ঞতায় ভরপুর।
মাঝেমাঝে এমন কবিতা যাপনই জীবনকে নতুন করে পাঠ করা যায় কাছে থেকে।বলতে পারি পনেরদিন তো পাঁচজনের পরিবারের বাইরে পরিবার হয়ে কাটানো গেলো তাও বা কম কিসে।শুধু কবিতার জন্য এ জীবন এরকমই হোক না বাজি ধরা।শুধু কবিতার জন্যই হোক এক জীবন।
৫:৬:২০১৮
রাত:৮টা
কুমারঘাট।
0 Comments