কুমারঘাটের সাহিত্যচর্চা ||গোবিন্দ ধর
কুমারঘাটের সাহিত্যচর্চা
গোবিন্দ ধর
কুমারঘাট নামকরণ সংক্ষিপ্ত বিবরণ
আমাদের ছোটবেলা গুণ টানা নৌকা মনুর জলে ভেসে স্রোতের বিপরীতে কী ভীষণ কষ্টে মাঝি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেখেছি। তখন নদী নির্ভর জীবনযাত্রা ছিল। আমার বেড়ে ওঠা রাতাছড়া গ্রামে। জীবনের ছোটবেলাকে সরিয়ে ২০০৩ সালে কুমারঘাটে বসবাস করছি। বহু পুরনো কথা, ইতিহাস আমার অজানা। বিভিন্ন জনের সাথে আলাপ-আলোচনা করে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কুমারঘাটের একটা সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস তৈরী হোক। এরই ফলশ্রুতি এই নিবন্ধ।আসলে কুমারঘাট ও পাবিয়াছড়া দুটো গ্রাম পঞ্চায়েতকে কেন্দ্র করেই এই অঞ্চলের লোকজনের বসবাস।কুমারঘাট নামটির প্রচার শুরু হয় গ্রীপ কোম্পানির আসাম আগরতলা রাস্তা তৈরীর সময়।দেওনদের পশ্চিম পাড় কুমারঘাট নামেই পরিচিতি ছিলো। পূর্ব পাড় পাবিয়াছড়া নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মূলত পাবিয়াছড়া নামে ছড়াটিকে কেন্দ্র করেই বিস্তৃর্ণ অঞ্চলের নাম পাবিয়াছড়া হয়।পরবর্তী সময় আসাম আগরতলা রাস্তা তৈরীর সময় পাবিয়াছড়াসহ সমগ্র অঞ্চলই কুমারঘাট নামে পরিচিতি হয়।সরকরী দলিল দস্তাবেজও সেরকম বিভিন্ন দপ্তরে লেখা শুরু হয়ে অদ্যকার কুমারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত হয়ে ওঠে কুমারঘাট মহকুমা শহর।
সাংস্কৃতিক চর্চা
আমি চেষ্টা করছি কুমারঘাট মহকুমার সাহিত্যচর্চার একটা রূপরেখা তুলে ধরতে।
কুমারঘাট ছিল একটা গাঁওসভা। দেও এবং মনু নদীর সঙ্গমস্থল। মনোরম প্রকৃতি। দেও- ব্রীজ নেমেই ৪৪ নং জাতীয় সড়ক। এই সড়ক থেকে চার দিকে তাকালে কুমারঘাটকে নিম্নভূমি বলে মনে হলেও আসলে যে দিকেই তাকান, আশপাশ উঁচুনিচু টিলায় বিস্তীর্ণ এই অঞ্চল জাম্পুই রেঞ্জ এর সাথে যুক্ত ভৌগোলিক দিক থেকে। অথচ শাখান পাহাড় থেকে কলকল মনু এসে বিধৌত করে চলেছে তার দু'কূলের জনবসতি। মনু আর দেও আমাদের কৃষিনির্ভর সমাজে কৃষকের প্রাণ। তাই মনুর চরে এখনো আঁখ ক্ষেত আমাদের দোলা দেয়। পানীয় জলের চাহিদাও দেও-মনু পূরণ করে দিচ্ছে। জলই জীবন। যদিও মাঝে মাঝে লোভী কিছু শিকারী মানুষ নদীতে বিষ প্রয়োগ করেন, তবুও নদীমাতৃক লোকজ কৃষ্টি-সংস্কৃতির টান অনুভব আছেই আমাদের হৃদয়ে। পদাবলী, ধামাইল, হাসন, বাউল, লালনের পাশাপাশি এই অঞ্চলের মাটির ডাকে সাড়া দিয়েছেন কবিয়াল বিষ্ণুরমণ দত্ত। চারণ কবি বিশ্বেশ্বর দাস, চারণ কবি রজনীকান্ত দাস। গ্রামের হাটগুলোতে সন্ধ্যায় কবি গান শোনার লোকের অভাব হতো না, আজ যদিও কবিতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পাঠক। হয়তো