জুমধান জুমচাষ || গোবিন্দ ধর
জুমধান জুমচাষ
গোবিন্দ ধর
ত্রিপুরার পাহাড় টিলা এলাকায় প্রচলিত এক ধরনের কৃষিপদ্ধতি। "জুম চাষ" বিশেষ শব্দে "ঝুম চাষ" নামেও পরিচিত। "ঝুম চাষ" এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি। মূলত জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে চাষ করা হয়, আবার সেই স্থানে জমির উর্বরতা কমে গেলে এই স্থান হতে কৃষি জমি স্থানান্তরিত করে অন্যত্র আবার কৃষি জমি গড়ে ওঠে। পাহাড়ের গায়ে ঢালু এলাকায় এই চাষ করা হয়।এই পদ্ধতির চাষে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। জুম চাষ পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ২০০০০ হেক্টর ভূমি এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হয়। "ঝুম চাষ" ভারতে পোড়ু, বীরা, পোনম, প্রভৃতি নামেও পরিচিত। চাকমা ও মারমা সমাজের মানুষের মাঝে জুম চাষ বেশ জনপ্রিয়।
চৈত্রে সারা বন রোদে পুড়ে।গাছের পাতা পড়ে বৃক্ষের ন্যাড়া রূপ রুক্ষ আকার ধারণ করে। এই সময় বন কেটে শুকালে পুড়ে ছাই করা হয়।টিলায় টিলায় ছাই আর ছাই।বাঁশপাতা উড়ে উড়ে এসে টুপ করে চোখে মুখে মাথায় পড়তো ছোটবেলা।সে সময় জুমে আগুন লাগাতেন জুমচাষীরা।আমাদের ছোটবেলা এসব সন্ধেবেলা বাড়ির উঠোনে কুপি জ্বালিয়ে পড়তে বসলে আকচার ঘটতোই।আর আমরা মনে মনে এক অজানা আশঙ্কায় রাত কাটাতাম।বাবা মা মাসিদের মুখে জুম পুড়ার ভয়ঙ্কর কথা শুনে বনের পশু পাখির পুড়ে যাওয়ার ঘটনা মনে মনে হৃদয়ে এসে আঘাত দিতো। সেই ট্রেডিশন এখনো আছে।
সম্প্রতি আমি নিয়তি আমার বর্তমান কর্মস্থলে আসতে যেতে দেখি।চোখে লাগে।কষ্ট পাই।আর ভাবি পাহাড়ের জনজীবনে এখনো জুম চাষের উপর নির্ভরশীল।এতে বন ধ্বংস হয়।পুড়ে ছাই হয় কত পশুপাখি।সাপ।আর বন ধ্বংস মানে আমাদের পরিবেশকে আমরা আরো বিপদের মধ্যে ফেলছি।
বেতিধান,কফপ্রু,কাঞ্চলি,রাংগাদিলং,মাম্মি,খাইয়ানাচন, গারোমালতি,গাদুমা,এগুলো জুমের ধান।খেতেও অপরূপ।রসনা থেকে স্বাদ যেন ছাড়াতেই চায় না।
রিয়াং জনজাতিরা বছরের প্রথম মাস বৈশাখে জংগলের আগাছা ও বড় বড় বৃক্ষ কেটে রূপন করেন জুমের ধান।ন্যাড়া টিলায় কিছুদিন পর বৃষ্টি পড়ে অঙ্কুরোদগম হয় সবুজ ধান।
এখন বর্ষা পুরোদস্তুর। চারদিকে আগাছার পাশাপাশি গাছের চারায় সবুজ পাতা মনোরম পরিবেশ সৃজন করে।
টিলায় টিলায় আগাছা আর সবুজ বন।
১২:০৭:২০২২
বেলা:০৮:৪৫মি
বৃক্ষরাম।
তথ্যসূত্র:স্থানীয় মৌখিক আলোচনা এবং গোগল।
0 Comments