লালমাটির দেশ বীরভূম :প্রসঙ্গ বোলপুর শান্তিনিকেতন 

গোবিন্দ ধর 

বোলপুর স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার শাখা গঠন:৩১:০৮:২০১৯
-----------------------------------------------------------------------

স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবারের বোলপুর শাখার কার্যকরী কমিটি গঠন হয় দীর্ঘ আলোচনার পর।নিচে তা উল্লেখিত হলো।

সৈয়দ গোলাম মোওলা,সভাপতি
সুকান্ত পাল,সহ-সভাপতি
অগ্নিমিত্রা পান্ডা,সম্পাদক
স্বাগতা মুখার্জি, সহ -সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ 
শ্বাশতী চ্যাটার্জী,সাংস্কৃতিক সম্পাদক 
লক্ষ্মীকান্ত কর,সাহিত্য ও মুখপত্র সম্পাদক

আরো কয়েকজনের উপস্থিতিতে বোলপুর শাখা গঠন হলো।আগামীদিন শাখা বোলপুরে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন।কবিগুরুর নিকট স্রোত। অগ্নিমিত্রা পান্ডার সম্পাদনায় ও সৈয়দ গোলাম মোওলার সভাপতিত্বে স্রোত বোলপুর শান্তিনিকেতনে আগামীদিন এক নজির গড়বে আমাদের বিশ্বাস। 

খোয়াই বা শনিবারের হাট:৩১:০৮:২০১৯
------------------------------------------------------

বিশ্বের দূর দূরান্ত বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির যে টানে,বোলপুর শান্তিনিকেতনের  সেই অন্যতম জায়গাটির নাম “খোয়াই”।যেখানে প্রকৃতির সাথে হৃদয় মিলে মিশে এক অদ্ভুত অনুভূতির সাড়া জাগায়।সোনাঝুড়ি জঞ্জলে যেখানে মন হারিয়ে যায়।শনিবারের “খোয়াই”এর হাটে"র ও আছে এক অন্যরকম মাহাত্য।বেশ কিছু দূর্লভ জিনিষও যা এই হাটেই চোখে পরবে।এক অন্যরকম আকর্ষন…..
“বাউলের” গানে “লাল মাটির” টানে বার বার মন ছুটে যাবে “খোয়াই”এর পানে।বিচিত্র রকমের আনন্দ এখানে বিরাজ করে।আছে সারাদিন ধরে সাঁওতালি মেয়েদের ঝুমুর নৃত্য।

প্রকৃতি ভবন:৩১:০৮:২০১৯
-------------------------------------

এখানে প্রাকৃতিকভাবে ভাস্কর্যগুলো তৈরী হয়েছে এগুলোই এখানে সংরক্ষিত। আমাদের স্রোত পরিবারের গৌরব, গৈরিকা,সুমিতা, পদ্মশ্রী ও আমি আমারকুঠির দেখতে যাওয়ার সময় এক ঝলক ডু মারি।পেয়ে যাই ঝাড়খন্ড নিবাসী বিলাসপুরের কবি সোমা লাহিড়ীকে।বিলাসপুরে স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার এর সম্পাদক।তিনি এসেছিলেন আন্তর্জাতিক কবিতার একটি অনুষ্ঠানে। সোমাদিই আমাদের দেখে ডাকলেন।তাতে লাভ হলো প্রায় দুবছর পর দেখলাম। এটা ঠিক না চাইতেই পেয়ে গেলাম।
বেশ লাগলো।

