এ শোক কোথায় রাখি

মুখোমুখি মলয় রায়চৌধুরী 
গোবিন্দ ধর 

তিরিশ থেকে পঞ্চাশ দশকের ঔপনিবেশিক আধুনিকতা-প্রভাবিত সাহিত্যের পরবর্তী সময়ে বাংলা কথাসাহিত্য ও কবিতায় এক অর্থে নবায়নের পরিসর সৃষ্টি যখন স্তব্ধ হয়ে এসেছে, তখন, মলয় রায়চৌধুরীর মতো প্রতিভার প্রয়োজন ছিল । তিনি এসেছিলেন রুদ্র ভাঙনের অশ্ব ছুটিয়ে । অনড় প্রাতিষ্ঠানিকতার রোগে স্থবির বাংলা কথাসাহিত্য ও কাব্যের বাকজগতে যোদ্ধার অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসেছিলেন মলয়। সম সাময়িক সময়ের আবহমান সাহিত্যে
তাঁর পাঠ ছিল গভীর । বিপন্ন বোধ করেছিল সাহিত্যিক-সমাজ এবং বাঙালি এলিটবর্গ । রাষ্ট্রযন্ত্র। পাঠক। কবিতা লেখার জন্য হাতকড়া পরিয়ে জেলে ঢোকানো হয়েছিল তাঁকে। দমানো যায়নি। ২০০৩ এ সেই রাষ্ট্রযন্ত্রই তাঁকে পোষ মানাতে চেয়েছিল অনুবাদ সাহিত্যে অকাদেমি পুরস্কার দিয়ে। বিভিন্ন সংস্থা দিতে চেয়েছিল লিটিল ম্যাগজিন পুরস্কার। প্রত্যাখান করেছেন মলয়। এ সাহস তিনিই করতে পারেন। এ সাহস তাঁকেই মানায়। আজীবন তিনি একজন জ্ঞানদক্ষ ।  আঘাতে ক্লান্ত নন। আদরে গলে পড়ার লোক নন। তাঁর বাকপ্রতিভার তলোয়ারে ‘সিস্টেম’ নামক স্থবিরতাকে সুযোগ পেলেই আঘাত করেছেন। বাংলা কথাসাহিত্য ও কাব্যের এই কান্তিহীন পথপ্রদর্শক শিখিয়েছেন পালিয়ে বাঁচার থেকে বাকজগতের নখ-দাঁত-তরোয়াল দিয়ে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার নামই জীবন। অকথ্য ভাষায় হোক আর যৌনতার খুল্লামখুল্লা প্রয়োগেই হোক---রাষ্ট্র স্থবির হলে সাহিত্যিকের কাজ  আঘাতে আঘাত করে আধমরাদের বাঁচিয়ে তোলা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধারাটি স্থিতাবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল । তার বাঁধ ভেঙে দেওয়া ছাড়া মলয় রায়চৌধুরীর আর কোনও উপায় ছিল না ।

0 Comments