দুর্বোধ্য বলে, হয়তো কবিতার নিবিষ্ট পাঠকের অভাবে আমাদের কবিতা ততোটা বোধগ্রাহ্য হচ্ছে না। সময়ই বলবে সময়ের কথা। কিন্তু কাব্য সংকলন পাঠ না করেই কবিতার ঘাড়ে অভিযোগ না চাপানোই ভালো। কবিতাতো আসলে অঙ্ক নয়। সিঁড়ি ভাঙ্গা সরল নয়। ক্রমাগত পাঠই কবিতার রস সঞ্চারের মাধ্যম। আমরা দেখেছি, যে কবিতা একজন পাঠক পাঠ করলে দুর্বোধ্য ভাবেন, সেই একই কবিতা একজন আবৃত্তিকার এই পাঠককে আবৃত্তির মাধ্যমে আনন্দ দিতে পারেন। নদী নির্ভর কুমারঘাটও এক সময় সড়ক কেন্দ্রিক। ব্যস্ত মানুষ। এখন আর গুণ টেনে দেও-এর উজান বেয়ে মাঝি ভাই নাও টানেন না। কুমোর নাও নিয়ে মাটির হাঁড়ি- বাসন ঘাটে ভীড়ান না। এখনো হাঁড়ি-কলসি বাজারে আসে। অথচ, ইতিহাস ভুলা যায় না। না লিখেও যে ইতিহাস ধ্বংস হয় না কালের সাথে সাথে লোক মুখে থাকে, তা বিস্মৃত হয় না। দেও নদীর ঘাটে কুমোররা মাটির তৈরী জিনিস-পত্র বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে বসতো। কালক্রমে হয়ে যায় কুমোর কুমার ঘাট কুমারঘাট। যদিও কুমারঘাটের সাথে রাজা কুমার মাণিক্যের নামও জড়িত। কেউ কেউ বলেন, কুমার মাণিক্যের নাম থেকেই কুমারঘাট নাম হয়েছে। কুমারঘাট অঞ্চলের আশেপাশে চাকমা জনজাতির বাস বর্তমান সময়ও আছে। কুকিদেরও বসবাস ছিল, তাই কেউ কেউ দাবি করেন, কুমার কুকির নাম থেকেই কুমারঘাট নামের উৎপত্তি। আবার অন্য কয়েকজনের অভিমত, দারচৈ এ. ডি. সি. ভিলেজ অঞ্চলের দার্লং সম্প্রদায়ের রাজা শাসনকর্তা ছিলেন। এই ভাবে নানা জনশ্রুতি থেকে বুঝা যায়, এই অঞ্চলের প্রাচীনত্বের ইতিহাস।
কুমারঘাটে ১৯৭৯-৮০ সালে সাহিত্য চর্চার সূচনা হয়। কবিতা চর্চার মাধ্যমেই তার সূচনা। প্রথম কবিতাপত্র 'মণিহার'। সম্পাদক ছিলেন রতিকান্ত দাশগুপ্ত। সভাপতি গোবিন্দ ভট্টাচার্য। মণিহারে কবিতা লিখতেন রতিকান্ত দাশগুপ্ত, গোবিন্দ ভট্টাচার্য, দীলিপ ঘোষ, নেপাল রায়, মলয়কান্তি দত্ত, নিরঞ্জন ঘোষ, বিপুলরঞ্জন আচার্য। মলয়কান্তি দত্ত ও নিরঞ্জন ঘোষ ইংরেজী কবিতা লিখতেন। বিপুলরঞ্জন আচার্যের টগবগে কবিতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দীলিপ ঘোষ ছাত্র অবস্থায়ই কবিতা লেখা শুরু করেন।
দ্বিতীয় সাহিত্যপত্র তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের দেওয়াল পত্রিকা 'অন্বেষা'। সম্পাদক বিষ্ণুলাল ঘোষ। এতে সম্পাদক সহ চর্চা করতেন বিশ্বনাথ দত্ত। ১৯৮০ সাল বা তার আগে-পরে সুভাষ চন্দ নিয়মিত তথা সংস্কৃতি দপ্তরের দেওয়াল পত্রিকাতে কবিতা লিখতেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে কবিতার তার দৃপ্ত পদচারণা সচেতন পাঠক আজও মনে করেন।