রিংকি মাল:০১:০৯:২০১৯
------------------------------------
বীরভূমের রামপুরাহাট থেকে নলহাটি,নিউ মুরারী গ্রামের মেয়ে রিংকি। Saecom Skills University কলেজে সিক্যুরিউটি গার্ডের চাকুরী করেন শান্তিনিকেতন। বাবা স্বাধীন মাল।মা দ্বৈবকী মাল।পড়ালেখা বি এ থার্ড ইয়ার।পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।৭৫০০টাকা বেতনে ইউনিভার্সিটিতে চাকুরী করে রিংকি।চার বোন।এক ভাইসহ সাতজনের পরিবারের ছোট মেয়ে।সব বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও নিজে বাবার পচন্দের পাত্রকেই বিয়ে করবেন বললেন। ভাইও বিয়ে করে নিয়েছে।তবুও নিজে কিছু করবেন এটাই লক্ষ। তার উদ্দামতাকে শ্রদ্ধা আমার।
মনোরম কলেজটি।ভালো লাগলো।রিংকির বিয়েও ঠিক হয়ে আছে। সোনা মাল নামের পঞ্চায়েতে চাকুরী করা ছেলেটির সাথে।তারপর রিংকির স্বপ্ন এক আকাশ পাখির মতো উড়ে চলা।শান্তিনিকেতন টুরিস্ট সেন্টারের আমাদের পাশের রুমে দুটি মেয়ে থাকে।তাদেরই একজননএই রিংকি মাল।সহজ সরলতাই মেয়েটির পরিচয়।

আশ্রম,শান্তিনিকেতন -৩১:০৮:২০১৯
--------------------------------------------------

নূর মোহাম্মদ হরফে নূর বাবা।তিনি গাইলেন সিরাজুদ্দৌলাহ নাটকে সিরাজ যখন পরাজিত হয়ে নিজ কন্যা ও স্ত্রীর সাথে বোরখা পরিহিত অবস্থায় নদী পের হতে নৌকোয় উঠছেন তখন গাওয়া হয়েছিলো নাটকের বিবেকের কন্ঠে নেপথ্যে গানটি :

"নদী ভরা ঢেউ 
বুঝে না তা কেউ
কেন মায়ার তরী বাও বাও বাওরে।'

নূর বাবাসহ গৌরব বেশ কিছু ছবি তুললো।

নদী ভরা ঢেউ 

নদী ভরা ঢেউ বোঝ নাতো কেউ
কেন মায়ার তরী বাও বাও গো
ভরসা করি এ ভব কাণ্ডারী
অবেলার বেলা পানে চাও চাও রে ।।

বাইতে জাননা কেন ধর হাল
মন মাঝিটা তোর হল রে মাতাল
বুঝিয়া বলো তারে
যেতে হবে পারে
হালটি ছাড়িয়া এখন দাও দাও রে ।।

বাইতে ছিল তরী পাগলা ভবা
ভাঙা তরী জলে জলে ডুবা ডুবা ।
চুবানি খেয়ে ধরেছে পায়ে
ওরে কাণ্ডারি এখন বাঁচাও বাঁচাও রে ।।

গানটি সুর করেন ভবা পাগলা।

 কোপাই নদীর নিকট:০১:০৯:২০১৯
-------------------------------------------------

বীরভূমের কংকালি মন্দির। তারই পাশ ঘেষে চলছে তিরতির কোপাই।
কোপাই নদীর অপর নাম শাল নদী হল ময়ূরাক্ষী নদীর একটি উপনদী।এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতন, বোলপুর, কঙ্কালীতলা ও লাভপুরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। এটি একটি ছোটো নদী। তবে বর্ষাকালে এই নদীতে বন্যা দেখা যায়।

 আমাদের ছোট নদী

আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে৷
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি৷

চিকচিক করে বালি, কোথা নাই কাদা,
এক ধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা৷
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক৷

তীরে তীরে ছেলেমেয়ে নাহিবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে৷
সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আঁচলে ছাঁকিয়া তারা ছোট মাছ ধরে৷

আয়াঢ়ে বাদল নামে, নদী ভরো ভরো,
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর৷
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উত্‍সবে জেগে ওঠে পাড়া৷

কবিতাটি কোপাই নদীকে নিয়েই রবীন্দ্রনাথ লেখলেন।

রায়পুর ভুতের বাড়ি:বোলপুর:০১-৯-১৯
----------------------------------------------------

