মরাছড়ার বৃত্তান্ত গোবিন্দ ধর
মরাছড়ার বৃত্তান্ত
গোবিন্দ ধর
একবার চড়কমেলায় মরাছড়া গিয়েছিলাম।তখন সবে নবম শ্রেণিতে আমি।রাতাছড়া বাড়ি থেকে মরাছড়া যেতে প্রথমে রাজকান্দি বাজারে পৌঁছতে হবে।রাজকান্দি থেকে জনজাতি এলাকায় পায়ে হেঁটে যদিও সারা পথ যেতে হয়।যদিও তখন বাবার ভাঙা হারকোলিস চালিয়ে গেছিলাম রাজকান্দি। ফটিকরায় থেকে রাজকান্দি যেতে রাজনগর, গোকুলনগর,গঙ্গানগর, রাধানগর,জয়গন্তি হয়ে পৌঁছতে হবে।তারপর মরাছড়া।মরাছড়ায় সাধারণত তেমন জল নেই। বৃষ্টি হলে মরাছড়ায় বর্ষার জল জমে আর স্রোতের তোড় নামে লুঙ্গা ছাপিয়ে।সেই মরাছড়া তখন চড়কমেলা বসছে চৈত্রের পাঁচ কি ছয় তারিখ। আমি লটারী খেলা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম।জনজাতিরা লটারী টিকিট কেটে ছোট বড় পুরস্কার জিতে বেশ আনন্দিত হয়েছিলেন।সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম জনজাতি অংশের লোকজনের সরলতা।আবার একবার উনারা ঠগেছেন বুঝতে পারলে প্রতিরোধও জানেন।কিন্তু প্রথমেই ওদের সরলতায় আমিও মুগ্ধ হয়েছি।
সন্ধ্যার আগেই চড়কমেলায় পসরা সাজানো জনজাতি পুরুষ মহিলাদের অনেকেই সারিবদ্ধ চুলাই নিয়ে বসে গেছেন।কারো কারো লাঙ্গি।কোনো রকম রাখোটাকো লুকোচুরির বিষয় নেই। যারা নেশায় বুদ হতে চায় তো গলদকরণ করছেন দেশিচুলাই।
আমিও প্রথমবার চায়ের কাপে এককাপ দেশিচুলাই গলায় ঢেলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মাদকাসক্ত কখনোই হবো না।কারণ দেশিচুলাই সেবনের স্বাদ তো নেই-ই বরং মুখটাই সেদিন বিষাদে রূপান্তরিত হয়েছিলো।পাশাপাশি দেশিমদের তিক্তঘ্রাণ তিনপুরুষ অব্দি মনে থাকবে আমার।অথচ বিপিনবাবুর কারণ সুধায় সেদিন কতজনের ঠেংখোঁড়া হয়েছিলো কালবৈশাখীর তাণ্ডব আর দেশিচুলাইয়ের মিশেল আক্রমণে দেখে বড় করুণা হয়েছে আমারও।দেশি সেবন যারা করেন তাদের মধ্যে সাম্যবাদ প্রকট।একজনের পান করা চুলাইকাপ অন্যজনের ঠোঁটে আলতা চুমু খেলেও কাপ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার সময়ও নেই আর ঝামেলাও নেই। পরপর একটি কাপেই চলছে সাম্যবাদের পাঠশালা।
যাকগে চড়ক মেলায় নাচগান চলছে।হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় দিকবিদিক কালো ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়।
মেলার লোকজন যে যার মতো দৌঁড়ে দৌঁড়ে ধারেকাছে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন।তখন সন্ধ্যাও নেমে গেছে মরাছড়ার দুকূল ছাপিয়ে।
সেদিনই প্রথমবার এবং সেদিনের পর অদ্যাবদি আর কখনো মরাছড়া যাওয়া হয়নি। অবশ্য রাজকান্দি বাজারে আরো বার কয়েক গিয়েছি।
মরাছড়া ফটিকরায় থেকে পশ্চিম উত্তর অক্ষাংশ বরাবর অঞ্চলে অবস্থিত।
২৩:০৩:২০২৪
0 Comments