১৯৮২ সাল নাগাদ প্রকাশিত হয় 'ধ্রুবতারা'। সম্পাদক মাণিকলাল দাস। চর্চা করতেন ভবেশরঞ্জন গুহ। একে একে প্রকাশিত হয় 'প্রয়াস' ফটিকরায় থেকে। সম্পাদক ছিলেন মণিকা চক্রবর্তী। নীলিমেশ পাল, প্রদীপ মুখার্জী ছাড়াও এতে চর্চা করতেন গোবিন্দ ধর, সত্যজিৎ দত্ত, অজিতা চৌধুরী, সন্তোষ রায়। এই সময়েই প্রকাশিত হয় গোবিন্দ ধরের সম্পাদনায় 'স্রোতম্বিনী' সাহিত্য পত্র। এতে মোঃ আলাল উদ্দীন, ভানুলাল দত্ত, গোকুল ধর সহ নীলিমেশ পাল, মিলনকান্তি দত্ত সহ ত্রিপুরার অনেকেই কবিতা, গল্প চর্চা করেছেন।
তারপর তপন বণিকের সম্পাদনায় 'নিবেদন', সুদর্শন বৈদ্য সম্পাদিত 'নিশানা' প্রকাশিত হয়। চর্চা করতেন অবনী দেবনাথ, কাজল চক্রবর্তী, গোবিন্দ ধর। ফটিকরায় থেকে শংকর বসুরায় সম্পাদিত 'একাল' পত্রিকা একটা মাত্র সংখ্যার পরই বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৩ সালে কুমারঘাটে সাহিত্য চর্চার জোয়ার আসে। নীলিমেশ পাল, গোবিন্দ ধর 'এই পক্ষ' সাহিত্য আড্ডার আয়োজনের মাধ্যমে কুমারঘাটে সাহিত্য চর্চা বেগবান হয়। এই সময় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আড্ডায় উপস্থিত হতেন। নীলিমেশ পাল, গোবিন্দ ধর, পদ্মশ্রী মজুমদার, সুমিতা পালধর, গোকুল ধর, সুধাংশু সরকার, বিজয়লক্ষ্মী সিংহ, নীলিমা দেব, বিধানচন্দ্র রায়, কাজল চক্রবর্তী, মিলনকান্তি দত্ত, ডাঃ সৈয়দ মোয়াজেজম আলী, নীলমণি দে সহ আরো অনেকেই। এক সময় ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততার মতোই 'এই পক্ষ' সাহিত্য আড্ডা বন্ধ হয়ে যায়।
২০০৭ সালে শুরু হয় 'স্রোত সাহিত্য আড্ডা'। এখনো প্রতি ইংরেজী মাসে চলছে পাক্ষিক এই আড্ডা। আড্ডায় অংশ নেন মিলনকান্তি দত্ত, সমর চক্রবর্তী, বিধাত্রী দাম, পদ্মশ্রী মজুমদার, গোবিন্দ ধর, সুমিতা পালধর, সম্পা বণিক, সুপ্রিয়া দাস, উমা মজুমদার, সন্ধ্যা দেবনাথ, মাখনলাল দেবনাথ, সৌভিক পণ্ডিত, জয়ন্তকুমার ঘোষ, সুতপা কর, জয়া দত্ত, প্রদীপ্তা পাল সহ অনেকেই। এই আড্ডা কেন্দ্রিক কবিতা চর্চার পাশাপাশি গল্প, প্রবন্ধ চর্চা হয়।
কুমারঘাটের রাতাছড়ায় সর্ব প্রথম সাহিত্য আড্ডা কেন্দ্রিক সাহিত্যপত্র 'স্রোতম্বিনী' প্রকাশ হয় ১৯৯৫ সালে। এই সময় স্রোতম্বিনী থেকে যাত্রা ও নাটক মঞ্চস্বও হয়েছে। আড্ডায় অংশ নিতেন রাজকুমার দত্ত, কাজল মালাকার, শিবুরঞ্জন দে. গোকুল ধর, গোবিন্দ ধর প্রমুখ।
কুমারঘাটের সাহিত্য চর্চায় ফটিকরায়ের 'গ্রন্থাগার অন্নেষা' উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। এ ছাড়া বিবেকানন্দ সাহিত্যকেন্দ্র, উদ্দীপ্ত সংগ্রহশালা'সহ ভবতারিণী পাঠাগার স্মরণযোগ্য অবদান রেখেছে।