আজকের সকাল শুরু হয় রায়পুর ভুতের বাড়ি দেখতে। ঐতিহাসিক স্থান, প্রাচীন মহল বা ভগ্ন অট্টালিকা-মন্দির আমাকে টানে। বোলপুরের রায়পুর-সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রায়পুর গ্রামে রয়েছে এরকমই এক নিদর্শন। সেখানকার লর্ড সিনহার জমিদারি ও রাজবাড়ি সম্পর্কে গল্পটা জানতাম। মোক্ষদ্বার বা সুরথেশ্বর মন্দিরকে পিছনে ফেলে রায়পুর গ্রামের রাস্তা ধরলাম। একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল অনেকটা জায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিনমহলা সুবিশাল ভগ্ন অট্টালিকা।  প্রায় দু’শো বছরের পুরনো রাজবাড়ি আজও দৃষ্টি আকর্ষণ করছে ভীষণভাবেই। ভেতরে ঢুকেই বিশাল এক প্রাঙ্গণ চোখে পড়লো। তাঁর একপাশে রয়েছে বহুদিন ধরে ব্যবহার না করা একটি কুয়ো। প্রাঙ্গণের চারপাশে সারি সারি দালান ঘর। তীব্র ফুলের গন্ধ  অনুসন্ধানী চোখকে ছাদের কার্নিশের দিকে তাকাতে বাধ্য করলো। একটি একটি স্বর্ণচাঁপা ফুলগাছ সেই কার্নিশ ছাড়িয়ে উঠে গিয়েছে আকাশের দিকে। এককালের এই গৌরবময় রাজবাড়ির আজ শুধু কঙ্কালটাই দাঁড়িয়ে আছে। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠলাম, যেটি আরও বিপজ্জনক স্থান। দেখলাম বেশিরভাগ ঘরের ওপরের ছাদ ভাঙা। এখান থেকে গোটা রাজবাড়িটাকেই এক ভুতুড়ে বাড়ি বলে মনে হচ্ছে। কে জানে? রাতে এখানে কেউ থাকলে হয়তো শুনতে পাবেন নাচমহল থেকে ভেসে আসা সঙ্গীতের মূর্ছনা অথবা অতৃপ্ত আত্মাদের ফিসফিস। ঘুরতে ঘুরতে চলে এলাম জমিদারদের কূলদেবতা নারায়ণের মন্দিরে। বিরাট চাতালের ঠিক মাঝেই মন্দিরের অবস্থান। এখানেই নাকি বিখ্যাত ‘খন্ডহর’ সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল। এই চাতালে বসে জরাগ্রস্ত রাজবাড়ির দিকে তাকিয়ে মন চলে গেল দু’শো বছর আগের ইতিহাসকে খুঁজতে।
 
জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির জমিদার মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই সময় বোলপুরে বিশ একরের এক বিশাল জমি পছন্দ হয়ে যায়। জমিটি ছিল ভুবন ডাকাতের বাড়ির কাছে। মহর্ষি দেখলেন সেখানে ছাতিম গাছের তলায় বসে নিরুপদ্রপে ধ্যান করা যাবে। এই স্থানটি ছিল রায়পুরেরই এক শরিক জমিদার ভুবনমোহন সিংহের তালুকের অন্তর্গত। উদার মানসিকতার মানুষ ছিলেন এই ভুবনমোহন। তিনি বন্ধু দেবেন্দ্রনাথকে দান করে দিতে চাইলেন এই জমি। ওদিকে নাছোড়বান্দা দেবেন্দ্রনাথও কিছুতেই বিনা পয়সায় জমি নিতে নারাজ। অবশেষে নামমাত্র দামে জমিটি ভুবনমোহন হস্তান্তরিত করলেন বন্ধুকে। ওই জমিতেই শান্তিনিকেতন আশ্রমের প্রতিষ্ঠা করলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, যা আজ বিশ্বভারতী নামে পরিচিত সকলের কাছে।
 
