শব্দশ্রমিক কবি,গীতিকার সম্পাদক ও প্রকাশক গোবিন্দ ধর || বিজন বোস
শব্দশ্রমিক কবি,গীতিকার সম্পাদক ও প্রকাশক গোবিন্দ ধর
বিজন বোস
বিংশ শতকের শেষ দশকে উত্তরপূর্ব তথা বাংলা সাহিত্যে যে সকল শব্দশ্রমিক পথ চলা শুরু করেছিলেন কবি , গীতিকার সম্পাদক ও প্রকাশক গোবিন্দ ধর অন্যতম। অবিভক্ত উত্তর ত্রিপুরার কুমারঘাটের অদূরে রাজধর মাণিক্যের স্মৃতি বিজড়িত অজপাড়াগাঁ রাতাছড়ার মতো একটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম থেকে জার্নি শুরু করে ক্রমে ক্রমে ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে বাংলার অন্যতম দুই ভুবন কোলকাতা ও ঢাকার সাহিত্য জগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন গোবিন্দ ধর। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শ্রী ধর কবিতা দিয়ে শুরু করলেও দিনে দিনে সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও সাবলীল পদচারণা আমরা দেখতে পাই। তিন দশকের বেশি সময় ধরে শুধু লেখালেখি নয় লিটল ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে প্রকাশনা সর্বত্রই উনার অবাধ বিচরণ। লিটল ম্যাগাজিন স্রোতস্বিনী থেকে স্রোত এবং স্রোত প্রকাশনা কবি লেখক শিল্পীদের এক আস্থার জায়গা।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় গোবিন্দ ধরের অবাধ বিচরণ পরিলক্ষিত হলেও মূলত কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। তাই প্রথমেই উনার কবি স্বত্তা নিয়েই আলোকপাত করতে চাই। নিজস্ব অনুভবকে খুব যত্নে কুড়িয়ে কুড়িয়ে তুলে এনে কবিতায় সংস্থাপন কবির কাজ । তাই কবি গোবিন্দ লিখতে পারেন :
" ভেতরের ঘড়িটি অটোমেটিক এলার্ম শোনায় অহর্নিশ
পিঁপড়ের মতো আমিও জেনে ফেলি অগ্রিম ভূমিধস "
এইভাবে ছোটো ছোটো উপলব্ধিকে পুঁজি করে এগিয়ে চলেন বড়ো বড়ো আত্মোপলব্ধির দিকে। অপরদিকে দুঃখই কবিকে জারিত করে কবিতার দিকে নিয়ে যায়। নীরবে কলম তুলে দেয় তার হাতে। কবি গোবিন্দের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা দেখি না। হাতে কলম তুলে নিয়ে গোবিন্দ লেখেন:
" মাথাকে ফুটবল মনে করে বেশি খেলছো ,
হুঁকোর তামাক ভরে যেন ঠাকুরদা টানছো"
অন্ধকার ও শূন্যতা থেকে সমাজকে আলোয় ফেরানোও কবির কাজ। আবার কখনো দেখি শহুরে অতি সভ্য মানুষের মেকি সাজানো জীবনের ছক কবিকে অসহিষ্ণু করে তুলে। কবি গোবিন্দের কলমে আজকের অস্থির সময় আর স্থিতিশীল জীবনযাত্রার বেসামাল তাল মেলানোর প্রচেষ্টাও উঠে আসে কখনো কখনো।
অনেক সময়ে শ্রী ধরের সাহিত্য সৃষ্টি ও ভাবনার গভীরতা আমাদের চমৎকৃত করে। উনার কলমের খোঁচায় আমরা নতুন করে ভাবতে বাধ্য হই।কবির রয়েছে প্রকৃতি , মানুষ ও তার জীবনের যাপন চর্চাকে খুঁটিয়ে দেখার এক নিজস্ব দৃষ্টি এবং তাকে তিনি বর্ণনা করেন স্বকীয় নৈপুণ্যে। একটি সুন্দর শব্দের খোঁজে কবিকে বহু পথ পার হতে হয় এবং সেই পথিক কবিকে আমরা খুঁজে পাই কবি গোবিন্দ ধরের মধ্যেও।
কবি গোবিন্দ ধর মার্কসবাদের প্রতি আস্থাশীল। সচেতনভাবে সমাজ পরিবর্তনের চিন্তায় মশগুল । তার অনেক লেখায় সরাসরি আবার অনেক কবিতায় আড়ালে আবডালে মার্কসবাদের প্রতি এই আস্থা প্রস্ফুটিত হয়েছে। তাই শ্রী ধর লেখেন :
"অন্ধকার ক্রমশঃ গাঢ়তর হয়ে আসছে,
আমাদেরও কিছু করণীয় আছে, চলুন আমরা কিছু করি"
নিজের মতো করে জীবনবোধের কথা বলাই কবির কাজ হলেও পারিপার্শ্বিক নষ্ট সময়কে কখনো কবি এড়িয়ে যেতে পারেন না। প্রতিটি মানুষই মূলত একা । কবির একাকীত্ব বোধ আরো তীব্র ও গভীর। যতই কবি নাগরিক হউন এবং আধুনিকতার রাজপথে হেঁটে বেড়ান । গোবিন্দ ধর তেমনই এক নিঃসঙ্গ কবি। সেই নিঃসঙ্গতা থেকেই কবির ত্রিনয়ন তুলে ধরে সত্য, রচিত হয় আগামীর পথ । 'সুরেলা অসুখ ' কবিতায় কবি একাকীত্ব এঁকেছেন এভাবে :
" কবিতাকে ছুটি দিয়েছি কদিন, তবুও শিলাবৃষ্টির মতো
টুপটাপ ফোঁটা ফোঁটা টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে
সমূহ পতন অভ্যুদয় ও কালবৈশাখী ঝড় উপেক্ষা করে"...