২০০৭ সালে 'কবিতাঘর', ২০০০ সালে 'কুসুম', ১৯৯৫ সালে 'স্রোত' প্রকাশ গোবিন্দ ধরের সম্পাদনায় কুমারঘাটে নব দিগন্তের সূচনা করেছে। 'স্রোত' সাহিত্যপত্রে ত্রিপুরা-আসাম-পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য সকল কবি সাহিত্যিকদের লেখা ছাপা হয়েছে। 'স্রোত প্রকাশনা' এখন অব্দি প্রায় ১০০ (এক শত) শিরোনামের বই প্রকাশ করেছে। কবিতা সংকলনের পাশাপাশি আছে উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প, লোককাহিনী, শব্দকোষ, 'অভিধান সহ বিবিধ গ্রন্থ।
রাতাছড়া থেকে সর্বপ্রথম কাব্য সংকলন 'মেঘ বৃষ্টি রোদ' প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে।। সম্পাদক গোবিন্দ ধর। উত্তর পূর্বাঞ্চলের চল্লিশ জনের কবিতা ছিল এই সংকলনে। ২০০৭ সালে গোবিন্দ ধর ও পদ্মশ্রী মজুমদার সম্পাদিত 'গোপন জ্যোছনা' কুমারঘাটের পাঁচ জন কবির কবিতা প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে গোবিন্দ ধর সম্পাদিত 'পীযূষ রাউত: উজজ্জ্বল উদ্ধার' 'হিমাদ্রি দেব সমগ্র' স্রোত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত।
কুমারঘাটের প্রথম উপন্যাস 'কেউ সুখী নয়' লেখক মাণিক দাস। প্রকাশিত নাটক- 'রক্তে ঝরা নদীগাঁ' হীরেন্দ্র দাস রচিত। নাটক লেখেন অভিজিৎ চক্রবর্তী, কাজল মালাকার, নীলিমেশ পাল, শিবুরঞ্জন দে, গোবিন্দ ধর। গোপালকৃষ্ণ সেন এর কাব্য সংকলন 'স্বর্ণমাখা রোদ' এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীগোপাল ঘোষ গোস্বামীর 'দেবভূমি শ্রীহট্ট ও স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনলিপি' ২০০৪ সালে প্রকাশিত। প্রকাশ স্থান- - নতুন বাজার, পূর্ব কাঞ্চনবাড়ি।
কবিতা চর্চায় নিরলস আছেন রবীন্দ্রকুমার সিনহা, নীলিমেশ পাল, ইপ্সিতা ঘোষ, পারমিতা ভট্টাচার্য, পিংকী বর্ধন, শেখর ভট্টাচার্য, গোকুল ধর প্রমুখ।
প্রবন্ধ চর্চায় স্বপনকুমার বৈষ্ণব, দীলিপ ঘোষ, তপন বণিক, নন্দন পাল, গোবিন্দ ধর, নীলিমেশ পাল প্রমুখ।
বিক্ষিপ্ত ভাবে আমরা যাদের লেখাপত্র পাই তাদের মধ্যে শর্মিষ্ঠা দত্ত, স্বরূপা দত্ত,আলাল উদ্দীন, শিবুরঞ্জন যে, সংকর বসুরায়, প্রদীপ মুখার্জী, একটি দেবনাথ, আব্দুল বারিক, অমর সিনহা, প্রওরীর শুরবৈদ্য প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
১৯৮৭ সালে ফাটকরামের 'গ্রন্থাগার অন্বেষা'' আয়োজিত তাৎক্ষণিক ছড়া লেখায় প্রারমেশ পাল অনেকগুলো ছড়া লেখেন। পরে তা থেকেই 'সুখবুণ' ছড়া সংকলন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া এন কিং. বিজয়লক্ষ্মী সিংহের গল্প সংকলন প্রজাপতি জীবন' ভালো গল্প সংকলন।
