পাবিয়াছড়া:জনশ্রুতি হলো প্রচুর পাবদামাছ পাওয়া যেতো

গোবিন্দ ধর 

পাবিয়াছড়া নাম বহু পুরাণো।ঠিক কেন কুমারঘাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নাম পাবিয়াছড়া হলো সে ইতিহাস লোকমুখে প্রচলিত শুধু। আর তেমন কোনো তথ্য তেমন নেই। 
পং ছড়ার দক্ষিণ পচ্চিম পাড়ের পাহাড় সিদং ছড়ার সংলগ্ন অঞ্চল থেকে পাবিয়াছড়া লোকালয়ে আসতে থাকে লকলক করে।জল নামতে নামতে এসে দেওনদে মিশেছে। জনশ্রুতি আছে পাবিয়াছড়ায় এক সময় প্রচুর পাবদামাছ পাওয়া যেতো।তা থেকেই এই ছড়ার নামকরণ হয়।আর পাবিয়াছড়ার নাম থেকেই পাবিয়াছড়া বাজার ও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নাম কালক্রমে পাবিয়াছড়া হয়।বহু পর গ্রীপ কোম্পানি আসাম আগরতলা রাস্তার কাজের সময় দেওনদের পশ্চিম পাড়ের কুমারঘাট নামটি পাবিয়াছড়া অঞ্চলের কাজের সময় সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিলে তা লোকমুখে প্রচলিত হয়ে এখন পাবিয়াছড়াও ধীরে ধীরে কুমারঘাট হয়ে গেছে। পূর্বে দেওনদের পশ্চিম পাড়ের নাম কুমারঘাট আর পূর্ব পাড়ের নাম পাবিয়াছড়া ছিলো।মূলত পাবিয়াছড়ার নাম অনুসারে পাবিয়াছড়া হয় এই অঞ্চল। কিন্তু গ্রীপ কোম্পানির রাস্তা নির্মাণের সময় তা কুমারঘাট সাইনবোর্ডকে কেন্দ্র করে ধীরে ধীরে প্রচলিত হয় কুমারঘাট। পাবিয়াছড়া ও কুমারঘাট মূলত দুটো গ্রাম পঞ্চায়েত ছিলো।১৯৮৮ সালে নগর পঞ্চায়েত হয়।২০১২ সালে ত্রিপুরা আটটি জেলা ঘোষণা হলে কুমারঘাট হয় মহকুমা। আর কুমারঘাট তখন থেকেই নগর পঞ্চায়েত থেকে পুর পরিষদে উত্তীর্ণ হয়।
কুমারঘাটে এক সময় হাতি ধরা হতো।আর স্বাধীনতা আন্দোলনের বহু পরেও লোকজন তেমন ছিলেন না।সতীশচন্দ্র সেন ও সুশীতল ধর দুজন বাংলাদেশের ভানুগাছ থেকে এখানে বসবাস শুরু করলে ক্রমশ লোকজন বাস করা শুরু হয়।এই সময় মানিক ঘোষও কৈলাসহর থেকে এখানের বহু জায়গা দখলদারী শর্তে ভোগ করা শুরু করেন।আর এই দখলদারী ও মালিকানা দুই গ্যাড়াকলে কুমারঘাটের সমতল ভূমি ত্রিপুরা সরকার ও ভারত সরকারের খাস ভূমিতে রূপান্তরিত করা হয়।এতে আইনী অধিকারের জন্য সুশীতল ধর ও মানিক ঘোষের মধ্যে আইনী লড়াই অনেকদিন থেকে লেগে আছে।যদিও দুজনই এখন স্বর্গত।
আজ আর পাবিয়াছড়া তেমন অস্থিত্বের জানান দিতে অক্ষম। পাবিয়াছড়া বাজারের নোংরা আবর্জনা ছড়াটির মোহনাকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে। অথচ এই ছড়াটির জন্য একটি অঞ্চল ছিলো গ্রাম পঞ্চায়েত হিসেবে।অচিরেই সরকারের সুনজরে না এলে ছড়াটি আসাম আগরতলা ও পাবিয়াছড়া বাজারের ব্যবসায়ীদের আবর্জনা স্তুপ হবে পাবিয়াছড়া। 

নিচে আমার লেখা একটি কবিতা পাবিয়াছড়াকে কেন্দ্র করে লেখা । নজরদারি না হলে ক্রমশ ছড়াটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।এই কষ্ট থেকেই কবিতাটি 
২০:১০:২০১৭ তারিখ সকাল:১০:৩৫মিনিটে লেখা। 

আমাদের শহর এখন কুমারঘাট।
দেওবাহিত শহরের মাঝ বরাবর কাটাকটি খেলে
পাবিয়াছড়া লিকলিকে নামছে
শহরের মলমূত্র
আর ব্যবহৃত নিরোধের ভেতর মৃত স্বপ্ন নিয়ে।

আমাদের শহর কুমারঘাট।
গ্রামীণ সারল্য ছিলো মানুষের বুকের ফসল।
সাহিত্য সংস্কৃতি যা ছিলো
প্রাণ ঢেলে দিতো তখন।

এখন দাদাদের চোখের তর্জনী থেকে আগুন ঝরে।
দেওবাহিত শহরের লোক পড়শির পিঠে হাত রেখে
কেউ বলে না"কেমন আছো"!

দিনে দিনে শহর বড় হয় নদীর নাব্যতা কমে
আমাদের শহর কখন যে
পাবিয়াছড়া বাদ দিয়ে এখন কুমারঘাট
জেঠামশাইও জানেন না।

আমরা পাবিয়াছড়ার পাবদাকে
হারিয়ে অন্ধ্ররুই রসনায় তুলে দিই

আমাদের শহর এখন কুমারঘাট।
দাদারা সাবলক।শহর পুরপরিষদ।
ড্রেন আর ডাস্টবিন নাই বা হলো
আমাদের শহর তবু আমাদের কুমারঘাট।

২২:০৩:২০২৪

0 Comments