আশাবাদ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে । আর কবিরা আশাবাদী বলেই সব পজিটিভ বার্তা ছড়িয়ে দেন আগামী দিনগুলোর জন্য। কবির জীবন বোধের গভীরতা, সংবেদনশীল সমাজ চেতনা, নান্দনিক শিল্পবোধ, সর্বোপরি সাহিত্যের প্রতি অগাধ টান ও ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ ও তৃপ্ত করে। গোবিন্দ ধর আমার কাছে এক বহুমুখী প্রতিভা , সৌন্দর্যের পূজারি, ভাবনা আর রসে টইটম্বুর এক আনন্দ মানুষ ।
প্রকাশক গোবিন্দ ধর
----------------------------
প্রকাশনা একটি শিল্প। আবার প্রকাশনাকে শুধুমাত্র একটি শিল্প হিসেবে দেখলে ভুল হবে।জাতি গঠনে এবং সৃজনশীল সংস্কৃতির সম্প্রীতি ঘটাতে এই শিল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য। বইয়ের মাধ্যমে বোধ পরিবর্তনের আন্দোলনে গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশেষত ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে যে নামটি লেখক পাঠকরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি গোবিন্দ ধর। উনার প্রতিষ্ঠান স্রোত প্রকাশনা। যদিও কাগজে কলমে স্রোত প্রকাশনা গোবিন্দ ধরের সহধর্মিনী সুমিতা পাল ধরের নামে, আসলে এর প্রকৃত কর্ণধার গোবিন্দ ধর। ত্রিপুরার প্রকাশনা শিল্পকে আমরা আজকে যে পরিসরে দেখছি, তথা বইমেলার সফল আয়োজন এবং লেখক পাঠক তৈরিতে; এমনকি লেখক - পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটি মূলত প্রকাশকরাই করে থাকেন। আর এই বিষয়ে স্রোত কর্ণধার গোবিন্দ ধর বরাবরই এগিয়ে। প্রকাশনা শিল্পের নান্দনিকতা, বই প্রকাশের জন্য বিষয় নির্বাচনে গোবিন্দ ধর বরাবরই ব্যতিক্রমী । তরুণ ও উদীয়মান কবি লেখকদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে শ্রী ধরের জুড়ি মেলা ভার।
স্রোত প্রকাশক গোবিন্দ ধর পুস্তক প্রকাশনার বিষয়টিকে নিছক ব্যাবসা কিংবা স্রেফ চটজলদি অর্থোপার্জনের উপায় হিসাবে নয় বরং একটি সত্যিকারের শিল্প ও পেশা হিসাবেই গ্রহণ করেছেন। তিনি গভীরভাবে মানেন , যে কোন ব্যাবসায়িক উদ্যোগকে শিল্প হিসাবে সফল করে তুলতে হলে সামষ্টিক অর্থনীতি ও বিনিয়োগ ব্যবস্থায় কিছু নিয়ম কানুন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন-ব্যবস্থাপনা ; বিজ্ঞাপন ও বিপণন কৌশলের পাশাপাশি নূন্যতম কিছু নীতি নৈতিকতাও মেনে চলতে হয়। বিশেষ করে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান- সম্পৃক্ত সকল অংশীজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষা , তাদের প্রাপ্যটুকু যথাসময়ে ও যথাসাধ্য পরিশোধ করা এবং তাদের সঙ্গে হওয়া লিখিত - অলিখিত চুক্তি সমূহকে সম্মান ও পালন করা টুকুও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে প্রকাশক শ্রী ধর যথেষ্ট সচেতন। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষা ,সাহিত্য ও কবি সাহিত্যিকদের প্রতিও তার অকৃত্রিম অনুরাগ এবং অঙ্গীকারও আমাদের যথেষ্ট সমীহ আদায় করে।
প্রকাশনা শিল্পের প্রতি শ্রী ধরের ভালোবাসা ও কর্মদ্যোগী ভূমিকার ফলও মিলেছে হাতে হাতে। ত্রিপুরা,আসাম , পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রতিবেশী বাংলাদেশর কবি সাহিত্যিকরা যেমন নিজেদের বই প্রকাশের জন্য স্রোত প্রকাশনাকে বেছে নিচ্ছেন তেমনি পাঠকবর্গও স্রোত প্রকাশনার বই কিনতে যথেষ্ট আগ্রহী । অপরদিকে প্রকাশনায় শ্রী ধরের বহুমুখী কর্মতৎপরতা উনাকে এনে দিয়েছে ত্রিপুরা সরকারের প্রকাশনা বিষয়ক পুরষ্কার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি চাকমা ভাষায় অনুবাদের জন্য ত্রিপুরা সরকার কর্তৃক ২০১৪ সালে, শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরষ্কার:২০১৪ পুরষ্কারে ভূষিত হন। তারপর আরো পাঁচবছর পর ২০১৯ সালে ত্রিপুরা সরকার পুনরায় ' মানবী বিদ্যার আলোকে নারী: একটি ভিন্ন মাত্রিক পাঠ ; এই বইটির জন্য স্রোত প্রকাশনাকে ' শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা পুরষ্কার:২০১৯ প্রদান করেন। ইহা ভিন্ন রাজ্যের বাইরে ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গ সাহিত্য আকাদেমি কর্তৃক ' লোদ্রভার কাছাকাছি ' বইটির জন্য পুরষ্কৃত হয় স্রোত প্রকাশনা তথা গোবিন্দ ধর।