কুমারঘাট সাহিত্যচর্চায় সাংস্কৃতিক অন্যান্য শাখার মতোই ক্রমশঃ তার উল্লেখযোগ্য জায়গা আদায় করে নিচ্ছে, তা আমরা জোরালো ভাবেই দাবি করতে পারি। সময়ের দাবি মেনেই কুমারঘাট ত্রিপুরার সাহিত্যচর্চার এক উর্বর ভূমি। 'স্রোত' এর টানে তাই ১লা সেপ্টেম্বর ২০১২, ছুটে আসেন কলকাতা থেকে কবি সুবোধ সরকার সহ একশো জনের মতো কবি সাহিত্যিক। এক মঞ্চ থেকে প্রকাশিত হয় ১৪ (চৌদ্দ) টি নতুন বই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হোন কবি অশোকানন্দ রায়বর্ষন, অলক দাসগুপ্ত, অপাংশু দেকনাথ, গোগেশ চক্রবর্তী, জয়গোবিন্দ দেবরায়, জ্যোতিময় রায়, নির্মল দত্ত, বিশ্বজিৎ দেব, স্নেহময় রায়চৌধুরী, পীযূষ রাউত, গল্পকার দেবব্রত দেব, নাটাকার বিদ্যুৎজিৎ চক্রবর্তী, শেখর দেবরায়, ইতিহাস বিদ অমলেন্দু ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠান সম্মান পান ককবরক সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ শ্যামলাল দেববর্মা, উপন্যাসিক শ্যামল ভট্টাচার্য, কবি মিলনকান্তি দত্ত, কবি গল্পকার শঙ্খশুভ্র দেববর্মন এবং কবি ও আবৃত্তি শিল্পী বিধাত্রী দাম। উপস্থিত ছিলেন আবৃত্তি ও নাট্য শিল্পী রাখেয়া রায়। অনুষ্ঠানে ছিল নাট্য ও অক্ষন কর্মশালা। উপস্থিত হন প্রশিক্ষক হিসেলে গৌতম সিনহা, সুজন পাল ও সৌভিক পড়িত, উমা মজুমদার।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময় কুমারঘাটে চাকুরী সূত্রে ছিলেন কবি প্রদীপবিকাশ রায়, বিনয় সিনহা মৃদুল বণিক, বনবিহারী বড়ুয়া, বিশ্বজিৎ দেব,সৈয়দ মোয়াজ্জম আলী প্রমুখ।
পেচারতলেও সাহিত্য চর্চা ছিল ১৯৭০ সাল থেকেই। কবি জনেশ চাকমা 'জোনাকি'তে কবিতা লিখে বিখ্যাত। বনবিহারী কড়ুয়াও বড়ুয়া ভাষায় কবিতা লেখেন। চাকমা ভাষায়ও কবিতা চর্চা হয়। 'দেও গাঙ' বলে একটা সাহিত্য পত্রিকা কুমারঘাটের চাকমা ভাষার দলিল।।
রাজধানীর বাইরে কুমারঘাটে ১৯৯৪ সালে প্রথম বইমেলা কুমারঘাটের সাহিত্য চর্চাকে বেগবান করে। বইমেলা স্মরণিকা 'সিদং' একটা সংখ্যা প্রকাশিত হলেও উল্লেখযোগ্য সাহিত্য পত্রিকা হবার সুপ্ত প্রবাহ ছিল তার বুকে বলা যায়। এ ছাড়াও ২০০৭ সালে সাপ্তাহিক সংবাদ পত্রিকা 'এই সময়' প্রকাশ হয়, সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি মজুমদার। 'এই সময়' শারদ সংখ্যাও প্রকাশিত হয়। এই ভাবে কুমারঘাটের সাহিত্যচর্চা ধীরে ধীরে ত্রিপুরার বাইরেও তার প্রভাব ফেলেছে। আমাদের বিশ্বাস কুমারঘাট এক সময় দেও মনুর জলের মতো সামনের দিকেই প্রভাহিত হবে।কিন্তু দেখানো পথে কেউ কেউ এত আঁতেল চ্যাওম্যাও শুরু করে দিয়েছেন যেন সাহিত্যের ইতিহাস গড়ছেন উনারা এমন ভাব দেখাচ্ছেন।সাহিত্যের প্রবাহ নদীর স্রোতের মতো।একা কারো জমিদারি নয় সে কথা বেমালুম ভুলে বসে আছেন উনারা।
0 Comments