মন চলে যায় ১৮৬৩ সালের ২৪ শে মে জমিদার সিতিকণ্ঠের অন্দরমহলে। তিনি আজ বড়ই খুশি। তাঁর পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে। কূলদেবতার পায়ে পুজো দিয়ে নাম রাখা হল সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিংহ। সেদিন কি কেউ ভেবেছিল যে এই ছেলেই সাড়া বিলেত জুড়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন? ইনি বিখ্যাত হন লর্ড সিনহা নামে। ইংল্যান্ডে ৫ বছর ধরে আইনে শিক্ষা লাভ করে তিনি ফিরে আসেন দেশে। ইনিই প্রথম ভারতীয় যাকে ব্রিটিশরা অ্যাডভোকেট জেনারেল অব বেঙ্গল পদে বসান। তৎকালীন সরকার বাহাদুরের থেকে তিনি ‘নাইট’ উপাধিও লাভ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই সত্যেন্দ্র প্রসন্ন সিংহ পরিচিত হন লর্ড সিনহা নামে। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে রায়পুরের রাজা ঘোষণা করেন। ১৯১৯ এ ব্রিটেনের সংসদের হাউস অব লর্ডসের ভারতীয় সদস্য হন। ১৯২৮ এর ৪ মার্চ রায়পুরের এই ভূমিপুত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ইতিহাস এক নির্মম সময়ের সাক্ষী। এখানে বহু নাটক সিনেমার শুটিং হয়েছে।তার মাঝে দেবদাসও আছে।

তথ্য:গোগোল থেকে নেওয়া।

বোলপুর শান্তিনিকেতন রেলওয়ে স্টেশন:০২:০৯:২০১৯
--------------------------------------------------------------------------
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ২রা সেপ্টেম্বর ২০১৯ আমরা বদরপুরের উদ্দেশ্যে সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে উঠবো।এই স্টেশনের সাথে বাঙালীর চির যোগাযোগ। রবীন্দ্রনাথ ও বোলপুর আমাদের নিকট পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।বীরভূম জেলারএকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন এই স্টেশনের দ্বারা কলকাতা এবং অন্যান্য বড় শহরের সাথে যুক্ত। স্টেশনটিতে ৩টি প্ল্যাটফ্রম আছে। পশ্চিমবঙ্গের তথা বাঙালি জাতির একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে শান্তিনিকেতন একটি বিখ্যাত স্থান। বোলপুর স্টেশনটি সেই স্থানের দ্বারকর্তার ভুমিকা পালন করে।বোলপুর কদিন মনের আনন্দে ছিলাম।আজ সকালটা কেউ ছাড়তে চাইনি।
আমরা কুমারঘাট আসছি।আমাদের মননে রবীন্দ্রনাথ। সুতরাং ছেড়ে দিলেও ছাড়তে কি আর চায় মন।

এছাড়াও বোলপুর শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন,কলা ভবন,বিশ্ব বাংলা হাট,রাম কিঙ্কর বেজের শিল্পকলা,সাঁওতালি নৃত্য, আমার কুঠির,সুবর্নরেখাসহ প্রতিটি শিল্প সম্ভার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম।অসংখ্য ছবি তুলাম।রাভড়ি আর মিষ্টি দই খেলাম যা বহুদিন মুখে লেগে থাকবে।বেশ কিছু কেনাকাটাও করা হলো।বই বিনিময়সহ অনেক ব্যস্ততায় তিরিশ থেকে ২রা সেপ্টেম্বর সকাল অব্দি বোলপুরের আবেশ কাটিয়ে আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘায় চাপলাম।মন চাইলো না আসতে।তাও নদী ভরা জল তার আপন গতিতে মিশে যায় সাগরে।আমরাও সকল পিছুটানের পরেও সংসারের সঙ্ঘে আবার ঘানি টানতে বাড়ির পথে রেলে চাপি।তবুও শান্তিনিকেতন ডাকে। এই ডাক অস্বীকার করার উপায় নেই।খোয়াই হাটে বারবার হারিয়ে গেলেও মনে হয় হারতেই ভালো লাগে।

০২:০৯:২০১৯
মালদা,পশ্চিমবাংলা।

0 Comments