সংগঠক , আড্ডাবাজ ও সংগ্রাহক গোবিন্দ ধর
ব্যাসদেবের মহাভারতে বর্ণিত আছে, নৈমিষারণ্যে 'একদা মহর্ষিগণ দৈনন্দিন কর্ম সমাধান করত , সকলে সমবেত হইয়া কথা প্রসঙ্গে সুখে অধ্যাসীন হইয়া আছেন ' , অর্থাৎ আড্ডা দিচ্ছেন বলে জানা যায়। এটি সাহিত্য সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন প্রসঙ্গ হলেও মহাভারতের এই অংশের আলোচনা থেকে বুঝা যায় মুনি ঋষিরা তাদের জপ-তপের মাঝেও রীতিমতো আড্ডা মারতেন । মুনি ঋষিদের জপ- তপ এর মতোই সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা তথা লেখালেখি নীরবে নিভৃতে করার মতোই সাধনার বিষয়। তথাপি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক বড়ো উদ্দীপনা হল বিভিন্ন আড্ডা ও সাহিত্য সংস্কৃতির সংগঠন। এক্ষেত্রে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি সাহিত্য আড্ডার কথা সর্বজনবিদিত। গত তিন দশকে ত্রিপুরায় ও ত্রিপুরার বাইরে সাহিত্য সংস্কৃতিকে লেখক ও পাঠকের সম্মিলনী মঞ্চ হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গোবিন্দ ধর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে গোবিন্দ ধরের মধ্যে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনায় তার কর্মকাণ্ড হয়তো সম্পুর্ন মৌলিক নয় কিন্তু তা একান্ত ব্যক্তিক । তিনি একই সঙ্গে সাহিত্য আড্ডা, সাহিত্য সমালোচনা বা কবি সম্মেলনের মোড়কে প্রকাশনা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ কুশীলব। অসংখ্য কার্যকরী সংগঠনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ বিদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং ইতিমধ্যেই নতুন নতুন বহু সাহিত্য- সংস্কৃতি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা করেছেন গোবিন্দ ধর।
গোবিন্দ ধরের স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি এর আড্ডা ত্রিপুরার ভৌগলিক সীমানা ছাড়িয়ে আসাম পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খণ্ড এমনকি বাংলাদেশ ও লন্ডনেও বিস্তৃত লাভ করেছে। ত্রিপুরার প্রতিটি মহকুমায় যেমন গঠিত হয়েছে স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি শাখা তেমনি রাজ্যের বাইরে শিলচর, গৌহাটি, কোলকাতা, ঝাড়খণ্ড সহ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এমনকি লন্ডনেও গোবিন্দ ধরকে মুখ্য উপদেষ্টা করে গঠিত হয়েছে স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি শাখা। স্রোত সাহিত্য সংগঠন ও স্রোত প্রকাশনার উদ্যোগে বিভিন্ন মহকুমার সঙ্গে রাজধানী আগরতলায়ও গত ত্রিশ বছর ধরে নানা সময়ে নানা আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে হাজারো সাহিত্য সংস্কৃতির কার্যক্রম ভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি। বড়ো বড়ো অনুষ্ঠান ছাড়াও সময়ে সময়ে স্রোত পরিবার ছোটো ছোটো আড্ডার আয়োজন করে কবি লেখক শিল্পীদের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন ।
স্রোত প্রকাশনা বা স্রোত সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠন ছাড়াও গোবিন্দ ধর ত্রিপুরা রবীন্দ্র পরিষদ, বঙ্গীয় সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ , সৃষ্টি লোক সাংস্কৃতির সংস্থা, ত্রিপুরা লিটল ম্যাগাজিন গিল্ড,দেও- মনু সাহিত্য মঞ্চ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা সমন্বয় পরিষদ সহ বহু সাংস্কৃতিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ও কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়নের মাধ্যমে দেশ বিদেশের কবি লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে যেমন একদিকে মেলবন্ধনের কাজ করে চলেছেন তেমনি নবাগত কবি সাহিত্যিকদের প্রেরণার উৎস মানুষে পরিণত হয়েছেন ।
সাংগঠনিক কাজকর্মে গোবিন্দ ধরের নামে আরেকটি উজ্জ্বল পালক জ্বল জ্বল করছে 'প্রকাশনা মঞ্চ ' নামে একটি ব্যতিক্রমী সংস্থা গঠনের যোগ্যতম নেতা হিসাবে। লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক ও ছোটো ছোটো প্রকাশকদের যৌথ মঞ্চ যার পোশাকি নাম " প্রকাশনা মঞ্চ" গঠনে ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কয়েকজন বিদগ্ধ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রকাশনা মঞ্চ গঠন করেন এবং প্রথম বছরেই নির্বাচিত হন এই সংস্থার সম্পাদক হিসাবে। বাংলা ভাষাভাষী বিভিন্ন অঞ্চলে প্রকাশকদের প্রকাশনা সংগঠন বা গিল্ড এবং সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকের আলাদা আলাদা বহু সংগঠন পরিলক্ষিত হলেও এই দুই ভিন্ন বিষয়ের লোকজনকে একত্রিত করে এরূপ অভিনব সংগঠন সম্ভবত এখনো উপমহাদেশে দ্বিতীয়টি নেই। প্রকাশনা মঞ্চ গত পাঁচ বছর যাবত আগরতলায় বাংলা সাহিত্য চর্চার তথাকথিত 'ত্রিভুবনে'র ( কোলকাতা, ঢাকা এবং ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল) কবি শিল্পী সাহিত্যিক সম্পাদক ও প্রকাশকদের মহামিলনের মতো ব্যতিক্রমী ও সাড়া জাগানো, তিনদিনব্যাপী এক মহতি অনুষ্ঠানের প্রাণপুরুষ গোবিন্দ ধর।
গোবিন্দ ধরের আরো একটি কীর্তি " উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন পুঁথি -পত্র পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র " নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন। মূলত ১৯৯৫ সালে উত্তর ত্রিপুরার কুমারঘাটের অদূরে রাতা ছড়ায় গোবিন্দ ধরের বাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে এর কর্মকান্ড শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে কুমারঘাটের হালাইমুড়ায় পাকাপাকি ভাবে স্হাপিত হয় । এই যাবৎ এই সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি লিটল ম্যাগাজিন সংরক্ষিত আছে। বহু সাহিত্যক তথা গবেষক ইতিমধ্যে উক্ত গবেষণা কেন্দ্র থেকে উপকৃত হয়েছেন। বললে অত্যুক্তি হবে না, ভবিষ্যতে লিটল ম্যাগাজিনের উপর কেউ গবেষণা করতে চাইলে উনাকে অবশ্যই যেতে হবে গোবিন্দ ধরের হালাইমুড়াস্থিত উক্ত গবেষণা কেন্দ্রে ।
পরিশেষে বলবো, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী শিক্ষক গোবিন্দ ধর ত্রিপুরার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে যেভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কাজকর্মে নিজেকে নিয়োজিত করে নিয়ত এগিয়ে চলেছেন, গত ত্রিশ বছরে এই পথ ততটা মসৃণ ছিল না। শহুরে আধিপত্যবাদ এবং বড়ো বড়ো নানা সংগঠনের অবাঞ্ছিত ঈর্ষায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন বারে বারে। তবুও তার কর্ম প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। বরং নতুন নতুন ভাবনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করে হয়ে উঠেছেন প্রকৃত সাহিত্য সাধক। সর্বোপরি গোবিন্দ ধর আমার কাছে এক বহুমুখী প্রতিভা, সৌন্দর্যের পূজারি, ভাবনা সাহস ও রসে টইটম্বুর এক আনন্দ মানুষ। গোবিন্দ ধরের ৫৫ তম জন্মদিনের শুভ লগ্নে আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল।
0 Comments